গল্পঃ রোমান্টিক সিনিয়র বউ পর্বঃ ১০ (শেষ পর্ব) লেখকঃ শাওন আহমেদ নীল

গল্পঃ রোমান্টিক সিনিয়র বউ     পর্বঃ ১০ (শেষ পর্ব)    লেখকঃ শাওন আহমেদ নীল



গল্পঃ রোমান্টিক সিনিয়র বউ 


পর্বঃ ১০ (শেষ পর্ব)


লেখকঃ শাওন আহমেদ নীল 


বাট গিয়ে যা দেখলাম, তা দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। এটা কি দেখলাম, 

আমি? এটাই দেখার বাকি ছিলো শুধু, আমি ডাইরেক্ট বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে এসে একটার পড়ে একটা সিগারেট খেতে লাগলাম। 


দুপুরের দিকে নিধী বাসায় আসলো, তখনো আমার মুখে সিগারেট! নিধী এসে আমার মুখ থেকে সিগারেট টা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো। আমি ঠাস করে একটা থাপ্পর মেরে দিলাম নিধীর গালে। ওর সাহস হলো কি করে আমার মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দেওয়ার। 


নিধীঃ তুমি আমার গায়ে হাত তুললে?

আমিঃ হ্য তুললাম অনেকটায় ভালোবাসছিলাম আপনাকে, আর আপনি রেস্টুরেন্টে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেরান। 

নিধীঃ শুনো আমার কথা টা,। (এই বলে নিধী আমাকে জড়িয়ে দরতে আসে) 

আমিঃ ঘরে স্বামী থাকতে যে মেয়ে বাহিরের ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায় তার স্পর্শ চায় না আমার। 

নিধীঃ শান্ত হও প্লিজ একটু আমার কথা টা ত শুনো। 

আমিঃ কিচ্ছু শুনতে চায় না আমি,। আর আপনার মুখটাও দেখতে ইচ্ছা করতেছে না, চলে যান প্লিজ 

নিধীঃ না আমি তোমাকে ছেরে কোথাও যাবো না! 

আমিঃ কেন যাবি না হ্য, আমাকে কলেজে পাঠিয়ে দিয়ে নষ্টামি করে বেড়াস।  

নিধীঃ প্লিজ স্টপ নীল একটু বেশিই বলে ফেলছ। 

তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।। 

আমিঃ নিজের চোখ দিয়ে দেখা জিনিস কখনো ভুল হতে পারে না। 

নিধীঃ চোখের দেখা টাও মাঝে মাঝে ভুল হয়। 

আমিঃ আমিই চলে যাচ্ছি বাট বাসায় এসে জানি আপনাকে আর না দেখি। দেখলে চিরদিনের জন্য বাসা থেকে চলে যাবো।  

 

এবার নিধী আমার পা দরে কাঁদতে শুরু করে দিলো। আমি ছাড়িয়ে বাহিরে চলে আসলাম। 

চলে গেলাম বারে, ইচ্ছা রকম ড্রিংকস করতে লাগলাম,। দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ছি এখন বাজে রাত বারো টা, আমি এখন পর্যন্ত রাস্তার পাশে বসে আছি। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আমার সামনে এসে একটা গাড়ি দাড়াল, গাড়ি থেকে রানা বের হয়ে আসলো । 


রানাঃ নীল তর কি হয়েছে? আন্টি আংকেল তকে খুজতে খুজতে পাগল হয়ে গেলো। তর ফোন অফ কেন? 

আমিঃ এমনি 

রানাঃ চল বাসায় চল 

আমিঃ হ্য চল। 


রানা আমার কাছে আসলো, ও বুজতেই পারছে আমি অনেক ড্রিংকস করেছি। রানা আমাকে দরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসালো। গাড়িতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে কি হয়েছে কিছুই জানি না, সকালে 

আমার ঘুম ভাঙল তাকিয়ে দেখি আম্মু আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। সাইটে আংকেল আর আব্বু বসে আছে। কি হয়েছে মনে করার চেষ্টা করতেছি।। 


আংকেলঃ বাবা নিধীর সাথে কি তোমার কোনো জামেলা হয়েছে?

আমিঃ (চুপ করেই আছি)

আংকেলঃ কালকে দুপুরে বাসায় গেছে এখন পর্যন্ত কিছু মুখে তুলে নি!! সারারাত ই মেয়েটা কান্না করেছে। 

আম্মুঃ কি হলো চুপ করে আসিস কেন? বাসা থেকে যাওয়ার সময় নিধী অনেক কান্না করে বের হয়ছে। এতো আটকানোর চেষ্টা করেও আটকাতে পারি নি। 

আমিঃ যে চলে গেছে তাকে নিয়ে কথা না বললেই ভালো হয়, থেকে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তোমার অবাধ্য হয়ে চলে যেতো না আম্মু। 

আম্মুঃ তুই ই ত বলছিস,! ও এ বাসায় থাকলে নাকি তুই বাসা থেকে চলে যাবি। 

আমিঃ যাও ত ফ্রেশ হবো। 

আংকেলঃ দেখো বাবা স্বামী স্ত্রীর মধ্যো ছোট খাটো জামেলা হবেই,! তাই বলে যদি দুজনেই রাগ করে থাকো, তাহলে তর আর হবে না।  

আমিঃ মাথা ব্যথা করতেছে, ফ্রেশ হয়ে আসি। 


আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম! ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি আম্মু কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে! প্রতিদিন নিধী কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে,। এসময় টাতে অনেক মিস করলাম নিধীকে। 


আমি বলেকনিতে বসে কফি খেতে লাগলাম! কফি খাওয়া শেষ করে কাপ টা রেখে দিলাম৷ আজকে আর কেউ হুট করে এসে আমার কাপ থেকে কফি খেয়ে ফেলল না। নিধীকে অনেক মিস করতে শুরু করলাম। ওর কথা কেন ভাবতেছি, ও ত ঠকিয়েছে আমাকে! না ওর কথা ভাবলে চলবে না ভুলে থাকতে হবে।  


আমি একটা সিগারেট জালালাম, অনেক দিন পড়ে আজকে বাসায় সিগারেট খাচ্ছি নিধী থাকলে বাসায় সিগারেট খেতাম না। সাধারাণত সিগারেটের স্মেল পেলেও রাগ করে না খেয়ে থাকত।। বারবার

কেন ওর কথা ভাবতেছি, আমি সিগারেট টা ফেলে দিলাম।   


ওমনেই আমার ফোনের কথা মনে হলো! একি আমার ফোন কোথায়? নিশ্চিত রাতে কোথাও পড়ে গেছে,। আমি আম্মুর ফো দিয়ে রানা কে কল করে বিকেলে বাসায় আসতে বললাম। বিকেলে রানা বাসায় আসলো,! আমি রানা বের হলাম সন্ধ্যার দিকে। আম্মু অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হতে বারণ করল, বাট আমার ফোন কেনা টাও দরকার।। 


আমি আর রানা মার্কেটে চলে গেলাম, গিয়ে ফোন কিনলাম সিম কিনলাম! রাত বাজে প্রায় দশটা 

আমি আর রানা বাসায় ফিরছি, ওমনেই দেখি একটা ছেলে আর মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে,  


আমিঃ রানা দেখ ত এই ছেলেকেই কালকে নিধীর সাথে দেখছি না???

রানাঃ হ্য উনিই ছিলো। 

আমিঃ সাথে মেয়েটা কে আবার মেয়েটাকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে।। 


আমি আর রানা গাড়ি টা পার্ক করলাম! দেন ফুচকার দোকানে চলে গেলাম। আমরা একটা বেঞ্চে বসলাম। ওই মেয়েটা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।। একসময় মেয়েটা উঠে এসে বলল, 


মেয়েটিঃ এক্সকিউজমি 

আমিঃ জ্বি আমাকে বলছেন?

মেয়েটিঃ আপনার নাম নীল না??

আমিঃ হ্য বাট আপনাকে ত চিনলাম না। 

মেয়েটিঃ আমি আপনার ওয়াইফ নিধীর বেস্ট ফ্রেন্ড হিয়া। আমি আর নিধী একসাথেই স্টাডি শেষ করে দেশে ফিরেছি। 

আমিঃ ওহ আচ্ছা। 


এ কথা শুনে আমি শক খেলাম! ও যদি নিধীর বেস্ট ফ্রেন্ড হয় তাহলে এ ছেলেটা কে? মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।।। 


আমিঃ আর এ ভাইয়া টা কে?

হিয়াঃ আমার হবু স্বামী । 

আমিঃ ওহ আচ্ছা। 


তারমানে আমি নিধীকে, শুধুশুধু ভুল বুজলাম। 

এতো কথা শুনালাম, নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে। 


হিয়াঃ ভাইয়া নিধী আপনাকে অনেক ভালোবাসে! 

ও এখন দেশে আসত না আপনার জন্যই দেশে এসেছে!!!

আমিঃ আমার জন্য এসেছে মানে?

হিয়াঃ হ্য নিধী ত আরো একবছর আগে, থেকেই আপনাকে ভালোবাসে?

আমিঃ কিছু বুজতেছি না আমি ওনি ত দেশে এসেই আমাকে ফাস্ট দেখেছে। 

হিয়াঃ আরে না এক বছর আগেই ওর বাবা জানিয়েছে আপনার সাথে ওর বিয়ে ঠিক। আর তখন ই নিধীর ছোট বোনের কাছ থেকে আপনার ফেসবুক আইডি টা নেয়,৷ তখন থেকেই ও আপনাকে ফলো করে। আরেকটা মজার ব্যপার হলো, আপনি যখন পিক আপ দিতেন তখন ও আপনার পিকের সাথে নিজে নিজে কথা বলত। আমাদের দেখাত আর বলত আমার পিচ্চি হবু জামাই টা কতো কিউট তাই না??? 


এ কেমন ভালোবাসা রে বাবা, যে আমার ছবির সাথে কথা বলত।। 


আমিঃ আমাকে ত কখনো নক করে নি? 

হিয়াঃ সেটার কারণ আমি জানি না, আমিও বলতাম কথা বলতে, বাট শুধু বলত দেশে গিয়ে একবারে কথা বলব।।। 


দেন ওখান থেকে চলে আসলাম, রানা কে ওর বাসায় ড্রপ করে দিয়ে এসে! আমি শশুর বাড়ি চলে গেলাম! গিয়ে কলিংবেল বাজালাম, আন্টি এসে দরজা খোলে দিলো।। আন্টি কে সালাম করে বললাম এক প্লেট খাবার নিয়ে আসতে ! জানিই না খেয়ে আছে, যে পরিমাণ যেদি মেয়ে। 


আন্টি খাবারের প্লেট টা আমার হাতে দিলো! আমি আস্তে আস্তে নিধীর রুমে গিয়ে ডুকলাম। 

দেখি কাত হয়ে শুয়ে আছে,! ফোনে যেনো কি দেখছে । রুমের লাইট অফ, । কাছে গিয়ে দেখি নিধী ওর ফোনে আমার ছবি দেখতেছে, আর কাঁদতেছে।। 


আমিঃ শুনেন? 

নিধীঃ কে?


আমাকে দেখে নিধী অনেক শক্ত করে জড়িয়ে দরল। আরো শব্দ করে কান্না করে দিলো, আমি আমার বাহুডোরে যায়গা করে দিলাম। অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে দরলাম। 


নিধীঃ আমাকে ছেরে যেও না নীল তোমাকে ছারা বেঁচে থাকতে আমার কষ্ট হবে। আমি তোমাকে ছারা থাকতে পারব না, অনেক ভালোবাসি তোমাকে,। এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলল।। 

আমিঃ না তোমাকে ছারা কোথাও যাবো না আমি। 

নিধীঃ সত্যি ত? 

আমিঃ আরে বাবা সত্যি 

নিধীঃ এভাবে বললে বিশ্বাস করব না 

আমিঃ কিভাবে বলতে হবে?

নিধীঃ কান দরে দশবার উঠবা বসবা, আর বলবা 

আর কখনো আমার সাথে এমন বাজে বিহেভ করবে না। 

আমিঃ কষ্ট হবে ত? 

নিধীঃ আমি কষ্ট পায় নাই বুজি??

আমিঃ আর কষ্ট পেতে হবে না। 


আমি দশবার উঠবস করলাম! মেয়েটা খিলখিলিয়ে হাসছে! একে বুজা বড় দায় এই 

কান্না এই হাসি!!  


আমিঃ খেয়ে নাও 

নিধীঃ খুদা নাই?

আমিঃ কেউ একজন খাবার নিয়ে আসছে এখন না খেলে সে খোব রাগ করবে! 

নিধীঃ সে কি জানে না রাগ করলে খাইয়ে দিতে হয়।। 


আর কি নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম, আমাকেও খাইয়ে দিলো! খাওয়া শেষ দুজনেই শুয়ে পড়লাম,

আম্মু কে কল করে বলে দিলাম শশুর বাড়ি আসছি আম্মু ও অনেক খুশি হয়ছে।। 


নিধীঃ একটা জিনিস চাইব দিবা?

আমিঃ হ্য বলো কি চাও। 

নিধীঃ তোমার পরিপূর্ন ভালোবাসা চাই?

আমিঃ সেটা আবার কি?

নিধীঃ আমার একটা বাবু লাগবে। 


এই বলে লজ্জায় নিধী আমার বোকে মুখ লুকালো!


আমিঃ আরে লজ্জাবতিরে, বেবি আনতে গেলে যে অনেক কিছু করতে হবে?

নিধীঃ করবা বাঁধা কে দিচ্ছে? 


আমি এবার নিধীর কপালে একটা একটু চুমু খেলাম নিধী কেঁপে উঠলো ! আর বলব না আমার শরম করে।।। 


আচ্ছা বাই এখন বেবি আনার মিশন করতে হবে !  


# সমাপ্ত

1 Comments

  1. অনেক সুন্দর গল্প

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post