গল্প/::: এতিম ছেলে বনাম সিনিয়র আপু।
*
*
* লেখক/::::: রাসেল চৌধুরী
*
*
* পর্ব/:::::::;:: ( ৩ ) ::::::::: ( তিন )
*
*
*
*
*
* গোসল করে একটা জামা গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি আমি একটা মেয়ের গায়ের উপর পড়ে আছি, ।
মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। যে কোনো ছেলে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। তো যাই হোক আমি তাড়াতাড়ি মেয়েটার ওপর থেকে উঠে গেলাম। হাত বাড়িয়ে মেয়েটা কে দাড় করালাম। তখন আমি বললাম।
আমি/: সরি , বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে দেখতে পাইনি।
মেয়েটা/: সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। আপনি কে, আর আমাদের বাড়িতে কি করেন।
আমি/: আমি রাসেল। নাদিয়া আপুর সাথে এসেছি,। আমি নাদিয়া আপুদের বাসায় থাকি।
মেয়েটা/: ওহ , তার মানে আপনি রাসেল। ফুফা ফুফির কাছে আপনার কথা শুনেছি। আমি রিয়া, নাদিয়া আপুর মামাতো বোন।
আমি/: ওহ তার মানে আপু আসার সময় আপনার কথা বলছে।
রিয়া/: নাদিয়া আপু, আপনাকে আমার ব্যাপারে কি বলেছে।
আমি/: তেমন কিছু না। বলছে আপনি নাকি আমার সেম ইয়ারে পড়েন।
বাকিটা বললাম না। শুনলে রিয়া কষ্ট পাবে।তাই ওই কথা বললাম না। তখন রিয়া বললো।
রিয়া/: ওহ তার মানে আপনি আমার সেম ইয়ারে পড়েন। তাহলে আমরা আপনি করে বলছি কেনো। আমরা তো নাম এবং তুই করে বলতে পারি।
আমি/: ঠিক আছে, এখন থেকে তুই করে বলবো। এখন চল নিচে যাই। আসার পর তোর আম্মুর সাথে কথা বলি নাই, এবং তোর দাদা দাদির সাথে দেখা করি নাই।
রিয়া): ঠিক আছে চল।
আমি আর রিয়া দুজনে নিচে চলে আসলাম। আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমাকে গিলে খাবে।
আমি/: আসসালামুয়ালাইকুম মামী , কেমন আছো তুমি।
মামী): আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো। আমাদের বাসায় তো কখনো আসো নাই। তোমাকে অনেক বার বলছি আসার জন্য।
আমি/: আমি ভালো আছি মামী। আসলে মামী আমার বাসা থেকে কোথাও যেতে ভালো লাগে না। আপু আমাকে নিয়ে এসেছে।
মামী): নাদিয়া যদি না বলতো , তাহলে বুঝি আসতে না।
আমি/: আসলে তেমন কিছু না মামী। আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও তো, এখন বলো নানা নানী কোথায়। তাদের তো দেখছি না।
মামা/: আসলে আব্বু , আম্মুকে নিয়ে তার ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে গেছে।
আমি/: বুড়ো বয়সে , ঘুরতে গেছে তারা।
রিয়া/: বুড়ো হলে বুঝি যেতে পারে না।
আমি/: আমি সেটা বলি নাই। মানে তাদের ভালোবাসা বুড়ো বয়সে , এখনো আছে।
নাদিয়া/: এতো কথা না বলে খাবার খা। খাবার খেয়ে তুই আমার রুমে আসবি, তোর সাথে আমার কথা আছে।
আমি/: ঠিক আছে আপু।
আর কোনো কথা না খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আপুর রুমের সামনে গিয়ে বললাম।
আমি/: আপু ভিতরে আসবো।
নাদিয়া/: আয়। বস।
আমি ভিতরে ঢুকে দেখি, আপুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে , তখন আমি আপুকে বললাম।
আমি/: আপু তোমার কি হয়েছে। তোমার চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, তুমি মনে হয় কান্না করছো।
নাদিয়া/: তোকে আসার সময় কি বলছি, তোর মনে নেই। তুই রিয়ার সাথে কথা বলিস কেনো।
আমি/: বারে, কথা বললে সমস্যা কোথায়। তোমাকে বলছি না, আমি বেশি কথা বলবো না।
নাদিয়া/: ঠিক আছে, তুই এখন আমার রুম থেকে কোথাও যাবি না। আমার রুমে বসে থাকবি।
আমি/: আপু পুরোটা রাস্তায় জার্নি করে আসছি। তাই ভাবছি একটা ঘুম দিমু।
নাদিয়া/: তাহলে আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়। তোর রুমে যাওয়া লাগবে না।
আমি/: যদি বাড়ির মানুষ অন্য কিছু ভাবে। তখন কি হবে।
নাদিয়া/: এই বাসার সবাই জানে, আমি তোর থেকে বড়। তাহলে অন্য কিছু ভাববে। কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়।
আমি আর কোনো কথা না বলে আপুর বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
এবার আপনাদের কিছু কথা বলি। আসলে নানা নানী এবং মামী অনেক বার ঢাকায় গেছে, তাই ওদের চিনি, কিন্তু রিয়া কখনো ঢাকায় যায়নি, আর কেনো যায় না, সেটা আমি বলতে পারবো না।
আমার ঘুম আসার পর আপু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলে, রাসেল তুই কি আমার মুখের কথা বুঝতে পারিস না। আমি তোর এতো খেয়াল কেনো রাখি, তোকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দিই না কেনো, কারন আমি তোকে অনেক ভালবাসি।
তোকে যদি আমার জীবনে না পাই, তাহলে আমার এই জীবন শেষ করে দিবো। আমি তোকে অন্য মেয়ের সাথে সয্য করতে পারবো না।
এই কথা বলে আপু আমার কপালে এবং গালে চার পাঁচটা চুমু খেলো। তার পর রুম থেকে বেরিয়ে রিয়ার রুমে গেলো। রিয়া বিছানায় শুয়ে কি যেনো ভাবছে, তখন আপু রিয়ার পাশে বসে বললো।
নাদিয়া/: কিরে রিয়া, তোকে দেখে বুঝা যাচ্ছে, তুই কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত আছিস।
রিয়া/: আসলে আপু তেমন কিছু না। এখন বলো হঠাৎ আমার রুমে।
নাদিয়া/: কেনো তোর রুমে কি আসা যাবে না।
রিয়া/: আরে আমি ওইভাবে বলি নাই। আচ্ছা ওটা বাদ দাও। তোমাকে একটা কথা বলি। রাসেল কি কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করে।
নাদিয়া/: কেনো, আমার জানা মতে , রাসেল কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করে না। তা এটা কেনো জিজ্ঞেস করলি।
রিয়া/: না আপু , এমনে জিগ্গেস করলাম। তা আপু তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে।
নাদিয়া/: আমার তো ভালোই চলছে। তোর কেমন চলছে।
রিয়া/: আমার ও ভালোই চলছে।
নাদিয়া/: ঠিক আছে, তুই থাক, আমি রুমে গেলাম।
এ কথা বলে আপু নিজের রুমে চলে আসলো। আর এদিকে রিয়া ভাবছে, তাহলে আমার লাইন ক্লিয়ার । আমি রাসেল কে আমার করে নিবো। আমি ওকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি।
আমাকে যে করেই হোক, রাসেল এর মন জয় করতে হবে। কিন্তু আমি ওর মন জয় করবো কেমন করে। তখন রিয়া ভাবতে লাগলো। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আমাকে তার সাথে প্রতিদিন কলেজে নিয়ে যাবে, তার পর আস্তে আস্তে রাসেল কে রিয়ার প্রতি দুর্বল করবে।
বিকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আপু আমার পাশে শুয়ে আছে। যেনো একটা পিচ্চি মেয়ে আমার পাশে শুয়ে আছে। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামতে আপুর ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আমি): কি ব্যাপার আপু , তুমি উঠলে কেনো।
নাদিয়া): ঘুম ভেঙ্গে গেছে। তাই উঠে গেলাম। তুই ফ্রেল হয়ে আয়। দুজনে মিলে গ্ৰাম টা ঘুরে দেখবো।
আমি/: ঠিক আছে, আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি।
এ বলে আপুর রুম থেকে বেরিয়ে, নিজের রুমে চলে আসলাম। ওয়াস রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে একটা জামা গায়ে দিয়ে নিচে নেমে আসলাম। নিচে এসে দেখি রিয়া সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমাকে দেখে সামনে এসে বললো।
রিয়া/: কিরে , তুই কি কোথাও যাবি।
আমি/: হুম, আপু আর আমি তোদের গ্ৰাম টা ঘুরে দেখবো। আপু ফ্রেশ হয়ে আসছে।
রিয়া/: ঠিক আছে, তোরা আমার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমিও তোদের সাথে যাবো।
এ বলে রিয়া দৌড় দিয়ে তার রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আপু বেরিয়ে আসলো। আপু কে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। আপু আমার সামনে এসে বললো।
নাদিয়া/' রাসেল আমি রেডি, এবার চল।
আমি): একটু দাঁড়াও। রিয়া বলেছে, সেও আমার আমাদের সাথে যাবে। আমাদের অপেক্ষা করতে বলছে।
আপু রিয়ার কথা শুনে মুখটা বেজার করে ফেললো। আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো আর রিয়াকে মানা করতে পারবো না। কিছুক্ষণ পর রিয়া ও বেরিয়ে আসলো।
রিয়াকে ও অনেক সুন্দর লাগছে। হালকা মেকাব করছে। তাতেই অনেক সুন্দর লাগছে রিয়াকে। তার পর আমরা তিনজন বাসা থেকে বেরিয়ে গ্ৰামের ভিতরে দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।
গ্ৰামের দৃশ্য দেখতে অনেক সুন্দর। মন চায় সারাদিন সবুজ শেমল এই গ্ৰাম টা ঘুরে দেখতে। কি সুন্দর বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আপু এবং রিয়ার চুল উড়ছে। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওরা দুজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
। আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না।
ঘুরতে ঘুরতে রাত আটটা বেজে গেলো। আসলে আমরা রিয়াদের বাজারে আসছি। এখানে ফুচকা আইসক্রিম খেয়েছি, আপু বেশি খায়নি। চেহারা টা কেমন করে যেন রেখেছে, মনে হয় রিয়াকে সাথে করে আনার জন্য মন খারাপ করে ফেলছে।
তো যাই হোক, তিন জনে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে আসলাম। যে যার রুমে চলে আসলাম। আমি ওয়াস রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলাম।
সবার সাথে খাবার খেতে লাগলাম। আপু খাবার খাচ্ছে না। হঠাৎ হাত ধুয়ে রুমে চলে গেল। আমি হালকা কয়টা খাবার খেয়ে আপুর রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে দেখি আপু বিছানায় শুয়ে আছে। আমি আপুর সামনে গিয়ে বললাম।
আমি/: আপু আমি রিয়াকে , আমাদের সাথে যেতে বলি নাই, সে নিজে এসেছে আমাদের সাথে।
আপু কোন কথা বলছে না। আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। এবার আমি আপুকে আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম।
আমি/: আপু তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো। প্লিজ তুমি এভাবে মন খারাপ করে থাকলে, আমার কাছে একটুও ভালো লাগে না।
হঠাৎ আপু আমার সাথে এমন কিছু করবে , সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি।
- ভালোবাসা হয়ে যায় খুব সহজে।
- আর মায়া কাটানো যায় না সারাজীবনেও।
অন্যের ওপরে অভিমান।
করে নিজেকে কষ্ট দেওয়া মানুষগুলি মারাত্মক বোকা।
চলবে
জানি আজকের পর্ব ছোট হয়ে গেছে। আমার চোখে প্রচুর ঘুম চলে আসছে, তাই আর বড় করতে পারলাম না। কালকে বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তো কেমন হয়েছে জানাবেন, ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই লাইক এবং কমেন্ট দিয়ে পাশেই থাকবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন