বন্ধুত্বের_আড়ালে_ঘাতকতা
পর্ব_৬বা_শেষ
#writer_sinno ((কপি করা নিষেধ)(
রাতে রিহাকে বাসায় দিয়ে আসব তার মধ্যেই নিশার আগমন।আর তখনই আম্মু বললো," রিহা এটা হলো নিশা।আমি ওকে রাহির বউ করে আনব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর নিশা ও হলো রিহা।রাহির ছোট বেলার বন্ধু। ওর সাথে ইউএসএ একসাথে পড়াশোনা করেছে।
এরপর রিহা ও নিশা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করল। অতঃপর আমি রিহাকে ওর বাসায় পৌছানোর জন্য বের হয়ে গেলাম। গাড়িতে আমাকে চিন্তিত দেখে রিহা বললো," কি, এতো চিন্তা করছো কেন?
আমিঃরিহা,তুমি আসলে বিষয়টা যেভাবে দেখছো আসলে তা এতো সহজ না।এই নিশা কিন্তু অনেক ভয়ংকর।ওকে কিভাবে দুরে সরাব তা কিছুই বুঝছি না।
রিহাঃ আরে এতো দুশ্চিন্তা করো না।সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্য যাকে লিখেছেন তা তো হবেই।তুমি ধৈর্য ধারণ কর।আর নিশাকে বুঝনোর জন্য কিছু একটা ভাবো।
এরপর রিহাকে বাসায় ছেড়ে এসে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাসায় এসে দেখি নিশা এখনো ওর বাসায় ফিরেনি।আমি ওকে এত অবজ্ঞা করি তাও এই মেয়ে বেহায়ার মতো আমার বাসায় চলে আসে।আমি আর ওর সাথে কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেলাম।
পরেরদিন আমি আর রিহা একটা রাস্তার পাশে মুক্ত আকাশে হাটছি।কোথার থেকে যেন নিশা এসে আমার সামনে রাগি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ কি হলো? এভাবে পথ আটকিয়ে দাড়িয়ে আছেন কেন?
নিশা রিহাকে উদ্দেশ্য করে বললো," আপু,আপনি একটু পাশে যাবেন, প্লিজ।আমি ওর সাথে একটু কথা বলব।"
রিহা ওর কথামত একটু দুরে সরে গেল।এরপর নিশা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,"দেখ রাহি, তুমি আমাকে অতীতের জন্য যেত শাস্তি দেওয়ার দাও কিন্তু প্লিজ অন্য মেয়ের হাত ধরে হেটো না।"
আমিঃ অন্য মেয়ে মানে?
নিশাঃ ওই রিহার কথা বললাম।
আমিঃ তুই জানিস রিহা কে?
নিশাঃ মানে...?
আমিঃ রিহা আমার একমাত্র ভালোবাসা। যে আমাকে সব সময় নিঃশ্বার্থ ভাবে ভালোবাসে।আর আমার ভালোবাসার যোগ্য ওই রিহা।
একথা শুনে নিশা যেন পাথর হয়ে যায়।তার এতোদিনের সকল আশা ভরশা এভাবে নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।কলিজা যেন ছেদে যাচ্ছে মাথাটাও ভার করতে লাগলো।সে এতদিন ভাবছে হয়ত রাহি বাহিরে থেকে আসলে তার কাছে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিবে।কিন্তু আজ মাফ করে দিলেও যে তাকে রাহি ফিরিয়ে নিবে না।
অনেক ভাবনার দুয়ার ভেঙে নিশা কান্না মুখে বলতে লাগলে," তা এতদিন বলোনি কেন?"
আমিঃ তা চেয়ে ছিলাম অনেক আগেই। তবে আমার পরিকল্পনা ছিল।বাহিরে থেকে এসে রিহাকে আপন করে নিব।কিন্তু তোর মতো অভিশাপির জন্য তা পারছি না।আমি যদি আগে জানতাম, তুই আবার আমার পথের কাটা হয়ে দাঁড়াবি। তাহলে আমি আম্মু কে অনেক আগের থেকেই বলে দিতাম।তুই আমার আম্মু আব্বুকে কি জাদু করেছিস রে? তারা তোর মতো নষ্টা একটা মেয়ে কে নিজের ছেলের জন্য বউ করে আনতে চায়।তুই কি ভাবছিস, আমি কিছু জানি না?
নিশাঃতুমি জানো মানে?
আমিঃ আরে তোকে যদি সানি রুম ডেটের কথা না বলত।আর তুই যদি ওর কাছ থেকে ধোকা না পাতি তাহলে কখনো আমার কাছে ফিরে আসতি না।যেই ধোকা খেয়েছিস, তারপর সুযোগে আম্মুকে হাত করে নিলি।খুব বুদ্ধি হয়েছে তাই না তোর?আসলে তোর মতো কিছু মেয়েরাই এমন, যখন সত্যিকারে কেউ ভালোবাসে তখন তোরা অর্থ সম্পদের লোভে অন্যের হাত ধরে চলে যাস।কিন্তু যখন আবার ওই ছেলে তোদের ধোকা দেয়,তখন পুনরায় তার কাছে ফিরে আসতে চাস।
রিহার চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি পড়তে লাগলো। রাহির কথা গুলো যেন, তার জন্য বুকে একেকটা তীরের মতো লাগছে।এবার ওই কান্না জরিত চেহারাই বললো, " প্লিজ, তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবছো আমি এতোটা খারাপ নই।আমি শুধু সানির সাথে কথা বলার সময় ওর হাতটাই ধরলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর ও আমার শরীরের কোথায়ও হাত দিতে পারিনি।আর হ্যা, আমি নিজেই স্বীকার করছি তখন সানির কিছু কথা শুনে অর্থ সম্পদের প্রতি লোভ জন্মায়।কিন্তু বিশ্বাস কর, তার আগে আমি তোমাকে নিশ্বাঃর্থ ভাবে ভালোবেসেছি। শুধু ওর পালায় পড়ে আমি তোমার সাথে ওই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি।
আমিঃ (শরীরিক সম্পর্ক বুঝাতে)তা আমি কিভাবে বিশ্বাস করব??
নিশার এ প্রশ্নের উত্তর যেন জানা নেই।তাই নিচের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। আসলে এ প্রশ্নের উত্তরও কারো জানা নেই।একমাত্র বিশ্বাসের ওপর ই এর উত্তর মিলে।
আমিঃ কি উত্তর দে।
নিশাঃ এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে এটা শোন, আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।প্রয়োজনে তোমার জন্য জীবন দিতেও রাজি। আমি জানি তোমার সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছি।কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোমাকে ছাড়া কারো হতে পারব না।
আমি এবার মাথা ঠান্ডা করে," দেখ, প্লিজ, তুমি আমাকে ভুলে যাও।আমি রিহাকে ছাড়া অন্য তোমাকে কখনো স্ত্রী অধিকার দিতে পারব না।ও আমার সব,ওকে ছাড়া আমি কাউকে চিন্তা করতে পারব না।"
নিশাঃ রিহার কাছে কি এমন আছে যা আমার কাছে নেই?
আমিঃ তোমার কাছে সবই আছে কিন্তু প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর।তুমি আমাকে এখন হয়তো অনেক ভালোবাসো কিন্তু আমার তো তোমার প্রতি কোন ফিলিং জন্মায় না।তা কিভাবে আমি তোমাকে বিয়ে করে সংসার করব.?
নিশাঃ একবার সুদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দেখো।বিয়ে পরে আমার সকল ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আপন করে নিব।
এ কথা শুনে মাথার তাপমাত্রা বেড়ে গেল।তাই কিছু না ভেবেই বললাম," আচ্ছা, বুঝছি চল রুম ডেট করব।তোর আমাকে পাওয়ার খুব শখ তাই না।চল।আজ তোকে আমার সব দিয়ে দিব।তারপরও তুই আমার জীবন থেকে চলে যা,প্লিজ। তোর মতো ছলনাময়ীকে বিশ্বাস করতে পারব না।
নিশা একবুক মাথা নিয়ে বললো," আজ থেকে তুমি আমার কাছ থেকে মুক্ত। আর আন্টিকে বলে দিব,যেন রিহার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দেয়।আর আমাকে নিয়ে চিন্তা কর না।আমি কখনো ভুল কিছু করব না।সারাজীবন এক পাশ থেকে তোমাকে ভালোবেসে যাব।তোমাকে দেওয়া কষ্ট গুলো কে সারাজীবন মাথায় নিয়ে বাচব।ভালো থেকো।
হঠাৎ রিহা পেছন থেকে চলে আসে।আর নিশা কান্না করতে করতে চলে গেল।রিহা নিশাকে অনেক ডাকলেও ও কিছু শুনলো না।
রিহা আমাকে বললো," রাহি,কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করনি।"
আমিঃ মানে....?
রিহাঃ আসলে তোমাকে আমি ভালোবেসেছি ঠিক কিন্তু নিশার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা তুচ্ছ। ও তোমার সাথে বেইমানি করেছে ঠিক কিন্তু তা আরেক জনের ছলনায় পড়ে। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে ওকে মেনে নিতে তাহলে এতে আমার কোন আপত্তি ছিল না।
আমিঃ তুমি এগুলো কি বলছো?
রিহাঃ হুম,আমি যা বলছি তা ঠিক বলছি।
আমিঃ আমি এতোকিছু বুঝি না।আমি শুধু তোমাকেই জীবন সংগি হিসেবে চাই। এটাই বাস।
রিহাঃ তোমার যেমন টা ইচ্ছে। তবে ওকে মেনে না নিয়ে তুমি সত্যি বড় ভুল করতে যাচ্ছ।ওর মতো ভালোবাসা হয়ত আমি তোমাকে কখনো দিতে পারব না।ওর শেষ কথা গুলো আমি শুনছি।
এরপর আমি আর কথা না বলে রিহাকে কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে, ওর বাসায় ওকে ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এরপর আম্মু যেটা বললো তা শুনে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।
আম্মুঃ কাজটা তুই ঠিক করলি?
আমিঃ কি হয়েছে, আম্মু?
আম্মুঃ নিশার কে আমি বউ করে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই আর রিহা নাকি একে আপরকে ভালো বাসিস।এটা আমাকে আগে বললে কি হতো?
আমিঃ আসলে আম্মু, বাড়িতে এসে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি......
আম্মুঃ থাক, আমি সব জানি।আমাকে নিশা সব বলেছে।তোর সাথে যা যা ঘটেছে। কিন্তু মেয়েটার জন্য খুবই খারাপ লাগছে। আমার যদি আরেক টা ছেলে থাকত,তাহলে ওকে বউ করে আনতাম।ও কিন্তু আমার মেয়ের মতো থাকবে।ওকে বাসায় আসা যাওয়া করতে বলেছি।তুই ওকে কখনো কটু কথা বলবি না।আর রিহার বাবার ফোন নাম্বার দে কাল আমরা ওর বাসায় যাব।
তারপর ওর বাবার নাম্বার আম্মুকে দিয়ে রুম চলে গেলাম। বাবা, বাচলাম তার মানে আম্মুর কাছে নিশা তেমন কিছু বলেনি।শেষের কথা গুলো বলা মোটেও ঠিক হয়নি।তাই এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। আর কি বা করতাম? ও তো কিছুতেই আমাকে ছাড়ছিল না।
পরের দিন রিহাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো।এক সপ্তাহপর আমাদের বিয়ে।
একে একে দিন চলছিল। এর মধ্যে রিহার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়।রিহাকে নিয়ে বিয়ের পর কি কি করবে ইত্যাদি খুনসুটি করতাম। বিয়ের মাত্র ২ দিন বাকি।তাই সিদ্ধান্ত নিলান এই দুইদিন আমরা কেউ দেখা করব না। মোবাইলে কথা হবে।
হঠাৎ সন্ধ্যার সময় একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।আমি রিসিভ করলে ওপাশ থেকে কে জেনো কান্না কন্ঠে বলতে লাগলো," হ্যালো ভাইয়া, আমি স্নেহা। "
আমিঃ স্নেহা তুমি কান্না কারছো কেন?
স্নেহাঃ ভাইয়া,আপু অজ্ঞান হয়ে আছে।অনেকক্ষণ ধরে তার জ্ঞান ফিরছে না।আমরা হসপিটালে আছি।তুমি চলে আসো তাড়াতাড়ি।
আমি আর এক মুহূর্ত দেরি করে।আম্মু আব্বু কে বলে হসপিটালে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি রিহা এখনো বেডে শুয়ে আছে।একটুপর ডাক্তার বের হলে, আমি তার কাছে গিয়ে বলি," ডাক্তার ওর কি হয়েছে?"
ডাক্তারঃ আসলে রোগী প্রচুর পরিমাণ দুশ্চিন্তা করতো। আর এটা এক-দুইদিন ধরে না।অনেক দিনে ধরে তিনি আক্রান্ত হয়েছে।এতো পরিমানে ডিপ্রেশন ছিল যে,তার মস্তিষ্কের ৯৫% ডেমেজ হয়ে গিয়েছে।
একথা শুনে আমার পায়ের নিচে মাটি সরেযাচ্ছে। মুখে যেন কোন ভাষাই নেই।
ডাক্তারঃ এখন রোগীকে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে। আপনারা চাইলে ২৪ ঘন্টাপর রোগীর অপারেশন করাব।
আমিঃ তাহলে সুস্থ হবে তো,ডাক্তার?
ডাক্তারঃ তা আমি সঠিক বলতে পারব না। তবে এই ধরনের রোগীর বাচার সম্ভাবনা ১%।
আমিঃ যেভাবেই হোক ডাক্তার আমার রিহাকে বাঁচান।
ডাক্তারঃ আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ওপর।
এবার আমি সিটে বসে পড়লাম।শরীরটা কেমন যেন ছেড়ে দিছে।
অপারেশন করতে নিবে তার কিছুক্ষণ আগে আমার ও রিহার পরিবারের সবাই চলে আসে।আম্মুর সাথে নিশাও এসেছে। আমি আর নিশা ছাড়া সবাই রিহার সাথে দেখা করতে ভিতরে গেল। একটুপর সবাই বের হয়ে এলে, স্নেহা বলে," আচ্ছা, নিশা আপু কে?"
তখন নিশা এগিয়ে আসলে স্নেহা বলে," আপু তোমাকে যেতে বলছে?"
এরপর নিশা ভিতরে প্রবেশ করলে রিহা বলে," নিশা, আমার মনে হয় আমি আর এই পৃথিবীতে থাকব না।প্লিজ, তুমি রাহিকে নিজের করে নিও।"
নিশার একথা শুনে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আর বললো," তুমি এগুলো কি বলছো? তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। তারপর ওকে আপন করে নিবে।"
রিহাঃ আমি ভালো করে জানি, আমি কখনো ফিরে আসব না।তুমি প্লিজ, রাহির জীবন সংগি হয়ে থাকবে আর ওকে কখনো কষ্ট দিবে না।ও জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছে, তুমি প্লিজ ওর সকল আচরণ মেনে নিও।প্রোমিজ কর, আমার কথা গুলো রাখবে।
নিশা কান্না করতে করতে হ্যা সুচক উত্তর দিল।
এরপর রিহা রাহিকে আসতে বলে।নিশা কাদতে কাদতে বের হলো আর আমাকে ভিতরে আসতে বলে।আমি ভিতরে গিয়ে দেখি রিহা আমাকে দেখে চোখ মুছে হাসি দিতে লাগলো।
আমিঃ এই পাগলি কেমন আছো?দেখ তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে ওঠবে।
রিহাঃ আমাকে একটা প্রোমিজ দাও।
আমিঃ কি প্রোমিজ?
রিহাঃ আগে প্রোমিজ কর।
আমিঃ আচ্ছা, প্রোমিজ।
রিহাঃ আচ্ছা, আমি যদি আর না ফিরে আসি তাহলে নিশাকে তুমি আপন করে নিও, প্লিজ।
আমিঃ (চেখের পানি ছেড়ে)তুমি এগুলো কি বলছো? এই আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে নিয়ে থাকতে পারব না।তোমাকে ফিরে আসতেই হবে।
রিহাঃ প্লিজ, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও হয়তো আমি আর ফিরতে পারব না।
আমি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে রিহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলাম।আর বললাম," প্লিজ, তুমি এগুলো বল না। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে।
রিহাঃ তাহলে কথা দাও।আমার কথা রাখবে।
আমিঃ হুম পাগলি।তবে আমি জানি তুই আমার কাছে ফিরে আসবে।
এবার রিহা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।একটুপর নার্সরা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল।
দীর্ঘ এক ঘন্টা শেষে ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে আসে।আমি তার কাছে যেতেই, আমি কাছে গিয়ে বললাম, " ডাক্তার রিহা সুস্থ আছে,তাই না?
ডাক্তার মুখটা কালো করে বললো," সরি,রোগীকে আর বাচিয়ে রাখা গেল না।"
আমি ওখানেই নিচে বসে পরলাম।সবাই এসে আমাকে একটা বেঞ্চে বসাল।মনে হচ্ছে হাত পা গুলো অবশ হয়ে গেছে। আমার সামনে দিয়ে রিহার লাশটা নিয়ে গেল। চোখে পানি আর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না।
দুমাস পর,
আমি অনেকটা মনমরা হয়ে আছি।এখনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারিনি। এর মধ্যে আম্মুও অসুস্থ হয়ে পড়েন।বাসার সকল দেখাশোনা নিশাই করে।কারন সে যে রিহাকে কথা দিয়েছে।
ছ'মাস পর, আমার কিছুটা জীবন স্বাভাবিক হতে লাগলো। তাও শুধু নিশার যত্নের কারণে।
এরপর আত্মীয় স্বজন সবার জোরে আর আর রিহার কথা ভেবে, নিশাকে বিয়ে করতে রাজি হলাম।নয়তো রিহাকে দেওয়া কথা আমি ভেঙে ফেলব।
অবশেষে নিশার সাথে বিয়েটা হয়ে গেল।
বাসররাতে,
আমিঃ দেখ নিশা আমি তোমাকে স্বামীর পুর্ন অধিকার দিতে পারব না।
নিশাও আর বেশি জোর করেনি।এরপর বিছানার মাজখানে একটা বালিশ রেখে দুজন দুপাশে ঘুমিয়ে পড়ি।এভাবেই আরও দুইটা মাস কেটে গেল।
এরমধ্যে নিশা প্রায়ই আমাকে বললো," আম্মু, তাদের নায় নাতনির কথা আমাকে বলে আমি তাদের কিছু বলতে পারি না।
আমিও নিশার কথায় তেমন উত্তর করি না।কারন রিহাকে যে এখনো ভুলতে পারি না।তাই নিশাকেও স্বামীর অধিকার দিতে পারছি না।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাব তখন নিশা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু আমি তা ভ্রুক্ষেপ করি না।এভাবে আরও দুইটা মাস কেটে গেল। মাঝে মাঝে আম্মু কে নিশার সাথে কথা বলতে দেখি কিন্তু নিশা তার উত্তর দেয় না।আমারও তা দেখে কষ্ট লাগে।
এরপর রাতে প্রতিদিনের ন্যায় নিশা কিছু পাওয়ার জন্য অসহায় ন্যায় তাকিয়ে আছে।আজ ভাবলাম না মেয়েটাকে আর কষ্ট দিব না।ও সত্যি আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার জন্য আম্মুর কাছে উত্তরও দিতে পারে না।
অতঃপর দুজনের পবিত্র মিলন হয়ে গেল।
৫ বছর পর,
রিহাঃপাপা,তুমি প্রতি শুক্রবার কেন এখানে আসে।
আমিঃ মামুনি,এখানে তোমার এক আন্টি আছে।
রিহাঃ তার নাম কি,পাপা?
আমিঃ তার নামও রিহা।
রিহাঃ ও আন্টির নাম আমার এক।কি মজা।
হুম এ আমার মেয়ে রিহা।ওর বয়স ৪ বছর হলো।প্রতি শুক্রবার ওকে নিয়ে রিয়ার কবর দেখতে আসি।নিশা তা জানে আর এর জন্য ও কখনো মন খারাপ করে না।আর আমি এখন নিশাকেও খুব ভালোবাসি।ও তো আগের থেকে এখন আমাকে বেশি ভালোবাসে।মাঝে মাঝে ওকে নিয়েও এখানে আসি।আর আমার মেয়ের নাম রিহার স্মরণেই রেখেছি।❤️
সরি,হয়তো অনেকের মনের মতো করে রাহির সাথে রিহাকে মেলাতে পারলাম না।যদি রিহার সাথে মেলাতাম তবে গল্পটা একমুখো হয়ে যেতে। মানে আগের থেকে অনুমান নির্ভর হয়ে পড়ত।কিন্তু গল্পের একটা আংগিনা আছে তা মেনেই লিখতে হয়।তবে এখানে কিন্তু রাহির অটল ভালোবাসা রিহার ওপরই ছিল।আমি বাস্তব জীবনে হলে অবশ্যই রিহাকে বেছে নিতাম। কিন্তু গল্পের অপ্রত্যাশিত কিছু দেখানোর জন্য করতে হলো। রিহার মৃত্যু দেখানোর সময় আমার নিজেরও কিছু টা খারাপ লাগছিল।
ধন্যবাদ সবাইকে। আপনাদের বড় বড় কমেন্ট গুলো পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে রিপ্লাই করার সময় পাইনা। তাই বলে মন খারাপ করবেন না। আমি কিন্তু সবার কমেন্ট গুলো পড়ি। আমার প্রতি পর্ব লিখতে ৪/৫ ঘন্টা নষ্ট হয় কিন্তু আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো দেখলে সব কষ্ট গুলোও ভুলে যাই।
ভাই বকা দিয়েন না।কষ্ট পাব😁😁