নতুন ভালোবাসার গল্প ২০২২ | রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প

নতুন ভালোবাসার গল্প ২০২২ | রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প 
নতুন ভালোবাসার গল্প ২০২২ | রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প



#অনুগল্প : উপসংহার
বিয়ের আড়াই বছর পূর্ন হওয়ার পর যখন  জানতে পারলাম। আমার স্বামী রিফাত একটা নারীর সাথে গভীরভাবে  পরকীয়াতে আসক্ত। তখন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি উঠে যাওয়ার অতিক্রম। 

লোকটাকে তো আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।।যার ফল পেতে হলো এমন সরূপ। মনের ভেতর এক তীব্র গতিতে যন্ত্রণা গ্রাস করে যাচ্ছে আমাকে । তবে এটা কিসের যন্ত্রণা সেটা  কেবল আমি নিজেই টের পাচ্ছি। কাউকে ধোঁকা দেওয়া  কষ্টের প্রতিক্রিয়া  বুঝি এমন হয়  সেটা জানতাম না। মনের ভেতর এক অচিন পাখির উদ্ভবের আনাগোনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে আছে। যেটা চাতক পাখি মত ভু করে উঠছে। 

আমি বিন্দু। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। যখন ক্লাস দশম শ্রেনীতে  উত্তীর্ণ হই। তখন থেকেই বাবা মা বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করে। কিন্তু আমি যে রিফাতকে ভালোবাসি। তাই কিছু না ভেবেই পালিয়ে যাই। তারপর বিয়ে করি দুজন।   আমাদের বিয়েটা ছিলো লাভ ম্যারেড।পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। আসলে রিফাতের চোখে আমার জন্য যে ভালোবাসার প্রবনতা দেখেছিলাম সেই ভালোবাসার জোরে পরিবার আত্মীয় স্বজনদের মুখে চুন কালির দাগ লাগিয়ে ছোটে যাই তার কাছে। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পর কে জানতো রিফাতের ভালোবাসা মুখোশের আড়ালে বিমূর্ততার এক ছাপ স্পষ্ট জমে আছে যার আকৃতি এমন বিষাক্ত। চোখের পাতা দুটো জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু একফোঁটা পানিও বাদ মানছে না। আমার ঠাই কোথায়,কোথায় যাব কার কাছে। পরিবারকে যে সেই তিন বছর আগেই কবর দিয়ে এসেছি নিজের কাছে। আপন বলতে শুধু রিফাতই ছিলো এক মাত্র। 

কত সুন্দরভাবে দুজন মিলে একটা সংসার তৈরি করেছিলাম। যেখানে ছিলো শুধু ভালোবাসার এক বিশাল বর্ণহীন পাহার। কিন্তু রিফাত সেটা এভাবে ভেঙ্গে দিবে ভাবতেও পারিনি। আজ বুঝতে পারছি কেন যে এত দিন  বাচ্চা নিতে চাই তো না।   হয়তো তার এই সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই যার কারনে বাচ্চার কথা বল্লে সে অনেক রেগে যেত। বলতো তুমি ছোট এখন বাচ্চা নিতে হবে না। এখন বুঝতে পারছি আমি কেবল তার কাছে এতদিন বিছানার সঙ্গী ছিলাম। ভাবতেই বুকের ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। 

কিন্তু এখন আমার হাতে  কি করার আছে।আমি তো পরিবারের কাছে বোধয় মরে গেছি। আমার উপায় কি। সুইসাইড করব??

না আমি তো কোনো ভুল কিছু করিনি যার কারনে আমাকে সুইসাইডের পথ বেছে নিতে হবে। আমার জীবনের উপসংহার কি সেটা এখনো পর্যন্ত  জানা বাকি রয়েছে। তবে এখনই যদি সুইসাইডের পথ বেছে নেই তাহলে আমার জীবনের উপসংহার কি হবে সেটা জানা মুশকিল।কারন সুইসাইড কখনো জীবনের উপসংহারটাকে  দেখতে দেয়না। তাই সুইসাইড থেকে বিরত থাকাটা শ্রেয়।
কিন্তু আমার উপায় কি?

হাজারো প্রশ্ন মাথায় চেপে আসছে কি করবো।জীবনে আর যাই করি না কেন রিফাতের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর  সম্ভব না । তাই যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে করতে হবে। 

রাত এগারোটা বাজে রিফাতের এখনো ঘরে ফেরার কোনো আসঙ্গ পাচ্ছি না। আজ নিজেকে  বড্ড ছোট বলে মনে হচ্ছে।এতদিন যাবত আমি এই লোকটাকে অন্ধের মতো মতো ভালোবেসে এসেছি। ভাবতেই খারাপ লাগছে। রাতে ১২টা বাজতেই রিফাত ঘরে আসলো তবে সে একা নয়।আমাকে অভাক করে দিয়ে তার সাথে করে একটি মেয়েকে নিয়ে আসলো।হয়তো এটাই তার সেই পরকীয়া করার প্রেমিকা যার পেছন এতদিন যাবতো আসক্ত ছিলো।

ওদের দেখে আমি কি বলব বুঝে ওঠতে পারছিনা। রিফাত আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে তার এই চাওয়া আমার প্রানে তীরের আঘাতের মাধ্যে হয়ে বাধছে। হাজারো দোষ করুক সে তো আমার স্বামী। যাকে আমি মনে প্রানে ভালোবেসে এসেছি এতদিন যাবত। রিফাত আমার দিকে অপরাধী চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো, 

আমি সরি বিন্দু তোমাকে আমি ঠকাতে চাইনি। আমি ইশিতাকে বিয়ে করেছি। 

রিফাতের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে আমার মনে তুফান বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে কোনো রিয়েকশন আনছি না। এনেই বা কি হবে। লোকটা তো আর আমার না। তবে আজকেই  শুনলাম আবার আজকেই বিয়ে হয়ে গেল।ব্যাপারটা বেশ গোলমিল লাগছে। আমি রিফাতের দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি দিলাম। যার অর্থ কিছুইনা। 

রিফাত আমার দিকে অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার এই চাওয়া আমার কাছে আর কিছুইনা। রবীঠাকুরের একটা গানের লাইন মনে পড়ছে সেটা হলো, 

তুমি সুখও যদি নাহি পাও,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও।

রিফাত হয়তো আমার সাথে সুখে নেই। তাই সে সুখের সন্ধান করতেই ইশিতার কাছে যায়।হায়রে মানুষ সবাই নিজ নিজ স্বার্থপর। আমার কথাটা কি একবারও তার মাথায় আসলো না।
 যে মেয়েটা তার জন্য নিজের বাবা মা পরিবার সব কিছু হারিয়েছে। তাকে এভাবে না ঠকালেই কি নয়।হায় রে স্বার্থপর 

রাত ৩টা বাজে রিফাত আর ইশিতা তাদের ভালোবাসার মগ্নে ঢুবে আছে। এদিকে তাদের এমন ভালোবাসার আনাগোনা শব্দ জোড়া  আমার বুকের ভেতর এক তীর ঘেষে দিগন্তে মিশে যাচ্ছে কেবলই কষ্টের স্রোতে। মেয়েরা সব কিছু ভাগাভাগি করতে পারে। শুধু তাদের ভালোবাসা মানুষের ভাগটাই কাউকে দিতে পারেনা।  কিন্তু আমার সাথে তো আজ তাই হলো।নিজের ভালোবাসার মানুষটার ভাটা অন্য কাউকেদিতে হলো।   ভেতরটা দোমরে মোচরে ছিরে যাচ্ছে এক তীব্র বেদনাময় ক্ষত বিক্ষতে। নিজের ভালোবাসার মানুষটা আজ অন্য মানুষকে ভালোবাসতে ব্যস্ত। এতটাই ব্যস্ত যে নতুন বউ আসার পর আমার খবরটা একবারও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।  আমার আর এখানে থেকেই বা কি হবে শুধু শুধু কষ্টের ভার নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। পড়ালেখাও বেশি নেই যে কোনো চাকরি নিয়ে নিজের পায়ে নিজে দাড়াবো। কি করব এখন আমি?

সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলাম। যেদিকেই যাই না কেন এ বাড়িতে আর থাকা চলবে না। তাই সব কিছু ছেড়ে ব্যাগ গুছিয়ে খাটের উপর রেখে দিলাম।এখন শুধু সকাল হওয়ার বাকি। 

রাতটা কোনো রকমে কাটিয়ে ফজরের নামায পড়ে বেরিয়ে পড়লাম নিজের গন্তব্যে। জানিনা কোথায় আমার ঠিকানা। 

সারাটা দিন হাটছি খালি পেটে। কোনো কিছু কিনে খাওয়ার সামর্থও আমার কাছে নেই। হাটতে হাটতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে রাস্তার এক কিনারে পড়ে যেতে নেই তখনই একজন লোক এসে আমাকে ধরে ফেলে,

৮ বছর পর, 

মা, মা দেখো পাপাই তোমার জামা দিয়ে চুল মুছতেছে। 

মেয়ের মুখে এমন আদুরি মাখা ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আমার মেয়েটা একটা প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে চুলগুলো ছেড়ে দাড়িয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে গোসল করছে। হয়তো বাবা তাকে গোসল করিয়ে দিয়েছে। তাই তো বাবার নামে নালিশ দিতে এসেছে। আমার মেয়েটা গোসল করতে চায় না। এখন তো শীতকাল পানি দেখলে কম্বলের নিচে নাক মুখ ডেকে ঘুমাতে চলে যায়।কিন্তু তার বাপ তো নাছোড়বান্দা যেমন মেয়ে তেমন বাপ। কম্বলের নিচ থেকে তুলে নিয়ে এক মগ ঠান্ডা পানি শরীরে ঢেলে দেয় তারপর আর গোসল না করা ছাড়া কোনো উপায় না পেয়ে করে রুমে আসে। এসেই যত নালিশ বাপের নামে। এই দৃশ্যটা আমাকে বড্ড হাসায়। 

আপনারা কিছু বুঝলেন না তো চলুন বুঝিয়ে বলি।

৮বছর আগে আমি আমি রিফাতের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসি। তখনই আদির সাথে আমার দেখা। যিনি এখন বর্তমানে আমার স্বামী। আদিও আমার মতো একজন ডিভোর্সি। ও আপনাদের তো বলা হয়নি আমি কিন্তু রিফাতকে ডিভোর্স দিয়ে আদিকে বিয়ে করি। যখন আদি আমার সামনে এসেছিলো তখন আমি ছিলাম ক্ষুধার্ত এক নিরহ মানুষদের মধ্যে একজন। যার ছিলো হাজারো ক্লান্তি। মাথার নিচে ছিলোনা কোনো ছাদ। আদি তখন আমাকে তার ঘরে আনে। কারন তার দরকার ছিলো একজন মায়ের যে কিনা তার মেয়ের খেয়াল রাখবে। আদির মুখে শুনেছি তার প্রথম স্ত্রী নাকি বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। কার কোন ছেলের সাথে নাকি তার এফআইআর ছিল।হায় রে  দুনিয়া ভাবলে কি লাগে একটা বার নিজের মেয়েটার মুখের দিকে তাকালো না। ভালোবাসাটা কি আজকাল এমন খেলার পুতুলের মতো হয়ে গেল নাকি বুঝলাম না। 

আদির ঘরে যখন আসি তখন তার মেয়ের একজন সামান্য নার্স হয়ে আসি। একেবারে ছোট ছিল মেয়েটা ২মাসের। আদির মা বাবা কেউ নেই।তাই তার মেয়েটাকে দেখার মতো কেউ ছিলো না। আদি যখন আমার কথাগুলো শুনলো তখন সে আমাকে নিয়ে আসে ঘরে। তারপর পাড়ার পতিবেশি আমাদের দিকে অন্যরকম ভাবে নিরুৎসাহিত করতে লাগে। 

তারপর কোনো উপায় না পেয়ে আদি আমাকে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ে ৫বছর পযর্ন্ত  আমাদের মধ্যে স্বামী  স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। লোকটার সাথে থাকতে থাকতে লোকটাকে ভালোবেসে ফেলি। ৫টা বছর তার সাথে একই বিছানা একই রুম শেয়ার করেছি কিন্তু কখনো সে আমার দিকে খারাপ চোখে ফিরেও তাকায়নি। লোকটা বেশ সৎ আছে বটেই।এমন একটা লোককে কেউ ঠকাতে পারে। 
আদির মেয়ে আদিবা এখন আমারও মেয়ে। মেয়েটা সর্ব প্রথম আমাকেই মা ডাকে। সেই থেকেই মেয়েটাকে আমি আমার নিজের করে নিয়েছি। 

 রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুলায় মাছ ভাজছি। পেছন থেকে আদি এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। তার এম হুটহাট জরিয়ে ধরা আমার বেশ অবাক লাগে। আদি আমার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলতে লাগলো,,,

আমার বৌটা বুঝি রান্না করছে। 

আমি আদির দিকে ঘুরে তাকালাম। তাকিয়ে তার দুই কাধে আমার দুই হাত রাখলাম। তারপর আলতোভাবে  আদির নাকের সাথে আমার নাকটাকে ঘসা দিয়ে বল্লাম,

হুম, কেন জবাব কি চাই?

আদি আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলতে লাগলো আজ ফ্রাইডে অফিস বন্ধ তাই ভাবছি বৌকে একটু আদর করব।

আদির কথা শুনে আমি লজ্জা পাই।কারন ছেলেটাকে যেদিন থেকে আমি স্ত্রীর অধিকার দেই সেদিন থেকেই অন্যরকম হয়ে গেছে। কথার কোনো লাগাম রাখে না। মুখে যা আসে তাই বলে। আমি আদির কথা শুনে এদিক ওদিক তাকালাম। কারন আদিবা যদি শুনে এসব কথা তাহলে লজ্জায় তার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারবো না। তাকিয়ে দেখলাম আদিবা বেডের উপর বসে হাতের কাজ করছে। আদিবাকে দ্বিতীয় শ্রেনিতে ভর্তি করিয়ে দেয় তার বাবা। কারন মেয়ের জন্য নাকি আমাকে ঠিক মতো আদর করতে পারে না। 

যখন মেয়েটা ছিলো ছোট তখন দুজনের মাঝে ছিলো দেয়াল।যখন মেয়েটা কিছুটা বুঝতে পেরেছে তখন  হয় দুজনের মধ্যে ভালো লাগা। তবে আজ মেয়েটা কিছুটা শিখতে পেরেছে  দুজনের মাঝে এখন ভালোবাসা গভীরতা। ভাবলে হাসি পায়।

আমি আদির দিকে তাকিয়ে বল্লাম,

না মসাই কোনো আদর না খাবার তৈরি মেয়েকে নিয়ে খেতে আসেন। 
আদি আমার কথা শুনে মুখটাকে বাংলা পাঁচের মতো করে চলে যায়।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মসাই  রাগ করেছে। কিন্তু তার রাগ ভাঙ্গাবো কি করে৷ 

রাতে খাবার খেয়ে আদিবাকে রুমে ঘুমপাড়িয়ে আমাদের রুমে আসি। এসে দেখি আদি মুখটাকে এখনো বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছে। বসে বসে ল্যাপটব টিপছে আর আমার দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। আমিও তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আয়নার সামনে বসে বসে সাজগোছ করছি। আদি আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলো না। পেছনে এসে আমার কাধে হাত রাখে। আমি সাথে সাথে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলি। কারন এখনো পর্যন্ত আমি আদির দিকে সরাসরি তাকাইনি। লোকটার চেহারায় একটা মাধুর্য আছে। যে মাধুর্যতায় আমাকে গ্রাস করতে বেশি সময় লাগবে না। 
আদি আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে বলতে লাগলো,

কি মিস এভাবে লজ্জা পাচ্ছো কেন? 

আমি আদির দিকে চোখ মেলে তাকালাম। কিছু বলতে পারছি না। লোকটার মুখে এক দুষ্টমাখা হাসি। আদি আমার থুতনিতে হাত রেখে আবারো বলতে লাগলো,

 জানো তো বিন্দু। তুমি আমার সেই বিন্দু যাকে আমি ৫টা বছর ধরে বুকের ভেতর  বিন্দু বিন্দু পরিমান ভালোবাসায় বৃদ্ধি করেছি। 

আদির কথা আমি বুঝতে পেরেছি। তাই ছোট্ট করে একটা হাসি দিলাম।কারন আমার সাথে থাকতে থাকতে আদিও আমাকে ভালোবেসে ফেলে একসময়। তবে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারতাম না। তবে আদি নিজেই আমাকে প্রপোজ করেছিলো। তার মূল কারন ছিল আদিবা। মেয়েটাকে দিয়ে আমাকে ঠিঠি লিখে নব্বই দশক উদ্ভাবনের ভালোবাসার মতো করে সাজিয়ে তুলেছিলো চিঠিটাকে। যেভাবে আগের যুগের মানুষ প্রেমের কথন লিখতো। 

আদির ভালোবাসা পেয়ে রিফাত নামক নরপশুর ছায়াও কখনো মনে পড়ার প্রয়োজন মনে করিনি। কারন আদি  আমাকে এক মুহূর্ত না দেখলে পাগল হয়ে যায়। আর আদিবা তো আরো। দুই বাপ মেয়ের ভালোবাসা পেয়ে আমার জীবন ধন্য।  হয়তো আমার জীবনের উপসংহারটা আদি আর আদিবাকে দিয়েই শেষ হবে। তাতেই আমার খুশি। 
_______________সমাপ্ত________//

#উপসংহার
#writer_falak_moni


অনুগল্প
#শুধু_তোমাতে_আশক্ত
#লেখনীতে_সাবিহা_সুলতানা _মহিমা
#অনুগল্প 
ও হার্ট সার্জন, আপনি এতো মানুষের হার্ট সার্জারি করেন অথচ আমার এই ছোট হৃদয়ের বেথ্যা কেনো বুঝেন না?
ভিষন ভালোবাসি আপনাকে,কিন্তু আপনি তো আমাকে প্রাধান্যই দেন না। সব সময় রোগি নিয়ে পড়ে থাকেন। আমার মনের আবেগ আপনি কবে বুঝবেন। এই সব ভেবে কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে যায় হেমা।চোখের কোনে জমে আছে তার এক টুকরো মুক্তোর মতো জল।
হির বাড়ি ফিরেই ঘর অন্ধকার দেখে বুঝতে পারে হেমা ঘুমিয়ে গেছে। হির নিরবে ঘরের সুইচ অন করে দেখতে পায় তার হরীণির চোখে পানি।
নিরের মনটাও খারাপ হয়ে যায়, কি বা করবে সে। সে নিজেও তো হেমাকে প্রচুর ভালোবাসে।
কিন্তু ভালোবেসেও যে সে তার হরীণির কাছে যেতে পারেনা। হোকনা সম্পর্কটা বৌধ।তাই বলেতো সে তার হরীণির জিবন নষ্ট করে দিতে পারে না। এখনো যে হেমা ভিষন ছোট।
___
হিরের আজ বিয়ে তার বেষ্ট ফেন্ড নিরার সাথে কিন্তু সে এই বিয়েতে রাজি না। কারন হির তো তার হরীণিকে ভালোবাসে। আর এই কথাটা শুধু মাত্রহিরের মা হেনা বেগম জানে। কিন্তু পরিস্তির কাছে বাধ্য হয়েই আজ তাকে বিয়েটা করতে হচ্ছে। শুধু মাত্র নিজের বাবার কথার দাম দিতে। তানা হলে যে আজ আলতাম সাহেবের মান সম্মান সব ধুলোয় মিষে যাবে। ছোট বেলার বন্ধুর কাছে যে সে ওয়াদা বদ্ধ।তাই সে আজ নিরার সাথে হিরের বিয়ে দিতে চাইছেন। কবুল বলার জন্য হিরকে কাজি বলছেন এমন সময় হেমা ছুটতে ছুটতে এসে বলে,
বাহ্, হির ভাইয়া বাহ্ এই ছিলো তোমার মনে। তুমি না আমাকে ভালোবাসো তাহলে এমনটা কিভাবে করতে পারছো।?
আমার সব কিছু কেরে নিয়ে তুমি নিরা আপুকে বিয়ে করতে চাইছো! তাহলে আমাদের বিয়েটাও কি মিথ্যা?
এই কথা বলেই হেমা কাদতে লাগলো।
আর নিরা সহ উপস্তিত সবাই বেশ অবাক।
কারন হিরের মতো ভদ্র ছেলে এরকম একটা কাজ কিভাবে করতে পারলো। আর কিভাবেই বা সে নিরাকে বিয়ে করতে চাইছে।
উপস্তিত আত্নিয় সজন রাও কানা কানি শুরু করেছে।
একজন তো বলেই ফেললো আগে হিরকে কত ভালো জানতাম, আজ এসব কি! হির পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে আর এখন আবার পরিবারের পছন্দে বিয়ে করছে। ছি ছি!
নিরার বাবাও অপমান বোধ করছে। কারন তার এক মাত্র মেয়ে নিরা। শুধু তার পছন্দের ছেলে বলেই আজ বিয়েটা হচ্ছিলো। নিরার বাবা যেই না না করতে যাবে, ওমনি নিরা উঠে বলে, আরে এই আশ্রিতা মেয়ে কে হির বিয়ে করেছে। এই টুকুন বাচ্চা মেয়ে। বিয়ের কি বুঝে। মা বাবা না থাকলে যা হয়। এই জন্যই তো বলি হির বেবি আমাকে কেনো পাত্তা দেয় না। এই মেয়ে তুমি বিয়ের কি বুঝ। হিরের সাথে আমার বিয়ে হবে। 
বুঝলে এখন এখান থেকে তুমি যাও।
নিরার কথায় নিরার বাবা বাধা দিয়ে বলেন না নিরা এ বিয়ে হবেনা হির অলরেডি বিবাহিত।
নিরা কিন্তু বাবা আমি নিরকে ভালোবাসি।
নিরার বাবা নিরাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে যান।
আর হেমার সাথে হিরের বিয়ে হয়। হেমার মা বাবা নেই কার এক্সিডেন্ট করে তারা মারা যায়। আর এর পর থেকে সে তার ফুপুর হেনা বেগমের কাছে থেকে যায়। আজ হেনা বেগমের কারনেই হেমা হিরকে বিয়ে করছে। তাদের মধ্যে কোনো বিবাহ বন্ধন ছিলোনা। ছেলে ভালোবাসাকে ছেলেকে পাইয়ে দেওয়ার জন্যই আজ তার এই পরিকল্পনা। পরিবারের আর কারো কথা বিশ্বাস না করলেও হেমাকে আলতাফ হোসেন ভিষন বিশ্বাস করেন আর ভালোবাসে। তার নিজের ও ইচ্ছে ছিলো হেমাকে পুত্রবধু করা কিন্তু ছোট বেলার বন্ধুকে কথা দেওয়ায় সে তা করতে পারে নি। কিন্তু হেনা আর  হেমার কারনে আজ তার ইচ্ছাও পূরন হয়েছে। যদিও সে হিরের উপর কিছুটা অসন্তুষ্ট। কারন ছেলে তাকে জানায় নি যে সে হেমাকে ভালোবাসে।
___
হেমার আর হিরের বিয়ের পর বদলে যায় সব কিছু হির খুব কঠর ভাবেই বিয়ের রাতে বলে দেয় হেমাকে, দেখ আজকে তুই যে নাটক করলি সেটা ছিলো সম্পূর্ণ বানা নো। তোর সাথে কখনই আমার বিয়ে হয়নি। তাই প্লিজ তুই কখনো স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবিনা। 
এসব বলে হির চলে যায় বারান্দায়
আর বলে আমার হরীণি তোকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে আমার মোটেও নেই কিন্তু তোকে তো আর অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারিনা। যখন তুই বড় হবি তখন আমি ঠিকি তোকে ভালোবেসে আগলে নিবো। শুধু এখন তোর সময় পড়া লেখা করা। তাই আমার এই অভিনয়। আমি এক জন ডক্টর হয়ে আমি নিজেই তোর মাঝে আসক্ত।
___

হেমা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলো, সামনে তার sscটেস্ট তাই হেমা গিয়েছিলো লাইব্রেরি তে বই আনতে। র্স্তার পার হওয়ার সময় তার চোখ যায়, পাশের ক্যাফেতে হির আর নিরা বসে আছে। হেমা কিছু না ভেবই চুপিচুপি ক্যাফেতে যায়। হেমা শুনতে পায়,,
দেখো হির আমি জানি তুমি হেমাকে ডিজার্ভ করো না হেমা একটা বাচ্চা মেয়। প্লিজ তুমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করো। আই লাভ ইউ সো মাচ।
হিরের কথা শুনে হেমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, কারন হির বলে হ্যা তুমি ঠিক বলেছো, আমি ওকে ডিভোর্স দেবো।
এর  পর আর হেমা কিছু না শুনে চলে আসে আর কাদতে কাদতে বলে,
হাট সার্জন আপনি আমার আবেগ বুঝেন না, ভালোবাসেনা আমায়। এভাবেই হেমা ঘুমিয়ে পড়ে।
হির বাড়ি এসে হেমাকে ঘুমাকে দেখে আলতো করে চোখের জ্বল মুছে দেয়, আর  বলে আয় কয়েকটা  দিন তার পর আমিও তোকে কাছে টেনে নিবো। বলে হেমার পাশে ঘুমিয়ে পড়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হেমাকে দেখতে পায না হির ভাবে হয়তো পড়তে চলে গিয়েছে। তাই হির সকালের নাস্তা করে হসপিটালে চলে যায়।
হসপিটালে রোগি চেকাপের সময় আনন নাম্বার থেকে কল আসে, আর যা বলে তা শুনে হিরের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়, হেমা আত্ন হত্যা করতে গিয়েছিলো। হির দ্রুত রেল স্টেশনে ছুটে যায়, আর দেখে হেমা কাদছে।
হির হেমাকে ছুতে গেলে হেমা বলে আমাকে ছুবে না হির, তুমি তো নিরা কে ভালোবাসো। অনেক অহেলা করেছো আর না। আর না। কাল আমি সব শুনেছি, তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও, তার দরকার নেই আমি মরে যাবো তোমাদের কে কখনো বাধা দেবো না বলে আরাবর রাস্তার দিকে চলে যায়। তখন হির হেমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে না হরীণি তুমি ভুল শুনেছো, নিরা আমাকে বলেছে ঠিকি বাট আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি এটা বলেছি ঠিকি ডিভোর্স দিবো, কিন্তু পড়ের কথা তুমি শুনো নি, আমি তো বলেছি, আমি ডিভোর্স দিবো হ্যা ও আমার যোগ্য না, কিন্তু আমি ওকে বালোবাসি, আর তাই আমি হেমাকে সারা জিবন আমার সাথেই রাখবো। 
আই লাভ ইউ হেমা। আমার ভুল হয়েছে, আমি বুঝি নি তুমি এতটা ভালোবাস আমাকে। এই বলে হির সবার সামনে কানে ধরে, আর হিরের চেহারা দেখে হেমাও গিয়ে হির কে জরিয়ে ধরে আর বলে আমিও ভালোবাসি হির তোমাকে । আমি শুধু তোমাতে আশক্ত।
   
                সমাপ্ত
#অনুগল্প
#শুধু_তোমাতে_আশক্ত
#লেখনীতে_সাবিহা_সুলতানা _মহিমা


#অনুগল্প
#তাসনুভা_এলভিন_তিশা (লেখিকা)

"নিজের রক্তের সন্তানকে কেউ অস্বীকার করে! আপনি আমাকে নাই ভালবাসতে পারেন। কিন্তু আমার গর্ভে আপনার সন্তান বেড়ে উঠছে, তাকে আপনি দূরে ঠেলবেন কী করে!" 

"মা'য়ের কথা রাখতে তোমায় বিয়ে করেছিলাম আমি। নইলে আমার কোনো ইচ্ছেই ছিল না তোমাকে বিয়ে করার। আই থিঙ্ক এবোরশন ইজ দা বেস্ট সলিউশন!" 

উক্ত কথা বলে বাতাসের বেগে রুম ত্যাগ করলেন পিয়াস আহমেদ। উনি আমার স্বামী। দু'বছর হতে চলেছে আমাদের বিয়ের। সম্প্রতি একটি কম্পানির ম্যানাজার পদে আছেন উনি। ভীষন রাগী এবং একরোখা এই মানুষটার সঙ্গে দীর্ঘ দু বছর এক ছাদের তলায় থেকেও যেন তাকে আমি চিনতে পারলাম না। কয়েক মুহূর্তেই সে অচেনাদের কাতারে পড়ে গেল। দু'বছর কত দিন হয়? অনেকগুলো দিন তাই না! এই দিনগুলোই কী যথেষ্ট নয় একটা মানুষকে চিনতে এবং ভালবাসতে! কিছু বছর আগে এক বিয়ের দাওয়াতে আমার শ্বাশুড়ি মা'য়ের সাথে প্রথম আলাপ হয়। উনি এক দেখাই যে আমাকে নিজের ছেলের বউ ভেবে বসবেন সেটা ছিল আমার কল্পনার বাইরে। কিছু দিন না যেতেই বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে চলে আসেন প্রস্তাব নিয়ে। আমার বাবা ব্যবসায়ী। মেয়ের এতো ভাল সমন্ধ ফেলে দেয়ার মতো বোকা উনি নন। তাই তো স্বল্প সময়ে বিয়ে নামক এক বাঁধনে বেঁধে যাই আমি। তবে পিয়াসের অমত ছিল বিয়েতে। সেটা  জানলাম বিয়ের তৃতীয় দিনের মাথায়। তখন চাইতেও কিছুই করার ছিল না। বাসর ঘর হয় নি বললেই চলে বোধহয়। রক্তিম শাড়িতে আবৃত আমি যখন বিছানায় গুটি মেরে বসে রয়ে কোমড় ব্যাথায় কাতর মহাশয় তখন বেলকুনিতে সিগারেট টানতে ব্যস্ত। এই ছিল আমাদের বাসর ঘর। সব মেয়েদের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল বাসর নিয়ে। কিন্তু সেগুড়ে বালি! 

পিয়াস অবশ্য কখনো আমাকে আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নি। তবু দিন শেষে দু'জনের মাঝে বিস্তর ফারাক। বিছানায় বালিশ যখন বর্ডার হিসেবে পড়ে থাকে। তখন প্রেম আর হয়ে ওঠে না। দুটো প্রাণী একই বিছানায় তবু মনে হয় যেন দুটো জড় বস্তুকে ফেলে রাখা হয়েছে খাটের দুই কোণে। অধিকার খাটাতে পারতাম, কিন্তু ঐ যে বাঁধ বাধঁত সঙ্কোচ। যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে অধিকার খাটে না। খাটালেও সেটা অতোটা কাজে আসে না। 

নিস্তব্ধ, নিস্তেজ ভাবে আড়ালে কত কেঁদেছি। উল্টো পাশ ফিরে বালিশ ভিজিয়েছি কত রাত! তার সঙ্গ যে পেতাম না তা না। মনের মিলন না হোক, দেহের টানে আমাকে কাছে টানতে বাধ্য হতো সে। সে রাতগুলো হয় সুখকর! তবে ভালবাসার ঘাটতি থেকেই যায়। নিত্য চলমান রুটিন মোতাবেক সময়ের স্রোত বয়ে চলে। স্বামীর ছোঁয়া পেয়েছিলাম, সেই প্রমান হিসেবে দুজনের একটা ছোট্ট অংশ সৃষ্টিকর্তা আমার গর্ভে দিয়ে দিলেন। 

সব আশা ভেঙেচুরে গেল তার প্রত্যাক্ষানের যাতনায়। আমাকে ভাল না বাসুক। নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার কথা একজন বাবা হয়ে কী করে বলতে পারে! সেদিন পুরোটা সময় বদ্ধ অবস্থায় থেকেছি। ভেবেই নিলাম আমার সন্তানকে বাঁচাতে যদি ঘর ছাড়তে হয়। আমি তাই করব। রাত তখন দেড়টা বাজে। বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে সে ড্রিংকস্ করতে মত্ত। আমি ওনার নিকটে দাড়িয়ে সাবলীল স্বরে বললাম,,

"সন্তানের বিরহে মা'য়ের কষ্টটা আপনার পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব। আপনি যদি আমায় জোড় করেন। আমি চলে যাব এখান থেকে!" 

ওনার উত্তরের আশায় ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। হাতে থাকা ড্রিংসের গ্লাস খালি করে সেটা সাইড টেবিলে রেখে আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। মদে বুদ হওয়া লাল চোখে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,

"যা ইচ্ছে কর। শুধু আমাকে এর মধ্যে জড়িয় না। চাইলে এখানে থাকতে পারো, নয়ত চলে যেতে পারো" 

বেশ বেগে নিয়ে কথাটুকু বলে উনি চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিলেন। বুঝলাম, উনি আমার প্রতি খাপ ছাড়া, দায়িত্বহীন। তবু সবটা সামাল দিতে এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। 
.

একটু একটু করে ছোট্ট একটা প্রাণ তখন নড়েচড়ে ওঠে আমার মধ্যে। একাকী বেশ টের পাই তার স্পন্দন! হামেষাই চোখের জলে টইটুম্বর হয়ে থাকে আমার চক্ষুকোহর। কাউকে যে বোঝাতে পারি না এই স্পন্দনের রেশ টুকু! মনের আনন্দটা পরিপূর্ণ হয় না। ছোট্ট প্রাণটার স্পন্দনের অংশ তো সেও। তবু কেন এতো হেলাছেদ্দা! 

রোজ সকালে তার যাবতীয় কাজ সেরে রাখি। জানি আমাকে ছাড়া সবই অগোছালো। তার শার্ট থেকে পা'য়ের মোজা অবধি আমার দায়িত্বে থাকে। গোসলে গেলে গা মোছার টাওয়াল ভুলে গেলেও শেষে আমারই ডাক পড়বে। তার এই প্রয়োজনটুকু হতে পারার জন্যই তো ছেড়ে যেতে পারি নি। জানি  স্বীকার করবেন না। কিন্তু দিনশেষে আমার হাতের গ্রিন টি না খেয়ে সারারাত নির্ঘুম কাটাতে হবে সেটাও অজানা নয়। 

ভারী পেট নিয়ে এ মাথা হতে ওমাথা দৌড়ে যাই। আয়নার সামনে দাড়িয়ে একজন কলার ঠিক করতে করতে আয়নায় নজর রাখে আমাকে। সামান্য যত্ন কী জিনিস বুঝি নি। চেকাপ করাতে সেই আমাকেই একা যেতে হয়। গাড়িতে ওঠা মানা, পা'য়ে হেটে তীব্র গাড়ি ছোটে রাস্তা পাড় হবার সময় একটা হাতের অভাব খুব অনুভব করি। একটা হাত যে রাস্তা পার করবে আকড়ে ধরে, সারাপথ যার হাতের আদলে হেঁটে হেঁটে পা বাড়াবো আমি। কিন্তু সেটা শুধুই কল্পনায়। বাস্তবে সেই হাত শুধু ল্যাপটপে টাইপিং আর ফাইল সাইন করতেই ব্যস্ত। 
.
নয় মাস চলাকালীন একরাতে বারান্দায় বসে ছিলাম। পিয়াস বেশ ধীরেসুস্থে আমার সন্নিকটে এসে বসলেন। যথারীতি পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার ধরালেন। প্রথমবার টানে মুখ দিয়ে বাষ্প নিস্ক্রিত করতেই আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। কাঁশতে কাঁশতে যাচ্ছে তাই অবস্থা। তবু ওনার হেলদোল নেই! নিজের মতো ধুমপানে মত্ত উনি। উপায়ন্ত না পেয়ে ছুটে এলাম রুমে। আর মাত্র সাতদিন পরেই ডেলিভারি ডেট। এই বিশেষ সময়টায় মেয়েরা চায় অতিরিক্ত কেয়ার, ভালবাসা। বাবার বাড়ি যাই নি বলে মা বড্ড ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তবু একজনের প্রয়োজন হতে পারার খাতিরে মায়ের রাগটাকেই মেনে নিয়েছিলাম। 

ডেলিভারির আগের দিন ব্যাগ-পত্র রেডি করলাম। ডাক্তারের সাথে কনক্টেট করেছি। কাল সকালেই যাবো হসপিটাল। রাতে পিয়াসকে বললাম,,

"আপনি কাল অফিসে যাবেন না। কাল তো ডেলিভারি ডেট। আপনি থাকবেন প্লিজ" 

উনি কিছুই বললেন না। নির্বাক চেয়ে থেকে চলে গেলেন। আমি ওনার নিরবতাকে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিলাম। কিন্তু সেটা ভুল প্রমান হলো যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা শূণ্য পেলাম। অফিসে গেছেন! এতটাই দায়িত্বহীন সে! বাবারা বুঝি এমন হয়! নিজের সন্তান ভুমিষ্ট হবার আনন্দে কী তার হৃদয়ে একবারও কম্পন হয় নি! ওনাকে পাশে পাবার আশা ছেড়েই দিলাম। একাই চলে এলাম হসপিটালে। ডেলিভারির ডেট কাল পড়লেও বেবির অবস্থা বিবেচনায় ডক্টর আজকেই অপারেশন করবেন ঠিক করলেন। আমি আর বাঁধা দিলাম না। কোল ভরাট করার আবেগে হ্যাঁ বলে দিলাম। বিপত্তি বাঁধল যখন হাসবেন্ডের সাইন নিয়ে। এটা ছাড়া ডেলিভারি স্থগিত। উপায়ন্ত না পেয়ে পিয়াসকে কল করা হলো। ডক্টর নিজেই কথা বললেন। ফোনের ওপারে পিয়াস কী বলল কে জানে। তারা সাইন ছাড়াই ওটিতে নিয়ে গেলো আমায়। তারপর আর মনে নেই। 

চোখ যখন খুললাম পিয়াস তখন আমার সামনে বসা। পাশে শুইয়ে রাখা হয়েছে ছোট একটা পুতুলকে। মাখনের মতন সাথে লালদুটো কিঞ্চিৎ লাল। ছোট্ট হাতের তালু স্পর্শ করতেই সে নড়ে উঠল। আহা আমার বাচ্চাটা! কী সুখ অনুভব হচ্ছিল তখন বলে বোঝানো দায়! মা হিসেবে আমি সার্থক। আবেগের বশে বাবু কে কোলে নিতে উঠে বসতে চাইলে হাতে তীব্র টান খেলাম। হাতে স্যালাইন লাগানো। যেটা শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা না করে উপায় নেই। আমার চোখ তখন বাবুর দিকেই নিবিষ্ট। একজন নার্স আমায় উঠে বসে থাকতে দেখে। শুইয়ে দিয়ে গেলেন। বেডের পাশে মাথা নিইয়ে পিয়াস বসে আছে। বাবুকে কী সে দেখেনি! দেখলে তো এতক্ষনে খুশিতে আত্মহারা হবার কথা। নাকি এখনো স্বীকারত্তি আসে নি মনে! তাই যদি হয় তবে সে বাবা নামে অক্ষম এক জড় মানব। 

আমি আর ভাবতে পারছি না। উল্টো পাশ ফিরে চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলাম। 
বিকেলেই আমাদের রিলিজ দেয়া হলো। বাবু'কে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এরপর দুপুরে খেয়ে-দেয়ে দীর্ঘক্ষন ঘুম দিলাম। সন্ধ্যার দিকে ঘুমটা আলগা হতেই চোখ মেলে দেখি আমার সোনা মেয়েটা চোখ মেলে আমাকে দেখছে। তার চক্ষুকুন্ডনের ভেতরে বড় বড় দুটো মনি! এত সুন্দর মায়াবী চোখ! আমি শোয়া থেকে উঠে বসে তাকে কোলে নিলাম। কপালে আলতো ঠোট ছোঁয়ালাম। এদিক ওদিক পিয়াসকে খুজতেই তার মাথাটা বেলকুনির দরজা দিয়ে সামান্য দেখতে পেলাম। বাবু'কে কোলে নিয়ে তার কাছে গিয়ে পাশে বসলাম। তার হাতে তখন সিগারেট ধরানো। আমি মানা করি নি। সে নিজেই সেটা ফেলে দিলো। আমি তার হাত খালি পেয়ে সুযোগে বাবু'কে তার কোলে দিয়ে দিলাম। সে অপ্রস্তুত এবং অবাক হলো। সামলে দিয়ে তার পাশ ফিরে সাবলীল কন্ঠে বললাম,,

"মেয়েকে লালন করার দায়িত্ব কী শুধু আমার? আজ অস্বীকার করছেন। কিন্তু আমি যখন থাকবো না তখন আপনার ওপরই ভার পড়বে ওর" 

পিয়াস কেমন করে যেনো তাকালো। সেই চোখের ভাষা আমার বোধগম্য হলো না। আমি বাবুকে তার কোলে দিয়েই চলে এলাম। 
.

এরপর ক্রমশ দিনের ভিত্তিতে বাবুর বয়স বাড়তে লাগল। তার নাম দেয়া হলো মুসকান। যে মুসকান শুধু বাবার কোল পেলেই হাঁসে। তার কান্না সামাল দিতে গিয়ে যখন আমার নাজেহাল অবস্থা। জাদুর কাঠির মতো পিয়াসের স্পর্শে তার কান্না উবে যায়। এমনিতে না হলেও আড়ালে মেয়েকে আগলে রাখে সে। তার আদরের স্পর্শ উপলব্ধি করে বলেই তো মেয়ে বাবাকে চেনে। 
.
মুসকানের বয়স তখন নয় মাস। একটা আস্ত পুতুল আর মধ্যে ফারাক খুজে বের করা মুসকিল। ছোট্ট হাতে হামাগুড়ি দিয়ে পুরো ঘর চষে বেড়ানো তার কাজ। আর মাঝে মধ্যে কেঁদে উঠে বাবাকে কাছে নিয়ে আসার ট্রিক্সও তার জানা! মাথায় মাঝখানটায় সামান্য চুল গজিয়েছে। একটা বেবি ব্যান্ড দিয়ে ছোট খাটো একটা তাল গাছ করে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করালে নিজেই হেঁসে ওঠে। 

মুসকানের সবথেকে প্রিয় হলো তার বাবা। যে বাবা তাকে জন্মের আগে দূরে ঠেলে দিয়েছিল আজ তার প্রতি তার কত টান। মেয়েরা বাবার রাজকন্যা। পিয়াস জানেই না নিজের অজান্তেই মুসকান তার রাজকন্যা হয়ে উঠেছে। যাকে ভালবাসবে না বাসবে না করেও দিনে অসংখ্য ফোনকল আসে তার খোজে। 

পিয়াস অফিসে যাবার আগ থেকে অফিস থেকে এসেও মুসকানকে কোলে রাখে। কাল সকালে তার মিটিং থাকায় বেশ জলদি করে অফিসের জন্য ছুটতে ছুটতে দরজার কাছে এসে জুতো পড়ে বাইরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই কিছু একটার টানে সে নিচে তাকায়। তাকে অনুসরণ করে আমিও দেখি মুসকান পিয়াসের প্যান্ট ধরে টানছে মেঝেতে বসে। সোফাতে থেকে নিচে নামল কী করে! তার মিষ্টি ছোট্ট হাত দুটো তখনও পিয়াসের প্যান্ট ধরেছিল। পিয়াস ব্যস্ততা ভুলে মেয়েকে কোলে নিলেন। অনেকক্ষন আদর করে দিয়ে আমার কাছে রেখে চলে গেলেন। আমি অবাক হলাম মুসকানের কান্ড দেখে। কাঁদো কাঁদো ফেস্ করে আমার গলা জড়িয়ে রইল সে! এটুকু মেয়ের অভিমানও হয়! 

একদিন বিকেলের দিকে আমি মুসকানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। মাঝখানে মুসকানের ঘুম ভেঙে গেল। তখন পিয়াস বাড়ি ছিল। মুসকানকে জাগ্রত দেখে সে আলতো করে তাকে কোলে করে নিয়ে চলে গেলো। আমি ঘুমে কুপোকাত। কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর সে খিদের চোটে কাঁদতে শুরু করে। পিয়াস তখন তাকে সামলাতে বেসামাল হয়ে পড়ে। শেষে উপায়ন্ত না পেয়ে মেয়েকে কোলে নিয়েই সে রান্নাঘরে যায় দুধ বানাতে। কতটুকু পানিতে কতটা দুধ দিতে হবে সেটা আমি তাকে বলেছিলাম। সেই অনুযায়ী সেটা বানিয়ে ঠান্ডা করে মেয়েকে খাওয়ায় সে। আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আগেই! লুকিয়ে পিয়াসের কান্ড দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বিছানায় গিয়ে আবারো ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম। 
.............

এভাবেই মুসকানের দুই বছর হয়ে যায়। এখন সে তার বাবার চোখের মণি। কিন্তু আমার অবস্থা কেন যেন দিনকে দিন বেগতিক হচ্ছে। অর্ধ মরা মানুষদের মতো দেখা যায়। ডেলিভারির পর কোনো সমস্যা হলো কী না জানার জন্য ডক্টরের সাথে কথা বলি। উনি টেস্ট করার পর ধরা পড়ে বিশাল এক রোগ আমাকে আকড়ে ধরেছে! বাঁচার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। আমি অবচেতনের মতো বাড়ি ফিরি। আমাকে ছাড়া পিয়াস কীভাবে থাকবে জানি না। কিন্তু আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তবু মনে সাহস রেখে তাকে সবটা জানাই। সে নির্বাক ছিল। কিছু বলে নি। রাতে এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছে। মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি পিয়াস আমার হাত তার কপালে ঠেকিয়ে খুব কাঁদছে। আমি উঠে বসতেই সে চমকে উঠল। আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎই আচমকা আমায় জড়িয়ে ধরল সে। কান্নারত স্বরে কী বলে গেল শুনি নি। কিন্তু বুঝলাম আমার প্রতি তার সুপ্ত অনুভূতির জ্বাল ছিড়ে গেছে। আমার প্রতি কেয়ার নিতে শুরু করে সে। প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যাবার ভয় মনে জাগলেই যেনো তাকে আরো আকড়ে ধরতে মন সায় দেয়। 

একমাস পর,,

অপারেশন থিয়েটারের মুখে হুইল চেয়ারে বসে আছি। পিয়াস দাড়িয়ে আছে মুসকানকে কোলে নিয়ে। জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো ওটিতে ঢুকছি। প্রথম বারের গমনটা ছিল সুখকর। মাতৃত্ব লাভের আনন্দ আমাকে মৃত্যুভয় দেখাতে পারে নি। কিন্তু এবারের চিত্রটি ভিন্ন। মানুষ স্বাভাবিকেই মৃত্যুর সময় জীবনের মর্মতা বুঝতে পারে। আমার বেলায়ও তাই। পেছন থেকে নার্স নিয়ে গেলেন ওটিতে। ইনজেকশন পুষ করে সেন্সলেস করলেন। তারপর সব অন্ধকার...........

🍂

রাতের আকাশ আমার বড্ড পছন্দের। এসময় চারপাশটা কেমন স্নিগ্ধতায় ছেড়ে যায়। ইদানীং রাতের দিকে বেশ হিম ঠান্ডা পড়ে। 
গা'য়ে পরনের ওড়নাটা পেচিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে বেলকুনির কোণায়। হসপিটাল থেকে ফিরেছি তিন মাস চলমান। বেঁচেই ফিরতে হতো আমায়। নইলে একজনের ভালবাসা পাওয়ার আকাঙ্খায় মরেও শান্তি জুটত না। 

গাছের পাতাগুলো বিরতি দিয়ে দোলে উঠছে। সেদিকে দৃষ্টিপাত করতেই পিয়াস আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

"তুমি তো দেখছি আমার মুসকান মামনির থেকেও খারাপ। ডক্টর তোমাকে কী বলেছিলেন? ফুল বেড রেস্ট করতে বলেছিলেন! আর তুমি এই ঠান্ডার মধ্যে বসে আছো। ওঠো এক্ষুনি!" 

তার কথায় কর্ণপাত না করায় ক্ষেপে গেলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধুম করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আমি পলকহীন চেয়ে দেখলাম তাকে। বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলেন একপাশে। গা'য়ে চাদর টেনে দিয়ে বাতি নিভিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন। মাঝ বরাবর দু'হাত মেলে আমার মিষ্টি সোনাটা শুয়ে আছে। বাবাকে ছাড়া সে একদন্ড থাকতে পারে না। ঘুমোতে আসলেও তাই। বাবাকে ছাড়া চোখ বন্ধই করবে না। পিয়াস তার হাত দিয়ে আমার মাথায় বিলি কাটার মাঝে একটা চুমু একেঁ দিল। আমি চাপাকন্ঠে বললাম,,

"এটা কী হলো!" 

সে অবাক হবার ভান ধরে বলল,,

"কী আবার হলো! বউকে আদর করলাম। মুসকানের জন্য ভাই-বোন আনতে হবে না! আমি ছুঁয়ে না দিলে তাদের আগমন হবে কী করে শুনি!" 
লোকটা ভারী বদমাশ! ওনার চোখে তাকাতে না পেরে মাথা অবধি চাদর টেনে নিলাম। উক্ত কথা বুঝি মুসকানও ঘুমের ঘোরে বুঝে ফেলেছে! তাই তো দুজনের মাঝখানে একটা ঘুমন্ত চাঁদ মিটিমিটি হাঁসছে!

#সমাপ্ত
#রাজকন্যা

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post