গল্পঃ জীবনটা অনেক কষ্টের পর্বঃ ৭ এবং শেষ | Jibonta Onek Koshter Part Last part

 

গল্পঃ #জীবনটা_অনেক_কষ্টের

পর্বঃ ৭ এবং শেষ 

লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

বোকা মন আমার হয়তো এটা উপলব্ধি করতে হয়নি 
সক্ষম রাইও পরিশেষে করবে না বিশ্বাস এই আমাকে, 
পরিশেষে রাই যা বলল তা শুনে আমি,বেশ খানিকটা 
থমকে যাই।রাই বলল,

--তাহলে এর জন্যই তুমি ফুফা,ফুপি,এবং আমার বড় 
বোনের থেকে সব সময় নিজের দূরত্বটা বজায় 
রাখতে?

রাইয়ের কথার উত্তরে,হাল্কা মাথা নিচু করে আমি 
বললাম,

"হ্যা''

অতএব রাই বেশ খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে আমায়
বলল,

-- থাপ্পরটা কেন দিয়েছি জানো?এতদিন নিজের বুকে
এরুপ তীব্র ব্যাথার বিষ বহন করে নিশ্চুপ হয়ে থাকার 
জন্য?নিজের বড় বোনের প্রতি সন্দেহটা সেই দিনই 
আমার মনে তীব্র আকারে জমে উঠেছিল,যেদিন
আড়ালে জানতে সক্ষম হই,আমার এরুপ এক্সিডেন্ট 
এর প্রধান দ্বায়ী স্বয়ং আমার নিজেরই আপন বড় 
বোন?""

""সেদিন তোমার বোন আমাকে গাড়ীর নিচে পিষে
ফেলে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু শুধু মাত্র তোমার 
জন্য সফল হয়নি তারা! এরুপ জঘন্য বা ঘৃণিত 
কাজে?ক্ষমা করে দিয়ো আমায়,কারণ আমার জন্যই 
তুমি আজ এক পা' হীন?তোমার যন্ত্রণাটা আজ 
আগের চেয়ে তীব্র?বুকের ব্যাথাটা বেশ গভীর?

অতঃপর অবাক করে দিয়ে,রাই আমাকে হঠাৎ 
জড়িয়ে ধরে খানিকটা শান্তণা-মূলক এবং নরম সুরে 
বলল,

--যতদিন তুমি রয়েছো আমার পাশে,ততদিন নেই 
কোন, তীব্র কষ্ট,যন্ত্রণা,বেদনা আমার মনে।রাত হয়েছে 
অনেক গভীর!ঘুমিয়ে পড় আজ,নতুন এক যুদ্ধ মাঠে 
নামবো মোরা কাল?অতি শিঘ্রই পাবে তারা অন্যায়ের
প্রতিবাদ?

অতঃপর রাই আমাকে নিজের সাথে বেশ শক্ত করে 
জড়িয়ে ধরে বলল,

--প্রতিটি মুহূর্তে,ধাপে,ধাপে,নানান পর্যায়,পেয়েছো
অনেক ব্যাথা?এখন আর কোন কষ্ট যন্ত্রণা পেতে 
দিবো না তোমায়,ভয় নেই আজ একা নও তুমি?
বিশ্বাস যোগ্য রয়েছে এক নারী।

অতঃপর রাত বেশ গভীর হওয়ায় সেদিন আমরা 
উভয়ই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম অবশ্য অজানা সব ব্যাথা
আমাকে কিছুতেই দিচ্ছিলো না ঘুমাতে কিন্তু সঙ্গে 
রয়েছে এক বিশ্বাস যোগ্য নারী যার পবিত্র ঠোঁটের 
পরশে জমে থাকা কষ্টের বিকট পাহাড় নিমিষেই লন্ড,
ফন্ডতে রুপ ধারণ করে ধুলোয় মিশে নিঃস্ব হয়ে গিয়ে 
প্রসান্তির এক অদ্ভুত শান্তি এসে ভরিয়ে দিয়ে ছিল এ
বুকে জমা শত শত তীব্র কষ্টের খনি গুলো।পরের দিন
সকাল এবং বিকেলটা বেশ ভালোই কাটছিল তবে 
সন্ধ্যার দিকটা বেশ খানিকটা বিভ্রান্তির ভেতর দিয়ে 
যাচ্ছিলো।মাগরিবের আজান দিবে আর কিছুক্ষণ পর,
একাকী ছাঁদে থাকা গোলাপ গাছ গুলোর পাশেই 
দাঁড়িয়ে ছিলাম।মনটা ছিল বিভোর,রাইয়ের ভাবনায়।
কিন্তু পরক্ষণেই আমি বেশ বিচলিত হয়ে পড়ি,কোন
এক অচেনা নাম্বার থেকে,নিজ ফোনে আশা কয়েক লাইনের একটা মেসেজ দেখে?মেসেজটা আমাকে 
মুহূর্তেই বিভ্রান্তির শিকার হতে বাধ্য করে।কারণ 
মেসেজে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা ছিল,

 _''_ তোর কম বয়সী মেয়েটা কে যেরুপ কষ্ট-দ্বায়ক,
যন্ত্রণা প্রধান করে,ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছিলাম?তার
চেয়েও অধিক কষ্ট যন্ত্রণার শিকার বানিয়ে স্বয়ং 
তোরই চোখের সাম্মুখে,আমি তোর ওই পঙ্গু স্ত্রী কে 
ধর্ষণ করার পর হত্যা করে মনের ভেতরে তিল তিল 
করে জমে থাকা সব প্রতিশোধের তৃপ্তি মেটাবো!তোর
জন্য আমার বাবা আত্যহত্যা করেছে,মা আজ লোক
লজ্জায় সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে পারে না,
বাঁচতে পারে না,এমনকি নিশ্বাস নিতেও তার আজ 
কষ্ট হয়।সেদিন ভুলিনি এখনো যেদিন জন-সম্মুখের
সামনে আমায় উলঙ্গ করে পিটানো হয়ে ছিল।শিঘ্রই
আবার সাক্ষাৎ হচ্ছে আমাদের..........."""

সারা-শব্দহীন নিরিবিলি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি
আমি।সেই নাম্বারে বহুবার কল দিয়েও পাইনি কোন 
রেসস্পন্স কারণ নাম্বারটা বন্ধ।মেসেজ করার 
পরপরই সিম বন্ধ করে রাখাটাই স্বাভাবিক।মাগরিবের 
আজান দিচ্ছে,নাহ এখন আর কিছুই ভাবা যাবে না।
অতঃপর ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসলাম।মাগরিবের 
নামাযের পর আবার ছাঁদে এসে ভাবাতে পরিপূর্ণ হয়ে 
গেলাম।আমি নিশ্চিত মেসেজটা সেই পাপিষ্ঠ
ছেলেটিই পাঠিয়েছে কিন্তু আশ্চর্য যার আর ৫দিন পর
ফাঁসির কার্যকর হবে,সে কি করেই বা এরুপ মেসেজ
পাঠিয়ে,আমাকে চিন্তা-দুশ্চিন্তার শিকার হিসেবে 
বিবেচিত করতে চাইবে?হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো
আমার,একজন পুলিশ অফিসার ফোন দিয়েছেন।
অতঃপর দ্রুত ফোন রিসিভ করে,জানতে পারলাম,
রাহাত নামের ছেলেটা অর্থাৎ যে আমার নিস্পাপ 
মেয়েটিকে ধর্ষন করে মৃত্যুর কুয়ায় ফেলে দিয়েছে,
সেই পাপিষ্ঠ ছেলেটি কোন এক পুলিশের সাহায্যে 
জেল থেকে পালাতে সক্ষম হয়।অত্যন্ত পরিশ্রমের 
ভিত্তিতে তারা সেই বেইমান পুলিশটিকে গ্রেফতার 
করতে সক্ষম হয়।কঠিন থেকে কঠিন-তম শাস্তি হতে 
পারে তার।নাম শুনে যা উপলব্ধি করলাম আমি,এটা 
হয়তো সাদিয়ার ২য় স্বামীই হবে।পরিশেষে আমি যখন
তাকে মেসেজের বিষয়টা বললাম,তখন তিনি আমায়
আজ বেশ সতর্কতার সাথে থাকতে বলেই ফোনটা 
কেটে দেন।তবুও কেন যেন আজ দুশ্চিন্তা-মুক্ত হতে 
পাচ্ছি না আমি।সব দিক দিয়েই চিন্তা-দুশ্চিন্তা গুলো 
তাদের নিত্য-দিনের ভোগ-বিলাস হিসেবে আমাকে 
চিরে চিরে খাচ্ছে।রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে ঘুমানোর 
কিছুক্ষণ আগে,রাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
আজ চারপাশটা যেন কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে 
আমার।অতঃপর গভীর রাত্রে আমার তীব্র নিদ্রা 
গেলো ভাঙিয়া।হাত,পা মুখ সব কিছুই বাধা আমার,
পড়ে রয়েছি ফ্লোরে,এবং সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে 
রাহাত নামের এক জানোয়ার।মুখে তার পৈচাশিক 
হাসি। মাঝ রাতে রাইয়ের চিৎকারের শব্দে বাসার 
সবারই নিদ্রা যায় উড়িয়া,ভীর জমিয়েছে দরজার 
বাহিরে,অনাবরত তীব্র আকারের শক্তি প্রয়োগ করে 
দরজা ধাক্কাচ্ছে তারা,উদ্দেশ্য ভেঙে ফেলা কিন্তু মনে 
হয়না তারা এরুপ শক্ত মজবুত দরজা আদৌ কি এত
সহজে পারবে ভাঙতে?আর ভেঙে ফেললেও হয়তো 
অনেকটাই দেরী হয়ে যাবে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় 
হচ্ছে,রুমের ভেতরে কি করেই বা আসলো সে?হয়তো 
বেলকনি থেকে, নতুবা ছাঁদের দরজা থেকে কারণ 
ছাঁদের দরজাটা আজ খোলাই ছিল।করুণ পরিস্থিতির 
সম্মুখে রয়েছি আমি।শার্টের কুচি গুলো উপরে তুলে, 
তাচ্ছিল্যের হাসিতে,ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে রাইয়ের 
দিকে!গড়াগড়ি,ছটফট করছি ফ্লোরে তবুও পারছি না 
আমি এ শক্ত বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে?মনে
মনে করছি প্রার্থনা তাহার নিকট যিনি একমাত্র 
আমাকে এরুপ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে পারেন।
অতএব রাহাত যখন রাইকে স্পর্শ করতে যাবে,তখন
কিছু একটা ভেবে যেন সে থেমে যায়।আমার দিকে 
বেশ কয়েকবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি প্রধান করে,
পকেট থেকে একটা,ছোট্ট সিসি বের করে,মুহূর্তেই 
সিসিতে থাকা পানি জাতীয় কিছু একটা রাইয়ের দু-
চোখের দিকে ছুড়ে মেরে,অট্ট হাসিতে উৎফুল্ল হয়ে 
উঠে।পানি জাতীয় জিনিসটা যখন রাইয়ের চোখের 
গভীরে প্রবেশ করে ফেলেছিল তখন রাইয়ের চোখ 
থেকে টপ-টপ করে,রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো।নিমেষেই 
রাইয়ের তীব্র যন্ত্রণার আর্তনাদ আমাকে কষ্টের তীব্র 
দহনের লাভায় ফেলে দিয়ে ছিল।ছটফটনি বেড়ে গিয়ে 
ছিল আমার,শক্ত বাঁধনটা ধীরে ধীরে হাল্কা,সহজতর
হয়ে উঠছিল।অতএব রাহাত যখন নিন্দানীয় দৃষ্টিতে
রাইয়ের দিকে নিজের কালো হাত বাড়ানোর প্রস্তুতি 
নিচ্ছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা ভেঙে পুলিশ ভেতরে 
চলে আসে এবং রাহাত ভয়ে পালানোর বৃথা প্রচেষ্টা
করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে ইনকাউন্টার করা 
হয়া।পরিশেষে আমি বাঁধন মুক্ত হলাম এবং জ্ঞান হীন
রাইকে দ্রুত এম্বুলেন্স এর সাহায্যে হাসপাতালে নিয়ে 
আসলাম।অবস্থা বেশ গুরুতর ডাক্তার সর্ব প্রথমেই
বলে দিয়েছেন এ কথা।অপারেশনের পর ডাক্তার 
যখন নিজ মুখ-খানি গোমড়া করে বললেন,রাই তার
দু-চোখ দিয়ে দেখার সক্ষমতা চিরকালের জন্য হারিয়ে 
ফেলেছে,তখন আমার হৃদয়টা সর্বোচ্চ পরিমাণে তীব্র 
ধাক্কায় ভেঙে গুঁড়ি গুঁড়ি হয়ে গিয়েছিল এটা ভেবে, 
একটা মেয়ে আর কতই বা এরুপ তীব্র যন্ত্রণার শিকার 
হিসেবে গন্য হবে সার্বক্ষণিক!সত্যি বলতে সব কিছু 
আমার জন্যই হয়েছে।এমনটা কেন হলো খোদা আমি
তো চাইনি এমনটা?বেঁচে থাকার ইচ্ছে গুলোতো সেই 
কবেই অন্ধকার মাটির কবরে সমাহিত হয়েছে।খুব 
ইচ্ছে করে মরে যেতে কিন্তু সৃষ্টি কর্তা আমায় মৃত্যু 
প্রধান করেন না।মন বারবার চাইলেও করতে পারি না 
আত্যহত্যা।সব দিক দিয়েই অদৃশ্য এক শিকলে বাঁধা 
আমি।পারিনা মুক্ত হতে,উড়ে যেতে বহু ধুরে।২৫ দিন 
পর রাইকে হাসপাতাল থেকে আবার বাড়িতে নিয়ে 
আসা হয়। রাইয়ের দিকে তাকালেই কেন যেন প্রতিটা 
মুহূর্তে মৃত্যু আমায় ক্ষণে,ক্ষণে ডাকে।পারছি না আর
সয্য করতে, তীব্র ব্যাথার নদীতে আর সাঁতার কাঁটতে।
ডুবিয়ে দেও হে প্রভু নিয়ে যাও ওপারে।দু মাস পর 
আজ প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে,গভীর রাত্রে।নির্ঘুম নিশ্চুপ 
কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছে রাই।মনে অনেক ব্যাথা
তার তবুও মুখে হাসি রেখে বলল আমায়,

--চলো না আজ এই গভীর রাত্রে আকাশ থেকে পরন্ত 
বৃষ্টিতে দুজন মিলে মন খুলে ভিঁজি?

মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি প্রকাশ করলাম আমি।কেন 
জানি আজ আমারও খুব করে ইচ্ছে করছে,এই গভীর 
রাত্রে বৃষ্টিতে ভিঁজতে।অতঃপর রাইকে কোলে করে 
নিয়ে আসলাম ছাঁদে,সুগন্ধি মাখা এক'খান ফুল  
রাইয়ের কানের দিকটায় গুজে দিলাম আমি।কিছুটা
লজ্জায় মুখ লুকালো বুকে।আহা কি প্রশান্তি বয়ে 
চলেছে মনে....স্বামীর কোলে থাকা অবস্থায় দু'হাত
মেলে রাই উপলব্ধি করছে,এই মুহূর্তকে।বুকে লুকায়িত 
শত-শত কষ্টের তীব্র গরম খোয়া গুলো,এই বৃষ্টি ভেঁজা 
রাতে আজ যেন সব ঠান্ডাতে রুপান্তর হয়ে যাচ্ছে।
মনের' দুঃখের কালো কুচকুচে আকাশটা আজ সাদা 
ফকফকা!রাই কে আজ খুব খুশি দেখাচ্ছে।তার 
হাসিটা কিন্তু দারুন'' নাই বা আর দিলাম তাহার রুপের
বর্নণা?পরের দিন,সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে ওয়াস রুম
থেকে বের হয়ে বিছানায় এসে বসার সাথে সাথে হঠাৎ 
ঝাপটি মেরে জড়িয়ে ধরলো রাই...নিমিষেই শার্ট্টা 
চোখের অশ্রুতে ভিঁজে গেলো আমার।কিছুটা আশ্চর্য 
হয়ে বললাম আমি,কি হয়েছে রাই?কেন কাঁদছো তুমি
এভাবে?কথার উত্তরে রাই বলল না কিছু নিশ্চুপ হয়ে
কাঁদছে এখনো,অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করলে রাই
এবার নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল আমায়,

--আমার কেন যেন বেশ ভয় হচ্ছে আজকাল!রোজ
স্বপ্নে এক সুন্দরী অল্প বয়সী বালিকা এসে ডাকে আমায়!মিষ্টি সুরে বলে,চলে এসো আমার সাথে, 
মায়ার ভূবণ ছেড়ে!জানো শাহরিয়ার' যতই কষ্ট হোক 
না কেন আমার তবুও আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই,
থাকতে চাই?কোথাও যেতে চাই না আমি?তুমি হীনা 
আমি যে অঁচল?

""কোথায় যাবে তুমি?আমি থাকতে কিচ্ছু হবে না 
তোমার?হয়তো দেখেছো দুঃস্বপ্ন?ভুলে যাও?করো না
পাগলামি এরুপ?আছি সর্বদা আমি তোমারি?

অতঃপর বহু বাধাকে পরাজিত করে রাইকে শান্ত
করাতে সক্ষম হলাম আমি।সকাল ১১টার দিকে 
শপিং-মল থেকে,রাইয়ের জন্য সবুজ রঙের একটি 
শাড়ি কিনে বাসায় ফিরছিলাম।আজ দুটি কারণে আমি ভিষণ খুশি,প্রথমত আজ রাইকে নিজের পছন্দ 
মতো সাজিয়ে দিয়ে বলবো,খুব শিঘ্রই তোমাকে 
বিদেশে নিয়ে গিয়ে চোখের চিকিৎসা করাবো এবং 
দ্বিতীয়ত আজ ঘর-ভর্তি সবার সম্মুখে উচ্চ প্রমানের 
ভিত্তিতে উন্মচন করবো দুই পাপিষ্ঠের পশু রুপ-খানি।
বাসায় ফিরছিলাম হাসি মুখ নিয়ে'কিন্ত কখনো ভাবি 
নি হাসি মুখ-খানি আমার কয়েক নিমেষেই গোমড়া 
হয়ে যাবে।বাড়ির আশে-পাশে লোক-জনের
ভিড়া-ভিড়ি!ভেতরে প্রবেশ করতেই থমকে গেলাম 
আমি।আশ্চর্য পুলিশ কেন ভেতরে?অতঃপর আরেকটু 
ভেতরে যেতেই,হাটু ভেঙে বসে পড়লাম ফ্লোরে,পড়ে 
গেলো হাত থেকে শপিং ব্যাগটি।বুকটা কেপে উঠলো, 
সারা শরীর ঝিমঝিম,ছমছম করছে,শিউরে উঠছে।
বুকের ভেতরের কষ্টের দহন গুলো ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ 
সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে একি দেখিলাম আমি,এটা
তো কোন ক্রমেই চাইনি আমি।তাহলে সৃষ্টি কর্তা কেন 
করলো এমনটা আমার মতো এক আঘাত প্রাপ্ত কে 
আরও আঘাত প্রধান করে?কেন আমার থেকে কেঁড়ে নেওয়া হলো বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন আমার 
রাইকে?কি আমার অপরাধ কেন এমন হয় আমার 
সাথে?শীতল লাশটি তার রক্ত মাখা মুখ'খানি,চোখ
দু'টো বন্ধ' মুখে কষ্টের ছাপ,বুকে হয়তো অনেক ব্যাথা
একি সর্বনাশ হলো আমার?রাইয়ের বিবস্ত্র লাশটি 
ঘিরে আনাগোনা অনেক মানুষের কান্নার বুক ফাঁটা
তীব্র চিৎকার।তীব্র ব্যাথার,তীব্র বিকট আওয়াজে 
আমি বললাম, কি করে হলো এমন?উত্তরে রাইয়ের 
বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,কে যেন ছাঁদ থেকে 
তীব্র ধাক্কার প্রহারে ফেলেদিয়েছে রাইকে?হাসপাতালে 
নিয়ে যাওয়ার আগেই দম ছেড়ে দেয় আমার মেয়েটা, 
না বলে নিরবে,চুপচাপ, চলে যায় সবাই কে ছেড়ে, উড়াল মেরে অন্য দুনিয়ায়।কথাগুলো বলার পরপরই 
আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।অজস্র চোখের জল
আজ,বেয়ে বেয়ে পড়ছে উনার চোখ-খানি দিয়ে।স্তব্ধ 
আমি!পারছিনা তীব্র কষ্টের প্রহার থেকে নিজেকে 
আর রক্ষা করতে।দৌড়ে গিয়ে বসে পড়লাম মৃত
লাশটির সম্মুখে,অশ্রসিক্ত নয়ন জোড়া বন্ধ করে 
পরম আদরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে,হাউমাউ করে 
ভেঙে পড়লাম কান্নায়।পারছি না মেনে নিতে এত বড়
এক বাস্তব কে?চিৎকার করে ডাকছি আমি,হে মাওলা
এ কিরুপ বিচার তোমার?কি ছিল অপরাধ আমার?
কেন কেঁড়ে নেওয়া হলো আমার বুকের গহীন ঘরে 
সার্বক্ষণিক অবস্থিত পবিত্র এক নারী কে?কেন এত 
কষ্ট-যন্ত্রণা আমার জীবনে।বাঁচতে চাইনা আর!নিতে 
চাইনা নিশ্বাস,থাকতে চাইনা আর কোন ক্রমেই মিছে  মায়ার এ দুনিয়ায়।বন্ধ করা হোক দরজা,আদেশ করা
হোক মৃত্যুকে,চাইনা আর বাঁচতে,নিয়ে যাও প্রভু আজ 
তোমার নিকটে,দেওয়া হোক একিসাথে দু'জনার কবর

ভাইয়া-ভাবী ছুটে এসেছেন নিকটে,বৃথাই আমাকে
সামলানোর চেষ্টা করছেন তারা।অতঃপর কাঁধে হাত 
রেখে আইনের পোশাক পরিধানে বলল এক লোক,
কেঁদো আর ভাই!নিয়ে যেত দেও এই মৃত লাশটি!
তদন্ত করা হবে তাই?

হুংকার দিয়ে উঠিলাম আমি!চেপে ধরলাম পুলিশটির
কলার!কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,কেন নিয়ে যাবেন
রাইকে?সে তো যায়নি মারা?হাস্যকর!আমায় একা 
রেখে মরতে পারে না রাই?এখনো তো কত কাল কত
শত পথ চলা বাকি আমাদের?

''হঠাৎ পাশের বাড়ির ভাবী দৌড়ে এসে চিৎকার করে 
বললেন, আমি দেখেছি,পাশের ছাঁদ থেকে?কে ধাক্কা 
দিয়ে ছিল রাইকে?''

মুহূর্তেই সবার চোখের দৃষ্টি কোণ কেঁড়ে নেয় তিনি 
অতএব আবার বললেন তিনি,

--স্বামীর সাথে অভীমান করে চলে এসে ছিলাম ছাঁদে।
মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম,ছাঁদের এক পাশে
হঠাৎ দেখিলাম আমি!এক পা'হীন অন্ধ রাইকে 
ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে আসা হয় ছাঁদে।হাসি-মুখে কিছু
কথা বলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় স্বয়ং তারই নিজের 
রক্তের যাকে বলে আপন বোন' রুপা!এবং তার স্বামী।

পাশের বাড়ির ভাবীর এরুপ কথা শুনে সবার মাথায়
যেন একে পর এক আকাশ ভেঙে ভেঙে  পড়ছে।সাথে 
সাথেই চিৎকার করে উঠলো রুপা!এবং বলল,

--এসব মিথ্যে?ফাঁসাতে চাইছে তিনি আমায়?কেনই
বা এরুপ করবো আমি স্বয়ং নিজেরই বোনের সাথে? 

অতঃপর সন্দেহর মুখ্য তীর গিয়ে বেদ করলো রুপার
বুক-খানি!জেরা করা হয় তাকে,সত্য পারেনি লুকাতে,
প্রকাশ হয়ে যায় তার সমস্ত কু-কর্ম।শিকার করে নিয়ে 
বসে পড়লো ফ্লোরে।বোনের সম্পদ গুলো আত্যসাৎ
করাই ছিল মূলত রুপার এক মাত্র লক্ষ।তাইতো 
লোভের বসিকরণের শিকার হয়ে যায় রুপা।সঙ্গে সঙ্গে 
রুপা নামক এক পাপিষ্ঠ মেয়ের গলা চেপে ধরলাম 
আমি।বৃথাই চেষ্টা করছে ছাঁড়ানোর।ঠাশ করে শরীরের 
সমস্ত শক্তি প্রধান করে থাপ্পর দিয়ে আমি বললাম,

তোর কি এমন ক্ষতি করে ছিলাম এই আমি?কেন 
তুই প্রতিবার আমার সুখ গুলোকে দুঃখের তীব্র কষ্টের
সাগরে ভাসিয়ে দিতে সাহায্য করিস?শুধু মাত্র তোর 
মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য আমায় কুয়েতে বিনা দোষে ১৫
বছর জেল খাটতে হয়ে ছিল?তোর জন্য আমি বেঁচে 
থাকার সব ইচ্ছে আকাঙ্খা গুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে 
ফেলেছিলাম,কিন্তু রাইয়ের সাথে পবিত্র সম্পর্কে লিপ্ত
হওয়ার পর থেকেই তিল তিল করে আবার বেঁচে
থাকার সব ইচ্ছে আকাঙ্খা গুলো ফিরে পেয়েছিলাম।
কিন্তু আজ সব কিছুই শেষ হয়ে গেল আমার?বাঁচতে 
দিলি না একটু সুখ-ময় জীবন নিয়ে।আচ্ছা তুই কি 
সত্যিই একজন নারী?আমার মতে একজন নারী 
এরুপ জঘন্য হতে পারে না?

পাশেই ভয়ে কুটুমুটু,হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রুপার স্বামী
অর্থাৎ রাকিব।তীব্র ব্যাথার নগর থেকে সৃষ্ট রাগ নিয়ে 
সজোরে রাকিবের বুকের মধ্য-স্থানে পা দিয়ে আঘাত 
করলাম আমি।ঠাশ করে ব্যাথার আর্তনাদে লুটিয়ে 
পড়লো ফ্লোরে।অতঃপর সেদিন অনেক লাঞ্চণা,
অপমান,হেনস্তা করার পর টেনে হিচরে থানায় নিয়ে 
যাওয়া হয় দুই পাপিষ্ঠ কে।আজ ২১ টা দিন আমি 
রাই হীন তীব্র ব্যাথার যন্ত্রণা বুকে ধারণ করে নিয়েই
রাতের পর রাত কাটিয়েছি।প্রতিটা রাত ছিল আমার 
জন্য তিমির রাত্র।এমন কোন দিন ছিল না,যে আমি
গভীর রাত্রে অন্ধকার পথ অতিক্রম করে সমস্ত ভয়
ভীতি কে উপেক্ষা করে রাইয়ের কবরের সম্মুখে গিয়ে  
কান্না করিনি।রাই হীন বেঁচে থাকাটা হচ্ছে আমার জন্য 
খুবই কষ্টময় ব্যাপার-স্যাপার।যার জন্য কয়েকবার 
আত্যহত্যার মতো জঘন্য কাজ করার প্রচেষ্ঠা করতেও
পিছু পা হতে দ্বিধা বোধ করিনি।১ মাস ৮ দিন পর 
জেলের ভেতরেই রুপা এবং রাকিব নামের দুই 
পাপিষ্ঠের মৃত্যুর সংবাদ এসে পৌঁছে আমার নিকটে।
অতঃপর সেদিন গভীর রাত্রে রাইয়ের কবরের সম্মুখে 
দাঁড়িয়ে প্রথম বারের মতো কাঁদার  বদলে মন-খুলে
প্রচুর হেসেছি কারণ স্বয়ং আমিই কয়েক জন 
আইনের পোশাক পরিধানে থাকা কিছু লোক কে 
টাকার গন্ধে মাতাল হিসেবে সাব্যস্ত করে রুপা এবং 
রাকিব উভয়েরই খাবারের সাথে এমন এক সাপের 
বিষ মিশিয়েছি যা আহার করার সাথে সাথে দ্রুতই 
কন্ঠস্বর বন্ধ হয়ে আসবে।যন্ত্রণায় ছটফট করবে,প্রচুর
রক্ত ক্ষরণ হবে,পিপাসিত,তৃষ্ণানিত অনুভব করবে।
অতঃপর পাশে টাকা গ্লাস ভর্তি পানিটা দ্রুতই পান 
করিবে তবুও যন্ত্রণা কমবে না তাদের বরং দ্বিগুন 
আকারে তা অনাবরত বাড়বে কারণ তারা যেটা পানি
হিসেবে পান করেছিল সেটা আসলে এসিড জাতীয় 
এক পদার্থ ছিল যেটা খেলে যন্ত্রণা ধীরে ধীরে বাড়বে।
রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আসবে,দেহ শীতলে পরিণত 
হবে।পরিশেষে অত্যন্ত কষ্ট যন্ত্রণা দ্বায়ক মৃত্যু ঘটবে।
ঠিক এমনটাই হয়েছে।যার ফল সরুপ আজ আমার
হাসির কারণ।অতএব সময়ের তীব্র গতিতে প্রায়
অনেকটা বছর কেটে গেল।শশুর-শাশুড়ী মারা গেছেন
সেই কবেই।মৃত্যুর আগে তারা নিজেদের সমস্ত বিশাল
ধনসম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়ে যান।তাদের মৃত্যুর 
পরপরই আমি ভাইয়াদের সাথে থাকতে আরম্ভ করি।
দুপুরে পথ শিশু দের পেট ভরে খাইয়ে' রাইয়ের
কবরের উদ্দেশ্য গমন আরম্ভ করলাম।গত কাল 
অসুস্থ ছিলাম তাই যেতে পারিনি।মনটা উতলা হয়ে 
রয়েছে তাহার জন্য।অতঃপর রাইয়ের কবরের নিকট
এসে উপস্থিত হলাম।মিষ্টি এক সুগন্ধি এসে প্রশান্তিতে
ভরিয়ে দিলো মনটা।আগে এমন সুগন্ধি অনুভব 
করিনি কখনো।আশপাশটা ছমছম করছে,কেন যেন
মনে হচ্ছে রাই আমার আশেপাশেই রয়েছে,ডাকছে 
আমায় তাহার নিকট।অতঃপর আজ আর বেশিক্ষণ 
থাকতে পারলাম না রাইয়ের কবরের নিকটে।চলে
আসলাম বাড়িতে।রাতে রাইয়ের ছবিটা বুকে জড়িয়ে 
নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা কেন আজ খুব 
তাড়াতাড়িই ঘুম আমায় নিজের দখলে নিয়ে গেলো।
সবুজ শাড়ী পরিধানে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাই,সুরেলা 
কন্ঠে ডাকছে আমায়,চলে এসো এই মায়ার ভূবণ 
ছেড়ে!পাশেই আমার ফুলের মতো মেয়েটা দাঁড়িয়ে 
ছিল।সে ও একই কথা বলছে আমায়।হঠাৎ শ্বাসরুদ্ধ
অনুভব করলাম আমি নিমিষেই ঘুম ভেঙে যায় আমার
গলা চেপে ধরেছে কেউ একজন।ডিম লাইটের হাল্কা
আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ভাইয়ার চেহারা খানি।
অতঃপর বহুবাধার সম্মুখীন হয়ে ভাইয়ের কাছ থেকে 
কিছুটা ধুরে চলে গিয়ে বললাম,এসব কি করছো ভাইয়া??হঠাৎ লুটিয়ে পড়লাম ফ্লোরে স্বয়ং নিজের 
আপন ভাইয়ের তীব্র প্রহারে!রক্তে ফ্লোরটা মাখা-মাখি,
রক্ত চলাচল ধীরে ধীরে চিরতরে বন্ধ হয়ে আসছে,
নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রমে বারবার আমায় ইঙ্গিত 
করছে,সময় ফুরিয়ে এসেছে আমার।দেহ-খানি তীব্র 
শীতলে পরিণত হচ্ছে,অশ্রুসিক্ত নয়নে জিজ্ঞেস 
করলাম ভাইকে,কেন করলে এমন?

উত্তরে ভাই আমার বলল,

-- ক্ষমা করিস!তোকে না মারলে তোর শশুর বাড়ির বিশাল ধনসম্পত্তি গুলো কখনোই নিজের করে আমি
পাবো না?

জোরে এক নিশ্বাস ছেড়ে আমি ফিসফিস করে
বললাম,

তুচ্ছ এক সামান্য ধনসম্পত্তির জন্য নিজের আপন 
রক্তের ভাই কে আজ এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে 
দিলে?ভুল ছিলাম আমি?তোমাকে এতটা আপন 
ভেবে?যেখানে তুমি আপন হওয়ার যোগ্যই ছিলে নাহ?

চলে এসেছে সেই সুগন্ধি মাখা মিষ্টি ঘ্রানটা,কেউ 
একজন ডাকছে আমায়,তাহার নিকটে,যাচ্ছি চলে
সবাই কে ছেড়ে ............

............................সমাপ্ত...........................

ভুল ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

সামনে পরিক্ষা চলে আসছে আমার তাই আর গল্প
লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই বন্ধ করে দিচ্ছি আমি।তবে মাঝে মধ্যে ছোট গল্প রাম্য/অনুগল্প 
পোস্ট করবো যদিও বা সেটা আইডিতে।
নিচে আমার আইডি লিংক দেওয়া হলো।
রিকোয়েস্ট দেওয়ার পর পেইজে মেসেজ করে বলবেন।আমি এড করে নিবো(বিদায় সবাই কে)
ভালো  থাকবেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post