গল্প : বড়লোকের মেয়ের সাথে প্রেম পর্ব ১২


গল্প:#বড়লোকের_মেয়ের_সাথে_প্রেম
পর্ব : ১২
লেখক:#মুহাম্মদ_আজিজুল

হাসপাতালে এসে দেখি আব্বু আর আম্মু বসে আছে।
আমি:মা কি হয়েছে?
আম্মু:লাবন্যর অবস্থা খুব খারাপ। ও এখন I C U তে আছে।

আমি মায়ের মুখের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
ওর যদি কিছু হয়ে যায় নানান চিন্তা। না কিছু হতে যাবে কেন? আল্লাহ তুমি ওর বিপদ দিও না।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হলো। আমি দৌড়ে ডাক্তরকে বললাম " লাবন্য কেমন আছে তাড়াতাড়ি বলেন?
ডাক্তার চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি:কি হলো বলছেন না কেন?
ডাক্তার:হাহাহাহাহাহা।
আমি ডাক্তারের হাসি দেখে একটু অবাক হলাম। তার পরেও বলছি প্লিজ বলেন না।
ডাক্তার:আরে বোকা তোমার ঘরে একটা কিউট মেয়ে এসেছে।
আমি:আর লাবন্য?
ডাক্তার:লাবন্য আপাতত ভালো আছে। প্লিজ আপনি একটু আমার চেম্বারে আসুন।(যেতে যেতে)

আমি লাবন্য এবং আমার মেয়েকে না দেখেই চলে আসলাম ডাক্তারের চেম্বারে।
আমি:ডাক্তার দয়াকরে বলেন লাবন্যর কি কোনো বিপদ আছে?
ডাক্তার:আচ্ছা তুমি এমন ভাবে ভেঙ্গে পড়ছো কেন। একটু শক্ত হও।
আমি:শক্তই আছি আপনি বলেন।
ডাক্তার:তোমার স্ত্রী এখন সম্পূন্য সুস্থ। কিন্তু সে বেশি দিন এই পৃথিবীতে থাকতে পারবে না।

ডাক্তারের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।বুঝতে পারছি না ডাক্তার কে কি বলবো।

ডাক্তার : এটা কি রোগ পৃথিবীর কেউ বলতে পারেনি। কিন্তু এটা যার মধ্যে দেখাযায় সে আর বেশিদিন বেঁচে থাকে না।

আমি:এই ডাক্তার তুই চুপ কর। তুই মিথ্যা বলছিস।বল আমার লাবন্যর কিছুই হয়নি বল বল।
ডাক্তার:দেখো বাবা তোমাকে আমি সন্তান ভেবে বললাম যেন তুমি সহ্য করতে পারো কিন্তু তুমি ভেঙ্গে পড়ছো ।
আমি:আমি যে ওকে অনেক ভালো বাসি অনেক।(চিৎকার করে)

ডাক্তার:আচ্ছা দেখো কি হয় । আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে।।

:আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে যাওয়াটা কি ভালো? ও যদি আমাকে রেখে চলে যায় আমি কেমন করে বাঁচবো?

ডাক্তার:দেখো সবাই যে মারা যায় সেটা কিন্তু না। অনেকে বেঁচেও যায়।

আমি:আমার এই ধরনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।আর আমার লাবন্যকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন(শান্ত গলায়)

ডাক্তার:দেখো এটা থেকে একমাত্র আল্লাহ মুক্তি দিতে পারে।
আমি:আমি কি লাবন্যকে নিয়ে যেতে পারি?
ডাক্তার:জি পারো সে এখন পুরো সুস্থ।কিন্তু সে কোনো রকম চিন্তা বা কোনো রকম মানসিক আঘাত যেনো না পায়। সেদিকে খেয়ার রাখবা কারণ এতে কিন্তু অনেক সমস্য হবে।
আমি:হুম।

আমি I C U রুমে গিয়ে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে দেখি লাবন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার শব্দ পেয়ে লাবন্য বলল" তুমিই জিতে গেলা তাই না।

আমি চুপচাপ লাবন্যর হাত ধরে বললাম কেমন লাগছে এখন? 
লাবন্য:ভালোই তো.। কেন ডাক্তার কি কিছু বলেছে?
আমি:ধুর ডাক্তার কি বলবে ।
লাবন্য:তাহলে তুমি এমন বাংলা পাঁচের মতো মুখ বানিয়ে বসে আছো কেন?না কি মেয়ে হয়েছে বলে এমন করছো।
আমি:দেখো তুমি এখন এসব কথা বলবে না। আজ আমার মনটা অনেক খারাপ।
লাবন্য:যাও তাহলে। আমি একাই থাকতে পারবো এখানে।
আমি:কেন এমন বলছো তুমি?
লাবন্য:কেন বলবো না। তুমি কখন এসেছো এখনো আমার মেয়েকে দেখলানা।
আমি:তোমার মেয়ে মানে! ও কি আমার মেয়ে না?
লাবন্য:আচ্ছা ও আমারও মেয়ে তোমারও মেয়ে এবার তো একবার মেয়েটাকে দেখো।

আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছোট খাটো একটা শক খেলাম।কারণ মেয়ের চেহারা লাবন্যর চেহারার কপি।
লাবন্য:কি বলছো তুমি।
আমি:আরে একে তো দেখতে একদম তোমার মতোই।
লাবন্য:আমার মেয়েতো আমার মতোই হবে তাইনা।
আমি:হুম তাই।
লাবন্য:আমি কিন্তু এখন কান্না করবো।
আমি:কেন কান্না করবা?
লাবন্য:তুমি মন খারাপ করে আছো তাই।
আমি:আচ্ছা এই দেখো আমি হাসছি।
লাবন্য:তোমার হাসি আজ এরকম কেন। যেমন মেঘ ছাড়া বৃষ্টি।

আরে এ আবার কেমন কথা হাসছি তো আমি।

আমি:চলো বাসায় নিয়ে যাই তোমাকে।
লাবন্য:তুমি আমার মেয়েটাকে এখোনো কিন্তু একটুও আদর করলে না।

ওর কথা শুনে বাবুটাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতরে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম। আর নানা ধরণের কথা বলতে লাগলাম।
লাবন্যর দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি আব্বুকে কল করে বলে দিলাম আব্বু আমি লাবন্যকে নিয়ে বাসায় আসছি।
আর লাবন্যর আব্বুকে বলেদাও যে নাতনি এবার সবাইকে সাইজ করে নিবে।
আব্বু:আমি তো আগেই বলে দিয়েছি তাকে।
আমি:ভালো করেছো।

আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে গাড়িতে উঠলাম।

বাসায় পৌছা লাবন্যকে শুইয়ে দিয়ে আমি বেরহলাম অফিসের দিকে। আমি না গেলে আবার আমার শ্বশুর এখন আসতে পারবে না।

আমি এসে বললাম " আব্বু আপনি এবার বাসায় যান।
শ্বশুর আব্বু:বাবা তোমার মনটা এমন কেন? ডাক্তার কি কিছু বলেছে যে লাবন্যর কোনো সমস্যা হবে?
আমি:না আব্বু কিছুই হয়নি । মেয়েকে ছেড়ে আসলাম তাই মনটা একটু খারাপ।
শ্বশুর আব্বু: তাই নাকি চলো তুমিও আমার সাথে যাবা।
আমি:না আমি গেলে অফিসের কি হবে। বরং আপনি যান আমি পরে আসবো।

সে চলে গেলো। আমি একা একা সব কিছু সামলাচ্ছি।

নাহ্ কিছুই ভালো লাগছেনা তাই ডাক্তারের কাছে কল করলাম।
আসসালামু আলাইকুম ডাক্তার সাহেব।
জি কি হয়েছে?
:না কিছুই হয়নি। কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে। যদি লাবন্যর সত্যিই কিছু হয়ে যায়।
:দেখো এটা আল্লাহই ভালো জানেন। যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে কিছুই হবে না।
:ওকে এবার রাখি।

 সন্ধ্যার সময় বাসায় এসে দেখি বাসার সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে। আমিও ওদের সাথে অনেক আনন্দিত।
রাতে আমরা শুয়ে আছি। এমন সময় লাবন্য বলে উঠলো তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
আমি:আরে নাহ কি যা তা বলছো।
লাবন্য:না মানে সেই কখন থেকে দেখছি মন খারাপ তোমার।
আমি:ওকে থাকো তুমি, আমি নামাজ পড়ে আসি।
লাবন্য:হুম যাও।

আমি নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে অনেক কান্নাকাটি করলাম আর বললাম "আল্লাহ তুমি আমার হায়াত লাবন্যকে দিয়ে হলেও বাঁচিয়ে রেখো।
নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম।
লাবন্য:নামাজ পড়েছো?
আমি:তো কি। আমি কি বলে গিয়েছি(একটু মুুচকি হেসে)
লাবন্য:হঠাৎ মুখে হাসি কেন?
আমি:লেও ঠ্যালা হাসলেও দোষ আবার না হাসলোও দোষ।
লাবন্য:আচ্ছা সরি। যাও এবার খেয়ে আসো।
আমি:তুমি খেয়েছো কি?
লাবন্য:খেয়েছি মা খাবার এনে খাইয়ে দিয়েছে।
আমি:তাহলে আমি খেয়ে আসি।

তার পর খেয়ে এসে শুয়ে পড়লাম।
লাবন্য:তুমি ওভাবে থাকলে কিন্তু আমি ঘুমাতে পারবো না।
আমি:আগে তুমি মেয়েকে তো ঘুম পাড়াও।
লাবন্য:ও তো ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি:ওকে আসো এবার তোমাকে ঘুমপাড়াই।
লাবন্য:আমি ছোট নাকি যে আমাকে ঘুম পাড়াবা। শুধু আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমাবা।
আমি:ওলে আমার পাগলিলে।

আমি লাবন্যকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।
ফজরের নামাজের আগে লাবন্য আমাকে ডেকে উঠিয়ে দিলো নামাজ পড়ারা জন্য।
আমি নামাজে চলে গেলাম।

নামাজ পরে বাসায় আসতেই লাবন্যর আব্বু আমাকে বলল " বাবা আজিজ একটু আমার রুমে আসো।
আমি চলে আসলাম তার রুমে।

স্বশুর আব্বু:দেখো আল্লহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।
আমি:আব্বু আপনি এরকম কথা বলছেন কেন?
স্বশুর:দেখো বাবা আমি অনেক লক্ষ করেছি তোমাদের মেয়ে দুনিয়াতে আসার সাথে সাথে তোমার মনটা কেমন যেন খারাপ। প্লিজ বাবা আমাকে সব বলতে পারো।

তার কথা শুনে আমার চোখ থেকে অঝরে পানি পড়তে লাগলো।

স্বশুর:বাবা দেখো আমি জানি লাবন্যর কি হয়েছে। আজ লাবন্যর যা হয়েছে একি রোগ ওর আম্মু হয়েছিল।কিন্তু আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি।

কথাগুলো শুনে আমি আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম।মনে হচ্ছে কেউ আমার বুকে হাজার কেজি ওজনের কিছু একটা চেপে দিয়েছে।

আমি:আব্বু আমি মানি না এসব আমার লাবন্যর কিছুই হবে না।
স্বশুর:কিন্তু সব তো আল্লাহর ইচ্ছে তাই না।
আমি:সব আল্লাজর ইচ্ছা। কিন্তু আপনি লাবন্যকে কিছুই বলবেন না।ও এসব শুনতে পেলে মনে কষ্ট পাবে।অনেক কান্না করবে তা আমি সহ্য করতে পারবো না।

স্বশুর:কিন্তু ওতো তোমার আগেই জানে এসব।
আমি:কি?
স্বশুর:হ্যাঁ বাবা।

আমি এক দৌড়ে লাবন্যর কাছে চলে আসলাম। দেখি লাবন্য মেয়েকে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
আমি কিছু না বলে দুই নয়ন ভরে শুধু লাবন্যকে দেখে যাচ্ছি। কখন যে চোখের কোনে পানি এসে গেছে বুঝতে পারিনি।
এমন সময় লাবন্য বলে উঠলো তোমার চোখের পানি মুছে ফেলো। তার পর আমার সামনে আসো। আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারবো না।

আমি:তুমি আমাকে দেখলে কেমন করে।
লাবন্য:আগে তোমার চোখের পানি মোছো।
আমি:হুম এবার বলো(পানি মুছতে মুছতে)
লাবন্য:তোমার গায়ের গন্ধে আমি তোমাকে চিনতে পারি।আর তোমার চোখে কেন পানি আমি সে কারন টা জানি।

আমি:দেখো লাবন্য আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
লাবন্য:আমি তোমাদের সাথেই থাকবো।
আর আমার মেয়েকে তো রেখে যাচ্ছি। ও তোমাকে আমার চেয়ে বেশি দেখে শুনে রাখবে।(কান্না করতে করতে)
লাবন্যকে বললাম "দেখো এখন কান্না করার সময় না।
লাবন্য:জানো এখন আমার মন কি চাচ্ছে?
আমি:কি?
লাবন্য:মন চাইছে তোমার পিছনে নামাজ আদায় করে আমার শেষ নিস্বাস ত্যাগ করি। কিন্তু আমি এ অবস্থায় কেমন করে নামাজ পাড়বো। তাহলে কি আমার আশা পূরণ হবে না?

আমি:সব হবে তুমি শান্ত হও পাগলি একটা আমরা। আর দেখো তুমি তো এখন সম্পূন্য শুস্থ তাই না।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিনটা মাস।
 আমাদের সংসারটা বেশ ভালোই কাটছে এখন।
লাবন্যর সেই অসুকের কথা ভুলেই গেছি।আর হ্যাঁ আমাদের মেয়ের নাম হলো জান্নাত।
আমি একদিন অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি..........চলবে? 

গল্প:#বড়লোকের_মেয়ের_সাথে_প্রেম
পর্ব : ১২ 
লেখক:#মুহাম্মদ_আজিজুল
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post