গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ০৯ | Senior Boss Part 09

গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ০৮ | Senior Boss Part 08


 #নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ৯
#লেখক: Osman

__রাহাত চলে গেলো । রাহাত আসলে ভালই হবে। দুইজন একসাথে মজা করতে‌ পারবো। তিন দিন পর রাহাত আসলো । এসে কোম্পানিতে জয়েন করলো। 
এভাবে এক মাস চলে যায়। প্রথম মাসে বেতন দিলো ৩০ হাজার টাকা। আমি ভাবলাম মোটামুটি ভালই খারাপ না। আমি বেতন পেয়ে মাকে ফোন দিলাম। 

আমি: কেমন আছেন?

মা: ভালই। 

আমি: বেতন পেয়েছি। 

মা: কতো

আমি: ৩০ হাজার টাকা। আমার এখানে খরচ গিয়েছে ১০ হাজার টাকা। বাকি টাকা পাঠাইতাছি। 

মা: পাঠা। তর জন্য মেয়ে দেখছি। 

আমি: দেখছো? কিন্তু মা আমার হাতেতো এখন টাকা পয়সা নেই। 

মা: তুই কোনো চিন্তা করিস না। এখন বল তুই কবে আসতে পারবি। 

আমি: তুমি যেদিন বলবে। 

মা: আগামী সপ্তাহে আসতে পারবি। 

আমি: আসতে‌ পারবো শুধু শুক্রবার ছুটি। 

মা: তর সাথেতো রাহাত থাকে তাকে নিয়ে একেবারে আসিছ। 

আমি: আচ্ছা। 

মা: তুইতো জানিস আমি বাড়িতে একা। সাথে যদি  বৌমা থাকে তাহলে আমার কোনো টেনশন থাকবেনা। 

আমি: মা তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো। 

মা: আচ্ছা। আমি পরশু তাদের বাড়িতে যাবো। পরে তুই আসলে কথা ফাইনাল করবো। 

আমি: আচ্ছা। 

মা: তো রাইখা দে। 

__আমি ফোন কেটে দিলাম। রাহাত বললো রাহাত এখন আমার সাথেই থাকে। আমি যে রুমে থাকি সে রুমে দুজন ইজিলি দুজন থাকতে‌ পারবে। রাহাত আলাদা তোশক বিছিয়ে থাকে। আমার কোনো সমস্যা নেই। রাহাত বললো

রাহাত: কে ফোন করছে?

আমি: মা‌ ফোন করছে। আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। আগামী সপ্তাহে বাড়িতে যাচ্ছি । তর যেতে হবে। 

রাহাত: ওকে যাবো। সিগারেট খাবি। 

আমি: ধুর হালা। তুই জানিস না আমি এসব খাইনা। 

রাহাত: আরে বন্ধু একটা টান দিয়ে দেখ কেমন লাগে। বিয়ের পরতো আর খেতে পারবি না। 

আমি: আমি এখনো খাবো না। পরেও খাবো না। 

রাহাত: আরে খেয়ে দেখ। টেনশন থেকে সবসময় মুক্ত থাকবি। 

__এই বলে রাহাত সিগারেট ধরাতে যাবে। আমি বললাম

আমি: বাহিরে যা। গন্ধ সহ্য করতে পারিনা। 

রাহাত: যাচ্ছি। 

__আমি কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে ঘুম উঠে খাওয়া দাওয়া করে। অফিসে গেলাম। মনি আপুর সাথে পরে আর কোনো কথা হয়নি। সারার সাথে খুবই অল্প। আস্তে আস্তে কোম্পানিতে অভ্যাস্ত হয়ে গেলাম। এখন সবার কাছেই আমি পরিচিত। ভাবতেই অবাক লাগছে। আর কিছুদিন পর বিয়ে। আল্লাহ আল্লাহ করি যাতে ভালো মেয়ে কপালে জুটে। আজকে অফিসে বেশি কাজ ছিলো না। রুমে চলে আসলাম। মেসের খাবার আর ভালো লাগে না। পেটের ক্ষিধায় শুধু খাই। টাকাও নাই যে ভালো মন্দ খাবো । রাহাতেরও আমার মতো মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন। তার একটা লোকাল কোম্পানি। ১০ বছর মেয়াদের চাকরি। রাহাতের ফ্যামিলির সবাই আছে। রাহাত আর সবুজ আমার ছোট বেলার বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই আমরা একসাথে ssc দিয়েছিলাম। পরে আমি কারিগরি লাইনে চলে আসি। সবুজের এখনো কোনো চাকরির ব্যাবস্থা হয়নি। ওর বাবার একটা ব্যাবসা আছে। ঐখানে সে এখন সময় দেয়। ওর যদি এদিকে কোনো চাকরি হয় ‌। তাহলে তিনজন একসাথে অন্যা আরেকটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকবো। সবুজের এখনো কোনো আপডেট পাইনি। আমি দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বিকালে খেলতে বেরোলাম। রাহাত এখনো রুমে আসেনি।  বাসার পাশেই একটা মাঠ আছে‌ ঐখানে ক্রিকেট খেলি। এই একমাসে তাদের সাথে ভালই পরিচয় হলাম। ছোট বেলা থেকেই আমাদের তিনজনের খেলার প্রতি একটু বেশিই জোক ছিলো। বিকালে খেলা ধুলা বাসায় করে বাসায় আসছি। দেখি অনেক মানুষ নামাজে যাচ্ছে । এখানে আসার পর নামাজ কি জিনিস ভুলেই গিয়েছিলাম। বাড়িতে থাকতে মার বকাঝকার কারনে নামাজ পরতাম। এখানে এসে যেনো সেটাই ভুলে গেলাম। কেনো জানি মনে হলো নামাজ পরা উচিত। নামাজ পড়ে রুমে আসলাম। কোম্পানি থেকে নতুন একটা লেপটপ দিয়েছে । লেপটপটা নিয়ে বসলাম। রাহাত রুমে আসলো। 
আমি বললাম।

আমি: আজকে এতো দেরি করলি কেনো?

রাহাত: কোম্পানিতে আজকে বেশি কাজের চাপ গিয়েছে।

আমি: তদের বস কি মেয়ে নাকি?

রাহাত: না। দোস্ত চলনা আগামীকাল ভালো মন্দ খাই। মেসের খাবার খেতে খেতে তেতো হয়ে যাচ্ছি। 

আমি: কি খাবি?

রাহাত: গ্রীন আর নান। 

আমি: খারাপ না ওকে আগামীকাল। 

রাহাত: তদের কোম্পানির একটা মেয়ে বাইর কইরা দিস না। কিছুদিন জমিয়ে প্রেম করি । 

আমি: তুইকি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে চাষ। কি দরকার আছে? কিছুদিন পর বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য বলবে তখন দশটা দেখে একটা পছন্দ করবি। সেটা ভালো না। 

রাহাত: জানি জানি দেনা একটা বার কইরা । 

আমি: তুই‌ অন্তত আমারে বলিস না। আমাদের কোম্পানির যেই অদ্ভুত নিয়ম সেটা শুনলে তর মাথা চক্কর দিবে।

রাহাত: কি নিয়ম?

__আমি রাহাতকে অফিসের অদ্ভুত নিয়মের কথা বললাম। রাহাত শুনে বললো

রাহাত: এমন আজাইরা ফালতু নিয়ম কে বানাইছেরে। আমার বাব জনমে এমন নিয়মের কথা শুনি নাই। কেরে তদের বসটা। তার বাড়ি কোথায়? 

__আমি এতো দিন রাহাতকে মনি আপুর সম্পর্কে কিছুই বলি নাই।

আমি: কে বানাইছে? শুনেতো তুই লাফ দিয়ে উঠবি। 
লাফ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হো।

রাহাত: বল বল দেখি কোন হালায় এটা।

আমি: মুফাজ্জল আংকেলের মেয়েকে চিনিস। 

রাহাত: কোন মুফাজ্জল। 

আমি: তুই কোন মুফাজ্জলকে চিনস। 

__দেখি রাহাত ভাবনায় ডুবে গেলো। কিছুক্ষণ পর রাহাত শুয়া থেকে বসে পড়লো। বললো

রাহাত: তুই আমাদের প্রতিবেশী মুফাজ্জল আংকেলের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মনির কথা বলতাছস। ওয়াট দা ....।

আমি: হুম। 

রাহাত: মনি আপু তর বস। আমিতো বিশ্বাসই করতে পারছি না। এতো দিন বলস নাই কেনো?

আমি: সারপ্রাইজ।

রাহাত: বাল সারপ্রাইজ। এই কানিরি তদের সাথে এরকম করছে । এতে আমি একটু অবাক হয়নি। কারণ ওতো এমনই। ছোট বেলা কি জালান ঝালায়ছে।

আমি: তরে বলছিলাম না । আমার চশমা পড়ার পিছনে একটা ইতিহাস আছে। এটা মনি আপুর কারণে হয়েছে। 

রাহাত: কি করে হয়েছে?

আমি: আজকে না আরেকদিন। 

রাহাত: মনি আপুর সাথে কি চলে নাকি। 

আমি: তর কি মাথা ঠিক আছে। কোথায় মনি আপু আর আমি । সালা কিছুদিন পরতো আমি বিয়ে করতাছি। 

রাহাত: বুঝছি তর দ্বারা কিছু হবে‌ না। আমারই কিছু একটা করতে হবে। 

আমি: তুই কি করবি। 

রাহাত: দেখিস। 

আমি: তরে আমি একটা মেয়ের সন্ধ্যান‌ দিতে পারি। তুই যদি পটাতে পারিস তাহলে তুই লাকি। আর যদি না পারস । তাহলে তর খবর আছে। 

রাহাত: কেরে এটা। 

আমি: মনি আপুর সেক্রেটারি সারা । খুব পাকনা। আর মনি আপুর বডিগার্ডও আর যেহেতু বডিগার্ড তাহলে মারামারিতে উস্তাদ। 

রাহাত: অসুবিধা নেই। এমন মেয়েই তো আমার দরকার। 

আমি: দেখ তুই জেনে বুঝে আগুনে লাফ দিচ্ছোস।‌তর কপালে শনি আছে।

রাহাত: অসুবিধা নেই তুই শুধু মেয়েটাকে দেখাইস।
 
আমি: আচ্ছা। 

__আমি কতক্ষন মোবাইল টিপে খাওয়া দাওয়া করলাম। দেখি মা ফোন দিয়েছে 

মা: তর জন্য মেয়েটা দেখেছি । মেয়েটাকে না আমার খুব ভালো লাগছে। তুই কবে আসবি?

আমি: শুক্রবার আসতাছি। 

মা: আয় । 

আমি: রাখি। 

__আর কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম। দুপুর পর্যন্ত এক নাগাড়ে বইসা রইলাম। দুপুরে এসে এক সিকিউরিটি এসে খবর দিলো । আমাকে কে জানি ডাকছে ‌। আমি গেঁটের বাহিরে গিয়ে দেখি রাহাত। রাহাতের মুখ দেখে বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। সে জন্য সে ফোন না দিয়ে ডাইরেক্ট এখানে চলে এসেছে‌ । রাহাত বললো

রাহাত: তর মার শরীরটা ভালো না। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে। 

আমি: কি বলিস? আমি গতকালরাতেই মার সাথে কথা বললাম । তখন তো মার শরীর খারাপের কথা বলেনি‌। 

রাহাত: আমাকে এখন ফোন দিয়ে বললো। তর মার শরীর ভালো না। এখুনি রেডি হো বাড়ি যেতে হবে।
 
আমি: তুই দ্বারা আমি ছুটি নিয়ে আসতাছি। 

রাহাত: তাড়াতাড়ি যা। 

__আমি ভাবতে লাগলাম। কি হলো মার গত রাতেইতো। মার সাথে কথা বললাম। মা আমাকে তেমন কিছুই বলেনি। রাহাতের মুখ দেখে বুঝলাম নিশ্চয় খারাপ কিছু হয়েছে। তাহলে কি মা কি মারা গেলো। এমন কথা মনে হওয়ায় সাথে সাথে আমার ভিতরে একটা চিপ দিলো। ভাবলাম এটা হতে পারেনা। আমি সোজা মনি আপুর অফিসের সামনে গেলাম। দেখি সারা নেই। মনি আপুর দরজায় টোকা দিলাম। মনি আপু বললো। 

মনি আপু: ভিতরে আয়। 

__আমি ভিতরে ঢুকলাম। আমি বললাম

আমি: ম্যাডাম আমার ছুটি লাগবে। আমার মার শরীর ভালো না। 

মনি আপু: আমি জানি। যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যা।‌ আর এই নে আমার পার্সোনাল নাম্বার। কোনো সমস্যা হইলে ফোন দিস‌। 

আমি: ম্যাডাম আমার মার কি হয়েছে আপনি জানেন। (বললাম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে। )

মনি আপু: তেমন কিছু না। তুই বাড়ি যা।

আমি: আচ্ছা ম্যাডাম। 

__আমি আর রাহাত বাসায় এসে রেডি হয়ে। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসে রাহাত কে এতো করে বলতে বললাম মার কি হয়েছে। সে বলছিলো বাড়িতে গেলেই দেখতে পারবো। এক ঘন্টা জার্নি করে নরসিংদী আসলাম । বিকালের আগেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বাড়ির সামনে এসে দেখি অনেক মানুষের ভিড় । আমার ভিতরে একটা চিপ দিলো। আমি বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম একটা লাসের খাঁটিয়া। রাহাত গিয়ে  লাসের মুখ দেখালো। আমি দেখেই আমার পায়ের তলা থেকেই মাটি সরে গেলো।  আমি মা বলে এক চিৎকার দিয়ে মার লাসের উপর লুটিয়ে পড়লাম। 😭😭

চলবে...

পাঠক-পাঠিকারা আমরা তোমাদের জন্য গল্প লেখি।
গল্পের এক পার্ট লেখতে আমাদের ২-৩ ঘন্টা চলে যায় । আর তোমাদের একটা রিয়েক্ট দিতে এক সেকেন্ড লাগবে। তাই কেউ রিয়েক্ট না দিয়ে যাবেন না। আর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post