#লেখকঃরনি হাসান
#পর্বঃ৩
কিছুদিন এভাবেই কেটে গেলো। এরমধ্যে সবার সঙ্গে প্রায় বন্ধু হয়েছে। কিন্তু রিদিতার বন্ধুত্ব করেনি। রিদিতাও কখনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসেনি। তো একদিন ক্লাস শেষে করে গেটে এসে দাড়িয়ে ফোন ঘাটতেছি। হঠাৎ রিদিতা এসে বলল
রনি কেমন আছো - (রিদিতা)
হুম ভালো আপনি কেমন আছেন- (আমি)
আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করছো কেন হুম (রিদিতা এক গাল হেসে)
না এমনি- (আমি)
ভাইয়ার কথা ভেবে ভয় পাও নাকি -(রিদিতা)
এই এলাকার সবাই তো আপনার ভাইকে দেখে ভয় পায়। তাহলে আমি কেন পাবো না (আমি)
ক্যাম্পাসে প্রথম যখন আসলে তখন তো হিরো হিরো ভাব ধরে চলেছো। তখনও তো জানতে আমি মুন্নার বোন। তারপরও দুষ্টমি ফাজলামো করেছো তো এখন কি এমন হলো যে আমার সঙ্গে দেখা হলে কথাই বলছো না পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছো। তারমানে ভাইয়াকে দেখে তুমি একটু বেশি ভয় পাও (রিদিতা)
আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি আসলে ঝামেলাই পড়তে চাই না। সাধারণভাবেই চলতেই বেশি পছন্দ করি- (আমি)
আমি মুন্নার বোন বলে ক্যাম্পাসে সবাই আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে। আমিও না বুঝে তাদের সঙ্গে মিস বিহেব করেছি। এতে তারা আমার ধারের কাছেও আসে না। অইদিন তোমার কথা গুলো শুনে আমি একদম পালটে গেছে (হেসে)
তা আমি খুব ভালো করেই লক্ষ্য করেছি (আমি)
বাহ তুমি আবার আমাকেও ফলো করো হুম (দুষ্টমির হাসি হেসে)
না মানে ক্লাসমেট হিসাবে ওইটুকু ফলো করার অধিকার আমার আছে (আমি)
আচ্ছা আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি (রিদিতা)
হুম অবশ্যই কিন্তু (কিছু ভয়ে)
ভয়ার পাবার কিছু নেই। ভাইয়া সন্ত্রাসী হলেও কখনো আমার ফেন্ডদের উপর আক্রমণ করে না বুঝলে (হেসে)
অহহ আচ্ছা (এই বলে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিলাম)
আজ থেকে আমরা ফেন্ড ওকে। আর আমাদের মাঝে আপনি তুমি বলে কেউ কাউকে সম্বোধন করা চলবে নাহ ঠিক আছে (রিদিতা)
ওকে (আমি)
রিদিতার সঙ্গে এভাবে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ফেসবুক একাউন্টে ও। ক্যাম্পাসে থাকলে তো আড্ডা হতোই। বাসায় থাকলে মেসেঞ্জারে কথা হত। কিছুদিনের মধ্যে রিদিতার সঙ্গে যে এত গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যাবে তা আমি কখনো কল্পনা ও করেনি। তা চলুন এবার ক্যাম্পাসে ঘটনায় যাওয়া যাক
ক্লাসে মনোযোগ সহকারে স্যারের লেকচার শুনছি হঠাৎ পিছিনে দিকে সরাতেই লক্ষ্য করলাম রিদিতা আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। চোখ ইশারা দিয়ে বললাম" আমার দিক তাকিয়েস কেন -
রিদিতা মাথা নাড়িয়ে বলল" নাহ এমনি
রিদিতার কান্ড দেখে আনমনে হেসে আবার স্যারের লেকচারে মনোযোগ হলাম। ক্লাস শেষে মাঠে নিলয়, রাজু,সফিকদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছি এরমধ্যে রিদিতা এসে বলল
রনি তুই ফ্রি আছিস (রিদিতা)
হুম কেন (আমি)
না মানে তোকে নিয়ে একটু শফিং মলে যেতাম আর কি (রিদিতা)
আমাকে নিয়ে গেলে তোর লাভ হবে না। উল্টো আমাকে খাওয়াতে হবে বুঝছোস (আমি)
ঠিক আছে তুই যা খেতে যাস তাই খাওয়াবো এবং তোকে সারপ্রাইজ ও দিবো এখন বল আমার সঙ্গে যাবি নাকি লসের খাতায় নিজের নামটা বসাবি কোনটা হুম (রিদিতা এক গাল হেসে)
কি সারপ্রাইজ দিবি (খুশিতে গতগত হয়ে)
তা আমার সঙ্গে গেলেই বুঝবি (রিদিতা)
আচ্ছা চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে (আড্ডা থেকে উঠেই রিদিতাকে তাড়া দিয়ে)
বাহ সারপ্রাইজের কথা শুনে আড্ডা থেকে চট করেই উঠে পড়লি দেখছি (রিদিতা)
তুই যাই বলিস না কেন সারপ্রাইজ পেতে আমার প্রচুর ভালো লাগে (আমি)
জি এবার চলুন (রিদিতা)
রাস্তায় এসে রিদিতা নিজের প্রাইভেট কারে না উঠে, রিক্সার থামালো দেখে বলে উঠলাম" তোদের গাড়ি থাকতেই তুই রিক্সা থামালি কেন_?
রিক্সায় করে যেতেই আমার ভালো লাগে। তাই রিক্সা থামালাম (রিদিতা)
অহ এই ব্যাপার (আমি)
রিক্সায় দুইজনেই উঠার পর আমার কেনো জানি রিদিতার পাশে বসে থাকতে সংকোচবোধ হচ্ছে আর এইদিকে রিদিতাও আমার হাত জড়িয়ে ধরে রেখেছে। দেখে ফাজলামো করে বলে উঠলাম"
আমরা দুইজন দুই রিক্সায় গেলেই বেশি ভালো হতো (আমি)
দুই রিক্সায় কেন_? (রিদিতা)
না মানে তুই যেভাবে আমার হাত জড়িয়ে ধরে রেখেছিস এতে বাহিরের মানুষজন দেখে ভাবছে আমরা স্বামী স্ত্রী রিক্সায় করে ঘুরছি (আমি)
একথা বলা মাত্রই রিদিতা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে লজ্জা মাখা সুরে বলে উঠলো
ফাজলামো করিস না তো (রিদিতা)
ফাজলামো কই করলাম সত্যিই তো কইলাম (হেসে)
তুই সবসময় একটু বেশি তাই না (রিদিতা হেসে)
নাহ আগে ঠিক বেশি বুঝতাম না। তবে ইদানীং শুরু করেছি আর কি (আমি)
অত বেশি বুঝা ভালো না চান্দু (রিদিতা)
জি (আমি)
এভাবেই রিদিতার সঙ্গে দুই এক কথা বলে শপিংমলে আসলাম। আমি আমার মতো ফোন ঘাটতে লাগলাম। রিদিতা আমার হাতে ফোন দেখে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠে
সারাক্ষণ শুধু ফোন নিয়ে থাকতে হবে নাকি। তোকে নিয়ে আসলাম এক কাজে আর তুই করছিস কি (রিদিতা)
তুই তো জানসই আমার চয়েস বেশি একটা ভালো না (আমি)
ভালো হতে হবে না। তুই আমার পাশে থাকলেই হবে (রিদিতা)
আচ্ছা ঠিক আছে চল (আমি)
রিদিতার আচরণে আমি তখনই অবাক হলাম। যখন ওর কোনো কিছু না কিনে বলল
রনি এই পাঞ্জাবি টা দেখ তো কেমন (পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে)
তোর বয়ফ্রেন্ড কে গিফট করবি তো নিয়ে নে। একদম ফাটাফাটি হবে (হেসে)
তুই নাহ সবসময় বেশি বুঝিস। ভেবেছিলাম পাঞ্জাবি টা তোকে গিফট করবো এখন আর করবোই না (রেগে)
আরে রেগে যাচ্ছিস কেন। মজা করে কথাটা কইছি বিশ্বাস কর (হেসে)
ফাজিল একটা - এই বলে রিদিতা আমার হাতে পাঞ্জাবি তুলে দিলো ব্যস আমিও খুশি মনে পরিধান করে নিলাম। রিদিতা আমার পরনে পাঞ্জাবি দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে উঠলো
--" পাঞ্জাবিতে তোকে দারুণ মানিয়েছে দেখছি -
--" সত্যিই ভালো লাগছে " নাকি পাম দিচ্ছিস_?
--" সত্যিই অনেক ভালো মানিয়েছে। এখন চল রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো -
--" তোর জন্য কিছু কিনলি নাহ_?
--" আরেকদিন কিনবো এখন চল রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো অনেক ক্ষুধা লাগছে -
রিদিতার আচরণে কিছুই বুঝতে পারলাম না। শপিংমল আসলো ওর দরকারে। এসে আমাকে পাঞ্জাবি গিফট করলো। নিজের জন্য কিছুই কিনলো না। যাই হক আমাকে পাঞ্জাবি গিফট করেছে এতেই আমি খুশি। তারপর রিদিতা আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো প্রফুল্ল মনে খাবার গুলো খাচ্ছি হঠাৎ পাচ ছয়টা প্রাইভেট কার রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাড়ালো। রেস্টুরেন্টে যা লোকজন ছিলো সব আস্তে আস্তে বের হয়ে গেলো। তাদের কান্ড দেখে আমার খাবার গুলো গলায় নামছে না। থতমত খেয়ে রিদিতাকে জিজ্ঞেস করলাম-
--" প্রাইভেট কারে কে আসছে রে -
--" কে আবার আমার ভাইয়া এসেছে (হেসে)
--" এটা কিন্তু ঠিক না রিদিতা " তোর ভাই কেন এখা.... নে আসবে (তুতলি)
রিদিতা আমার ভয়াত্ত চেহারা দেখে বলে উঠলো " রেস্টুরেন্টে খেতে আসছে হইত । তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস কেন_?
--" ভয় পাবো না তো নাচবো। যদি একবার এখানে আসে তখন
--" আসবে মানে এসে পড়েছে ওই দেখ ভাইয়া এইদিকেই আসতেছে। হাই ভাইয়া (রিদিতা)
--" রিদিতা তুই খাওয়া দাওয়ার প্রতি বেখেয়ালিভাবে চলাফেলা করস কেন। সকালে এত করে বললাম breakfast করে যেতে। আমার কথা না শুনে এতক্ষনে রেস্টুরেন্টে এসে খাচ্ছিস (মুন্না)
--" ইয়ে মানে "ভাইয়া তুমি হঠাৎ এখানে (রিদিতা)
--"তোকে ফলো করেই এখানে আসছি। কখন থেকে লক্ষ্য করছি এই ছেলে শপিংমল থেকে রেস্টুরেন্টে পযন্ত তোর সাথেই আছে। কে এই ছেলে _?(রিদিতার সঙ্গে কথা বলার পর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে মুন্না বলল )
এই ছেলে তোর নাম কি- (মুন্না ভাই)
মুন্নার ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠ শুনে ভয়ে ভয়ে উত্তর দিবার আগেই মুন্না ভাই ধমক দিয়ে বলল__?
!
!
(চলবে)