গল্পঃ পাশের বাড়ির বড় আপু পার্ট: ১০ | Pasher Barir Boro Apu Part ১০

গল্পঃ পাশের বাড়ির বড় আপু পার্ট: ১০ | Pasher Barir Boro Apu Part ১০

#নাম: পাশের বাড়ির বড় আপু
#লেখক: Osman
#পার্ট: ১০


সাকিবের মা: কেঁদো না মা । কেঁদো না। এর জন্য কাঁদতে হবে। আমি তোমার আংকেলের সাথে কথা বলবো। 

সুবর্ণা চোখের পানি মুছে বললো। 

সুবর্ণা: প্লিজ আন্টি না কইরেন না। আপনিতো আমার মায়ের মতো। আপনি কি আপনার মেয়ের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারতেন?

আন্টি: সুবর্ণা আমিতো বলছি তোমার আংকেল এর সাথে কথা বলবো। আর সাকিব কে জিজ্ঞেস করি তার কি মত?

সুবর্ণা: প্লিজ আন্টি সাকিব কে এই সম্পর্কে কিছু বলবেন না।

আন্টি: কেনো? 

সুবর্ণা: আমি তাকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। 

আন্টি: আমি এটা করতে পারবো । সে তোমাকে বিয়ে করবে তার মত অবশ্যই থাকতে হবে।

সুবর্ণা: না আন্টি তাকে প্লিজ বলবেন না। আপনি আর আংকেল রাজী থাকলেই হবে। 

আন্টি: ওকে তোমার আংকেল কে জিজ্ঞাসা করে দেখি?

সুবর্ণা: আন্টি প্লিজ না কইরেন না। আন্টি আপনার পায়ে পড়ি। 

আন্টি: আরে কি করছো? ওকে তুমি আগামীকাল তোমার বাবা আর মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসো। 

সুবর্ণা: ওকে। তাহলে আন্টি আমি এখন যাই। 

আন্টি: ওকে।
 
__সুবর্ণা আর খুশি ধরে না। সাকিবের মাকে ম্যানেজ করে ফেলছে। এখন শুধু সাকিবের বাবার হ্যা বললেই হলো। সাকিব তুই রেডি থাক তর খবর আছে । এই সব গুলোর বিচার করবো বাসর রাতে। পরদিন যখন দেখছে সাকিব পরিক্ষা দিতে বের হয়েছে । তখনই সুবর্ণা তার মাকে আর আব্বাকে নিয়ে সাকিবের বাসায় হাজির । সুবর্ণার আব্বাকে সুবর্ণা আগে থেকেই সব কিছু বলে রেখেছিলো। ভিতরে ঢুকে সালাম দিলো  সুবর্ণা।

সুবর্ণা: আংকেল কেমন আছেন?

আংকেল: জী ভালো। 

সুবর্ণা: আংকেল আমার আব্বা আর আম্মু।

আংকেল: ভিতরে আসেন। ভিতরে আসেন। 

সুবর্ণা তার আব্বা আর আম্মুকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। সাকিবের মা সবাইকে হালকা নাস্তা দিলো। সুবর্ণার আব্বা বললো। 

আব্বা: আমার মেয়েটা আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে চায়? আপনার কি মত? 

সাকিবের আব্বা: সাকিবের মা আমাকে রাতে এই। বিষয়ে বলছে। এখানে আমার কি বলার আছে?
বিয়ে করবে ওরা দুজন ভবিষ্যতে সংসার করবে ওরা। এখানে আমি কি বলবো? এক্ষেত্রে সাকিব যদি রাজি থাকে সাকিবের যদি সুবর্ণাকে পছন্দ করে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। 

আব্বা: কিন্তু সুবর্ণা চাচ্ছে সাকিব কে না‌ বলে বিষয়টা শেষ করতে। 

সাকিবের আব্বা: না আমি সাকিবের মত না নিয়ে কোনো কিছুর সিন্ধান্ত নিতে পারবো না।‌ পরে কোনো সমস্যা হলে সাকিব দোষবে আমাদের। 

সাকিবের মা: আরে থাক না । সমস্যা হবে কেনো? সুবর্ণা মাতো খুব ভালো একটা মেয়ে। 

সাকিবের আব্বা: ভালো মেয়ে সেটাতো জানি । এই সমাজে তার মতো ভালো মেয়ে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু সাকিবেরতো একটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। তাকে অবশ্যই বলতে হবে। 

আব্বা: আপনি  বললে সাকিব কখনো না করতে পারবে না। 

সাকিবের আব্বা: জানি না করতে পারবে না। হেরে তো জিজ্ঞেস করতে হবে।

__সুবর্ণা দেখতাছে সাকিবের আব্বা রাজী হচ্ছে না। সুবর্ণা সাকিবের আব্বার পায়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো। 

সুবর্ণা: আংকেল প্লিজ এমন কইরেন না । আমার মতো অভাগা মেয়েকে আপনি ফিরিয়ে দিয়েন‌ না। 
প্লিজ আংকেল আমি সব সময় তার বাধ্য হয়ে থাকবো তাকে কখনো কষ্ট দিবো না। সে যা বলবে তাই করবো । প্লিজ আংকেল আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না।

__সাকিবের আব্বা সাকিবের মার মুখের দিকে তাকালো । তারপর সাকিবের আব্বা বললো।

সাকিবের আব্বা: মা প্লিজ কেঁদো না উঠো। আমি কথা দিলাম তোমার সাথে সাকিবের বিয়ে দিবো । তুমি যেভাবে বলবে সেভাবে। 

__সাকিবের মা এসে সুবর্ণাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো । 
সুবর্ণার আব্বা বললো।

আব্বা: আলহামদুলিল্লাহ । এমন একটা মহৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে আর আপনার ওয়াইফ কে নেক হায়াত দান করুন । (সবাই বলে উঠলো আমিন। সুবর্ণার আব্বা বললো)

আব্বা: তো বেয়ায় আমি চাচ্ছি যতো তাড়াতাড়ি কাজটা সম্পন্ন হয়ে যাক। 

সাকিবের মা: সেটাই হোক। 

আব্বা: আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে। সেটা হলো আমি শুনলাম সাকিবের এখন পরিক্ষা চলছে । পরিক্ষা শেষ হলেই তাকে একদিনের জন্য দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দিন। এই দিনের ভিতর আমরা কাজ সেরে ফেলতে চাই।

সাকিবের আব্বা: ওকে তাই হোক। 

__আব্বা পকেট থেকে একটা খাম বের করে সাকিবের আব্বার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।

আব্বা: বেয়ান আমার মেয়ের থেকে শুনলাম আপনি একটা ফ্ল্যাট কিনতাছেন। প্লিজ এইটা গ্রহণ করুন।

__সাকিবের আব্বা কৌতুহল বসতো । খামটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে দশ লক্ষ টাকার একটা চেক। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।

সাকিবের আব্বা: বেয়ান এটা আমি গ্রহন করতে পারবো না। কারণ তাহলে আপনি আমাদের টাকা দিচ্ছেন আপনার মেয়েকে দেন নাই। 

আব্বা: বেয়ান সেরকম কিছু না। আমাদের পক্ষ থেকে একটা হাদিয়া। আর আপনিতো জানেন হাদিয়া ফিরিয়ে দিতে নেই। 

সাকিবের আব্বা: তারপরেও এটা আমি গ্রহন করতে পারবো না। এমনিতেই আপনার মেয়েই আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু । প্লিজ এটা আমি গ্রহন করতে পারবো না। 

আব্বা: দয়া করে এটা গ্রহণ করুন।  

__সাকিবের আব্বা কি যেনো ভাবলো। তারপর বললো।

সাকিবের আব্বা: সুবর্ণা মা তুমি এইটা রাখো পরে । তুমি এইটা সাকিবকে দিয়ো ‌ । দেখো সাকিব গ্রহণ করে কিনা। 

সুবর্ণা: জী আংকেল। 

সাকিবের আব্বা: তাহলে বেয়াই আমি উঠি । আমার একটু বের হতে হবে। আপনারা সবাই  লাঞ্চ করে যাবেন। 

আব্বা: আমারো একটু বের হতে হবে। 

__সুবর্ণা সাকিবের মার আর আব্বার পায়ে ধরে সালাম করলো। সুবর্ণা খুশিই ধরে‌‌ না। মরিয়ম যখন শুনছে আমার সাথে সাকিবের বিয়ে হবে। মরিয়ম খুশিতে শেষ। বিয়ের হওয়ার আগেই ভাবি ডাকা শুরু করছে। যথারিতি যেদিন সাকিবের পরিক্ষা শেষ হলো। পরদিন সাকিব কে যখন দেশের বাড়ি পাঠিয়ে
 দিয়েছে। সেদিন সাকিবের বাড়ি সাজানো হয়েছে। পরদিন যেদিন সাকিব আসবে। কথা হয়েছে সাকিবের আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে। সন্ধ্যা সময় কাজী ডাকলে সুবর্ণা নির্ধিধায় কবুল বলে দিলো। 
আর কবুল বলবেই না কেনো? যার জন্য এতো কষ্ট করলো তার জন্য কবুল বলতে কিসের আপত্তি। সুবর্ণা সাকিবের ঘরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে রইলো সাকিবের অপেক্ষায়। 

__আমি ভাবি এসব কাজ কেনো আমাকে দেয়। যেদিন গিয়েছিলাম পরদিন জমি টুকু মাপলাম অনেক কষ্টে। মেপে হিসেবে করে বিকালের দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়ি থেকে ফোন করলে বলে দিলাম আসতে সন্ধ্যা হবে। আমি ঘন্টা দুয়েক জার্নি করে ঢাকায় পৌঁছলাম । পৌঁছে বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম। বাসায় পৌছে দেখি অনেক জুতা দরজা খুলা আছে। দেখি আমাদের ফ্ল্যাটটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমি ভাবলাম আজকে আবার কিসের অনুষ্ঠান । তাহলে কার বার্থডে খেয়াল করে দেখলাম আমার বার্থডে না মরিয়মের বার্থডে না । তাহলে কিসের অনুষ্ঠান চেয়ে দেখি সামি । আর তার গার্লফ্রেন্ড ও আছে। সামি আমার কাছে আসলো বললো।

সামি: দোস্ত যা গিয়ে গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে। রেডি হো।

আমি: মানে কি ? কি হয়েছে কিসের অনুষ্ঠান?

সামি: তর বিয়ে আজকে। 

__আমি সামির কথা শুনে অবাক। 

আমি: কিহ আমার বিয়ে মজা করস তুই?

সামি: তর কি এসব দেখে মজা মনে হচ্ছে ? যা দোস্ত গোসল করে রেডি হো। 

আমি: আমার বিয়ে । আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না। আর কার সাথে। 

সামি: বাসর ঘরে ঢুকে দেখতে পারবি। 

__দেখি মা আসছে। মা বললো। 

মা: এতো দেরি করে আসলি কেনো? যা গোসল করে রেডি হো।

আমি: মা কিসের অনুষ্ঠান। সামি বললো আমার নাকি বিয়ে । এটা কি সত্যি?🤬🤬

মা: হুম সত্যি। 

আমি: কার সাথে?  আমি বিয়ে করবো না। 

মা: তরে কি বলছি বিয়ে করতে? তরে বলছি গোসল করে রেডি হতে। 

__এই বলে মা চলে গেলো। সামি বললো ।

সামি: দেখলি । যা এখন গোসল করে রেডি হো। 
এই বলে সামি একটা লুঙ্গি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। আমি বাধ্য হয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। 
কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না? আমি বিয়ে করবো না তাই ভাবলাম আজকে সারারাত বাথরুমে কাটিয়ে দিবো । কিছুক্ষণ পর সামি ডাকা ডাকি শুরু করলো । মাও ডাকাডাকি শুরু করলো। আমি বললাম।

আমি: মা বিয়ে করবো না। আর কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটা বলো আগে। 

মা: তুই বিয়ে করবি না তর ঘাড়ে করবে। তরে পাঁচ মিনিট টাইম দিচ্ছি । পাঁচ মিনিটের ভিতর তুই বাথরুম থেকে বের নাহলে কিন্তু দরজা ভেঙে তরে বের করবো। 

__কি করবো বুঝতে পারছি না । আমি গোসল করে বাথরুম থেকে বের হলাম। বের হলে সামি আমাকে আমাকে নতুন কাপড় দিলো পড়ার জন্য একেবারে জামাইয়ের পোশাক। আমি বাধ্য হয়ে জামাইয়ের পোশাক পরে ঘর থেকে বের হলাম। দেখি আব্বা ও আসছে । আমার মাথা কোনো কাজ করছে না। কি হচ্ছে আমার সাথে ?কার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। 
সুবর্ণার সাথে না না না এ হতে পারে না। সুবর্ণার সাথে বিয়ে হওয়ার থেকে ভালো সারাজীবন বিয়ে না করে থাকা ভালো। সামি আমাকে কাজীর সামনে বসালো। কাজী দোয়া পড়লো বললো কবুল বলতে । আমি কবুল বলতাম না ঠিক করে রাখলাম যতো কিছুই হোক আমি কবুল বলবো না। মা এতো করে বলতে লাগলো কবুল বলতে। আমি কোনো কথাই কানে নিচ্ছি না। অবশেষে আব্বা বললো কবুল বলতে। আমি মার মুখের দিকে তাকালাম দেখি মা বলছে কবুল বলতে। আব্বার মুখের দিকে তাকালাম দেখি আব্বাও বলছে কবুল বলতে । মনে মনে ভাবলাম আব্বা আর আম্মা যেহেতু বলছে কবুল বলতাম তাহলে সমস্যা কি‌? আর আব্বা মাতো আমার জন্য কখনো খারাপ মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে না। আব্বা আর মা মূখের দিকে তাকিয়ে আমি কবুল বলে দিলাম। সবাই এক যোগে উঠলো আমিন । আমি কাগজে সিগনেচার করলাম। আমাকে সবাই মিষ্টি খাওয়ালো । এদিক সেদিক ঘুরে আমি আমার ঘর মানে বাসর ঘরে ঢুকলাম। দেখি খুব সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। দেখি খাটের মাঝখানে একটা মেয়ে বসে আছে মাথায় ঘোমটা দিয়ে। আমি  পায়ে হেঁটে খাটের এক কোনায় বসলাম। আমি আমার কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটার ঘোমটা ওঠালাম । ঘোমটা উঠিয়ে যা দেখলাম তা আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না । দেখি আমার চির চেনা শত্রু সুবর্ণা।

...সিজন ১ কম্প্লিট 😁

সিজন ২ হবে নাকি কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট শেয়ার করুন। 
 এতদিন গল্প গুলো পড়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। এরকম আরো রোমান্টিক গল্প পেতে পেজটি ফলো করে পাশে থাকুন । আর যারা সিনিয়র আপুদের গল্প ভালো লাগে তারা এই পেজ থেকে "এলাকার বড় আপু" গল্পটি পড়তে পারেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি টাইম ❤️

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post