আজকে অফিসে আসতে একটু লেট হয়ে গেছে। কারন রাস্তায় অনেক জেম ছিলো। অফিসে ঢুকে নিজের কেবিনে এসে বসতে না বসতেই পিয়ন এসে বললো, ম্যাম নাকি তার কেবিনে যেতে বলছে।
আজকে কপালে শনি আছে মনে হয়। বসে না থেকে ম্যামের কেভিনের সামনে গিয়ে, দাঁড়িয়ে বললাম।
আমি/: ভিতরে আসবো ম্যাম।
ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
ম্যাম /: হুম আসুন।
আমি ভিতরে ঢুকে ম্যামের সামনে গেলাম। আজকে ম্যামকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ম্যাম বললো।
ম্যাম/: এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো। আর আজকে অফিসে আসতে এতো লেট কেনো।
আমি/: আসলে ম্যাম , নীল শাড়িতে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। যেনো একটা পরি। আর রাস্তায় জেম ছিলো। তাই আসতে লেট হয়ে গেছে।
ম্যাম/: ঠিক আছে। কালকে থেকে যেনো দেরি না হয়। এখন যান, নিজের কেবিনে গিয়ে কাজ করুন।
আমি আর কোনো কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে আসলাম। সালা এ কথা বলার জন্য কেবিনে ঠেকেছে। আমি বসে বসে কাজ করতে লাগলাম।
এবার পরিচয় পালা শেষ করে নি, আমি রাসেল। বর্তমানে এই অফিসে কাজ করি। পরিবারে আমি আব্বু আম্মু আর একটা কিউট বোন আছে। বোনটা এবার ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে। আর বাবা নিজেদের অফিস দেখাশোনা করে।
এখন আপনারা হয়তো বলবেন, নিজের অফিস থাকতে অন্য অফিসে কাজ করি কেনো। কারন টা হচ্ছে, আমার অফিসের ম্যাম। দূর খালি ম্যাম বলি কেনো। ওর আব্বু আম্মু কি সুন্দর নাম রেখেছেন ফারিয়া ( এবার নায়িকার নাম চেঞ্জ করে দিছি, কারন মারিয়া কে নায়িকা দিলে , সবাই বলে , মারিয়া আমার কি হয়। এবার কিন্তু বললে মাথা ফাটিয়ে দিমু) তো যাই হোক।
ফারিয়াকে আমি একদিন রাস্তার পাশে দেখে পছন্দ করে ফেলি। তার পর ওর পিছু নেওয়া শুরু করি। পিছু নেওয়ার পর জানতে পারি, ফারিয়া তাদের অফিস দেখাশোনা করে। আমার কপাল ভালো, ওই সময় তাদের অফিসে লোক নেওয়া হচ্ছে। তখন আমি এই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসি। আল্লাহ রহমতে চাকরি টা হয়ে যায়।
আজকে পাঁচ দিন হয়েছে , অফিসে কাজ করি। আমি অফিসে ফারিয়ারদিকে সবসময় তাকিয়ে থাকি। ফারিয়া অনেক শান্ত। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। ফারিয়া বাহিরের রাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে। আর ফারিয়া আমার আসল পরিচয় জানে না।
কাজ করতে করতে দুপুরের লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেছে। আমাকে গতকাল দুইটা ফাইল দিছে, আজকের দিনের ভিতরে করে দেওয়ার জন্য। ফাইল দুটোর কাজ শেষ। আসলে কাজে আমার কোনো সমস্যা হয় না। কারন আব্বুর সাথে মাঝে মধ্যে অফিসে গিয়ে কাজ করতাম।
ফাইল দুটি নিয়ে ফারিয়ার কেভিনের সামনে গিয়ে বললাম।
আমি/: ভিতরে আসবো ম্যাম।
ফারিয়া/: হুম আসুন। ( একটা ফাইলের কাজ করতে করতে বললো)
আমি /: আসলে ম্যাম গতকাল যে দুটি ফাইল দিছেন, । সেগুলোর কাজ শেষ।
ফারিয়া): কিহ, এতো তাড়াতাড়ি ফাইলের কাজ শেষ। দেখি তো কেমন কাজ করেছেন।
ফারিয়া আমার হাত থেকে ফাইল দুটো নিয়ে দেখতে লাগল। দেখা শেষ হলে আমাকে বললো।
ফারিয়া/: গুড, আপনি তো দেখছি খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারেন। আমি একটা ভুল পাইনি। কিভাবে করলেন, আমার অফিসে যতো লোক আছে। তারাও তো পুরো দিনে করতে পারবে না। আমি আপনার কাজ দেখে অনেক খুশি হয়েছি। আপনার বেতন জানি কতো টাকা।
আমি/: ম্যাম ২০ হাজার টাকা।
ফারিয়া/: আজকে থেকে আপনার বেতন ২৫ হাজার টাকা। পাঁচ হাজার বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
আমি মনে মনে বললাম। আমার টাকার দরকার নেই। তুমি শুধু আমার হলে হবে। হঠাৎ ফারিয়া আমার মুখের সামনে চুটকি দিয়ে বললো।
ফারিয়া/: কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলেন। আপনাকে এতোক্ষণ ডাকছি শুনেন না।
আমি/: কিছু না ম্যাম। বলুন।
ফারিয়া/: লাঞ্চ এর টাইম তো হয়ে গেছে। চলুন আজকে আপনার সাথে খাবার খাবো।
আমি তো মনে মনে খুশি। তার পর ফারিয়ার সাথে কেভিন থেকে বেরিয়ে কেন্টিনে চলে গেলাম। একটা টেবিলে বসার পর ফারিয়া খাবারের ওয়াডার দিলো। কিছুক্ষণ পর ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।
দুজনে খাবার খেতে লাগলাম। আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কি সুন্দর করে খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ মারিয়া বললো।
ফারিয়া/: আমার দিকে না তাকিয়ে খাবার খান।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। দুজনে খাবার খেয়ে অফিসে চলে গেলাম। আমি আমার কেবিনে চলে আসলাম। হঠাৎ একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বললো।
মেয়ে/: হায় আমি রিয়া। তুমি
আমি/: আমি রাসেল, আজ পাঁচ দিন হলো অফিসে জয়েন্ট করেছি।
রিয়া/: সেটা আমি জানি। কিন্তু তুমি কারো সাথে কথা বলো না কেনো। খালি দেখি ম্যামের সাথে কথা বলো।
আমি/: আসলে আমি কাজের মধ্যে থাকতে পছন্দ করি। আর ওনি অফিসের বস। তার সাথে কথা বলতে পারি।
রিয়া/: কিন্তু আমরাও তো অফিসে কাজ করি। আমাদের সাথে কথা বলা যায়না।
আমি/: অবশ্যই যায়। কিন্তু আমি তো কাউকে চিনি না।কি ভাবে কথা বলবো।
রিয়া/: আমাদের সাথে কথা বললে তো চিনতে পারবে। আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি।
আমি/: হুম অবশ্যই হতে পারি। কিন্তু একজন একজনকে তুই করে বলবো।
রিয়া /: ঠিক আছে।
তার পর রিয়া আরো কিছুক্ষণ কথা বলে, তার কেভিনে চলে গেল।
বিকালে অফিস ছুটি হওয়ার পর বাহিরে চলে আসলাম। ফারিয়া তার গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেছে। আমি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি রিয়া রিকশা নিয়ে আমার সামনে আসলো।
রিয়া/: কিরে তুই দাড়িয়ে আছিস কেন। বাসায় যাবি না।
আমি/: যাবো তো। কিন্তু রিকশা পাচ্ছি না।
রিয়া/: ও এ কথা। আমার সাথে আয়। এখন আর রিকশা পাবি না। তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে , আমি আমার বাসায় যাবো।
আমি/: না থাক, তুই যা। আমি রিকশা নিয়ে চলে যাবো।
রিয়া/: তুই মনে হয় আমাকে বন্ধু ভাবতে পারিস নাই
। যদি ভাবতি , তাহলে মানা করতি না।
আমি/: আরে এমন কিছু না। আচ্ছা ঠিক আছে চল।
কি আর করবো। এতো করে যখন বলছে। তাই ওঠে গেলাম। কথা বলতে বলতে বাসায় যাচ্ছি। হঠাৎ একটা কথা মনে হলো। রিয়াকে তো আমার বাসার সামনে নেওয়া যাবে না। ( কারন টা আপনারা জানেন)
আমি রিয়াকে একটা কাজের কথা বলে বাসা থেকে কিছুটা দূরে নেমে গেলাম। রিয়া তার বাসায় চলে গেলো। আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দিলাম। কিছুক্ষণ পর
রাইসা ( আমার বোনের নাম) দরজা খুলে দিলো।
রাইসা/: আমার আইসক্রিম এবং ফুচকা কোথায়।
আমি/: আসলে আপু , আজকে আনতে মনে ছিলো না। প্লিজ রাগ করিস না। কালকে এনে দিবো।
রাইসা/: যাহ, তোর সাথে কথাই বলবো না।
মুখটা বেজার করে চলে গেলো। আপনারা কি ভাবছেন, আমি ফুচকা আর আইসক্রিম আনি নাই। ভুল ভাবছেন, আমি রিকশা থেকে নেমে আগে পুচকা নিলাম, তার পর একটা দোকান থেকে আইসক্রিম নিলাম।
আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে, রাইসার রুমে গেলাম। রুমে এসে দেখি বোনটা আমার মন খারাপ করে বসে আছে। আমি রাইসার পাশে গিয়ে বসলাম।
আমি): আমার বোনটা বুঝি , এই ভাইটার ওপর রাগ করছে, ।
রাইসা): তুই আমার সাথে কথা বলবি না। তুই অনেক খারাপ। তুই জানিস, আমি প্রতিদিন এগুলোর জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু তুই, যা আমার রুম থেকে। তোর সাথে কথাই বলবো না।
আমি/: ঠিক আছে, আমি চলে যাচ্ছি, তোর জন্য আইসক্রিম আর ফুচকা এনেছিলাম, কিন্তু তুই যখন খাবি না, তাহলে আজকে আমি খাবো।
আইসক্রিম আর ফুচকা দেখিয়ে। রাইসা এগুলো দেখে আমার হাত থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আর বললো।
রাইসা/: তুই আমার লক্ষী ভাইয়া।
আমি/ আইছে, এতোক্ষণ আমাকে খারাপ বলছে। এবং কথা বলতে মানা করেছে। তাহলে এখন আমার এগুলো খাস কেনো।
রাইসা/; তাহলে তুই আমার সাথে মিথ্যা বলছিস কেন। তুই জানিস না, আমি এগুলো না খেলে আমার ঘুম হয় না।
আমি/: হয়েছে, এবার আপনি খান। আমি আমার রুমে গেলাম।
বলে নিজের রুমে চলে আসলাম। রাতে সবার সাথে খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।
পরের দিন অফিসে নিজের কেবিনে বসে কাজ করতে আছি। এখনো ফারিয়া অফিসে আসে নাই। মনটা খারাপ হয়ে আছে। তাকে একবার না দেখলে কাজে মন বসাতে পারি। কিছুক্ষণ পর দেখি রিয়া আমার কেভিনে আসলো।
রিয়া/: কিরে কেমন আছিস। আজকে তোকে কেমন মনমরা লাগছে। কি হয়েছে তোর।
আমি/: আজকে কেমন জানি খারাপ লাগছে। আজকে আর অফিস করবো না। ম্যানেজার কে বলে ছুটি নিয়ে নিবো।
রিয়া/: তাহলে চল। দুজনে একসাথে ছুটি নিয়ে আসি। আজকে তুই আর আমি ঘুরবো। তাহলে তোর মনটা ভালো হয়ে যাবে।
আমি/: ঠিক আছে চল।
কি আর করার , ফারিয়াকে না দেখলে কাজ করতে মন চায় না। তাই রিয়ার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। দুজনে ম্যানেজারের কাছে গিয়ে ছুটি নিলাম। এ অফিসের ম্যানেজার অনেক ভালো। আর এখন অফিসে তেমন কাজের চাপ নেই। তাই ছুটি দিয়েছে।
রিয়া আর আমি অফিস থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে পার্কে চলে গেলাম। দুজনে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি , আর কথা বলছি। তখন রিয়া বললো।
রিয়া/: আচ্ছা রাসেল তুই কি কখনো প্রেম করেছিস।
আমি/: আমার দারা এসব হবে না। কারন আমার চেহারা ভালো না। আর আমি একটা অফিসে কাজ করি। কেউ কি আমাকে ভালোবাসবে।
আসলে কলেজে অনেক মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে। কিন্তু মনের মতো কাউকে পাইনি, তাই কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করি নাই। ( বাস্তবে কোনো মেয়ে আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। আমি যে কালো মানুষ। )
রিয়া/: কে বলেছে, তোর চেহারা খারাপ। তুই দেখতে একদম হিরোর মতো। যে কোনো মেয়ে তোকে দেখলে পাগল হয়ে যাবে। আর তুই অফিসে কাজ করিস তো কি হয়েছে। ভালোবাসা হয় মন থেকে।
আমি/: যদি সুন্দর হতাম। তাহলে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে আমাকে প্রপোজ করে নাই কেনো। গরীবের কপালে কখনো প্রেম ভালোবাসা নেই। আচ্ছা আমার কথা বাদ দেয় তুই কি কখনো প্রেম করেছিস।
রিয়া/: আমি এখনো মনের মতো কাউকে পাইনি। তাই এসব করি নাই। কিন্তু এখন একটা ছেলেকে আমি পছন্দ করি। কিন্তু ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে কি না জানি না। তবে তার সাথে এখন বন্ধুর মতো চলি।
আমি/: তা সে মানুষ টা কে, জানতে পারি।
রিয়া/: সেটা সময় হলে জানতে পারবি। এখন চল, একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে বাসায় চলে যাবো।
আমি/: ঠিক আছে চল।
তার পর দুজনে পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। আমি আর রিয়া একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম।
হঠাৎ একটা টেবিলে চোখ পড়তে , আমার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেল। এবং আবার মন ও খারাপ হয়ে গেল।
গুছিয়ে মিথ্যা বলা মানুষ গুলো সবার কাছে প্রিয় হয়।
অপ্রিয় হয় শুধু মুখের উপর সত্যি কথা বলা মানুষগুলো।
- বোকা মানুষ গুলো হয়তো অন্যকে বিরক্ত করতে জানে।
- কিন্তু কখনো কাউকে ঠকাতে জানেনা।
"
"
"
" চলবে
*
*
* কেমন হয়েছে জানাবেন। সাড়া পেলে পরবর্তি পর্ব লিখবো। আসা করি গল্পটা সবার কাছে ভালো লাগবে। সবাই লাইক এবং কমেন্ট শেয়ার করে পাশে থাকবেন।
বি দ্র: যারা আমার গল্প পড়ার জন্য ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন, তারা দয়া করে একটা মেসেজ দিবেন। তাহলে আমি এক্সেপ করে নিবো। তা না হলে ঝুলে থাকতে হবে, ধন্যবাদ।
গল্প/: পছন্দের মেয়েটি যখন অফিসের বস।
লেখক/: রাসেল চৌধুরী 🌷♥️♥️♥️♥️♥️♥️♥️♥️
পর্ব/: :::::::::::::(১) এক, সূচনা পর্ব।
ধন্যবাদ সবাইকে পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন 🌿🌷🌿🌷🌿🌷 🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿 রোমান্টিক গল্প লেখক রাসেল চৌধুরী 🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷🌿