গল্পঃ ভালোবাসার ২য় অধ্যায় ছোটগল্প

 

- আপনি ছ্যাকা খেয়েছেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না পিল্জ এই বিয়েতে আপনি মত দিয়েন না !

পাত্রী দেখতে এসে যখন হবু স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনলাম ! তখন  এক অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
এছাড়া কিছুই করার ছিলোনা আমার ! কি বলবো তাও বুজতে পারছিলাম না । সে কি করে জানলো আমার প্রেম সম্পর্কে !
মনের মধ্যে প্রশ্নটা বার বার খোচা মারতে লাগলো ! তাই নিজেকে শক্ত করে জিজ্ঞেস করলামঃ

- আপনি কি করে জানলেন আমি ছ্যাকা খেয়েছি ! 

প্রশ্ন টা মনে হয় তার কাছে কোনো জোক মনে হয়েছিলো ! কথাটা শোনা মাত্রই মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করলো ।

- হাসছেন যে ! 
- বাহ্ রে হাসি পেলে হাসবো না তো কি করবো 
আপনি প্রশ্নই করেছেন হাস্যকর !
- হাস্যকর মানে ! কোনটা হাস্যকর !আমি তো 
আপনার কাছে জানতে চাইলাম কিভাবে জানলেন যে আমি ছ্যাকা খাইছি!

- আপনি যার সাথে একটি বছর রিলেশনে ছিলেন সে ছিলো আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড !
সে আমাকে আপনার কথা শুরু থেকেই বলতো ! আপনি কখন কি কথা বলতেন ? ফান করতেন আরো বিভিন্ন ধরনের লুতুপুতু ম্যাসেজ করতেন সেগুলো কম বেশিই সে আমাকে বলতো !

তার কথা শুনে কিছুটা পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো ! সত্যি বলেছে এমন টাই হয়েছিলো আমার জিবনে ! একজন কে খুব বেশিই ভালোবাসতাম ! তাকে হাসাতে না পারলেও কখনো  কাদাতাম না ! তার হাসির কারন হওয়ার চেষ্টা করতাম সব সময় ! আজ সে নেই ! অথচ আমার চারপাশ জুড়ে তার স্মৃর্তির বাহার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ! 

- ও হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলেন ?

মেয়েটির গলার আওয়াজ শুনে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বাস্তবে ফিরে এলাম ! মন টাকে শক্ত করে বললাম !
- আচ্ছা তাহলে আসি কেমন ভালো থাকবেন !
(খানিকটা মুচকি হেসে)
- পালিয়ে যাচ্ছেন ? 
- পালাবো কেনো আমি তো কোনো অন্যায় করিনি বা আমি কোনো চোর ডাকাত ও নই !
- একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি !
- দুজনকে আলাদা রুমে পাঠানো হয়েছে কথা 
বলার জন্যই আপনি যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে 
পারেন পরে নাহয় আমি ও কিছুই জিজ্ঞেস করে নিবো !

- ছ্যাকা দিলো কেনো !
- প্রশ্নটা একটু অন্যভাবে করলে খুশি হতাম 
প্রায়ই সময় দেখেছি দুটি ভালোবাসার মানুষের মাঝে যদি বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে তৃতীয় কেউ‌ সেই মানুষটিকে নিয়ে উপহাস করে ! ছ্যাকাখোর ! ছ্যাকা খেয়েছে ? এইসব বলে হাসি ঠাট্টা করে ! এতে একটি মানুষ মনে কষ্ট পেতে পারে । সেই কষ্ট টা এমন ই  হয় যে হাসি মুখে তা সহ্য করতে হয় ! 

আসলে এই ছ্যাকা জিনিস টা মানুষ কেনো 
বলে আমি আজোও বুজিনা ! ভালোবাসার সম্পর্কে যদি কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা চলে যায় তখন তাকে বিশ্বাসঘাতক বলতেও 
বিবেক এ বাধে ! অথচ তৃতীয় একজন এসে বা কেউ না কেউ জানতে পারলে ছ্যাকাখোর বলে তামাশা করে !  আসলে এটা আমাদের বর্তমান জেনারেশনের  দোষ ! বর্তমান সমাজে প্রায়ই বেশির ভাগ মানুষ ই সব কিছু কেই ফান ভাবে ! তারা সব সময় লাইফটা ইনজয় করতে চায় ! কিন্ত তারা এটা দেখতে পায়না যে তারা ইনজয় করতে গিয়ে কারো মনে আঘাত করছে আর সেই ব্যক্তিটা তা মুখে বুজে সহ্য করছে ।  
- এখন আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন  সে আমাকে ছ্যাকা দিলো কেনো ? 
আসলে সে আমাকে ছ্যাকা দেয়নি ! সে আমাকে ফেলে চলেও যায়নি ! সে নতুন একটা ঠিকানা খুজে পেয়েছে ! পুরোনো আমিটাকে এখন আর তার ভালো লাগে না ! সে নতুন কারো সাথে ভালো থাকতে চায় তাই তাকে মুক্ত করে দিয়েছি সেদিন! কারন তার ভালোবাসা টা  সত্যি হলে আমিটা কখনো পুরোনো হতাম না ।
সে আমাকে  ছ্যাকা দেয়নি আমি তাকে মুক্তি দিয়েছি ! তার ভালো থাকার মাঝেই আমার ভালোবাসা । 

মেয়েটা কিছুটা মায়ামাখা হাসি দিয়ে বলল

- সে তো এখন আপনাকে ছেড়ে ভালোই আছে 
কিন্ত যে আপনার জিবনে আসতে চলেছে তাকে কি নতুন করে ভালোবাসতে পারবেন ?
পারবেন কি নিতে তার ভালো থাকার দায়িত্ব ! হতে পারবেন কি তার হাসি মুখের কারন ! ঠিক যেভাবে অতীতের হাসি মুখের কারন হতেন ! বলুন ?

- যদি সে বিশ্বাস রাখে তাহলে মৃত্যু অব্দি তার 
হাসি মুখের কারন হওয়ার চেষ্টা করবো ।

মেয়েটি আমার হাত ধরে বললঃ
- চলুন ?
- কোথায় !
- নিচে সবাই অপেক্ষা করছে ?
- হমমম 

সিড়ি বেয়ে দুজনে একসাথে নিচে নামলাম
হুট করে মেয়েটা তার  আব্বু কে বলল
- আব্বু ! আমি  রাজি !

কথা টা শুনেই  উপস্থিত সবাই একসাথে 
আলহামদুলিল্লাহ্  বলে মিষ্টি মুখ করতে লাগলো ! আর আমি ও তার দিকে তাকিয়ে 
মুচকি হাসি দিলাম - সে ও ঠিক তাই করলো 
শুরু হতে চলেছে আরেকটা ভালোবাসার নতুন অধ্যায় ।

#সমাপ্ত 
#ভালোবাসার_২য়_অধ্যায়
#আলোক_আহমেদ

ফ্যানপোষ্ট : লিখালিখি
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post