
ভাবির_বোনের_অপবাদ
পার্ব_২
writer_sinno (কপি করা নিষেধ)
বের হয়ে গেলাম আমার ছোট্ট থেকে বেড়ে হয়ে ওঠা প্রাসাদ থেকে। পকেটের ১২০০ টাকা আর মোবাইল টা ছাড়া আর কিছুই নেই। দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। যে ভাই আমাকে ছাড়া কোথাও যেতো না, সে আজ আমাকে এভাবে মারল।ছোট থেকে মাথার উপর থাকা বাবা নামক বট গাছটাও আমার থেকে ছায়া সরিয়ে নিয়েছে। মা নামে স্নেহের চাদরও আজ আমায় থাপ্পড় মেরে তাড়িয়ে দিল।
রেল স্টেশনে চলে আসলাম। একটা টিকিট কিনে অজানা গন্তব্য ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। সব স্মৃতি গুলো আজ দুমড়ে এসে হান্না দিচ্ছে। ভাবি এটা কিভাবে আমার সাথে করতে পারল?যেই ভাবিকে নিজের বোনের মতো ভাবতাম সে আমার সাথে এটা করতে পারল?
আর আমি তো কখনো নিঝুমের সাথে ও কিছু করিনি কিন্তু ও এটা......
না, আর ভাবতে পারছি না। চোখ দুটো নিভে আসছে। এই সময় ট্রেনে হঠাৎ একটা মেয়ে আমার পাশে বসলো। আমি চোখ বুঝে আছি আর চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে।
হঠাৎ মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে," এই যে শুনছেন?
আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে।
এবার মেয়েটি বলা শুরু করলো, " আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে যে।আপনি কি খুবই চিন্তিত?
আমিঃ( চোখ টা কোন রকম মুছে) না, সমস্যা নেই।
মেয়েটিঃ আপনাকে অনেক বিষন্ন দেখেচ্ছে আবার কান্না করছেন যে।
আমিঃ না, তখন ট্রেনে ওঠার সময় চোখে কি যেন একটা পরছে।তাই চোখটা খুবই জ্বালাতন করছে।
মেয়েটিঃ আমি সিনথিয়া। আপনি?
আমিঃ আমি নেহাল।
আমার চোখ দিয়ে এখনো অনবরত জল পড়ছে।তা দেখে সিনথিয়া বলতে লাগলো," আরে এখনো তো কান্না করে যাচ্ছেন।দেখি আমার দিকে তাকান তো।
আমি এবার ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে।সিনথিয়া ওর ওরনা দিয়ে আমার চোখ টা মুছে আমার চোখের দিকে তাকালো। কিছইু খুঁজে পেলও না। তাই বললেন, " কই কিছুই তো নাই তোমার চোখে। দারাও আমি তোমার চোখে গরম ভাব দেই।এতে ভালো লাগবে।"
এরপর সিনথিয়া চোখে গরম ভাব দিতে লাগল। আমি ওর ব্যবহার দেখে তো পুরাই অবাক। একটা অচেনা অজানা ছেলের সাথে কেমন আচরণ করে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর, ও আমার সম্পর্কে নানান কথা জিজ্ঞেস করল। আমি ও সব বলে দিলাম।কিন্তু আমার জীবনের ঘটে যাওয়া এই জড়ের ব্যাপারে বললাম না।কারণ এতে হয়তো আমার সম্পর্কে খারাপ ধারনা ওর সৃষ্টি হতে পারে।
সত্যি মেয়েটি অনেক মিশুক। অল্প কিছুসময়ের মধ্যে একজন অপরিচিত মানুষকে আপন করে নিতে পারে।মনে হয় ও আমাকে কত আগের থেকে চিনে।
দীর্ঘ জার্নির পর ট্রেন ঢাকায় এসে পৌছাল। আমি সত্যি ভুলে গেছিলাম যে, আজ আমি অনিশ্চিত জীবনের খোঁজে বেরিয়েছি।
ট্রেন থেকে সিনথিয়া কে বিদায় দিয়ে চলে গেলাম বিষন্ন জীবনের উদ্দেশ্যে।যেখানে নেই দুমুঠো অন্ন দেওয়ার ভরসা।না আছে চোখ দুটো বুঝে শরীর এলিয়ে দেওয়ার স্থান।
রেল স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলাম। ও আপনাদের তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি যখন রেল স্টেশনে আসি তখন মোবাইল টা ৫০০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলাম যার মুল্য ছিল ২০০০০ টাকা।আর সিমটা ভেঙে ফেলি। আর কারো সাথে মোবাইলে কথা বলা দরকার নেই।
এরপর আমি ছোট একটা বাসার খুঁজে বের হলাম। বাসা খুজেই যাচ্ছি কিন্তু এই শহরে কেউই বেচেলার কে বাসা দিতে রাজি নয়।রাতে হয়ে আসছে কিন্তু এখনো রাতে থাকার মতো একটু জায়গা করতে পারলাম না।
কোন জায়গা না পেয়ে রাতে একটা হোটেল এ ঢুকে কিছুটা খাবার খেয়ে নিলাম। বিলের কথা শুনে মনে হলো টাকা চাবিয়ে খেয়েছি। অল্প কিছু খাবার খেলাম তার দামই হলো ৫৬০ টাকা। সত্যি এই শহর ডাকাতের স্হান।সবাই যে যার স্থান থেকে ডাকাতি করে যাচ্ছে।
ঘুমানোর কোন স্হান না পেয়ে একটা গাড়ির গ্রেজের সামনে ঘুমিয়ে পরলাম। খোলা স্থানের কোন রকম ছাদের নিচে চারদিকে নিঝুম অন্ধকার। পরিবারের কারো কথা যে আর স্মৃতিতে হানা দিচ্ছে না।কারণ যার কোন স্থান আর পরের বেলা খাবার কি হবে। তারেই ঠিক নেই, তার আবার কিসের পরিবারের চিন্তা।
রাতে আর কোন চিন্তা না করে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম।ঘুম ও যে আমার সাথে বেইমানি করে যাচ্ছে। কারন যেই ছেলের ফমের বিছানা ছাড়া শরীর এড়াতে পারে না। তার আজ ইটের ওপর ঘুমানো।সত্যি ভাগ্য যেন আমার জীবন কে এক রাতে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিয়েছে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি।
কখন যে চোখটা লেগে গেল তা জানা নেই। সকালে কে যেন আমাকে ডাকা শুরু করলো। আমি চোখ খুলে দেখি, বাবার বয়সের একটা লোক।
লোকটাঃ এই ছেলে তুমি এখানে শুয়ে আছো কেন?
আমিঃ চাচা, আমি গ্রাম থেকে এখানে এসেছি। কিন্তু কেউ আমাকে বাসা ভাড়া দিচ্ছে না।
চাচাঃ তোমার বাড়ি কোথায়?
আমিঃ চাচা, আমার কোন বাড়ি নেই। আর পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই।(চোখ দিয়ে পানি জড়ে যায়)
চাচাঃ তুমি এখানে কি করো,বাবা? (আমার কথা গুলো শুনে সে কিছু টা আবেগী হয়ে গেল)
আমিঃ চাচা কাল রাত ঢাকায় এসেছি।ভাবছি, এখানে ছোট কোন একটা কাজ করার চেষ্টা করব। চাচা, আপনার দোকানে কোন কাজ আছে। যা আমি করতে পারব।
চাচাঃ আমার দোকানের কাজ তুমি করতে পারবে?
আমিঃ দেখিয়ে দিলে পারব,চাচা।
চাচাঃ আচ্ছা, ঠিকাছে। চলো আমার সাথে সকালের নাস্তা করবে।
আমিঃ না, চাচা আপনি যান। আমি পরে খেয়ে নিব।
চাচাঃ তুমি আমাকে এখন নিজের আপন চাচা ভাববে।আর কোন কথা বলবে না। আমার সাথে চল নাস্তা করতে।
আর কোন কথা না বলে তার সাথে চলে গেলাম। নাস্তা করে এসে,আমি এবার কাজ করা শুরু করে দিলাম। যখন আমি কাজে কোন ভুল করি তখনই তিনি আমাকে সাহায্য করেন।কাজ করতে দুপুর হয়ে গেল। তারপর চাচা আমাকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে নিয়ে যান।
খাবার খেয়ে আবার কাজ করতে লাগলাম।আর মনে মনে ভাবছি সত্যি জীবন কি জিনিস আজ আমি হারে হারে বুঝতে পারছি। যে ছেলে বাসায় পানির গ্লাস টা টেনে খায়নি সে আজ গ্রেজে গাড়ি মেরামতের কাজ করে।
বিকাল হয়ে এলে।আজকের মতো দোকান বন্ধ করে দিল।তারপর চাচা আমাকে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলে।
আমিঃ চাচা, আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?
চাচাঃ কেন? আমার সাথে।
আমিঃ আপনার সাথে মানে?
চাচাঃ আমি না তোর আপন চাচা। তাহলে এতো কথা বলছিস কেন? আমাদের সাথে থাকবি তুই।
আমি আর কোন কথা বললাম না।সোজা তার সাথে চলে গেলাম। গিয়ে একটা বাড়িতে উঠলাম।বাড়িটা আমাদের বাড়ি থেকে কিছু টা ছোট।কিন্তু চাচার ব্যবসা অনেক বড়।আর তাতে মনে হয় তিনিও অনেক বড় লোক। কারণ তার উপার্জনের পরিমাণ দেখে বুঝলাম।
এরপর চাচা দরজা নক করলে। একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল।আমি তো মেয়েটিকে দেখে অনেকটা অবাক।কারণ এটা আর কেউ নয়। এটা ট্রেনে পরিচিত হওয়া মেয়ে সিনথিয়া। সিনথিয়া আমাকে দেখে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ও তেমনি।
হঠাৎ চাচা বলে উঠে, " কিরে সিনথিয়া, এভাবে দাড়িয়ে থাকবি না আমাদের ঢুকতে দিবি।
এরপর সিনথিয়া পথ সরে দাড়ায়।আর চাচা সিনথিয়া কে বলে," মা,এ হলো নেহাল।আর ওকে একটা রুমে দেখিয়ে দে।"
এখন তো সিনথিয়ার মাথার মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরছে।আর আমার ও কলিজায় পানি নেই। কারণ সিনথিয়া যদি চাচা কে সব বলে দেয়।আসলে ট্রেনে আমি সিনথিয়া কে বলেছি, আমি ঢাকায় এসেছি আমার এক আংকেলের বাসায়। কিন্তু সিনথিয়া যদি জানতে পারে আমি ওর কাছে মিথ্যা বলেছি। তাহলে তো আমার সব যাবে।
এরপর সিনথিয়া আমাকে নিয়ে একটা রুম দেখিয়ে বললো, "এটা আপনার রুম।আর আমি বাবার কাছে সব জেনে আপনার ব্যবস্হা নিচ্ছি।আপনি তখন আমায় সত্য বলেছেন না মিথ্যা বলেছেন তা প্রমাণ হয়ে যাবে।আর ভুলে পালানোর চেষ্টা করবেন না।এখন ফ্রেশ হয়ে নেন।"
কথা গুলো সিনথিয়া বলে চলে গেল। আমি তো আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন যদি সত্যি টা বলে দিতাম তাহলে আর এমন অবস্থা হতো না।এখন নিজের ওপর বিশন জিদ হচ্ছে।
তারপর সিনথিয়া চাচার কাছে চলে গেল। আর সকাল থেকে এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব চাচা সিনথিয়া কে বলে দেয়।কিছুক্ষন পর চাচি আমার রুমে খাবারের জন্য ডাকতে আসে।আমিও তার পিছনে যেতে লাগলাম। দেখলাম সেখানে আগেই সিনথিয়া আর চাচা বসে আছে। সিনথিয়া আমার দিকে রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবছি আজ মনে হয় আমি শেষ।
ভয়ে গিয়ে, টেবিলে বসলাম। এবার চাচি খাবার দিতে লাগলো।আমি কেমন যেন একটু আনইজি অনুভব করছি।চাচি তা লক্ষ্য করে বললেন , বাবা লজ্জা করও না।এটা তোমার বাসার মতোই মনে করবে।
আমি চাচিকে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম।এরপর খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর সিনথিয়া আমার রুমে এসে,আমার গলা টিপে ধরে বলতে লাগলো, " ওই তুই আমাকে ট্রেনে মিথ্যা বলেছিলি কেন?" বল সত্যি করে বল।
আমি ওকে ছাড়িয়ে বললাম, " তুমি আমাকে সত্যি মেরে ফেলবে?"
সিনথিয়াঃ তাহলে তখন আমাকে মিথ্যা বললি কেন?তোকে আজ বাড়ি থেকে বের করব।তুই যে একটা বাটপার তা আমি ভালো করেই বুঝেছি। না হলে তখন সত্যি টা আমাকে বলে দিতি?আজ তোকে পুলিশে দিব।
আমিঃ হুম আমি বাটপার,মিথ্যাবাদী,দর্শক আর কিছু শুনবেন? এবার আমাকে আপনার বাবার কাছে বলে জেলে পাঠিয়ে দিন। তাহলে আমি আপনার ওপর বড্ড কৃতজ্ঞ হব।প্লিজ, আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিন।আমার জীবনটাই যেন জেলখানা হয়ে গেছে।
এবার সিনথিয়া আমাকে বললো, " কি হয়েছে? আমাকে খুলে বলবে প্লিজ।
আমিঃ আমি একজন ধর্শক।আর এই অপরাধে বাবা মা বাড়ি থেকে বের করে দেন।আর আমি নিজের জীবন কে বাচানোর জন্য ঢাকায় এসেছি ঠাই নিতে।কিন্তু কেউ আমাকে সেই স্হান দেয়নি।আপনিও আমাকে তাদের মতো তাড়িয়ে দিন।(কথা গুলো কান্না করে বলছিলাম)
সিনথিয়াঃতুমি সত্যিই কি ধর্ষক?
আমিঃ ভাবি আর তার বোন আমাকে ধর্ষকের অভিযোগ দিলে,বাবা মা তাদের কথা শুনে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আর জীবিকার তাগিদে এই শহর আসছিলাম। এটাই ছিল সেদিন আপনার থেকে লুকানো ঘটনা।
এরপর সিনথিয়া রুম থেকে চলে গেল।আর আমি দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলাম। কেন আমার সাথে এরকম টা হলো। আমি কি এমন অপরাধ করেছিলাম যে আমাকে এমন শাস্তি পেতে হচ্ছে। আর আজ এই রকম অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন চাচার সাথে নাস্তা করে দোকানে চলে গেলাম। আজকের মতো কাজ শেষ। যেই চাচা আমাকে বাড়ি নিয়ে আসবে তখন বললাম,
" চাচা, আপনি কিছু মনে না করলে, আমি একটা মেছে থাকতে চাই। ওখানে আমার একটু কেমন যেন লাগে।"
চাচাঃ আচ্ছা বাবা, তোমার যেখানে ভালো লাগে সেখানেই থাকো।
এরপর চাচা আমাকে একটা মেছ ঠিক করে দিলেন।তারপর তিনি বাসায় চলে গেলন।সিনথিয়া চাচাকে বাসায় একা ফিরলে বলা শুরু করল, " বাবা,নেহাল কোথায়?
চাচাঃ ও আজ একটা মেছ ঠিক করেছে। আজ থেকে সেখানেই থাকবে।
সিনথিয়া এবার মন খারাপ করে তার রুমে চলে গেল। আর কান্না করতে শুরু করলো।ও মনে মনে ভাবছে, হয়তো আমার জন্যই ও আজকে বাসা আসেনি।
এভাবে এক মাস কেটে গেল।এখন চাচা আমার কাজে খুবই খুশি।একদিন চাচাকে বললাম, " চাচা, আমি লেখাপড়া করতে চাই। তাই আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পুরনো কলেজ থেকে আনতে হবে।এখন চাচাও আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব যানেন।
তাই চাচাও সম্মতি দিল।আমি পরের দিন সকালে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। দীর্ঘ জার্নি শেষে পুরানো জায়গায় ফিরলাম। তারপর সেখান থেকে সোজা রিকশা নিয়ে কলেজে চলে গেলাম। মুখে একটা মাস্ক লাগিয়ে কলেজে প্রবেশ করলাম যাতে কেউ আমাকে না চিনে।তারপর প্রিন্সিপাল থেকে সব কাগজ নিয়ে বের হব তখনই দেখি.........
Nc
ReplyDelete