রাগী_ম্যাডাম 🍂 #Part_13,14 (শেষ পর্ব)


 #রাগী_ম্যাডাম 🍂

#Part_13

#Writer_Srabon


শাওন ম্যাডামের বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজায়।

তখন রাত ৯ টা বেজে গেছে।

শাওন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবতেছে এত রাতে ম্যাডামের বাসায় আসা কি ঠিক হলো। যদি আবার বকাবকি করে, তখন কি হবে। কিন্তু আমার বন্ধুর জন্য আমি এটুকু করতেই পারি।

তখনই শাওন দেখে ম্যাডাম এসে দরজা খুলে দেয়।


--- আরে শাওন তুমি? এতো রাতে? কোন সমস্যা হয়েছে.?? ম্যাডাম অবাক হয়ে শাওনকে দেখে বলল।


--- হুম, ম্যাডাম অনেক বড় সমস্যা হয়েছে। 


--- হুম, তুমি ভিতরে এসো। ভিতরে বসে কথা বলি আমরা। এরপর শাওন ভিতরে যায়। ভিতরে গিয়ে দেখে যে একটা মহিলা সোফায় বসে বসে টিভি দেখতেছে। এটাই বোদহয় ম্যাডামের মা। শাওন মনে মনে ভাবতেছে।


--- এটা হচ্ছে আমার আম্মু। আম্মু এই(শাওনকে দেখিয়ে) হচ্ছে আমার কলেজের একজন স্টুডেন্ট। (ম্যাম)


পরিচয় পর্ব শেরে শাওন খুব ব্যস্ত হয়ে বলে।


--- ম্যাডাম আজকে বিকালে কি আপনার শ্রাবনের সাথে দেখা হয়েছিল..?? (শাওন)

--- হুম হয়েছিল। কিন্তু কেন??

--- ম্যাম আজকে হটাৎ বিকালে শ্রাবন বাসায় এসে, কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। আর আমরা ওকে ফোনেও পাচ্ছি না। (শাওন)

--- চলে গেছে তো কি হয়েছে। আবার ফিরে আসবে। ওকি কোন বাচ্চা নাকি..? ম্যাম স্বাভাবিক ভাবে বলল কথা গুলো।


--- ম্যাডাম আপনাকে আমি বোঝাতে পারতেছি না। শ্রাবন অনেক চাপা মনের ছেলে। ও কখন কি করবে কাউকে তা বুঝতে দেয় না আর কেউ বুঝেও না। আপনি আগে আমাকে বলুন আপনাদের মাঝে বিকালে কি হয়েছিল। প্লিজ ম্যাম আমাকে বলুন দয়া করে।


--- তুমি যখন এতো করে বলতেছ। তাহলে আমি বলি শোন। এরপর ম্যাম বলতে শুরু করল।, আমাকে শ্রাবন আগ্রিম বার্থডে উইশ করে৷ আর আমি ওকে আমার বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দেই।


--- ওহ শিট। আপনি এটা না করলেও পারতেন। আমি এখন বুজতে পারছি শ্রাবন কেন এমনটা করল। কেন কাউকে কিছু না বলে চলে গেল। আপনি শ্রাবনকে পছন্দ করেন না, ভালোবাসেন না ভালো কথা। কিন্তু শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিতে গেলেন কেন? শ্রাবন মন থেকে আপনাকে পছন্দ করত।


--- আমিও তো শ্রাবনকে ভালোবাসি। (ম্যাম)

--- কিহ.?? আপনি কি আমার সাথে মজা করতেছেন..? আপনি যদি ওকে ভালোই বাসেন তাহলে এই বিয়ের মানে কি.???


--- ওয়েট এক মিনিট৷ আগে আমার সব কথা শোন। ওই কার্ডের ভিতরে কোন বিয়ের কার্ড ছিল না। ওটার ভিতরে আমার নিজের লেখা একটা লাভ লেটার ছিল৷ 


---শ্রাবন ওটা খুলে দেখেছিল???(শাওন)


--- বলতে পারব না। তবে ওখানে বসে তো খোলে নাই। প্লিজ আমাকে কিছু বলবা কি হয়েছে?? আমি তো কিছুই বুজতেছি না. আমার এখন খুব চিন্তা হচ্ছে।(ম্যাম)


--- তার মানে আপনি শ্রাবনকে ভালোবাসেন। আর শ্রাবনেকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন?? 


--- হুম। 


--- আসলে, আপনি মজা করতে গিয়ে শ্রাবনের অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। যার কারনে শ্রাবন আবার এই রকম কান্ড ঘটিয়েছে। 

--- আমি কিছু বুজতেছি না। প্লিজ আমাকে সব খুলে বলো। অনেকটা চিন্তিত হয়ে বলল কথাটা।


--- তাহলে শুনুন আমি বলি। এরপর শাওন আমার ৩ বছর আগের কথা বলতে শুরু করল।


শ্রাবন অনেক আগে একবার সিলেট ঘুরতে গেছিল। সাথে আমি সহ মোট চারজন বন্ধু ছিলাম।

আমাদের প্লান ছিল ওখানে গিয়ে ১সপ্তাহ থাকব। এর পরে আবার ঢাকা ফিরে আসব। আমরা প্রথম চার দিন বেশ মজা করেই কাটালাম। সিলেট শহরটা আমাদের সকলের কাছে খুব প্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে একটা হয়ে উঠেছিল। পঞ্চম দিন আমরা সকলে শহরের পাশের একটা ফাকা রাস্তা দিয়ে হাটতেছিলাম। সময়টা তখম বিকাল ৪টার কাছাকাছি হবে আনুমানিক। 

এখানে আমরা তেমন কিছু চিনি না। তাই আমরা জানতাম না যে এই রাস্তার পাশে একটা কলেজ আছে। যেহেতু তখন গরমের ছুটি চলতেছে তাই কলেজ বন্ধ। বাইরে থেকে কলেজটা দেখে আমাদের সকলের খুব পছন্দ হলো। সবাই ঠিক করলাম আজকের বিকালটা এখানেই কাটাব। আমরা সকলে মিলে ভিতরে গেলাম। সেখানে আমাদের মতো আরো অনেক ছেলে-মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।


আমরাও একটা ফাকা জায়গা দেখে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। সময়টা ভালোই কাটতেছিল। কিন্তু আমি লক্ষ করলাম শ্রাবনের আমাদের দিকে কোন খেয়াল নেই। সে এক ধ্যানে একটা মেয়ের দিকে চেয়ে আছে। আমি ধাক্কা দিলাম। শ্রাবন আমার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।

আমিও সেদিন কিছু বলি নাই। সকলে সন্ধ্যার আগে হোটেলে চলে গেলাম।


রাতে শ্রাবন আমাদেরকে বলল সে নাকি ওই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। যেহেতু আমরা ওর ফ্রেন্ড। তাই আমারাও ওকে সায় দিলাম।

পরের দিন বিকালেও আমরা ওই কলেজ ক্যাম্পাসে গেলাম। সেদিনও ওখানে ওই মেয়েটা ছিল। কিন্তু আমার জানা মতে শ্রাবন যে ভিতু তাতে ও কোন দিন ওই মেয়েটাকে সাহস করে বলতে পারবে না। আজকের দিনটাও দেখে দেখে কেটে গেল। আমরা ওকে সবাই বলেছিলাম যে আমরা তোর হয়ে বলে দেই। কিন্তু সে রাজি না। তাই আমরাও ওর মতো দেখে যাই শুধু। এইভাবে এক সপ্তাহের ৬ দিন কেটে গেল। কিন্তু শ্রাবনের প্রেমের কোন উন্নতি হলো না।


আজকে আমরা সকলে বাসায় চলে যাবো। তাই সকলে সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। শ্রাবনের দিকে চেয়ে দেখি ওর মুখটা কালো করে রেখেছে। কারনটা আমাদের অজানা নয়। আর মেয়েটা নাকি ওই কলেজেই পরে। এটা আমরা অন্য একটা মেয়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম। 


এরপর আমারা ঢাকায় ফিরে আসি। ঢাকায় ফেরার দুই দিন পরে জানতে পারি শ্রাবন নাকি সিলেট চলে যাবে লেখাপড়া করতে। এটা আমাকে শ্রাবন ফোন করেই বলেছিল। আমি বুজলাম না ও আন্টিকে কিভাবে রাজি করাল। কারন আন্টি শ্রাবনকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। শ্রাবন তখন ইন্টার ২য় বর্ষের স্টূডেন্ট। ও নাকি ওই কলেজে গিয়েই ভর্তি হয়। শ্রাবন আমাকে রোজ ফোন করে বলত যে, ভাই আজকে রিয়া আমার দিকে তাকিয়েছে, আজকে চেয়ে হাসি দিয়েছে, আজকে আমরা পরিচয় হয়েছি, আজকে আমরা এক সাথে বসে কফি খেয়েছি ইত্যাদি। (মেয়েটার নাম রিয়া) আমার বেশ ভালোই লাগত,যে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমাকে সিলেট গিয়েও আমাকে ভুলে নাই। আমকে রোজ ফোন করে তার মনের কথা শেয়ার করে।

এইভাবে চলতে চলতে শ্রাবন একদিন আমাকে ফোন করে বলে যে মেয়েটি নাকি ওকে প্রপোজ করেছে। সেও নকি শ্রাবনকে ভালোবাসে। 

আমি শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। 

এইভাবে কেটে গেল দুইটা বছর। এর মাঝে আমি এইটুকু বুঝে গিয়েছিলাম যে, শ্রাবন মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। 


রোজ শ্রাবনের সাথে আমার ফোনে কথা হতো। ও বেশি খুশী থাকলে দিনে দুই তিনবারও কথা হতো।


শ্রাবন আমাকে তিনদিন ফোন দেয় না। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। ওর ফোনও সুইচ অফ। আন্টিও আমাকে ফোন করে শ্রাবনের কথা বলে আমি আন্টিকে বুঝিয়ে ফোন রেখে দেই।


চারদিনের মাথায় একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। 

আমি রিসিভ করে। ফোন করেছিল একটা ছেলে।

আর বলেছিল শ্রাবন তার ফ্রেন্ড সে নাকি শ্রাবনকে বাসয় খুজতে গিয়ে দেখে শ্রাবনের বাসার দরজা খোলে। ভিতরে গিয়ে দেখে শ্রাবন ঘুমিয়ে আছে। সে গিয়ে শ্রাবনকে ডাক দেয় কিন্তু কোন উত্তর পায় না। হটাৎ সে লক্ষ করে পাশে ঘুমের ওষুধের প্যাকেট। তাই সে আর দেরি না করে এম্বুলেন্স ফোন করে সিলেট সদর হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে।


ছেলেটা আমাকে ফোন দিয়েছে কারন, শ্রাবন নাকি সবসময় আমার কথাই বেশি বলত সকলের কাছে। তাই আমাকেই সে প্রথম ফোন দিয়ে জানালো। তখন শ্রাবন মোটামুটি সুস্থ তবে জ্ঞান ফেরে নাই। আমি কোন কারন খুজে পাই না এটা করার।


আমি আর দেরি না করে স্যারকে (আব্বু) নিয়ে সোজা সিলেট চলে যাই। আমরা যাবার তিন ঘন্টা পরে শ্রাবনের জ্ঞান ফেরে।


পরে শ্রাবন সুস্থ হয়ে আমাদেরকে সবকিছু খুলে বলে যে কেন সে এমনটা করেছিল।


--- কেন করেছিল ও এমনটা.?? আর আমি কি না জেনে সেই পুরনো কিছু একটা করে ফেলেছি যার কারনে শ্রাবনকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যাডাম কেদে দিয়ে বললেন কথাটা।।


--- ম্যাডাম আপনি কাদবেন না প্লিজ। আগে আপনি কান্না বন্ধ করেন তারপর আমি সব কিছু বলতেছি। (শাওন)


--- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কান্না বন্ধ করতেছি। তুমি সব কিছু বলো। ম্যাডাম চোখের পানি মুছে বললেন কথাটা। 


এরপর শাওন আবার বলতে শুরু করল.............


Wait for next part..........


#রাগী_ম্যাডাম 🍂

#Part_14 & (শেষ পর্ব)

#Writer_Srabon


এরপর শাওন আবার বলতে শুরু করল। 

আমি আর স্যার(আব্বু) দুজনে মিলে সিলেট চলে আসি। আমরা আসার তিন ঘন্টা পরে শ্রাবনের জ্ঞান ফেরে। 


আমি শ্রাবনকে জিজ্ঞেস করি কেন ও এমনটা করল?? প্রথমে বলতেই চাইছিল না। এরপর আমার আর স্যারের জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হয়।


--- আব্বু তুমি হয়তো জানো না। আমার এখানে আসার কারন এই কলেজে পরার জন্য না। আমার আসার প্রধান করন ছিল রিয়াকে নিজের করে পাওয়ার। সব কিছু ঠিকই চলছিল। আমরা প্রায় দুই বছরের মতো রিলেশন আছি। আমার প্রতি রিয়ার কেয়ার,অধিকার, ভালোবাসা সবই ঠিক ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে থেকে রিয়া আর আমার সাথে আগের মতো কথা বলত না। আমি কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নি। ও আমাকে সব সময় ইগনোর করত। 


এইভাবে আমার দিন গুলো খুব বাজে ভাবে চলে যাচ্ছিল। এরপর হটাৎ একদিন রিয়া আমার কাছে এসে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি এটা কি.?? রিয়া বলে এটা আমার বিয়ের কার্ড। আমার বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সো তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি তাহলে তুমি যে আমাকে ভালোবাসতে???

তোমাকে আমি কখনোই ভালোবাসতাম না। এটা যাস্ট নাটক ছিল। শুধুই নাটক। 

এই কথা গুলো শোনার পরে আমি নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় ব্যক্তি হিসেবে মনে করেছিলাম। আমি রিয়াকে অনেক বলেছি কিন্তু ও আমাকে শেষ কথাটা বলল যে, আমার মতো গরীবের সাথে নাকি ওর যায় না। 

এটা শোনার পরে আমি আর একটা কথা না বলেই ওখান থেকে ফিরে আসি। রিয়া তখম জানত না যে আমার আব্বু একজন প্রিন্সিপাল। আমি ইচ্ছে করেই জানাই নি। 

 সেই দিন রাতে বাসায় এসে অনেক বুজিয়েছি নিজেকে কিন্তু কোন লাভ হয় নি। আমি যেন কষ্ট গুলো সইতে পারতেছিলাম না। এরপর সব শেষ রাস্তা বেছে নিলাম। ভেবেছিলাম কেউ আমাকে আর খুজে পাবে না। কিন্তু জানি না কি থেকে কি হয়ে গেল। জানি না কিভাবে হসপিটালে আসলাম আমি।  


শ্রাবনের এই কথা গুলো শুনে আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলি। ওকে যে কি বলে আমি সান্ত্বনা দিব সেটাই আমার জানা ছিল না। 

স্যার হয়তো বুজেছেন বিষয়টা। তাই তিনি শ্রাবনের পাশে বসে অনেক জ্ঞান মূলক কথা বলে। এতে হয়তো শ্রাবন অনেকটা মনের দিক থেকে বল পায়।


এরপর ওখানে আর কিছু দিন থেকে হসপিটাল থেকে স্যার সোজা ঢাকা নিয়ে আসে শ্রাবনকে। কলেজর কাগজ পত্র আমি গিয়ে নিয়ে আসি। আর ম্যাডাম আপনি শ্রাবনকে যেমন দেখেছেন না? আসলে ও মোটেও তেমন না। বাইরে থেকে হাসিখুশি দেখালেও ওর ভিতরে অনেক কষ্ট। সিলেট থেকে আসার পরে ও আর তেমন লেখাপড়ায় মন দেয় নি। আর ওর কথা ভেবে স্যারও তেমন কিছু বলে না।


শাওনের এই কথা গুলো শুনে ম্যামের আর বুজতে বাকি নেই যে শ্রাবন কেন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আর বিয়ের কার্ড দেওয়ায় কেন এমন রিয়েক্ট করল। আর এই কথা গুলো ভেবে অনেক জোরে জোরে কেদে উঠল। 


একদিকে শ্রাবনকে খুজতে হবে আর একদিকে এই ম্যাডাম এক ভাবে কেদেই চলেছে। তাই অনেক বিরক্ত হয়ে শাওন বলল ম্যাম আমি আজকে আসি। আমার যেটা জানার ছিল সেটা জানা হয়ে গেছে।


শাওন যেই মাত্র উঠে চলে যাবে তখনই ম্যাম বলল

সেও নাকি শাওনের সাথে শ্রাবনকে খুজতে যাবে। 

অনেক জোরাজুরির পরে শাওন ম্যামকে নিয়ে শ্রাবনদের বাড়িতে গেল। বাসায় ঢুকার পরে শ্রাবনের আব্বু আর ম্যাম দুজনেই অবাক হলেন। কারন ম্যাম আগে জানত না যে, আমাদের ভার্সিটির স্যার আমার আব্বু। আর আব্বু ম্যামকে দেখে বললেন।


--- মিস, রাইসা আপনি এত রাতে?? কোন সমস্যা হয়েছে?? (আব্বু)

ম্যাম লজ্জায় আর ভয়ে চুপ করে আছে।

শাওন ব্যাপারটা বুজতে পেরে বলল আমি সব কিছু খুলে বলতেছি। এরপর সব কিছু খুলে বলল।


এই ঘটনা শোনার পরে বাসার সবাই অনেক অবাক হয়েছে। আর এদিকে রাইসা ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। কারন রাইসা ভাবতেছে শুধু মাত্র তার মজার জন্য শ্রাবনকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।


এটা দেখে শ্রাবনের আম্মু রাইসার কাছে গিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। আর তাকে নিয়ে সোফায় বসায়। কেউ কোন কথা বলতেছে না। তখনই রাইসা ম্যাম বলে, আমায় ক্ষমা করে দিন আন্টি। আমি না বুঝে ওর সাথে এমনটা করে ফেলেছি। জানলে কখনোই এমনটা করতাম না। 


এটা শুনার আম্মু বলে উঠে মা এতে তোমার কোন দোষ নেই। তুমার চিন্তা করতে হবে না। আমার মন বলছে আমার ছেলে আবার ফিরে আসবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।


অনেক বুঝাবার পরেও রাইসা কান্না থামাচ্ছে না। তাই আর কোন রাস্তা খুজে না পেয়ে শ্রাবনের আব্বু বলল,


--- জান্নাত(আপুকে) তুই তোর ভাবিকে(রাইসা) বলে দে এখন যদি সে কান্না না থামায় তাহলে শ্রাবনকে খুজে পেলে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। (মজা করে আব্বু কতগুলো বলল)


এটা শোনার পরেই রাইসা কান্না বন্ধ করে দিল। আর এটা দেখে সবাই হেসে উঠল। আর রাইসা বোকার মতো চেয়ে রইল শুধু।


--- জান্নাত তুই তোর ভাবিকে নিয়ে শ্রাবনের রুমে যা। আর রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে যাস। দেখে মনে হচ্ছে বউমা রাতে কিছু খেয়ে আসে নি।


--- ওকে আম্মু। এরপর জান্নাত আপু রাইসাকে নিয়ে চলে গেল। 


--- স্যার অনেক রাত হয়েছে আমি এখন বাসায় যাই। আর আমার বিশ্বাস শ্রাবন আবার ঠিকই ফিরে আসবে।(শাওন)


--- আচ্ছা, তাহলে তুমি বাসায় যাও। আর ফোনে ওকে পেলে আমাকে জানিও। 


--- আচ্ছা।


রাত অনেক হওয়ায় রাইসা আর বাড়ি যায় নি। সে তার আম্মুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে।

আজকের রাতটা এভাবেই কেটে গেল সকলের।


সকাল ১০ টার সময় আমার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলেই দেখি আমি রুমের মধ্যে শুয়ে আছি। খুব খুদা পাচ্ছে। তাই ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন খাবার নেই। আর এদিকে খুদায় আমার যায় যায় অবস্থা। সেই কখন ভাত খেয়েছি মনে নেই। 


আর দেড়ি না করে বাইরে বের হলাম। বাসার পাশেই একটা বাজার আছে। তাই খাবার কিনতে বেশি সময় লাগল না। খাবার কিনে নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে কোন দিকে খেয়াল না করেই খাবার খেয়ে নিলাম। খুব খুদা লেগেছিল। এরপর কালকের সব ঘটনা গুলো ভাবতে লাগলাম। সালা আমার জীবনটা এই মেয়েরাই শেষ করে দিল। আগে একবার এমন করেছিলাম। আব্বু অনেক বুজিয়েছিল। কিন্তু আমি কিনা আবার সেই এক মেয়ের কারনে বাসা ছেড়ে চলে এলাম। ধুর মিয়া এটা কোন কাজ হলো। আম্মু অনেক চিন্তা করতেছে হয়তো। মনে মনে এইগুলো চিন্তা করতেছিলাম।


তখনই মোবাইলের কথা মনে পরল। ওহ শিট মোবাইলটা তো অফ করা। কে জানে বাসার সকলে কি ভাবতেছে। আর দেড়ি না করে মোবাইলটা অন করলাম। অন করেই আব্বুকে ফোন দিলাম।


রিং হবার সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হলো। হয়তো আমার ফোনেরই অপেক্ষায় ছিল।


--- হ্যালো আব্বু।।।(আমি)

--- হুম শ্রাবন কোথায় তুই.?? সব ঠিক আছে তো বাবা..??(আব্বু অনেক চিন্তিত হয়ে বলল কথাগুলো) 

--- হ্যা আব্বু আমি ঠিক আছি। সরি আব্বু।

--- সরি বলতে হবে না। তুই যেখানেই থাকিস না কেন এখনি বাসায় আয়। তোর আম্মু খুব চিন্তা করতেছে। 

--- আব্বু আমাকে মাপ করে দাও। তোমাদের ছেড়ে আমি আর কোথাও যাবো না। আব্বু আমার খুব কষ্ট হয়েছিল কালকে তাই.....আমাকে আর বলতে না দিয়ে আব্বু বলল,


--- আমি সবটা জানি। শাওন আর রাইসা বলেছে সবটা আমাকে। আমি কিছু চাই না। আমি ব্যাস আমার ছেলেকে আগের মতো হাসিখুশি দেখতে চাই। 

--- আব্বু.... 

--- হুম, তুই তারাতাড়ি বাসায় আয়। আমি তোর আর রাইসার বিয়ে দিব আজকে। 

--- মানে.?? মানে কি..? আমি খুব অবাক হয়ে বললাম।

--- হুম। রাইসা এখন আমাদের বাসায়। তোর আম্মুর খুব পছন্দ হয়েছে রাইসাকে। আর আমারো খুব পছন্দ। আমিও চাই আমার ছেলের বউ এমন কেউ হোক যে তোকে কন্ট্রোল করতে পারবে। 


--- কিন্তু আব্বু, রাইসা ম্যাডামের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর তাছাড়া সে আমার থেকে ২ বছরের সিনিয়র। 

--- সেটা তোকে দেখতে হবে না। আমার ছেলের জন্য আমি এইটুকু মেনে নিতে পারব না.?? 

--- আব্বু আমি কিছু বুজতেছি না। তুমি সবটা খুলে বলো প্লিজ।।


--- আগে বাসায় আয় তারপর সারপ্রাইজ দেব। 

--- ওকে আব্বু, আমি এখনি আসতেছি। 


ফোন রেখে দিলাম। আব্বু এতো সময় ধরে যা বলল তা আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে। কিছুই বুজলাম না। তাই আর দেড়ি না করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কে জানে বাসায় গিয়ে কি সারপ্রাইজ পাই। তবে রাইসাকে পেলে আমার আর কিছু চাই না।

 


আর দেড়ি না করে আমি বাইক নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।


#অপরদিকে 

শ্রাবনের আসার কথা শুনে সবাই অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো। আর সবাই এটা ভেবেও খুশি যে আজকে শ্রাবনকে বিয়ে দিয়ে দেবে। রাইসা শ্রাবনের খোজ পাওয়া গেছে জেনে সেও খুব খুশি হলো। শ্রাবনের আব্বু তার কাছের কিছু মানুষজনকে ফোন করে আসতে বলল। যে তার ছেলের ছোট খাটো বিয়ে আজকে। পরে বড় করে করা হবে। আর শাওন তো খুব খুশি আজকে তার বেষ্ট ফ্রেন্ডর বিয়ে। সে তাদের সব বন্ধুদের ইনভাইট করল। 


শাওন আর তার বন্ধুরা মিলেই পুরো বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলল। খুব কম সময়ের মধ্যেই ভালো সাজানো হয়েছে। অবশেষে দেখা গেল ছোট করে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেকটা বড় হয়ে যাচ্ছে। 


এদিকে রাইসা খুব লজ্জা পাচ্ছে আজ তার বিয়ে। সেটাও তার স্টুডেন্টের সাথে। আবার এতো কাহিনি করে। রাইসার আম্মুও চলে এসেছে। তার মেয়ের কাছে। তিনিও খুব খুশি। কারন তার মেয়েকে বিয়ের জন্য সে অনেকবার বলেছে। কিন্তু কিছুতেই রাজি না সে। তা অবশেষে আজকে রাজি হলো নিজের ইচ্ছায়। 

এদিকে সব কিছু কম্লিট করা হয়ে গেছে।


আমি বাসার সামনে এলাম বিকাল ৫ টার সময়। বাসার সামনে এসে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। এটা কি আমাদের বাসা?? একবার আবার ভালো করে দেখে নিলাম। হুম আমাদেরই বাসা তবে এতো সাজিয়েছে কেন.?? তার মানে কি আমারই বিয়ে..?😁 আর কিছু না ভেবে ভিতরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সারা বাসা ভর্তি লোকজন। আমি পুরো অবাক। সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। তখনই আম্মু এসে আমাকে জরিয়ে ধরল।

কছু সময় কান্নাকাটি করল। আমি অনেক কষ্টে তার কান্না থামালাম। আব্বু আর আম্মু আমাকে উপরে নিয়ে গেল। 


--- বাবা আমাকে কথা দে তুই আর এমন করবি না কখনো..?(আব্বু)

--- আব্বু কথা দিলাম। (আমি)


এরপর আব্বু আমাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিল। আজকে প্রথম আমি আব্বুকে কাদতে দেখলাম। এটাই হয়তো আব্বুর ভালোবাসা। 


--- ফ্রেশ হয়ে তারাতাড়ি নিচে আয়। সবাই ওয়েট করতেছে। 

--- কিন্তু কেন..???(আমি)

--- আজকে তোর বিয়ে। তোর ম্যাডামের সাথে। 

--- মানে কি আম্মু..??(আমি)


তখনই শাওন সহ কিছু ফ্রেন্ড রুমে ঢুকে বলল


--- স্যার আপনারা নিচে যান। আমরা ওকে নিয়ে আসতেছি। (ফ্রেন্ড) 

আব্বু আম্মু নিচে চলে গেল।


--- ভাই আমি কিছু বুজতেছি না। সবটা খুলে বল।(আমি)

--- আগে রেডি হয়ে নে। আর সব কথা বাসর রাতে ম্যাডাম মানে ভাবির কাছ থেকে শুনে নিস।

--- ধুর সালা।।।


এরপর রেডি হয়ে নিচে এলাম। এসে দেখি রাইসাও নিচে আছে। তার মানে রাইসার সাথেই আমার বিয়ে। আমি তখন মনে মনে একটা ড্যান্স দিলাম।

রাইসাকেও দেখে মনে হচ্ছে সেও এই বিয়েটা নিয়ে আমার মতো খুশি।


অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেল। 😁😁🙃🥴


রাত ১ টার সময় ছাদে বসে, 

--- মামা এবার ভিতরে যাও ভাবি অপেক্ষা করে আছে। (ফ্রেন্ড) 

--- হ্যাঁ ভাই, ভিতরে যা। আমরাও বাসায় যাই। অনেক রাত হয়েছে। (ফ্রেন্ড) 

--- এ ভাই আমার ভয় করতেছে। যদি ভিতরে গেলে আমাকে রাগ করে.?? (আমি)

--- এ সবাই ধর এই ভিতুর বাচ্চারে। 


এরপর সবাই আমাকে ধরে আমার রুমে ঢুকিয়ে দিল। আমি ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করেই পিছনে তাকিয়ে দেখি। রাঈসা আমার পড়ার টেবিলে বসে আমার বই গুলো দেখতেছে। 

আমি আগে জানতাম নতুন বউ খাটের উপর বসে থাকে। আর স্বামী এলে তাকে সালাম করে। আর সালা আমার বউ???


আমি কাছে যাওয়ার সাথে সাথেই 

 ঠাসসসসস করে একটা চর দিল।

আমি প্রশ্ন সূচক ভাবে তাকালাম।??


--- এটা হচ্ছে কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্য। (রাইসা)


আবার ঠাসসসসসস করে চর দিল।


--- এটা হচ্ছে বিয়ের কার্ড না খুলে দেখার জন্য।(ম্যাম)

--- আমি করব না আপনার সাথে বাসর। আমি গেলাম বলে হাটা দিলাম দরজার দিকে মজা করে।।

--- ওই কই যাস?? এখানে এসে বস। আমাকে বিছানার উপরে নিয়ে বসাল। 


--- কি হয়েছে বলুন..???(আমি)

--- আগে আমি যে তোকে বিয়ের কার্ড দিছিলাম সেটা এনে খুলে পড় এখনি..?(রাইসা রেগে)


আমি ভয়ে ভয়ে কার্ডটা খুলে পড়ে তো অনেক অবাক হয়ে গেলাম।


--- তার মানে তুমিও??? (আমি)

--- হুম আমিও তোকে ভালোবাসি। 


এরপর সবটা খুলে বলল। 


আমি আর কিছু না বলে রাইসার ঠোঁটে আমার ঠোঁট বসিয়ে দিলাম। ৩ মিনিট পরে ছেড়ে দিলাম। 


--- এই বেয়াদব ছেলে এটা কি.?? (লজ্জা পেয়ে)

--- এটা হচ্ছে আমাকে ভালোবাসো না বলার সাস্থি।


আবার রাইসার আর আমার ঠোঁট এক করে দিলাম। এবার ৫ মিনিট পরে ছেড়ে দিলাম।


--- এটা হচ্ছে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। (আমি)

--- হাহাহাহাহা। তুমি তো দেখছি খুব রোমান্টিক।। 

--- হুম। রাগি ম্যাডামের রোমান্টিক বড়। 🙃

--- এই শোনো না.??(রাইসা আমার বুকে মাথা রেখে)

--- হুম বলো না.???(মজা করে)

--- আমার না একটা ইয়ে চাই..?

--- ইয়ে মানে?? সতিন??(মজা করে বললাম)

--- তুমি??? (আমার বুকে কিল মেরে)

--- তাহলে কি চাই..??

--- কিউট একটা বেবি চাই ( খুব লজ্জা পেয়ে বলল)

--- ইস আমাকে আগে বলবা না?? তাহলে আর এতো দেড়ি করতাম না। আগে থেকেই রোমাঞ্চ শুরু করে দিতাম। এরপর আর মনে নাই😁😁


---------- সমাপ্ত --------------


[এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ছিল। বাস্তবে এর কোন মিল নেই। আর যাদের যাদের এই সম্পূর্ণ গল্পটা ভালো লেগেছে তারা দয়া করে একটা কমেন্ট করে জানাবেন। আর খারাপ হলেও বলবেন। এতো দিন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।]

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post