পর্ব : ১৮ ও শেষ পর্ব
লেখক:#মুহাম্মদ_আজিজুল
আমি মেয়ের দিকে তাকাতেই পারছিনা।খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।
মেয়েকে বললাম চলো আমরা দুজন খুঁজতে যাই।মেয়ে মাথা নারিয়ে বলল আচ্ছা।
তার পর আমরা দুইজন মিলে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।
মেয়ে:আব্বু আমার না ভালো লগছে না। পেট ব্যথা আর মাথা ঘুরছে।
আমি:চলো আম্মু হাসপাতালে যাই, পরে খুঁজবো আমি একা একা।
মেয়ে:না আমিও তোমার সাথে খুঁজবো এখন চলো হাসপাতালে।
আমি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতে আসলাম।
আমাদের একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক অন্য একটা বেডে শুয়ে আছে।
মেয়ে:আব্বু ওই বেডের লোকটাকে কেন যেন চেনা চেনা লাগছে।
আমি:তুমি তো ওই লোকটাকে দেখোইনি কেমন করে চেনা চেনা লাগবে!
মেয়ে:না আব্বু দেখো আমার বুক দরফর দরফর করছে। আমি দেখবো উনি কে।
আমি:এখন তুমি অসুস্থ। ডাক্তার আসুক পরে দেখো।
মেয়ে:আমার সব সেরে গেছে আমি এখন সুস্থ
আমি:আচ্ছা দেখে আসো।
ওর মায়ের মতোই জেদি হয়েছ। একবার যা বলবে তাই করবে।
মেয়ে:আসো। তুমিও আমার সাথে দেখবা।
আমি:চলো।
আমরা গিয়ে দেখি বেডে যে শুয়ে আছে সে আর কেউ না এটা হলো অনু।
মেয়েতো কান্না করে জড়িয়ে ধরে আর বলতে লাগলো আম্মু তোমার কি হয়েছে? আম্মু তোমার কি হয়েছে?
পাশ থেকে একজন ডাক্তার এসে বলল " একে ঘুমের ঔষধ দেয়া হয়েছে।
আমি:তার মানে ও এখন ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা ওর কখন ঘুম ভাঙ্গবে?
ডাক্তার:তিন চার ঘন্টা পরে।
আমি:আচ্ছা ওর কি হয়েছে বলতে পারবেন?
ডাক্তার:উনি এখন এক মানুষিক রোগি আর জান্নাতি কে।
আমি:কেন?
: এ শুধু জান্নাতি জান্নাতি বলে তাই বললাম।
আমি:জান্নাতি আমার মেয়ে।
ডাক্তার:তাহলে মেয়েকে ওর কাছে রাখবেন জ্ঞান ফিরলে আবার জান্নাতি জান্নাতি বলবে।
আমি:ও যে এখানে সে খবর আপনারা তার বাসায় পৌঁছে দেননি কেন?
ডাক্তার:উনি বাসায় বলতে বারণ করেছিলো।
: ওহ আচ্ছা।
আমি অনুর আব্বু আম্মুর কাছে কল করে বললাম অনু আমাদের কাছে আছে কেউ আর চিন্তা করবা না।
আমি মেয়েকে বললাম চলো এখন আমরা বাসায় যাই পরে আবার আসবো।
মেয়ে:আব্বু তুমি যাও আমি আম্মুর কাছে থাকবো।
আমি:আচ্ছা আমিও থাকি তাহলে।
আমি বশে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
একটা শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।শব্দটি ছিলো আম্মু তুমি চলে যাও। নয়তো তোমার আব্বু জানতে পারলে অনেক বকবে।
আমি:উঠে অনুর কাছে এসে বললাম তুমি কি আমার মেয়ের আম্মু হবে?
অনু কোনো কথা না বলে দুচোখ বুজলো আর চোখ বেয়ে অঝরে পানি ঝরতে লাগলো।
মেয়ে:আম্মু তুমি কেন কান্না করছো?
অনু:আজিজ তুমি মেয়ে কে নিয়ে চলে যাও।
আমি:মেয়ে তোমাকে ছাড়া যাবে না। আমাদের সাথে তোমাকেও যেতে হবে।
অনু:দেখো আম্মু তুমি তোমার আব্বুর সাথে বাসায় চলে যাও। আমি সুস্থ হলে তোমাদের বাসায় যাবো।
মেয়ে:না তুমি যতদিন পর্যন্ত সুস্থ না হবে আমি তোমার কাছেই থাকবো।
আমি:অনু প্লিজ চলো না আমাদের সাথে। দেখো মেয়েটা তোমার জন্য তিন-চার দিন ধরে ভালো ভাবে খায়না । আমার মেয়ের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। প্লিজ তুমি না করো না।(হাত ধরে)
অনু:আগে আমি ঠিক হই তার পরে তোমার সাথে কথা আছে(চোখ বুজে)
আমি:তুমি এখন যথেষ্ট সুস্থ।
অনু:আম্মু তুমি একটু রুম থেকে বের হও তোমার আব্বুর সাথে একটু কথা আছে।
মেয়ে চলে গেলো।
অনু:আজিজ শোনো আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু বলতে সাহস হয়নি।তোমাকে পাইনি তার জন্য বিয়ে করিনি।কয়দিন আগেও তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর ভালোবাসি না ।
আমি:কিন্তু কেন?
অনু:প্লিজ তুমি চলে যাও।তোমার মতো একটা স্বার্থপর মানুষকে চিনতে আমি ভুল করেছিলাম।সকল কথার এক কথা আমি তোমাকে এখন বিয়ে করতে পারবো না(চোখ বড় বড় করে)
আমি:আমাকে ভালো বাসতে হবে না। তুমি শুধু আমার মেয়ের আম্মু হবে।
অনু:সম্ভব না। প্লিজ তুমি চলে যাও।
আমি: হুম যাচ্ছি ভালো থেকো।
আমি রুম থেকে বের হয়ে মেয়েকে বললাম চলো আম্মু আমরা বাসায় যাবো।
মেয়ে:আব্বু তোমার চোখে পানি কেন? আমিতো বলেছি আম্মুকে ছেড়ে আমি যাবো না।
আমি:অনু তোমার আম্মু হতে রাজি না।তোমাকে আম্মু বলার অধিকার দিবে না।
মেয়ে:আচ্ছা তুমি চলে যাও আমি এখানেই থাকবো(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)
আমি মেয়ে কে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম " চলো বলছি(রেগে)
এই প্রথম আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললাম!আমার চোখের পানি আর বাধ মানছে না।
অনু দৌড়ে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আমাকে বলল " তুমি কারো আব্বু হবার যোগ্য না।চলে যাও তুমি।
আমি দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছি আর দু-চোখের পানি বেয়ে বেয়ে নিচে পড়ছে।
আসলে.....
আমি লাবন্যকে বিয়ে করার আগে অনুকে ভালো বেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমরা ছিলাম বন্ধু তাই বলতে ভয় করতো। আর একেতো আমি অনুদের বাসায় থাকতাম।এই কারণে আর বলতে পারিনি।
লাবন্যকে বিয়ের করার পরে সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম।কিন্তু যখন অনুর সাথে আবার দেখা হলো তখন থেকে আমার ভিতর ঢোল বেজে ওঠে।
কিন্তু যখন শুনতে পারলাম আমার জন্য ও বিয়ে করে নাই তখন ওর প্রতি আমার অনেক মায়া লাগলো।
কিন্তু আমার মেয়ের ভালোবাসা কাউকে ভাগ দিতে চাইনি তাই আমি অনুকে আমার মেয়ের আম্মু বানাতে চাইনি।
কিন্তু জার ভালোবাসার জন্য আমি অনুকে আমার জীবন থেকে দূরে রেখেছি,
এখন মেয়ের জন্যই অনুর কাছে আমাকে যেতে হচ্ছে।
এমন সময় অনু বলল " আজিজ বাইরে না থেকে তুমি যেতে পারো মেয়ে আমার কাছেই থাক(মিক্সার কন্ঠে)
আমি:না আমি নিয়ে যাবো আর মেয়ে সকাল থেকে এখনে কিছু খায়নি।
অনু:ওটা আমি দেখবো। তোমাকে যেতে বলছি যাও।
আমি বাসায় চলে আসলাম।
এসে আবার হাসপাতালে চলে আসলাম।কিন্তু এসে দেখি আমার মেয়ে ও নেই অনু ও নাই!কোথায় গেলো ওরা?
অনুর আম্মুর কাছে কল বরে বললাম অনু কি বাসায় গেছে।
আন্টি:না।
আমি:ও বাসায় গেলে আমাকে কল করবেন। (কল কেটে দিয়ে)
ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম ওই রুমের পেশেন্ট কখন বের হয়েছে।
ডাক্তার:আপনার পর পরি তো তারা বেরিয়ে গেছে।
আমি:আচ্ছে ওরা কি কিছু বলেছে যে কোথায় যাবে।
ডাক্তার:না সেটা বলেনি।
আমি:আচ্ছা।
আমি চলে আসলাম অনুদের বাসায়। এখানে নেই আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আমাদের বাসায় আসলাম এসে দেখি সবাই মিলে বাসা সাজাচ্ছে।
আমি:তোমরা এসব কি করছো?
আম্মু:দেখছিস না।
আমি:মা দেখছি তো কিন্তু এগুলো কেন।
আম্মু:আরে হাদারাম তোর বিয়ে অনুর সাথে।
আমি:জান্নাতি কোথায়?
: দেখ মনে হয় রুমেই আছে।
আমি রুমে এসে দেখি অনু মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে । ভালোই লাগছে অনু আমার বউ হবে।
আমি আস্তে আসবতে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। দেখি মেয়ে জেগে আছে।
মেয়ে:আমি তোমারি অপেক্ষা করছি বসো তুমি।
আমি বসতে যাবো এমন সময় ঘুম জড়ানো চোখে অনু বলে উঠলো বসবা না।
আমি:কেন?
অনু:আমি আছি তাই।
আমি:আম্মু তুমি একটু বাইরে যাও আমি তোমার আন্টির সাথে কিছু কথা বলবো।
মেয়ে:কে আন্টি অনু আমার আম্মু।
আমি:ওকে এবার বাইরে যাও।
তার পরে মেয়ে চলে গেলো।
এদিকে অনু লাফ দিয়ে উঠে বলল" তুমি মেয়েকে তাড়িয়ে দিলা কেন?
আমি:তুমি না ঘুমাচ্ছো তোমার চোখে তো ঘুমে টলমল করছে।
অনু:আমি তোকে কখনো স্বামী হিসাবে মেনে নেবো না।
আমি:আমি তোর স্বামী হতে চাই না। তুই আমার মেয়ের আম্মু হলেই হবে(এগিয়ে যেতে যেতে)
অনু:কিন্তু আমি তোকে বিয়েও করছি না।
আমি:তুই এমন কথা বলবিও না।যদি মেয়ে শোনে কান্না শুরু করবে। আর তোর চোখে তো অনেক ঘুম যদি পড়ে গিয় কিছু হয় তাহলে আমার মেয়ে আমার দোষ দিবে অত এব তুই বসে আমার সাথে কথা বল(ওর দিকে হাত বাড়িয়ে)
অনু:আমার কিছু হলে তোর কি হুম? আমি মরলে বাঁচলে তোর কি?
আমি ওর মুখে হাত দিয়ে বন্ধ করে বলতে শুরু করলম " এসব কি বলছিস ? আর একবারও বলবে না ৩২ টা দাত ফেলে দেবো একটা থাপ্পড় দিয়ে।
অনু:ইউ!তুই আমাকে থাপ্পড় দিবি (রেগে আমাকে ধরতে আসতে আসতে)
আমাকে কেমন করে ধরবে? দিলাম একটা দৌড় কিন্তু দৌড় দিয়ে কোথায় যাবো? বাইরে তো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম অনু এসে আমার সাথে ধাক্কা খেলো। ভাবছো পড়ে গেলো
আরে না ও পড়ে যায়নি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
আমি:এই ছাড়ে মেয়ে আসবে তো।
অনু:আমি কি ইচ্ছা করে ধরেছি। আমি বাসায় গেলাম আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না(রেগে)
আমি:আর সব বলো কিন্তু বিয়ে করবা না এটা বলবানা।
অনু:আমি বিয়ে করবো না(হাঁটতে হাঁটতে)
আমি পিছু পিছু রওনা দিলাম ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে তো। ও যদি বিয়ে সত্যি সত্যি না করে আমার মেয়ে আমাকে মেরেই ফেলবে।
কিছুদূর হেঁটে গিয়ে অনু পড়ে গেল রাস্থায়!
আমি দৌড়ে গিয়ে অনুর গায়ে হাত দিয়ে দেখি ওর গায়ে প্রচুর জ্বর।
আমি তাড়াহুড়া করে একটা হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।
হাসপাতালে দুজনের মাঝে অনেক কিছু হয়েছে যার কারণে দুজনি লজ্জিত।
হাসপাতাল থেকেই অনুকে ওর বাসায় দিয়ে আসলাম।
সারা রাস্তায় একটা কথাও বলিনাই সরমে।
নিজেই নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছে।
আমি বাসায় এসে গোসল করে রুমে আসতেই অনু কল করলো।
আমি:ভয়ে ভয়ে হ্য হ্য হ্য।
অনু:হ্য হ্য হ্য করছো কেন, কি করছো?
আমি:এইতো গোসল করলাম তুমি?
অনু:আমিও। মেয়ের কাছে দাও তো(নরম কন্ঠে)
মনে হয় আমাদের বিয়ে আর কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আমি:এই নাও।
লাউড স্পিকার দিয়ে মেয়ের কাছে দিলাম।
অনু:আম্মু তুমি কি কালার শাড়ি পছন্দ করো?
মেয়ে:আকাশি কালার আমার এবং আব্বুর খুব পছন্দ।
অনু:ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো। জানো তোমার আব্বু আজ কি করেছে?
মেয়ে:আমি কেমন করে জানবো?তুমি বলো।
অনু:তাহলে শোনো।বিকালে আসার সময় তোমার আব্বু আমাকে নিয়ে কোথায় গিয়াছিলো জানো?
মেয়ে:কোথায়?
অনু:একটা.....
বলার আগেই আমি ফোনটা নিয়ে বললাম" কি বলতে চাইছিলা মেয়ের কাছে হুম।।
অনু:কাল আমাদের বিয়ে যানো।
আমি:না।
অনু:ভালো রেডি হয়ে থেকো।
আমি:আচ্ছা।
পরের দিন আমাদের বিয়ে হলো আজ আমার জীবনে দ্বিতীয় বাসর রাত।
বাসর ঘড়ে আমি অনু আর মেয়ে অনেক গল্প করলাম।কিছুক্ষণ পরে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
অনু:খুব লেগেছিলো তাই না।
আমি:কি?
অনু:যেইটা হাসপাতালে ওটা করার সময় আমি যে তোমাকে খামচি দিয়াছিলাম।
আমি:ধুর পাগলি কিছুই হয়নি একটু দাগ হয়ে গেছে।তুমি কি আমার কোল বালিশ হবে?কোল বালিশ ছাড়া আমার ঘুম হয়না।
অনু:ওলে আমার মিষ্টি বড় রে।
তার পরে আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লম।
______________ সমাপ্তি
__________________
গল্প:#বড়লোকের_মেয়ের_সাথে_প্রেম
পর্ব : ১৮ ও শেষ পর্ব
লেখক:#মুহাম্মদ_আজিজুল