#পার্ট: ৬
#লেখক: Osman
__এই বলে সারা চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর আরেকজন কে জানি আসলো। তার দিকে তাকাতেই আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। সেটা হলো মনি আপু। মনি আপু আমার সাথে এরকম করলো। আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না। মনি আপু আমার সামনে এসে বসলো।
মনি আপু: ইস তরে একটু বেশিই মারছে। সরি সরি
আমি: Why? Why?
মনি আপু: তর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।
আমি: তাহলে কেনো?
মনি আপু: মনে আছে আজ থেকে দশ বছর আগে। আমার কোমড়ে ঘুসি দিয়েছিলি আর আমাকে চড় দিয়ে চশমা ভেঙ্গে ফেলেছিলি।
আমি: হুম মনে আছে।
মনি আপু: সেটার জন্য এমন করেছি। আসলে কি জানিস আমি আমার মনকে শান্তি দিতে পারছি না। তরে দেখলেই আমার সেই ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়ে।
আমি: এটার জন্য এতো কিছু করতে হবে। ঐদিনই আমাকে চড় দিয়ে দিতেন। আমি কিছু মনে করতাম না।
মনি আপু: দেখ তর মনে করায় । আমার কিছু যায় আসেনা। তুই সেই আট দশটা ছেলের মতই আমার কাছে। আর তকে আমি নিজ হাতে মারবো। নাহলে আমার মন শান্তি হবে না।
আমি: আপনি যদি আমাকে মারতেন । তাহলে আমার কোনো দুঃখ থাকতো না। আপনি মানুষ ভাড়া করে আমাকে মারছেন।
মনি আপু: আসলে আমি লোক পাঠাই ছিলাম । তকে ধরে চেয়ারে বাঁধতে। কিন্তু তকে কাবু করতে একটু সমস্যা হয়েছে।
আমি: ওহ।
মনি আপু: সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমার চোখে একটু সমস্যা। আজ আমি তকে কানা বানাবো।
আমি: যা ইচ্ছা করেন। আমার শরীর খুব দুর্বল লাগছে।
__মনি আপু আমাকে কোনো না ভেবেই আমাকে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় দিলো। দিয়ে আরো চারটা চড় লাগালো। আমার ঘাল দুটো যেনো দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। তারপর আবার আমার নাকে মুখে ঘুসি দিতে লাগলো। চোখে একটা ঘুষি দিলো। চোখ ফেটে যেনো রক্ত বের হচ্ছে। এভাবে মারার কারণে ব্লিডিং আরো বেড়ে গেলো। দেখি মনি আপু চলে যাচ্ছে। আমি বললাম।
আমি: আপু আমার শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে অতিরিক্ত ব্লিডিং এর কারণে । মনে হয় বাঁচতে পারবো না। যদি মারা যাই তাহলে আপু প্লিজ আমার মাকে দেখে রাখবেন।
__এই বলে আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আমার চোখ দুটো বুঝে আসছে। আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে দেখি কোনো এক হাসপাতালে ভর্তি আছি। দেখি মুখে বেন্ডেজ । আস্তে আস্তে আমার সব খেয়াল হলো। আমি আমার মোবাইল খুঁজতে লাগলাম। দেখি এক নার্স আসলো। বললো
নার্স: বেশি নড়াচড়া করবেন না। ব্লিডিং শুরু হবে।
আমি: আমি কয়দিন এখানে আছি।
নার্স: গতরাতে আপনাকে এখানে আনা হয়েছে। একদিন আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।
আমি: আমার মোবাইলটা কোথায় জানেন?
নার্স: আপনার সাথেতো মোবাইল আসে নাই।
আমি: ওহ। আমার আর কতক্ষন এভাবে থাকতে হবে।
নার্স: আপনার চোখে মারাত্মক চোট লেগেছে। যার জন্য আপনাকে চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আর আপনার প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। সেজন্য আপনার চিকিৎসা করতে রক্তের প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু আপনার রক্তের গ্রুপ ছিলো A–। এই রক্ত আমাদের কাছে ছিলো না। যে নিয়ে এসেছিলো আমরা তাকে জানালাম। সে আপনাকে এক ব্যাগ রক্ত দেয়। যার জন্য আপনি এই যাত্রায় বেঁচে যান।
আমি: আপনার মোবাইলটা দেওয়া যাবে। আমার মাকে ফোন করবো।
নার্স: আমাদের ব্যাক্তিগত মোবাইল । কোনো পেসেন্টকে দেওয়া যায় না।
আমি: প্লিজ আপু । দেন আমার মা মনে হয় খুব টেনশন করছেন। শুধু একটা মিনিট।
নার্স: এটা আমাদের রুলস। আমরা রুলস ভঙো করি না।
আমি: প্লিজ আপু একটা মিনিট।
নার্স: ওকে এই নিন।
__আমি ফোন নিয়ে মার কাছে কল দিলাম। মা কল ধরলো। মা বললো
মা: কিরে তকে সকালে ফোন দিলাম ধরলি না কেনো?
আমি: এইতো মা একটু ব্যাস্ত ছিলাম।
মা: ওকে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস। তর ঐ নাম্বার কি হয়েছে?
আমি: মা অফিস থেকে কি জানি সমস্যা হয়েছে। কিছুদিন পর ঐ নাম্বারে কল দিয়ো।
মা: আচ্ছা।
আমি: আর এই নাম্বারে ফোন দিয়ো না। এখন রাখি।
মা: আচ্ছা। ।
__মার সাথে কথা বলে । মনটা এখন খুব ভালো লাগছে। আমি নার্সকে মোবাইল দিয়ে দিলাম। নার্স বললো
নার্স: আপনি এমন আহত হয়েছেন। কিন্তু আপনার মাকে বললেন না কেনো?
আমি: মাকে বললে সমস্যা আছে।
নার্স: আপনি যে আহত হয়েছেন। আমরা ভাবছিলাম পুলিশকে ইনফর্ম করবো। কিন্তু যে আসছিলো আপনাকে নিয়ে। সে না করছে।
আমি: পুলিশকে না বলে ভালই করছেন।
নার্স: এই নিন ঔষধ ।
আমি: ধন্যবাদ । আচ্ছা আমার হাসপাতালের বিল কতো হয়েছে।
নার্স: সেটা বলতে পারবো না। কিন্তু আপনার হাসপাতালের বিল পে করে দিয়েছে। যিনি আপনাকে নিয়ে আসছিলো।
আমি: কে নিয়ে আসছিলো জানেন।
নার্স: চিনি না।
আমি: তার মুখের বর্ননা দিতে পারবেন।
নার্স: হুম পারবো।
আমি: বলেন।
নার্স: উনি খুব আতঙ্কে ছিলেন। এবং খুব কাঁদতে ছিলেন । তিনি কিছুটা মিডিয়াম বয়সের ছিলেন। আমি মিন ২০ এর উপরে হবে। তিনি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। মুখের মধ্যে মায়াবী একটা ভাব ছিলো। সব চেয়ে বড় কথা হলো তিনি চশমা পড়া ছিলো।
আমি: ওকে ধন্যবাদ। আমি তাকে চিনেছি।
নার্স: এখন রেষ্ট নেন।
__আমি ভালো করেই চিনতে পারছি । এটা মনি আপু ছিলো আমাকে মেরে এখন ভালো সাজতে আসছে। আমিতো মরেই যাচ্ছিলাম। এর শাস্তি মনি আপু অব্যশই পাবে। আমি আর মনি আপুর কোম্পানিতে চাকরি করবো না। পরে আবার কোনো ঝামেলায় ফেলে আবার আমাকে মারবে। এর চেয়ে ভালো সময় থাকতে কেটে পড়া। আর সারাকে আমি কোনো ভাবেই ছাড়বো না। আচ্ছা আমার মোবাইল কোথায়? মোবাইল এর জন্য খুব টেনশন। মোবাইল এর মধ্যে আমার গুরুত্ব পূর্ণ ফাইল ছিলো । যেটা অনায়াসে একটা লেপটপ হ্যাক করা সম্ভব। অসুবিধা নেই। সেই ফাইল আমার গুগল ড্রাইবে আপলোড করা আছে। এখন টাকাও নেই । একটা মোবাইল কিনবো। চোখে কেমন জানি ঝাপসা দেখছি। চোখের ডাক্তার দেখা লাগবে। সেই টাকা ও নেই। মার কাছে টাকা চাবো। সেই উপায়ও নেই। মার কাছে টাকা চাইলে হাজার প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। আর মনে হয় না মার কাছে টাকা আছে। মা ব্যাবস্থা করে দিবে। সত্যি কথা বললে মা শুধু বলবে । শুধু বাড়িতে চলে যেতে। এখন কি করবো আমার মাথায় কোনো কাজ করছে না। এখন কাজ শুধু এখান থেকে বের হওয়া।
দেখি নার্স প্রবেশ করছে। হাতে আমার পোশাক। আসলে নার্সটা খুব সুন্দরী। (বন্ধুরা আগামী গল্প থাকবে নার্সের প্রেমে) । নার্স বললো
নার্স: এই নিন আপনার কাপড়।
আমি: ধন্যবাদ । আমি এখন চলে যেতে চাই।
নার্স: কিন্তু উনি বলছিলো । তিনি এসে আপনাকে নিয়ে যাবে।
আমি: থাক তার আর দরকার নেই।
নার্স: এই ঔষধ গুলো খাবেন রুটিন মতো।
আমি: ওকে।
নার্স: ধন্যবাদ আবারো আসবেন।
আমি: নাহ আমার আর এখানে আসার ইচ্ছা নেই।
কারণ আমি মরতে চাইনা।
নার্স: এখানে সবাই আসে বাঁচার জন্য । মরার জন্য নয়।
আমি: মরার জন্যই আসে। নাহলে কেনো? আমি মরতে বসেছিলাম।
নার্স: দেখেন আমরা আপনাকে বাঁচিয়ে তুলেছি। আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
আমি: ওকে। ধন্যবাদ ।
___নার্স চলে গেলো। আমি পোশাক পাল্টিয়ে । এমন ভাব ধরলাম। যেমন আমার কিছুই হয়নি। আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলাম। দেখি সারা আর মনি আপু গাড়ি থেকে নামলো। তাদের দেখেই আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। সারা হেঁটে আমার কাছে আসলো। বললো।
সারা: ম্যাডাম তকে ডাকছে।
__আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম।
আমি: কে আমার ম্যাডাম। আর আপনি কে?
সারা: দেখ ভাব ধরিস না। ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কে আমার ম্যাডাম। আমি কি কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতাম। মনে হয় না। আর আপনি বা কে?
সারা: ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: লিসেন আমি কোনো কোম্পানিতে চাকরি করি নাই। না আমার ছিলো কোনো বস। আর আপনাকে আমি চিনিনা। আমাকে আর ডিস্ট্রাব করবেন না।
__এই বলে আমি রিকশা নিয়ে চলে আসলাম বাড়িতে। বাড়িতে এসে বাড়িওয়ালার মোবাইলটা নিয়ে মাকে ফোন দিলাম।
আমি: মা কিছু টাকা পাঠাও।
মা: কেনো কি হয়েছে কোনো সমস্যা?
আমি: মা আমার মোবাইলটা ছিনতাই হয়ে গেছে। কিছু টাকা দরকার।
মা: কিভাবে ছিনতাই হয়েছে। আমাকে আগে বলিস কেনো?
আমি: সে সুযোগ ছিলো না।
মা: কতো টাকা লাগবে।
আমি: ১০ হাজার টাকা দেও।
মা: আচ্ছা তুই বিকাশ নাম্বার দে পাঠাইতাছি।
আমি: আচ্ছা।
__বিকাশ থেকে টাকা তুলে। প্রথমে চোখের ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের কাছে সমস্যার কথা বললাম। ডাক্তার একটা ড্রপ দিলো আর চশমা দিলো বললো তিন মাস ব্যাবহার করতে। ভাবলাম মনি আপুর মনের ইচ্ছা পূরণ হলো সে নিজে কানা সাথে আমাকেও কানা বানালো। আমি নিয়ত করে ফেললাম মনি আপুর কোম্পানির আশে পাশেও আমি যাবো না। । দরকার হলে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাবো। এখন আমার কাজ শুধু একটা নতুন কাজ বের করা। আমি একটা বাটন মোবাইল কিনে পূর্বের সিমটা উঠাইলাম । কাজ খুঁজতে লাগলাম চারদিন চলে গেলো। কোনো কাজ পাই নাই। সেদিন খুব ক্লান্ত লাগছিলো । রাতে ঘুমালাম । রাত ১টা সময় কে জানি দরজায় টোকা দিচ্ছে। আমি কিছুটা অবাক হলাম। এতো রাতে কে দরজায় টোকা দিচ্ছে। আসলে আমার রুমটা বাড়ির এক কোনায় পড়ছে। মানে গেটের ভিতরে এক দরজা গেঁটের বাহিরে আরেক দরজা। আমি বাহিরেরটা বেশি ব্যাবহার করি। সেজন্য গেটের বাহিরে থেকেও আমার রুমে আশা যায়। রাত ১টা সময় দরজায় টোকা দেওয়ার কারণে আমি কিছুটা হকচকিয়ে উঠলাম। আমার মাথায় কাজ করছেনা কে দরজায় টোকা দিলো। আমি লাইট জ্বালিয়ে চশমা চোখে দিয়ে। দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে?
চলবে.....
🙏দুঃখিতো দেরিতে গল্প দেওয়ার জন্য🙏
পাঠক-পাঠিকারা আমরা তোমাদের জন্য গল্প লেখি।
গল্পের এক পার্ট লেখতে আমাদের ২-৩ ঘন্টা চলে যায় । আর তোমাদের একটা রিয়েক্ট দিতে এক সেকেন্ড লাগবে। তাই কেউ রিয়েক্ট না দিয়ে যাবেন না। আর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।