গল্পঃ ডেঞ্জারাস মামাতো বোন পর্ব ৪৭ | Dangerous Mamato Bon Part 47

 

#ডেঞ্জারাস_মামাতো_বোন
(৪৭তম পার্ট)
Writer:- SA Shaheen Alam
.
.
-- ভেতরে আসতে পারি.?
.
রিমির কথা ভেবে চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছিলাম এমন সময় কে যেন কথাটা বলে উঠলো। আমি দরজার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম.! রিমি দাঁড়িয়ে আছে।
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই রিমি ঘরে ঢুকলো। আমার পাশে এসে বসলো। আমি রিমিকে এড়ানোর জন্য মিছিমিছি ল্যাপটপে কাজ করছি। রিমি একটু চুপ থেকে শান্ত গলায় বললো,
.
-- কেমন আছো.?
.
-- দেখতেই তো পাচ্ছিস।
.
-- আমি আসাতে তুমি বিরক্তবোধ করছো নাকি.?
.
আমি কিছু বললাম না। আনমনে ল্যাপটপ চাপাচাপি করছি। রিমি আবার বললো,
.
-- আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে না তো।
.
-- প্রয়োজন মনে করছি না। তাছাড়া দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছিস।
.
আমার কথা শুনে রিমি চুপ হয়ে গেলো। হয়তো কষ্ট পেয়েছে আমার কথা শুনে। আড় চোখে রিমির দিকে চেয়ে দেখি চোখের কোণে পানি টলোমলো করছে। এই বুঝি কেঁদে দিবে। কিন্তু রিমি কাঁদলো না। তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে বললো,
.
-- তুমি ঠিক আগের মতই আছো। এখনো মানুষের উপরের দিকটা দেখে সবকিছু বিচার করো। কখনো কারো মনের কথাটা বুঝার চেষ্টা করো না।
.
-- আমার অত বুঝে কাজ নেই। আর আমি যেমন ছিলাম তেমনি আছি। তোর মত বদলে যাই নি।
.
রিমি আমার কথার অর্থ মনে হয় বুঝতে পারে নি। কেমন ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি কড়া গলায় বললাম,
.
-- আমার ঘরে কেন এসেছিস.? তোর স্বামী মনে হয় তোকে খুঁজছে।
.
-- স্বামী.! কার স্বামী.? এসব কি বলছো তুমি.?
.
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিমি। আমার প্রচন্ড রাগ উঠে। ঢং দেখলে বাঁচি না। বিদেশ থেকে বিয়ে করে এসেছে, এখন আবার স্বামীকে চিনে না। আমি রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
.
-- অত নাটক দেখাতে হবে না। নিচে যে ছেলেটা বসে আছে সেই ছেলেটা তোর স্বামী হয়। কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝিনা.?
.
আমার কথা শুনে রিমি কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু বলে না। বসা থেকে উঠে চলে যেতে থাকে। আমি বিদ্রুপের স্বরে বলি,
.
-- ছেলেটার সাথে তোকে কিন্তু দারুণ মানিয়েছে.! তা কবে বিয়ে করেছিস.? আমাকে একবার জানাতে পারতি।
.
রিমি এবার মুখ খুললো। ঘরে আসার পর থেকে সে নরম স্বরেই কথা বলছিলো। কিন্তু এবার রিমির চেহেরায় কিঞ্চিৎ রাগের আভা ফুটে উঠেছে। রিমি বেশ কড়া গলায় বললো,
.
-- তুমি আমার কে যে তোমাকে জানাতে যাবো। তুমি আগেও আমার কেউ ছিলে না, এখনো কেউ নও। আর বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পরেই আমি শরীফকে বিয়ে করেছি। কিছুদিন পর আমাদের বাচ্চাও হবে।
.
রিমির কথাগুলো শুনে আমার বুকটা ফালাফালা হয়ে গেলো। আমার ধারণাই তাহলে ঠিক। শরীফ নামের ছেলেটা রিমির স্বামী। সত্যি বলতে কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
রিমি কি করে এমনটা করতে পারলো। আমাকে ভালোবাসা শিখিয়ে নিজেই কিনা অন্যকাউকে ভালোবাসলো.! একটি বার ভাবেনি তাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচবো। মানছি রিমিকে আগে না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে আমাকে এত বড় শাস্তি দিবে.? এর চেয়ে ভালো রিমি আমাকে মেরে ফেলতো। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখা সত্যি-ই বড় বেদনাদায়ক। আমি চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে বললাম,
.
-- শুনে ভালো লাগলো। দোয়া করি তোরা সুখী হ।
.
-- ধন্যবাদ.! আর হ্যাঁ, আম্মু তোমাকে খেতে লাগছে।
.
-- ক্ষিদে নেই।
.
-- কেন.? বেলা তো অনেক হয়েছে। এখনো ক্ষিদে লাগেনি কেন.?
.
-- এমনি। বিরক্ত না করে যা তো এখান থেকে।
.
-- বুঝেছি। আসলে আমি বিয়ে করেছি শুনে তুমি মোটেও খুশী হওনি। খুব কষ্ট পেয়েছো তাইনা.?
.
রিমির কথা শুনে রাগটা আরো বেড়ে গেলো। এখন আমার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। আমি রাগে আগুন হয়ে বললাম,
.
-- এতই যখন বুঝিস তাহলে বিয়েটা করলি কেন.? আবার নাকি বাচ্চাও হবে.!
.
-- কি করবো বলো, বিদেশে গিয়ে আমি শরীফকে ভালোবেসে ফেলি। তাই বিয়ে করেছি।
.
-- কিন্তু তুই তো আমাকে ভালোবাসতি। বিদেশে যাওয়ার আগে চিঠিতে কি লিখেছিলি মনে নেই.?
.
-- উহু, মনে নেই। তাছাড়া ওসব কথা আর মনে রাখতে চাইনা। মানছি একসময় তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, তোমার জন্য পাগল ছিলাম। কিন্তু এখন আর তোমাকে ভালোবাসি না। এমনকি বিদেশে যাওয়ার পর তোমার কথা মনেও পড়তো না। বরং অতীতের কথা ভেবে হাসতাম। কি বোকাটাই না ছিলাম আমি। তোমার জন্য কত্ত পাগলামি করেছি। হাহাহা.!
.
রিমি শব্দ করে হাসতে লাগলো। আমি নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। মানুষ ঠিকই বলে, দূরে গেলে ভালোবাসা কমে।
রিমি যখন এখানে ছিলো তখন আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর সব পাল্টে গেছে। সে আমাকে ভুলে অন্যের সাথে জীবন বেঁধেছে। ইশ, কয়েকটা বছর আগে যদি রিমির ভালোবাসাটা বুঝতাম তাহলে জীবনটা অন্যরকম হতো। আজ শরীফের জায়গায় আমি থাকতাম। জীবনে ভালোবাসার কমতি থাকতো না।
আমি এসব ভাবছি আর অশ্রু ঝরাচ্ছি। রিমি আমার চোখের পানি দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
.
-- এমা.! তুমি কাঁদছো কেন.? কি হয়েছে তোমার.?
.
আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বললাম,
.
-- কিছু না। চোখে পোকা পড়েছিলো।
.
আমার কথা শুনে রিমি মুচকি হাসলো। আমি যে মিথ্যা বলেছি তা সে বুঝে ফেলেছে। রিমি একটু চুপ থেকে বললো,
.
-- তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেসা করবো.?
.
-- না। তুই এখান থেকে যা তো। তোর স্বামী মনে হয় তোকে খুঁজছে। অনেক্ষণ ধরে এখানে আছিস।
.
-- ধুর, কিচ্ছু হবে না। আগে আমার একটা প্রশ্নের দাও তারপর যাবো।
.
-- তাড়াতাড়ি বল।
.
-- আমি জানি শরীফকে বিয়ে করাতে তুমি একটুও খুশী হওনি। কিন্তু কেন বলো তো.? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো.?
.
-- না।
.
ছোট করে উত্তর দিলাম আমি। রিমির সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। তবে রিমির কথার জবাবে বলতে ইচ্ছে করছিলো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বলি নি। ভেতর থেকে বাঁধা এলো। রিমি এখন বিবাহিতা.! আমি যে ওকে ভালোবাসি তা বলা ঠিক হবে না। তাছাড়া আমি যে রিমির প্রতি দুর্বল তা প্রকাশ করা উচিত না। রিমি আরো পেয়ে বসবে তখন।
আর সবচেয়ে বড় কথা আমার ভালোবাসা রিমির কাছে কোনো মূল্য নেই। তাই রিমিকে এক সাগর পরিমাণ ভালোবাসার পরও প্রকাশ করলাম না। কিন্তু রিমি আমার কথা শুনে হাসা শুরু করে দিলো। আমার গা জ্বলে গেলো রিমির হাসি দেখে। রিমি কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,
.
-- মিথ্যাে বলো না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।
.
-- বললাম তো ভালোবাসি না।
.
-- তাহলে এখনো বিয়ে করোনি কেন.? কার অপেক্ষায় বসে আছো.? আমার.? কিন্তু আমি তো বিয়ে করে ফেলেছি। এখন তোমার কি হবে.? ইশ, আমি তোমাকে ছ্যাকা দিলাম তাইনা.? হাহাহা.!
.
রিমি আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সব জেনেও রিমি আমাকে নিয়ে মজা করছে। আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। প্রচন্ড রাগ উঠলো। রিমিকে ধমক দিলাম। রিমি হাসি থামিয়ে চোখ সরু করে তাকিয়ে রইলো। আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় মা ঘরে ঢুকলো। তারপর রিমি ও আমার উদ্দেশ্যে বাজখাই গলায় বললো,
.
-- সারাদিন কি শুধু গল্প করেই কাটাবি.? কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি।
.
-- আমার ক্ষিদে নেই। তোমার আদরের ভাগ্নিকে বেশি করে খাওয়াও।
.
-- মেয়েদের মত ঢং করিস না তো। খাবি চল।
.
মা আমাকে জোর করে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি আরেক দফা অবাক হলাম। শরীফ নামের ছেলেটার পাশে অন্য একটা মেয়ে বসে আছে। নতুন বউয়ের মত মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দেওয়া এবং মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে। আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে শরীফ মুচকি হাসলো। কিন্তু কিছু বললো না। আমি মাকে ইশারায় বললাম মেয়েটা কে। মা হাসিমুখে জানালো মেয়েটা শরীফের বউ।
.
আমি এবার এতটাই অবাক হলাম যে এই বুঝি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। শরীফের সাথে তো রিমির বিয়ে হয়েছে। তাহলে এই মেয়েটা শরীফের বউ হয় কি করে.? মাথায় তো কিচ্ছু ঢুকছে না। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
.
চলবে....... ??????
.
#প্রেম_বিশেষজ্ঞ
.
(অনেকদিন পর গল্পের নতুন পার্ট দিলাম। জানি সবাই রেগে আছেন। সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী.! কেউ মনে রাগ পুষে রাখবেন না। গল্পটা কেমন হয়েছে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের সবার অনুপ্রেরণাই আমার সাফল্য। আর পরের পার্ট'টা বড় করে দিবো এবং পরের পার্টে সব রহস্যের জট খুলবে। জানতে পারবেন আসল ঘটনা কি।)
ধন্যবাদ সবাইকে.!
হ্যাপি রিডিং... ♥♥♥
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post