গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ০২ | Senior Boss Part 02

গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ০২ | Senior Boss Part 02

 #নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ২
#লেখক: Osman


মনি আপু: গুড । আসলে কোম্পানিতে একজন কম্পিউটার মেকার খুব প্রয়োজন। তোমার কাজ আমার পছন্দ হয়েছে। তাই তোমাকে কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া যায়।

আমি: কি বলেন সত্যি? 

মনি আপু: হুম সত্যি। আমার কোম্পানীতেতো অনেক পিসি । অনেকের কম্পিউটার মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয় । বাইরে থেকে লোক এনে ঠিক করাতে হয়। এখন তুমি যেহেতু পারো কম্পিউটার ঠিক করতে । তাহলে তোমাকে চাকরিটা দেওয়া যায়। 

আমি: ম্যাডাম অনেক ধন্যবাদ। 

মনি আপু: তোমার ই-মেইল টা দেও। তোমার ই-মেইল এ একটা ফর্ম পাঠাচ্ছি ফর্মটা পূর্ণ করে। আরেকটা ই-মেইল পাঠাচ্ছি সেই সেই ই-মেইলে পাঠিয়ে দাও। আর দুই দিন এর ভিতর কোম্পানিতে জয়েন হও। 

আমি: যদি বেতনটা বলতেন?

মনি আপু: প্রথমে ২৫ হাজার টাকা। পরে আস্তে আস্তে বেতন বাড়বে। 

আমি: ধন্যবাদ ম্যাডাম। 

মনি আপু: আমাদের কোম্পানির অফিস অনেক গুলো। তারমধ্যে তুমি হেড অফিসে কাজ করবে ওকে। 

আমি: জী ম্যাডাম। তাহলে আমি যাই। 

মনি আপু: দুইদিনের ভিতরে তোমাকে অফিসে যেনো দেখতে পাই। 

আমি: অবশ্যই ম্যাডাম। তাহলে আমি যাই। 

মনি আপু: হুম।

__আমার আর খুশি আর দেখে কে । যাইহোক ফাইনালি কিছু একটা করতে পারলাম ‌। রাস্তা দিয়ে আসার সময় রাহাত, সুজন এর সাথে দেখা তারা আমার বন্ধু সুজন বললো।

সুজন : কিরে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো? 

আমি: মামা খুশি লাগবে না কি লাগবে ? ফাইনালি চাকরি হয়ে গেছে। 

রাহাত: কি কস ? তর চাকরি তর! আমি বিশ্বাস করি না। এই কথা শুনার চেয়ে আমার মরে যাওয়া ভালো।

আমি: ধুর হালা। 

সুজন: মজা না । কোথায় চাকরি হয়েছে ?

আমি: ঢাকা। 

রাহাত: এতো ধুরে কিভাবে চাকরি করবি কোথায় থাকবি।  কেমনে কি? 

আমি: এখনো ভেবে দেখেনি। দেখা যাক কি করা যায়। 

রাহাত: ওকে। আমাদের জানাস । 

আমি: ওকে। আগে গিয়ে মাকে বলি।

সুজন: যা ‌মামা । আমরা কিন্তু‌ ট্রিট পানা। 

আমি: তরা আবার কি খাবি। যা দুইটা বেনসন খাইছ। 

রাহাত: সালা!  আচ্ছা তুই কি ভালো হবি না। 

আমি: আচ্ছা সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে। আমি যাই। 

__ভাবলাম মাকে আগে গিয়ে বলবো চাকরি হয় নাই। দেখি মার রিয়েকশনটা কি হয়। আমি বাড়িতে গিয়ে চুপচাপ ঘরে বসে রইলাম মন খারাপ করে। কিছুক্ষণ পর মা এসে বললো।

মা: কিরে পরে মনি কি বললো? কোনো কাজটাজ দিয়েছে চাকরি হয়েছে ‌?

আমি: না মা।

মা: আমি জানতাম আমি জানতাম। তর দ্বারা কিছু হবে না। তরে নিয়ে আমি কি করি?কি জিজ্ঞেস করছিলো?

আমি: আমার সার্টিফিকেট দেখে বললো। এর চেয়ে ভালো ভালো রেজাল্টের লোকেরাও  বলে তার কোম্পানিতে চাকরি পায় না।

মা: তরে কতো করে বলছিলাম ভালো করে পড়াশোনা কর। কিন্তু তুই আমার কথা বিন্দুমাত্র শুনলি না যা এখন গিয়ে ক্ষেতে কাজ কর ।

আমি: হয়েছে থামো। আসলে মা আমার চাকরি হয়েছে। মনি আপু তার কোম্পানিতে কম্পিউটারের কাজ দিয়েছে বেতন প্রথমে ২৫ হাজার টাকা । বলছে দুই দিনের ভিতর জয়েন হতে।

মা: সত্যি বলতাছত। 

আমি: হুম। 

__আমি মাকে ই-মেইলটা দেখালাম। মা বললো

মা: কবে যাবি। কেমনে করবি কোথায় থেকে করবি চাকরি?

আমি: তুমিই বলো। 

মা: আমি কি কিছু জানি বুঝি। তুই যেটা ভালো মনে করস সেটা কর। 

আমি: মা আমি চলে গেলে তো তুমি একা হয়ে যাবে। কিভাবে থাকবে একা একা।

মা: আমাকে নিয়ে তুই টেনশন করিস না। দুইটা মাস একটু কষ্ট করবো। তারপরতো তর‌ বউ বাড়িতে ‌আসতাছে। 

আমি: মা তুমি না। 

মা: এখন কোথায় থাকবি?

আমি: প্রথমে একটা হোটেলে উঠতে হবে । সেখানে কিছু দিন থেকে । তারপর একটা বাসা বের করতে হবে। 

মা: তুই যেটা ভালো মনে করস কর।

__আমি প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে পরদিন রেডি হলাম চলে আসবো । বিদায় বেলা মা কেঁদে দিলো। আমিও না কেঁদে থাকতে পারলাম না । কারণ ছোট বেলা থেকেই এই বাড়িতে বড় হয়েছি । সব সময় মার পাশেই ছিলাম। আজ কিছু টাকা উপার্জনের লোভে মাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি অনেক দূরে তাই খুব কষ্ট হচ্ছে। যাইহোক সব কিছু ভুলে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় এসে প্রথমে কোম্পানিটা বের করলাম । কোম্পানির একটু পাশেই একটা হোটেলে উঠলাম। সেখানে একদিন রেষ্ট নিয়ে পরদিন বের হলাম বাসা বের করার জন্য। আমার ইচ্ছা ছিলো কোম্পানির আসে পাশে বাসা বের করার জন্য কিন্তু কোথাও পেলাম না। অবশেষে সারাদিন খুঁজাখুঁজির পর পেলাম কোম্পানি থেকে পাঁচ কিলো দুরে। একটা‌ পোষ্টার দেখে ফোন দিয়ে ছিলাম। তখন ফোনের কথায় বুঝলাম বাসাটা খুব ভালো হবে। ভাবলাম না পাওয়ার চেয়ে যেটা পেলাম সেটাই ভালো। পরে না হয় আস্তে আস্তে কোম্পানির আসে পাশে উঠবো। এখন আপাতত কাজ চালানো যাক। আমি ঐদিন ঐ বাসা দেখতে গেলাম। বাসা দেখে পছন্দ হয়েছে একটা রুম একটা বাথরুম আর একটা বেলকনি। কিন্তু ভাড়া একটু বেশি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চায়‌ । আমি কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। আমার খেয়াল হলো আগামীকাল ওইতো কোম্পানিতে জয়েন করতে হবে। তাই আজকে রাতেই ঠিক করলাম হোটেল থেকে সব কিছু নিয়ে আসবো। আমি ঐদিন রাতেই সব‌ কিছু নিয়ে আসলাম। নিচের ফ্লোরে বিছানা করলাম। এর ভিতরে মাকে ফোন দিয়ে সব জানালাম। পরদিন যথা সময়ে আমি ঘুম থেকে উঠে কোম্পানির সামনে হাজির হলাম। বড় করে লেখা আছে জেনি গ্রুপ। ভাবলাম এই জেনিটা আবার কে? অনেক খেয়াল করে মনে পড়লো । আরে এতো মনি আপুর ছোট বোন । জন্মের কিছু দিন পর মারা গিয়েছিলো। তার বাবা তার ছোট মেয়ের নাম দিয়েই কোম্পানি খুলছে। আমি ভিতরে ঢুকতে যাবো । দারোয়ান চাচ্চু আমার পথ‌ আটকালো বললো ।

দারোয়ান: কার্ড কোথায়? 

আমি: কোন কার্ড?

দারোয়ান: ঐযে দেখেন সবার কাঁধে। কার্ড ছাড়া ভিতরে ঢুকা যাবে না। 

আমি: আরে মামা আমি নতুন চাকরি পেয়েছি । কার্ড এখনো পাইনি। ভিতরে গেলে পেয়ে যাবো। 

দারোয়ান: না মামা হবে না। আপনার কাছে কুরিয়ার এর মাধ্যমে কার্ড যাবে। সেই কার্ড দেখালেই ভিতরে যেতে পারবেন।  

আমি: ওকে। আচ্ছা মামা মনি ম্যাডাম কি ভিতরে আছে। তার সাথে দেখা করতে পারবো। 

দারোয়ান: ধুর মিয়া ফাজলামো করেন। ম্যাডামের সাথে করবেন। মুখের কলা। ভাগেন এখান থেকে। কার্ড নিয়ে আসলে ভিতরে ঢুকতে পারবেন নাহলে পারবেন না। 

আমি: ওকে। 

__এমন সময় দেখি পাজারো গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামলো । আমি তাকিয়ে দেখি মনি আপু। সাথে তার সাথে আরেকটা মেয়ে সম্ভবত তার পি এস‌। মনি আপুকে দেখে আমি অবাক। বাড়িতে কি রকম দেখলাম আর এখানে কি রকম। টাইট জিন্স প্যান্ট শার্ট হিল জুতা । ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক চুল গুলো খুলা চোখে চশমা । পাশ্চোত্যর মেয়েদের থেকে কোনো দিক দিয়ে কম না। তাকে আপু বলতেই আমার লজ্জা হচ্ছে তার দিকে তাকাতেই লজ্জা হচ্ছে । গ্রামে তাকে কি সরল সোজা মেয়ে মনে হয়েছে ‌। আর এখানে। আমাকে ক্রস করে যাওয়ার সময় আমি ডাক দিলাম।

আমি: ম্যাডাম! ম্যাডাম!

__ম্যাডাম আমার দিকে তাকালো। আমার কাছে তার পি এস‌ আসলো । তার পি এস এরো কম ভাব না। তার পিএস এসে বললো।

পি এস: কি এভাবে ডাকছেন কেনো? আপনি কি নিয়ম জানেন না। 

আমি: সরি ম্যাডাম।

পি এস: আবার সরি বলছেন। কে আপনি আপনি এখানে আসলেন কেনো? আপনাকে তো চিনি না।
দারোয়ান! দারোয়ান!

মনি আপু : কি হয়েছে এখানে সারা ? 

__এই কথা বলে এখানে আসলো বললো।

মনি আপু: রাফিদ তর কার্ড কোথায়?

__মনি আপুর মুখে আমার নাম শুনে সবাই অবাক। পি এসতো হা করে মনি আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দারোয়ান মামা ও পুরো অবাক। আমিও অবাক না হয়ে পারলাম না কারণ সে বাড়িতে আমাকে তুমি সম্মোধন করেছিলো আর এখানে তুই। 

আমি: ম্যাডাম আমি এখনো কার্ড পাইনি।‌

ম্যাডাম: কেনো কার্ড পাবি না? সারা আমিতো ঐদিন বলছিলাম তার হাতে যেনো কার্ড যায়। 

সারা: সরি ম্যাডাম। আমিতো কুরিয়ারে দিয়েছিলাম। 
কুরিয়ার দেরি করলে আমার কিছু করার আছে। 

মনি আপু: তুই আজকে চলে যা‌। সারা আজকের ভিতর কার্ড যেনো তার হাতে যায়। 

সারা: ওকে ম্যাডাম। 

__এই বলে মনি আপু চলে যেতে লাগলো। তার পিএস আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো । দারোয়ান মামা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি দারোয়ান মামাকে চোখ টিপ দিয়ে। গাড়ি দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে নিজের মতো করে রুমটা সাজালাম । দুপুরের টাইম হলে মনে হলো । খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। আসে পাশে কোনো মেস আসে আছে কিনা সেটাও জানি না। ভাবলাম বাড়ি ওলাকে জিজ্ঞেস করি। বাড়িওয়ালার
দরজায় টোকা দিলাম। দরজা খুললে আমাকে দেখে বললো। বাড়িওয়ালার নাম রহিম

রহিম: কি মনে করে? 

আমি: আংকেল আসে পাশে কি খাওয়ার কোনো মেস আছে?

রহিম: আছে। সামনের গলির এখানে।

আমি: ধন্যবাদ। 

__আমি মেসে গিয়ে খাবারের নাম উঠালাম। সেখানে এখন খাওয়াদাওয়া করলাম। রাতে আমার হাতে কোম্পানির কার্ড পৌঁছালো। পরদিন কোম্পানির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।

চলবে....

পাঠক-পাঠিকারা আমরা তোমাদের জন্য গল্প লেখি।
গল্পের এক পার্ট লেখতে আমাদের ২-৩ ঘন্টা চলে যায় । আর তোমাদের একটা রিয়েক্ট দিতে এক সেকেন্ড লাগবে। তাই কেউ রিয়েক্ট না দিয়ে যাবেন না। আর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post