কিন্ত তাকে এইটুকু বলেছিলাম যে আমি অতীতে একজনকে ভালোবাসতাম ; সে বলেছিলো কোনো ব্যাপার না,আপনি অতীতে একজন কে ভালোবেসেছেন বর্তমানে তো সে আর নেই। এখন সে আপনার অতীত, যা শুধুমাত্র অতীত হয়েই থাকবে। সেটা বর্তমানের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমার সঙ্গে যখন আপনার বিয়ে হয়েই গেছে তো সেসব অতীত টতীত বাদ দেন,আজ থেকে আপনি আমার স্বামী আর আমি আপনার স্ত্রী। সো এখন থেকে আমায় ভালোবাসার অভ্যাস করে ফেলুন বুঝেছেন!
- তারপর থেকে সে আর কখনো অতীতের বিষয়ে কথা বলেনি আমার সাথে।আর আমিও তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়,পুরোপুরি নয় অনেকটাই। কথায় বলে না প্রথম ভালোবাসা কখনো ভোলা যায়না ; কেনো ভোলা যায়না জানেন!প্রথম ভালোবাসা অনেক রঙিন হয় ভীষন স্বপ্ন আর ইচ্ছে নিয়ে ভালোবাসা টা তিলে তিলে বেড়ে উঠে আর যখন হুট করে ভালোবাসার মানুষ বদলে যায় তখন ভালোবাসার রোগ আরো বেশি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে,জানতে ইচ্ছে হয় কেনো সে এমন করছে কি হয়েছে তার!? এইসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করতে করতে সময় অতিবাহিত হয় আর বদলে যাওয়ার ক্ষত টা আরো গাঢ় হতে থাকে ,সেই ক্ষতটা হয়তো একটা সময় শুকিয়ে যাবে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন ক্ষতর জায়গায় ক্ষতর দাগ টা রয়েই গেছে। যেটা সারাজীবন ই থেকে যাবে কখনো মুছবে না,তাইতো প্রথম প্রেম ভুলে থাকা যায় না কিন্তু সেটাকে ধাবিয়ে রাখা যায়।
- যেটা আমি পেরেছি ,আমিও আমার প্রথম ভালোবাসার অনুভূতী টাকে ধাবিয়ে রেখেছি। স্ত্রীর ভালোবাসা এবং কাজের ব্যস্থতা তাকে নিয়ে ভাবার সুযোগ দেয়নি আমায়।আমি বেশ ভালোই ছিলাম এভাবে।
কিন্তু আজ বিকালে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে নিজ ঘরের মধ্যেই সবার প্রথমে প্রাক্তনকে দর্শন করি। দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো আমার। প্রাক্তন ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো যেনো সে ভুত দেখে ফেলেছে।
কিছু একটা বলবে বলবে এমন সময় আমার স্ত্রী আসে চায়ের কাপ হাতে - আমাকে দেখেই সে বলল;
- আরে তুমি এসে গেছ!যাক ভালোই হয়েছে, এসো পরিচয় করিয়ে দেই ও হচ্ছে আমার বান্ধবী নিরা।কলেজে আমরা এক সঙ্গেই পড়তাম।ও এত দিন ঢাকার বাইরে ছিলো, গতকাল ই ঢাকায় এসেছে তাই ভাবলাম বাসায় এনে আলাপ করিয়ে দেই।
- আমি কিছুটা না চেনার ভান ধরে নিরা কে হেলো বললাম
সে ও হাই বললো।
- কিন্তু সে এখনো শকে আছে। হয়তো সে এখনো ভাবছে আমি কি করে তার বান্ধবীর বর হলাম!
- আমি অহনাকে বললাম তোমরা কথা বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। (অহনা আমার স্ত্রীর নাম)
তারপর আমি সোজা নিজের রুমে চলে আসলাম। দরজা সামান্য ফাঁক করে ওদের দিকে উকি দিলাম,কান পেতে শোনার চেষ্টা করছিলাম কি কথা হচ্ছে। কিন্ত বসার যায়গা টা অনেকটা দূর হওয়ায় শুনতে পারিনি।
- তার কিছুক্ষণ পর অহনা আমার রুমে আসলো,কিছুটা মুখ ভার ছিলো।সে এসে বলল-
- এই শোনো নিরা চলে যাবে একটু পর।আমি ওর খাবারের ব্যবস্থা করছি,তুমি বরং ওর সাথে গিয়ে একটু কথা বলে নাও।একা একা বসে থাকলে ওর বোরিং লাগবে।
অহনা এটা বলেই হাসিমুখে চলে গেলো। আমি ভাবছি নিরা এখনো কেনো অহনাকে কিছু বলেনি!সেতো এমন মেয়ে না যে কথা চেপে রাখবে পেটের মধ্যে।
এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে নিরার সামনে গিয়ে বসলাম।মুখোমুখি দুজন এত দিন পর! ভালোবাসা না থাকলেও বন্ধুত্ব টা রয়েই গেছে। বন্ধুত্বের টানেই সে জিজ্ঞেস করলো ;
- কেমন আছো আলোক?
- হমম ভালো,তুমি কেমন আছো?
- ভালোই!
আমি কিছুটা হাসলাম! সে ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
- হাসলে যে?
- দেখো নিরা কেউ যখন স্বাভাবিক ভাবে বলে ভালো আছি তখন সে আসলেই অনেকটা ভালো থাকে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যারা বলে ভালোই আছি তারা আসলে পুরোপুরি ভালো থাকে না। তারা ভেতরে ভেতরে একটা কষ্ট চেপে রাখে,সেটা কাউকে বলতে পারে না বলেই তারা ভালো শব্দটার সঙ্গে একটা - ই যুক্ত করে দেয়,এটা মুলত তাদের দীর্ঘশ্বাস। যাইহোক তুমি কেমন আছো সেটা তোমার ব্যাক্তিগত বিষয়,সে ব্যাপারে না বলাই ভালো।
আমার একটা কথা জানার ছিলো শুধু ?
- হমমম বলো?
- দেখো তুমি জানো কিনা জানি না, তুমি যে অহনার ফ্রেন্ড সেটা আমার জানা ছিলো না । তুমি চলে যাওয়ার পর অহনার সঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে,ধীরে ধীরে সেটা ভালোবাসায় রুপ নেয়। তোমাকে যেরকম হারানোর ভয় ছিলো সব সময় সেরকম অহনার প্রতি ও ছিলো,তাই তাকে হারিয়ে ফেলার আগে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছি । আমি শুধু এটা জানতে চাইছি যে তুমি চাইলেই সব টা বলে দিতে পারতে অহনাকে - তবে বলোনি কেনো?
- বললে কি হবে, তোমায় কি ফিরে পাওয়া যাবে নাকি আমার কোনো ফায়দা হবে এতে?
- না আসলে তা বলতে চায়নি!
- তুমি কি বলতে চেয়েছো সেটা আমি বুজতে পেরেছি।শোনো, অহনাকে আমি খুব ভালো করে চিনি।এখন যদি আমি তাকে আমাদের অতীতের ব্যাপারে সব টা বলে দেই
তাহলে সে মনে কষ্ট পাবে - যেটা তুমিও জানো ও খুব সরল মনের মেয়ে। তাই আমি চাইনা বন্ধু হয়ে নিজের বন্ধু কে কষ্ট দিতে।এর থেকে ভালো আমাদের ব্যাপার টা ওর অজানাই থাক। কিন্তু তুমি চাইলে সব টা খুলে বলতো পারো সেটা তোমার ইচ্ছে, তবে আমি অন্তত তাকে আমাদের পুরোনো দিনের কথা বলতে পারবো না।
আমি চাইনা তোমাদের মাঝে কোন ভুল বোঝা বুঝি সৃষ্টি হোক।তুমি তাকে ভালো রেখেছো, সুখে রেখছো এতেই আমি খুশি।আশা করি সব সময় ওকে এভাবেই হাসি খুশি রাখবে।
- নিরা কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ চুপ রইলো আমিও আর কিছু বললাম না। অহনা খাবার নিয়ে আসার পর নিরা খাবার খেয়ে চলে গেলো।অহনা নিরাকে হাসিমুখে বিদায় দিলো।
রাত্রী তখন ১২ টা পাশে অহনা ঘুমাচ্ছে আমি বিছানা ছেড়ে উঠে স্টাডি টেবিলে বসলাম ড্রিম লাইট টা জালিয়ে বসে ভাবছিলাম,
- জীবন টা কতই অদ্ভুত কেউ নিজে ভালো থাকার জন্য ছেড়ে যায়,আর কেউ অন্য কে ভালো রাখার জন্য পাশে এসে দাড়ায়। একে অন্যকে হাজার টা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধীরে ধীরে সেটাকে ভুলে যাওয়ার নাম ই হলো অবহেলা।
- এমন অবহেলার শিকার হওয়া মানুষগুলোর মন ই জানে কতটা মারাত্মক যন্ত্রণা হয় মনে। কেউ কেউ এই অবহেলাকে সহ্য করতে না পেরে জীবন অব্দি দিয়ে দেয়।
আর কেউ কেউ শিখিয়ে দেয় কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায়না। রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে একটা কথা আছে যেটা বাস্তব এবং সত্যি - আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হয়।
রাত অনেক হলো ভাবতে ভাবতে। লাইট অফ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও একটু হাসলাম, অহনার পাশে ঘুমের দেশে পারি জমালাম।
অন্ধকার কেটে গেলে আলোর দেখা মিলে
তেমন দুঃখ কেটে গেলে সুখের দেখা।তোমাকে শুধু সুখ নামের পাখিটার অপেক্ষা করতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না। শুধু এইটুকু মনে রাখবে ভালো তোমায় থাকতে হবে।তুমি না ভালো থাকলে তারা কখনোই আফসোস করবে না,যারা জীবনে এসে স্বপ্ন দেখিয়ে ছেড়ে যায়।
#সমাপ্ত
#ছোটগল্প
#অপেক্ষার_সুখ
#আলোক_আহমেদ
#ফ্যানপোস্ট
#লিখালিখি
Posted by- #lipi_sarker