গল্পঃ ডেঞ্জারাস মামাতো বোন পর্ব ৪৩ | Dangerous Mamato Bon Part 43

 

#ডেঞ্জারাস_মামাতো_বোন
(৪৩তম পার্ট)
Writer:- SA Shaheen Alam
.
.
রিমির চিঠি পড়ে আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার মাথা যেন বনবন করে ঘুরছে। এটা মেয়ে না অন্যকিছু.? এক নিমিষেই আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। তরীকে চিঠিতে যেভাবে ভয় দেখিয়েছে তাতে শুধু তরী কেন, পৃথিবীর কোনো মেয়েই আমাকে বিয়ে করবে না। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তরীকে বললাম,
.
-- তুমি কি রিমির ভয়ে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছো.? যাতে রিমি তোমার কোনো ক্ষতি না করে। (আমি)
.
-- হা-হা-হা... কি যে বলো না তুমি। ভয় তো আমি আমার বাবাকেও পাইনা। তাহলে রিমিকে কোন দুঃখে ভয় পেতে যাবো.? আসলে আমি রিমির বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। তাই চাইছি যে তোমার আর রিমির মিলটা হোক। (তরী)
.
-- কিন্তু আমি তো রিমিকে ভালোবাসি না। এক কথা কতবার বলবো। জোর করে তো আর ভালোবাসা হয়না। তোমার কথামত রিমিকে বিয়ে করলে রিমি হয়তো ভালো থাকবে কিন্তু আমি তো ভালো থাকবো না। (আমি)
.
-- অবশ্যই ভালো থাকবে এবং সারাজীবন সুখে থাকবে। যেই সুখ আমি তোমাকে কখনোই দিতে পারবো না। তাছাড়া একটা কথা বলো তো, তুমি যদি রিমিকে ভালো না বাসো তাহলে শোভনকে দেখে এত হিংসা করো কেন.? (তরী)
.
-- আমি আবার কখন শোভনকে দেখে হিংসা করলাম.? তুমি এসব কি যে বলছো না আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। (আমি)
.
-- বুঝেও না বোঝার ভান করলে সারাজীবন বোঝালেও বুঝবে না। তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু খেয়াল করিনি.? আমি সব জানি। যেদিন থেকে তুমি জেনেছো রিমি শোভানকে ভালোবাসে সেদিন থেকে তুমি শোভনের পিছনে লেগেছো। রিমি আর শোভনের ভালোবাসা দেখে তুমি হিংসায় জ্বলছিলে। আবার শোভনকে মাইর ও দিয়েছো। এসব কেন করেছো শুনি.? আমি বলবো.? কারণ তুমি রিমিকে ভালোবাসো। তাই চাওনা রিমির জীবনে তুমি ছাড়া অন্যকেউ আসুক। (তরী)
.
-- তুমি যেটা ভাবছো সেটা সম্পূ্র্ণ ভুল। আসলে আমি শোভনকে মেরেছি কারণ সে একটা ধান্দাবাজ। রিমির সাথে ভালোবাসার নাটক করছিলো। রিমিকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলছিলো তাই রাগের মাথায় মেরেছি। তাছাড়া আর কিছু না। (আমি)
.
আমার কথা শুনে তরী আচমকা হেসে উঠলো। আমি ভ্রু-কুঁচকে তরীর দিকে তাকালাম। এমন একটা মূহুর্তে তরীর হাসার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না আমি। বিনা কারণে হাসছে কেন.? আমি কিছু বলার আগেই তরী হাসতে হাসতে বললো,
.
-- তুমি এখনো বোকাই রয়ে গেলে শাহিন। রিমির প্ল্যানটা এখনো বুঝতে পারলে না। আসলে শোভন হচ্ছে রিমির বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড। তোমার জীবনে রিমির গুরুত্বটা কতখানি সেটা দেখার জন্য রিমি শোভনকে দিয়ে এসব করিয়েছে। রিমির সাথে শোভনের কোনো সম্পর্ক নেই। সবটাই রিমির প্ল্যান ছিল। আর রিমির প্ল্যানটা সাক্সেসফুল হয়েছে। তোমার জীবনে রিমির জায়গাটা কেউ নিতে পারবে না। আর তুমি মানো বা না মানো, রিমি-ই তোমার জন্য পারফেক্ট। (তরী)
.
-- ঘোড়ার আন্ডা পারফেক্ট। আর বোকা আমি নই, তুমি বোকা। রিমি তোমাকে যা বলেছে তুমি সেটাই বিশ্বাস করেছো। আরে রিমি শোভনকে ভালোবাসে বলেই তো ওর জন্য সুসাইড করেছিলো। (আমি)
.
-- রিমি শোভনের জন্য নয়, তোমার জন্য সুসাইড করতে চেয়েছিলো। যখন তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক হয় তখন রিমি মনের দুঃখে সুসাইড করতে চেয়েছিলো। (তরী)
.
-- এসব কথা বন্ধ করো তো। আমি রিমিকে ভালোবাসি না আর ওকে বিয়েও করতে পারবো না, ব্যস। এটাই আমার শেষ কথা। (আমি)
.
-- ঠাস.! (তরী)
.
আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই তরী সপাটে আমার গালে চড় মারলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। তব্দা খেয়ে তরীর দিকে চেয়ে রইলাম কেবল। তরী আমার দিকে আগুন ঝরা চোখে তাকিয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে কিছুসময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ক্ষ্যাপা স্বরে বললো,
.
-- তোমার মাথায় কি সমস্যা আছে.? এক নাম্বারে গাধা তুমি.! আরে যে মেয়েটা তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে, তোমাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করেছে; তার কোনো গুরুত্বই নেই তোমার কাছে। মানুষ এতটা বোকা হতে পারে তোমাকে না দেখলে বিশ্বাস-ই করতাম না। তুমি হাতের লক্ষীকে পা'য়ে ঠেলে দিচ্ছো। (তরী)
.
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে তরী থামলো। আমি চোখ বড় বড় করে তরীর সব কথা শুনলাম। সত্যি বলতে তরীর কথাগুলো আমার কাছে বিষের মত লাগছে। যেখানে রিমির কথা শুনলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়। সেখানে তখন থেকে তরী রিমির গুণগান গেয়ে যাচ্ছে। রিমি কি তরীর উপর কোনো জাদুটোনা করেছে নাকি.?
আমি মনে মনে এসব ভাবছিলাম হটাৎ তরী আবার বলে উঠলো,
.
-- রিমি যেমন তোমাকে ভালোবাসে তেমনি আমি ও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু রিমির ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা দুর্বল। তাছাড়া আমি চাই তুমি সুখে থাকো। আর সত্যি বলতে রিমি ছাড়া কেউ তোমাকে সুখে রাখতে পারবেনা। এমন কি আমি ও না। (তরী)
.
কথাগুলো বলে হাতের উল্টো পিট দিয়ে তরী চোখের পানি মুছলো। বুঝতে পারলাম তরীর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না। সব কিছু তরী আগেই ঠিক করে রেখেছে। এখন আর কিছু বললেও সে শুনবে না। রিমির মত তরী ও প্রচন্ড জেদি। তাই আমি চুপ করে রইলাম। তরী কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদার পর সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। তারপর বললো,
.
-- রিমির মত মেয়ে অনেক ভাগ্য করে পাওয়া যায়। তোমার ভাগ্য খুব ভালো তাই রিমির মত কাউকে পেয়েছো। যে তোমাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। যে তোমাকে তোমার চেয়েও বেশি বোঝে। আমাকে বিয়ে করলে সারাজীবন তোমাকে কম্প্রোমাইজ করে কাটাতে হবে। কিন্তু রিমিকে বিয়ে করলে জীবনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। আর সমস্যা হলেও রিমি ঢাল হয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবে। তোমার উপর কোনো বিপদ আসতে দিবে না।
আরেকটা কথা হচ্ছে, আমার প্রতি তোমার যে মোহ বা ভালো লাগা রয়েছে সেটা কিছুদিন পর আপনা-আপনি চলে যাবে। তাই আমাকে বিয়ে করলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে। (তরী)
.
-- তাহলে তোমার কি হবে.? মানলাম তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা রয়েছে। কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। আমাকে ছাড়া তুমি থাকবে কিভাবে.? কষ্ট হবে না তোমার.? (আমি)
.
-- শুধু কষ্ট না, অনেক কষ্ট হবে তোমাকে ছাড়া থাকতে। তবে এটা ভেবে খুশি হবো তুমি সুখে থাকবে বলে। তাছাড়া ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া নয়। অনেক সময় ত্যাগের মাধ্যমেও ভালোবাসা ফুটে উঠে। (তরী)
.
-- সেটাই যদি হবে তাহলে রিমি কেন ত্যাগ করলো না.? রিমি তো জানে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে সে কেন তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিলো.? এটা কি অন্যায় নয়.? (আমি)
.
-- ভালোবাসা আর যুদ্ধে ন্যায়-অন্যায় বলতে কিছু নেই। তাছাড়া সবকিছুই আল্লাহ'র হাতে। হয়তো রিমির ভালোবাসায় জোর বেশি ছিল তাই আল্লাহ আমাকে সরিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তো আর আমাদের খারাপ চায় না। তিনি যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করে। তুমি রিমিকে বিয়ে করো। (তরী)
.
-- আমি রিমিকে বিয়ে করতে পারবো না। রিমির প্রতি আমার কোনো ফিলিংস-ই নেই; ভালোবাসা তো দূরে থাক। ওকে বিয়ে করলে সারাজীবন কাটাবো কিভাবে.? বিয়ে তো আর ছেলেখেলা নয়। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এতে ভবিষ্যতে আমার কি হবে হোক। (আমি)
.
-- আবার এক কথা। ফের চড় খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি.? চলে যাও এখান থেকে। তুমি সামনে থাকলে নিজেকে বেশিক্ষণ কন্ট্রোল করতে পারবো না। (তরী)
.
-- তোমাকে যে আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আরে তুমি অন্যের ভালোবাসার জন্য নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইজ করছো কেন.? তোমার মত মানুষ আমি এই প্রথম দেখলাম। (আমি)
.
-- কারণ আমি তোমার ভালো চাই। তাই এসব করছি। আর আমাকে অত জ্ঞান দিতে হবে না। তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও। রিমি তোমার অপেক্ষায় আছে। (তরী)
.
কথাগুলো বলে তরী আমাকে ঠেলে বাইরে বের করে দিতে চাইলো। বাধ্য হয়ে আমিও চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু হটাৎ তরী আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর কাঁদতে লাগলো। জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ একনাগাড়ে কাঁদলো। তারপর যেভাবে আমাকে আচমকা জড়িয়ে ধরেছিল ঠিক সেভাবেই ছেড়ে দিলো। চোখের পানি মুছে ভারি গলায় বললো,
.
-- আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। ভেবোনা শুধু রিমির জন্য তোমাকে ছেড়ে দিলাম। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি। আর রিমিকে কোনো কষ্ট দিও না। ও তোমাকে অনেক সুখে রাখবে। (তরী)
.
তারপর তরী আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো। আমি আর কিছু বলার সময় পেলাম না। তবে মনে মনে রিমির উপর প্রচন্ড রাগ উঠলো। হারামজাদি আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।
আমি রাগে ক্ষীপ্ত হয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখি আরেক কান্ড। যেটার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না।
.
চলবে..... ?????
.
#প্রেম_বিশেষজ্ঞ
.
(নেক্সট পার্টে চমক আছে। সবাই জাস্ট একটু ওয়েট করেন। গল্পটা আর বেশি নেই। তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো। তারপর নতুন গল্প শুরু করবো।
আর আজকের পার্ট কেমন হয়েছে কমেন্ট করে জানান। সবার মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। অবশ্যই সবাই ফিডব্যাক দিবেন।
আর হ্যাঁ, যাদের আমার গল্প নিয়ে সমস্যা(চুলকানি) আছে, প্লিজ তারা এড়িয়ে চলেন। কেউ আমাকে টাকা দেয় না গল্প লেখার জন্য। আমি জাস্ট নিজের মনকে খুশি করার জন্য লিখি। তাছাড়া আমাকে সারাদিন কাজ করতে হয়। অন্য লেখকদের মতো বড় লোকের ছেলে না আমি। কাজ করে খেতে হয়। সো, বি কেয়ারফুল। অন্যকে সম্মান দিন, সবাই আপনাকে সম্মান দিবে। আজেবাজে কথা বলবেন তো...... বাকিটা বুঝে নিয়েন।)
ধন্যবাদ সবাইকে.!
হ্যাপি রিডিং... ♥♥♥
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post