👉বাড়িওয়ালার দাজ্জ্বাল মেয়ে❤
পর্বঃ৬👌
লেখক: সানভি আহম্মেদ আবির
আজ দুপুরে মধু আমাকে বলছে ও তার আজ এক ফ্রেন্ড এর জন্মদিন। তাই সে অখানে যেতে হবে। ফিরতে লেইট হবে।
ঃকিহ?
ঃতোমাকে বলেনি?
ঃনাতো। আচ্চা কার জন্মদিন গেছে নাম কি?
ঃকি যেন বলল ও হ্যা সুভাশ নামে এক ফ্রেন্ড।
আংকেলের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পরল। বুকটে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ টান দিয়ে ছিড়ে ফেলতেছে।
আজ আমার জন্মদিন অথচ আমার বউ আমার ভালবাসার মানুষ, যাকে ছাড়া এক মুহুর্ত কাটে না,সে অন্য পুরুষের জন্মদিন পালন করতে গেছে।
বন্ধুদের খুব গালি দিচ্ছি। কেন আমার জন্মদিন পালন করতে গেলো। যদি ওরা জন্মদিন পালন না করতো তাহলে আমার মনে পড়তো না আর এতো কস্ট পেতাম না।
এইভাবে দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো। রুমের মধ্যে পায়চারি করছি।
আংকেল খাওয়ার জন্য বলেছেন কিন্তু আমি যায়নি। কি করে খাবো, খাবার হজম হবে না।
রাত প্রায় ১২ টার দিকে মধু আসলো। মাথা ঢ্লতে ঢলতে রুমে প্রবেশ করলো।
ঃমধু শোন তুমি কি শুরু করলে এসব? এতো রাতে কোথায় ছিলে?
ঃকিছু বলছে না। সোজা বিছানায় চলে যাচ্ছে।
আমি অর কাছে যেতেই এক বিকয়ে গন্ধ নাকে আসলো। তারমানে মধু নেশা করেছে।
এখন যাই বলিনা কেন কোন লাভ হবে না।
ও বিছানায় গিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
সকালে নামাজ পড়ে ছাদে পায়চারি করছি।
কিছুক্ষণ পরে রুমে আসলাম।
এসে দেখি মধু ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।
আমি যাওয়া মাত্র ও নাস্তা দিয়ে দিলো।
নাস্তা করে রুমে এসে বসলাম। তখন বললাম না কারন তখন আংকেল ছিলেন। আর আমি চাই না আংকেল এই ব্যাপারে কিছু জানে।
একটু পর মধু আসলো রুমে। হঠাৎ তার চোখ টেবিলে গেলো। অনেক গুলো গিফট রাখা।
ঃএই গিফট গুলো কখন আনলে আর আনপ্যাক করলে না কেন?
ঃনিশ্চুপ
ঃও বুঝেছি আমার জন্য এনেছো বুঝি।
ঃএই গুলো না তোমার জন্য এনেছি না আমার জন্য এনেছি।
ঃতো কার এগুলো?
ঃএই গুলো আমার। বন্ধুরা দিয়েছে।
ঃহঠাত বন্ধুরা দিলো কেন? কোন স্পেশাল কারন?
ঃবন্ধুরা যতই হারামি হোক না কেন কখনো বেইমানি করে না।
ঃকি হইছে তো বলবা?
ঃএগুলো আমার বার্থডে গিফট, আমার জন্মদিন এর উপহার।
ঃকাল তোমার জন্মদিন ছিলো। আমাকে বলো নি কেন?
ঃকাল সুভাশের জন্মদিন ছিলো। আমারটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই বলিনি।
ঃসরি আমি ভুলে গেছি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম ওর হাতে খুব সুন্দর একটি আংটি।
ঃকোথায় পেলে এই আংটি?
ঃসুভাশ ওর জন্মদিনে আমাকে গিফট দিয়েছে।
ঃআমাদের বিয়ের আংটি কই?
ঃতুমি কি মনে করো আমি এই কমদামি আংটি পরবো।আমি ফেলে দিয়েছি রাস্তায়।
ঃঠাসসস ঠাসসস
কষে দুইটা থাপ্পড় মারলাম।
বিয়েকে কি খেলা মনে করো।যখন মন চাইবে করবে। যখন মন চাইবে তারসাথে ঘুরবে। আর আমাকে তোমার কি মনে হয়।
এই কদিনে একবারের জন্যেও কি আমাকে স্বামী মনে করছো।
আমি জানি করোনি।
কেমনে করবে নিজের স্বামির বার্থডে রেখে অন্য পরপুরুষ এর বার্থডে পালন করে।
আর যে আংটি টা ফেলে দিয়েছিলে, একবারের জন্য কি ভাব নাই আমি কি করছি।
তুমিও তো সেদিন দেখেছিলে আমার আম্মু নিজ হাত থেকে খুলে সেই আংটিটা তোমাকে দিয়েছিলেন। আর কি বলেছিলেন?
বলেছিলেন আংটিটা খুব যত্ন করে রেখো।
এই দিলে তার প্রতিদান।(আমি খুব রেগে)
ঃহা দিলাম প্রতিদান। তোর সাথে বিয়ের পর আমি কি পেয়েছি? কিছুই না। আর তুই কিছুই দিতে পারবে না। আমার জিবনের সব চেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো তকে বিয়ে করা। আমার জীবন টা নস্ট করে দিলি।
এই দেখ আংটি, এটা কোন সোনার আংটি নয়। এটা হচ্ছে ডায়মন্ড যা কখনো তুই চোখে দেখিস নি।
ঃ এই টাকার কাছে হেরে গেলো তোমার ভালবাসা। যদি তোমার টাকাওয়ালা ছেলে দরকার ছিল তখন আমাকে বিয়ে করলে কেন?
ঃতখন তো বুঝিনি এতো কিছু। আজ টাকা থাকলে সব কিছু পাওয়া যায়।
ঃভালবাসাও পাওয়া যায়?
ঃহা পাওয়া যায়।
ঃদেখো এসব পাগলামি করনা।তোমার বুঝা উচিৎ। এখন তুমি একজন নিবাহিতা মেয়ে।
আর মাত্র একবছর পর বাকি আছে আমার পড়ালেখা শেষ হবার। তারপর আমি একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবো।
একটা চাকরি করবো। তোমার সব চাহিদা পুরন করবো। আমাদের সুখের দিন ফিরে আসবে।
ঃস্বপ্ন দেখতে থাকো। তোমার স্বপ্ন কখনো পুরন হবে না। আর আমার স্বপ্ন প্রায় পুরন হতে চলছে।
ঃকেন হবে না। আর পুরন হতে চলছে মানে?
ঃমানে খুব সুজা। আমি
আমি সুভাশকে ভালো বাসি আর ও আমাকে ভালো বাসে।
ঃকিহ
ঃহ্যা তুমি ঠিকই শুনছো।
ঃতোমার মাথা ঠিক আছে মধু। তুমি কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো তো।
ঃহ্যা আমি সব বুঝেই বলতেছি।
ঃমধু একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো। তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশি বলে ফেলছো?
ঃনা আমি এক্টুও বেশি বলিনি।
আর এভাবে তোমার সাথে আমার সংসার করা সম্ভব নয়।
ঃতাহলে কিভাবে সম্ভব?
ঃতোমার সাথে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তুমি আমাকে কি দিয়েছো। আমার কি চাহিদা পুরন করেছো তুমি।
কিছুই নয়। তোমার জন্য আমি আমার ফ্রেন্ডদের সামনে মুখ দেখাতে পারিনি।
যেই সব ফ্রেন্ড কোনদিন আমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতো না আজ সেই ফ্রেন্ডরা আমাকে এভোয়েড করছে।
ঃপ্রকৃত বন্ধু কখনো নিজের বন্ধুকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না। তারা দুঃসময়ে তার ফ্রেন্ড কে একা ছাড়তে পারেনা। ওরা তোমার আসল ফ্রেন্ড না।
ঃআমার ফ্রেন্ডদের কে নিয়ে কোন ধরনের আঝে বাঝে মন্তব্য করবেনা।
ঃপ্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। তুমি এভাবে আমাদের সুখের সংসার টা ভেঙে দিওনা প্লিজ।
ঃহ্যা সুখের সংসার,? তোমার কাছে সুখের সংসার হলে আমার কাছে মুঠেও সুখের না।
ঃআমি চাই তুমি আমাদের মাঝ থেকে সরে যাও। তুমি সরে গেলে আমি সুভাশ কে বিয়ে করে ফেলবো।
আর একমুহুর্ত দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। বাসা থেকে বাহিরে চলে ভার্সিটির হলে চলে আসলাম।
ঃকিরে বন্ধু আজ হঠাৎ হলে কি মনে করে?
ঃনা এমনিতেই তোদের সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে তাই হলে চলে আসলাম। আজ এখানেই থাকবো।
ঃআরে এতো খুশির খবর।
ওরা সবাই যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছে। (আপনারা যারা হলে আছেন তারা বুঝবেন)
আমি রুমে বসে সিগারেট টানছি।
ঃমন খারাপ(একবন্ধু)
ঃনা এমনিতেই ভালো লাগছে না।
ঃশোন আমাদের কিছু লুকাবিনা সব বল কি হইছে?
ঃআসলে বন্ধু আমি বিয়ে করেছি অনেক দিন হয়েছে।
এই কথা শোনার পর ওরা আমাকে মারতে শুরু করলো।
ঃআরে আরে সবটুকু শোন তারপর মারিস।
তারপর সব বললাম।
আমার কথা শুনে ওরা সবাই অভাক।
ঃবন্ধু ফাইনাল পরিক্ষার ডেট দিয়ে দিছে।আগামী মাসে পরিক্ষা (রাফি)
আবে সালা আমরা আছি টেনশনে আর তুই আছিস পড়া নিয়ে।
(আসলে সব ব্যাচে এই রখম দু একটা হারামি থাকে যাদের সামনে আজরাইল আসলেও বলবে একটু দাড়ান এই ট্রপিকটা শেষ করে নেই)
ঃকি করা যায় বন্ধু এখন, আমি ওকে খুব ভালবাসি। আর মধু অন্য কারো হবে সেটা আমি মানতে পারছি না। প্লিজ তোরা কিছু কর।
ঃএক কাজ করি,
ঃকি
ঃযার সাথে মধুর রিলেশন তাকে এক্টু ধুয়ে দেই।
ঃআইডিয়া খারাপ না।
হঠাৎ ফোন এলো। দেখি আংকেল ফোন করেছে।
ঃহ্যালো আংকেল।
ঃফাহাদ তুমি যেখানেই থাকোনা কেন তারাতাড়ি আল হারামাইন হস্পিটালে চলে আসো।
ঃআংকেল কি হইছে?
ঃমধু হাসপাতালে
এই কথা শুনার পর আমি দ্রুত হল থেকে বের হচ্ছি।
ঃকি রে কি হইছে? কোন সমস্যা?
ঃমধু নাকি হাসপাতালে? আমি গেলাম।
যেতে যেতে দু ঘন্টা লেগে গেলো।
ঃআংকেল কি হইছে মধুর?
ঃআমিও কিছু বুঝতে ছি না। হঠাৎ মধু মাথা ঘুরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলাম।
ঃডাক্তার কি বলছে?
ঃএখনো কিছু বলেনি।
ঃআপনি রূগির কি হন?(ডাক্তার আংকেল কে)
ঃজি আমি বাবা হই আর ও আমার জামাই।
ঃআমার মেয়ের কি অবস্থা?
ঃতাহলে আগে মিস্টি খাওয়ান, মিস্টি না খাওয়ালে কিছু বলবো না। ঃদেখেন এমনিতেই অনেক টেনশনে আছি তার উপর আমি মজা করছেন প্লিজ বলেন মধুর কি হইছে?
ঃমধু মা হতে চলছে?
ঃকিহ সত্যি?
ঃহ্যা সত্যি।
আপনি দাড়ান আমি এক্ষুনি মিস্টি নিয়ে আসছি?
তারপর ডাক্তার কে মিস্টি খাইয়ে আমি মধুকে দেখতে গেলাম রুমে।
আংকেল ওর পাশে বসে আছেন।
মধুর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে মা হওয়ায় মুঠেও খুশি না।
আমি রুমে যেতেই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলো।
ঃএখন কেমন আছো?
ঃভালো।( খুব আস্তে বলল,আংকেল বসা তাই ফরমালিটির জন্য বলছে মনে হয়।
ঃডাক্তার মধুকে বাসায় নিতে পারবো?
ঃহ্যা নিতে পারবেন আর এখন থেকে মধুকে কোন ধরনের কাজ করতে দিবেন না।
ঃজি অবশ্যই।
তারপর আমরা মধুকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
রুমে যাচ্ছি, হঠাৎ বললেন
ঃফাহাদ ডাক্তার কি বললো মনে নেই?
ঃজি আছে মধুকে কোন কাজ করতে দেওয়া যাবে না।
ঃতাহলে ও যে সিরি বেয়ে উপরে উঠবে। এতে মধুর অনেক কস্ট হবে।
যাও কুলে করে নিয়ে যাও।
ঃজি আংকেল।
তারপর মধুকে কুলে করে রুমে নিয়ে গেলাম।
এই কয়েকদিন মধু বাহিরে যায় নি।
সুভাশ মাঝে মাঝে কল দিতো।
আমি কিছু বললে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিতো।
আমি শুধু মাত্র আমার বাচ্চার দিকে চেয়ে এসব সহ্য করছি।
দেখতে দেখতে আমার এক্সাম চলে আসল।
আমি লেখাপড়ায় ফুকাস দিলাম।
নানা টেনশন এর মাঝেও পরিক্ষাটা ভালো ভাবে শেষ করলাম।আনাদের ডিপার্টমেন্ট এর সবাই ক্যাম্পাসে বসে আছি।
সবাই বলল আজ এখান থেকে ঘুরতে যাবো।
ঃচল ঘুরতে যাবো।কিন্তু কোথায়?
ঃচল না জাফলং থেকে ঘুরে আসি। আজ রাত সেখানেই থাকবো। একটু মজা করবো। এখন আর পড়ার প্যারাটা নাই।
ঃসবাই কি রাজি।
ঃএই আইন্সটাইনের বাচ্চা তুই কি যাবে আর হাতে কি(লিমন রাফিকে বলল)
ঃদেখছিস না হাতে বই আছে। তোরা যঝন বলছিস তাই যাবো।আর হলে থেকে দুটো বই নিয়ে আসি অখানে গিয়ে পড়বো।
ঃভাই তোর পায়ে পড়ি বই আনতে যাইস না। আজকের দিন বাদ দে।
আমি কথা দিচ্ছি তোর কবরে আমি অনেকগুলো বই দিবো।(আমি)
ঃবন্ধু তোরা গাড়ি রিজার্ভ কর আমি আর ফাহাদ আসছি।(লিমন)
ঃকি হইছে তোর আবার?
ঃআরে আমার গফ রে কইছিলাম লাস্ট পরিক্ষা পর পার্কে দেখা করমু আর ঘুরমু।
এখন হঠাৎ এই প্লান হইছে। ওর সাথে দেখা করেই চলে আসবো।
ঃতাইলে তুই যা আমি গিয়ে কি করবো।
ঃআরে তুই গেলে তারাতাড়ি চলে আসতে পারবো। নইলে ও আমাকে আসতে দিবে না।
তারপর ওর সাথে পার্কে গেলাম।
দেখা করে চলে আসলাম হঠাৎ আমার চোখ এক কাপলের দিকে গেলো।
এবং যা আমার চক্ষুগোচর হইলে তাহা দেখিয়া আমার সমস্ত অঙ্গ শীতল হইতে শুরু করিল
চলবে.....
waiting for next part.