গল্পঃ ডেঞ্জারাস মামাতো বোন পর্ব ৪১ | Dangerous Mamato Bon Part 41

 

#ডেঞ্জারাস_মামাতো_বোন
(৪১তম পার্ট)
Writer:- SA Shaheen Alam
.
.
-- তুমি এক্ষুণি আমাদের বাড়িতে এসো। কোনো কারণ জানতে চাইবে না। আসতে বলেছি আসো। (আঙ্কেল)
.
বাজখাঁই গলায় কথাটা বলে তরীর বাবা ফোন রেখে দিলেন। ভাবলাম তরীদের বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে। আমি সাতপাঁচ না ভেবে তরীদের বাড়িতে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি অনেক অবাক হলাম। এটা বিয়ে বাড়ি নাকি অন্যকিছু.? এটাকে বিয়ে বাড়ি না বলে মরা বাড়ি বললে বেশি ভালো হবে। বিয়ের কোনো আলামত-ই নেই তরীদের বাড়িতে। মনে হচ্ছে আমি কারো শোক দিবসে এসেছি। সবকিছু একদম নীরব হয়ে আছে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে তেমন কোনো মানুষজন ও নেই।
.
তরী হচ্ছে পরিবারের একমাত্র মেয়ে। অথচ তার বিয়েতে কোনো আয়োজন-ই নেই। আমি তারচেয়েও বেশি অবাক হলাম যখন দেখি ডেকোরেশনের লোকজন সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তরীদের পুরো বাড়ি ফুল ও ঝলমলে বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিলো। কিন্তু এখন সেসব খুলে নেওয়া হচ্ছে।
তরীর আত্মীয়-স্বজনরা সব একে একে চলে যাচ্ছে। আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে সবাই। আমি চেনা-পরিচিত কয়েকজনকে ডাক দেওয়ার পরও কেউ শুনলো না। বুঝতে পারছি না হটাৎ করে সবার কি হলো।
.
আমি এসব দেখতে দেখতে তরীদের বাড়িতে ঢুকলাম। ড্রইংরুমে আসতেই দেখলাম তরীর বাবা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেন। তার ঠিক পাশে তরীর মামা, চাচাসহ আরো কিছু মুরুব্বিগণ বসে আছেন। আমি তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। কিন্তু কেউ সালামের জবাব দিলো না। আমি এবার বেশ অবাক হলাম। হচ্ছেটা কি এখানে.? কেউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আমি কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে তরীর বাবাকে বললাম,
.
-- আমাকে কেন ডেকেছেন আঙ্কেল.? কোন সমস্যা
হয়েছে কি.? (আমি)
.
-- সমস্যা তো তুমি নিজেই সৃষ্টি করেছো। (আঙ্কেল)
.
কথাটা বলে আঙ্কেল উঠে দাঁড়ালেন। তবে আমি উনার কথার কিছুই বুঝলাম না। আমি আবার কি সমস্যা সৃষ্টি করলাম.?
আমি মনে মনে এসব বিরবির করে আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। তিনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছেন তিনি। কেমন যেন রসকষহীন গম্ভীর চেহেরা।
.
আমি উনাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি ঠাস করে আমাকে চড় মারলেন। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। সত্যি বলতে এমন কিছু ঘটবে সেটা আমি কল্পনাও করিনি। একটু পর আমি উনার জামাই হবো; আর তিনি আমাকেই চড় মারলেন। এত্ত বড় সাহস.! প্রচন্ড রাগ উঠলো আমার। লজ্জাও লাগছে খুব। এতজন মুরুব্বির সামনে চড় মেরে মোটেও ঠিক কাজ করেনি তরীর বাবা। সবাই কেমন যেন ট্যারা চোখে দেখছে আমাকে।
.
তাছাড়া তরীর বাবা আমাকে মারবে কেন.? কি দোষ করেছি আমি.? উনাকে এত সম্মান করার পরও উনি ডেকে এনে আমাকে অপমান করলেন। আমি গোমড়ামুখ করে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছি আজ উনাকে কয়েকটা উত্তম-মাধ্যম কথা বলেই ছাড়বো। আমার গা'য়ে হাত তোলার সাহস হয় কি করে.! যেখানে আমার বাবা পর্যন্ত কোনোদিন আমার সাথে কড়া গলায় কথা বলেনি, সেখানে তরীর বাবা আমাকে চড় মারলেন। আমি রাগে উদ্ধত হয়ে শার্টের হাতা গুছাতে গুছাতে বললাম,
.
-- আমাকে চড় মারলেন কেন.? কোন সাহসে
আপনি আমার গা'য়ে হাত তুললেন.? (আমি)
.
-- কপাল ভালো তোমাকে শুধু চড় মেরেছি। আমার তো ইচ্ছা করছে তোমাকে জানে মেরে ফেলি। (আঙ্কেল)
.
কথাটা বলে তরীর বাবা আবার আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসলেন। পাশে থাকা তরীর চাচা ও কয়েকজন তাকে আটকালেন। তরীর বাবা একদম ক্ষীপ্ত হয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না তরীর বাবা হুট করে আমার উপর এত রেগে আছে কেন.? কোনো কারণ তো নিশ্চয় আছে। কিন্তু কি সেটা.?
.
আমি এসব ভাবার এক পর্যায়ে দেখি তরীর বাবা নিজেকে ছাড়িয়ে আবার আমাকে মারতে চাইছেন। ঠিক তখনি তরী কোথা থেকে দৌড়ে এসে তাকে থামালো। চিৎকার করে বললো,
.
-- বাবা, শাহিনকে মারছো কেন.? ওর কি দোষ.? (তরী)
.
-- ওর দোষ নয় তো কার দোষ.? সব দোষ এই শয়তানটার.! ওর জন্যই তোর বিয়েটা ভেঙে গেল। সব মান-সম্মান শেষ হয়ে গেল আমার। (রেগে আগুন হয়ে)
.
-- বাবা, তুমি শান্ত হও। শুধু শুধু উত্তেজিত হইও না। (তরী)
.
-- উত্তেজিত কি সাধে হচ্ছি.? কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম তোর বিয়ে নিয়ে। কিন্তু এর জন্য সব নষ্ট হয়ে গেল। (আঙ্কেল)
.
কথাটা বলে তরীর বাবা আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর প্রচন্ড রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
.
-- তুমি যদি রিমিকেই ভালোবাসতে তাহলে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেন.? তখন বলতে পারোনি.? তাছাড়া তুমি যে এতটা খারাপ আমার জানা ছিলো না। আগে জানলে কখনোই তোমার মত ছেলের সাথে তরীর বিয়ে ঠিক করতাম না। (আঙ্কেল)
.
-- আঙ্কেল, আপনি এসব কি বলে যাচ্ছেন.? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। (আমি)
.
-- বুঝতে পারছো না.? তুমি বুঝতে পারছো না.? নাটক করো আমার সাথে.? এতসব কান্ড করে এখন সাধু সাজা হচ্ছে.? চড়িয়ে তোমার দাঁত ফেলে দিবো। বেআদব ছেলে একটা.! (আঙ্কেল)
.
তরীর বাবা আবার আমাকে মারার' জন্য হাত উঠালো। তরী সাথে সাথে ওর বাবার হাত চেপে ধরলো। তারপর ওর বাবার চোখে চোখ রেখে করুণ সুরে বললো,
.
-- প্লিজ বাবা ওকে কিছু বলো না। আমি ওকে খুব ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি ওকে কষ্ট দাও। (তরী)
.
-- তুই এখনো শাহিনকে ভালোবাসিস.? এতকিছুর পরও কিভাবে ওকে ভালোবাসতি পারিস তুই.? আরে শাহিন তোকে ধোকা দিয়েছে। (আঙ্কেল)
.
-- সে যা-ই করুক বাবা, তবুও আমি তাকে ভালোবাসি। আর শাহিন মোটেও আমাকে ধোকা দেয়নি। (তরী)
.
-- ধোকা নয়তো কি.? তোর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও সে রিমির সাথে ফস্টিনষ্টি করেছে। না জানি আগে আরো কত কিছু করেছে। (আঙ্কেল)
.
-- বাবা, মুখ সামলে কথা বলো। আর একটাও বাজে কথা বলবে না শাহিনকে নিয়ে। অনেক্ষণ ধরে তুমি শাহিনকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছো। বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় ভেঙেছি। এখানে শাহিনের কোনো দোষ নেই। (তরী)
.
তরী অনেক রেগে কথাগুলো বললো। তরীর বাবা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে মাটির দিকে চেয়ে রইলেন। তরীও আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে এলো। আমি ক্যাবলাকান্তের মত চুপচাপ তরীর সাথে এলাম। মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তরী কি কারণে বিয়েটা ভেঙেছে সেটা আমাকে জানতেই হবে। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- তুমি বিয়েটা কেন ভেঙেছো তরী.? আর আঙ্কেল রিমি ও আমার নামে এসব বললো কেন.? (আমি)
.
-- যা সত্যি তাই তো বলেছে। (তরী)
.
-- মানে.? (আমি)
.
-- তুমি এখনো কিছুই বুঝতে পারছো না.? (তরী)
.
-- না বললে বুঝবো কিভাবে.? এখানে আসা থেকে দেখছি তোমরা সবাই আমাকে দোষারোপ করছো। কিন্তু কারণটা কি সেটা জানি না। দয়া করো বলো এখানে আসলে কি হয়েছে.? (আমি)
.
তরী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর ওর হাতে থাকা ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
.
-- এখানে একটা ভিডিও ক্লিপ আছে। সেটা দেখো, সব বুঝতে পারবে। (তরী)
.
আমি তরীর কথামতো ফোনটা নিয়ে ভিডিও প্লে করলাম। কিন্তু আমি যে পৃথিবীর সবচাইতে বড় সারপ্রাইজ'টা পাবো সেটা কল্পনাও করিনি। বিষ্ময়ে আমার গা'য়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। ভিডিও'তে রিমি আর আমি অন্তরঙ্গ অবস্থায় রয়েছি।
.
চলবে....... ??????
.
#প্রেম_বিশেষজ্ঞ
.
(জানি গল্পটা দিতে অনেক দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু তারপরও আপনারা গল্পটা নিয়ে কিছু বলে যাইয়েন। এটলিস্ট খারাপ কিছু হলেও বলে যাবেন।
আর হ্যা, যারা আমার গল্প ও আমাকে পছন্দ করেন না তারা আমাকে এড়িয়ে যাইয়েন।
গল্পটা এবং আজকের পার্ট কেমন হয়েছে কমেন্ট করে জানান। আর হ্যা, পরের পার্ট অনেক জমজমাট হবে। সবাই ওয়েট করেন।)
ধন্যবাদ সবাইকে.!
হ্যাপি রিডিং... ♥♥♥
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post