বাসর রাতে অহংকারী বউয়ের পতন **** পার্ট --- ৮

 ***বাসর রাতে অহংকারী বউয়ের পতন ****
পার্ট --- ৮
লেখক --- মাহমুদ 
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&

গত এক ঘন্টা যাবত ময়দা মাখার চেষ্টা করছে নীলা। নীলার সারা মুখে হাতে গলায় ময়দার ছড়াছড়ি। আবির পাশেই চুপ করে বসে থেকে মুখ টিপে হাসছে। এক কিলো ময়দার মাঝে এক জগ পানি ঢেলে দিয়ে ময়দাটাকে সাদা পানি বানিয়ে ফেলেছে নীলা। এখন কি করবে সেটা বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নীলা। হঠাৎ কানে কারো হাসির শব্দ যেতেই আবিরের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো নীলা। নীলা তাকাতেই আবির আর নিজের হাসি টাকে আটকে রাখতে পারলো না। হাসতে হাসতে উঠোনে চলে গেলো আবির।

আবিরঃ ওহ নীলা তোমায় কি সুইট লাগছে দেখতে, একদম তেতুল গাছের পেত্নীর মতোন। তোমাকে দেখে তো আমার হাসি থামছেই না। 

নীলাঃ কিইইইই, তুমি আমায় কি বললে আবির? আমি তেতুল গাছের পেত্নী? আমি তেতুল গাছের পেত্নী হলে তুমি গাবগাছের ভ্রম্মদৈত্য।

আবিরঃ তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে কে কি। নিজেকে একবার আয়নায় দেখে আসো তাহলেই বুঝবে।

আবিরের কথা শুনে রাগে ফোস ফোস করতে করতে রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো নীলা। নিজেকে দেখে যেনো নিজেই চিনতে পারছে না ও। একদম সাদা পেত্নীর মতোই লাগছে ওকে ময়দার কারনে।

রাগে আগুন হয়ে শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুজে বাইরে এলো নীলা। আবির এখনো হেসে চলেছে আগের মতো করেই। নীলা এসে কোনো কথা না বলে ময়দা গুলে রাখা বাসনটা নিয়ে ডায়রেক্ট ছুড়ে মারলো আবিরের ওপর। আবিরের ময়দা মাখা পানি দিয়ে মাখামাখি হয়ে গেলো সারা শরীর।

সাথে করে আবিরের হাসিটাও থেমে গেলো। কিন্তু নীলা আবিরের অবস্থা দেখে এবার হাসিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। হাসি যেনো থামছেই না নীলার। হাসতে হাসতে আবিরের সামনে এসে দাড়ালো নীলা।

নীলাঃ হাসো হাসো এখন হাসো, আমাকে তেতুল গাছের পেত্নী বলে ছিলে না এখন নিজেকে দেখো কেমন লাগছে। হিহিহি

নীলার কথা শুনে আর হাসি দেখে আবির এক ঝটকায় নীলাকে নিজের বুকে নিয়ে নিলো। আবিরের শরীরের ময়দা মাখা নীলার শরীরের সাথেও লেগে গেলো। সাথে করে নীলার হাসিও থেমে গেলো।

আবিরঃ কি হলো সুইটহার্ট হাসি থামালে কেনো? হাসো বেশি করে হাসো। তোমাকে দিয়ে যেহুতু কোনো কাজ হবেই না, তুমি একটা অপকর্মার ঢেকি তখন তোমার কাছ থেকে খাবার পাওয়ার আসা করাটাই বৃথা। খুধায় ইচ্ছাতো করছে তোমাকেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।

নীলাঃ তুমি আমায় কি বললে আবির? আমি অকর্মার ঢেকি? আমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে তোমার? তো এতই যখন অপছন্দ করো আমায় তুমি, তাহলে আমায় এখানে জোর করে ধরে রেখেছো কেনো? মুক্তি দাও আমায় তোমাকে যাষ্ট আমার অসহ্য লাগে আবির অসহ্য।

নীলার মুখে কথাগুলো শুনতেই নীলাকে ছেড়ে নীলার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো আবির। তারপর নীলার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো

আবিরঃ হ্যা ঠিক ভেবেছিস তুই নীলা। আমি তোকে অপছন্দ করি ভালবাসিনা আমি তোকে। তোকে আমি শুধু ঘৃনা করি নীলা ঘৃনা করি আমি তোকে। কিন্তু তবুও তোকে আমি আটকে রেখেছি কেনো জানিস? কারন আমার জীবনের সুখগুলো যে ভাবে কেরে নিয়েছিস তুই। ঠিক সেই ভাবেই তোর জীবনটা বিষিয়ে তুলবো আমি। তুই আমার জীবনের সব কিছু কেরে নিয়েছিস। আমিও কেরে নিয়েছি তোর স্বাধীনতা।

কথাগুলো বলেই নীলাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে হনহনিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আবির। নীলা চুপ করে দাড়িয়ে আবিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

আবিরঃ আমি তোমায় ভালবাসি নীলা, খুব বেশি ভালবাসি আমি তোমায়। কিন্তু একি সাথে আমি তোমাকে ঘৃনা করি। পৃথিবীতে আমার ঘৃনা ও ভালবাসা দুটো একসাথে পাওয়ার যোগ্য যদি কেউ থেকে থাকে সে তুমি নীলা তুমি, আর কেউ নয়। তুমি আমার কাছ থেকে আমার মাথার ওপরের ছাদের মতোন আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছো। আমাকে জেল খাটতে বাদ্ধ করেছো বিনা দোষে। পুরো কলেজের সামনে আমায় তুমি চোর বানিয়ে ছেড়েছো নীলা। তোমাকে তো আমি এত সহজে ছাড়বো না। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো তোমায় আমি। তবে সেই কষ্টের মাঝেও মিশে থাকবে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা। তোমাকে আমি ভালো ও সঠিক পথে আনবোই আনবো।

ওয়াশরুমে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো আবির। আর নিরবে চোখের জল ফেলছিলো। একটু পর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই নীলা আবিরকে এক নজর দেখার সাথে সাথে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।

নীলাঃ আআআআআআআ,,, আমি কিছু দেখিনি,,,,

আবিরঃ এই মেয়ে এমন ষাড়ের মতোন চিৎকার করছো কেনো হুমম। আর কি দেখোনি তুমি?

নীলাঃ কেমন ছেলে মানুষ তুমি আবির। একটি মেয়ের সামনে শুধু তাওয়াল পরে বাইরে আসতে লজ্জা করে না তোমার। ছি ছি আমি কিছু দেখিনি।

আবিরঃ ও বাবা তোমারো আবার লজ্জা আছে নীলা? যে তুমি লজ্জায় মুখ ঢেকে অন্য দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছো? যে মেয়ে কিনা বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে একটি সাধারন ছেলের সাথে প্রেমের নাটক করে তার জীবন নষ্ট করতে পারে তারও আবার লজ্জা থাকে? সত্যিই আমায় হাসালে তুমি,,,

কথাগুলো কঠিন গলায় বলে নীলাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আবির। আবিরের কথাগুলো কেনো জানি নীলার গায়ে কাটার মতো বিঁধছে। নীলা ভেবে ছিলো আবির ওর কাছে এসে বলবে "তুমি তো আমার বউ আর বউ এর সামনে এভাবে আসলে ক্ষতি কি"। কিন্তু আবির তেমন কিছুই বললো না। হঠাৎ নীলা খেয়াল করলো ওর চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো নিচে। নীলা চোখের পানিটা তারাতারি মুছে ফেললো। 

একটুপর আবির একটি টাওজার আর একটি হাফ হাতা গেঞ্জি পড়ে আসলো নীলার সামনে। আবিরের ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার আগেই নীলা শাড়ি বদলে একটা সুন্নতি জামা পড়ে নিয়েছে।

আবিরঃ নীলা আমার সাথে এসো,

নীলাঃ কোথায় যাবো?

আবিরঃ কোথায় আবার রান্না ঘরে যাবে। আজকে প্রথম তাই আমি তোমায় রান্না করে দেখিয়ে দিবো আর তুমি শিখে নিবে। কাল থেকে কিন্তু তোমাকেই সব করতে হবে।

আবিরের কথার কোনো উত্তর দিলো না নীলা। আবিরের পিছু পিছু রান্না ঘরে চলে গেলো। আবির একটি হাড়িতে পরিমান মতো চাউল নিয়ে তিনটা ধোয়া দিলো। তারপর আঙ্গুল দিয়ে পানি মেপে নীলাকে বুঝিয়ে দিলো কি করে ভাতের পানি মেপে দিতে হয়। তারপর ভাতের হাড়িটা চুলায় দিয়ে পাশে থেকে পাতলা শুকনো লাকড়ি গুলো নিয়ে চুলার মাঝে দিয়ে কয়েকটা শুকনো সোলার সাথে আগুন লাগিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলো। আর সব কিছু নীলাকে বুঝিয়ে দিলো। নীলাও মনযোগ দিয়ে সবটা ভালো করে দেখে নিলো।

 ভাত হয়ে এলে চুলার আগুন নিভিয়ে দিলো আবির। তারপর বললো

আবিরঃ এর পর আর আগুন জ্বলতে দিলে ভাতটা পুড়ে যাবে তাই আর আগুন জ্বলতে দিলাম না। একটু পর ভাত নামিয়ে তারপর তোমায় ডিম ভাজতে শিখাবো।

আবিরের কথা শুনে নীলা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।তারপর ভাত হয়ে গেলে আবির ভাতের হাড়িটা নামিয়ে রেখে আরেকটা হাড়িতে কয়েকটা আলু শিদ্ধ দিলো। তারপর চুলায় বড় একটা শুকনো কাঠের লাকড়ি ধরিয়ে দিয়ে নীলাকে নিয়ে ডিম গুলতে চলে গেলো। 

বঠি দা এনে তাতে পেয়াজ আর কাঁচা মরিচ কাটলো আবির। পেয়াজ কাটার সময় আবিরের চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো। নীলা আনমনেই আবিরের চোখের পানি নিজের আচলে মুছে দিলো। আবির সেদিকে খেয়াল না দিয়ে নীলাকে দেখিয়ে পরিমান মতো লবন নিয়ে পিয়াজ আর মরিচটা হাত দিয়ে ডলে নিলো। তারপর ডিমটা ভেঙে দিয়ে একটি ছোট কাটা চামচ দিয়ে গুলিয়ে নিয়ে নীলাকে শিখিয়ে শিখিয়ে ডিমটা ভেজে নিলো। তারপর আলু ভর্তার জন্যে শুকনো মরিচ আর পিয়াজ ভেজে নিলো। সব কিছু করা হয়ে গেলে ঘরে নিয়ে সব গুছিয়ে রেখে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো আবির। এতটুকু সময়ের মাঝে নীলা একটা কথাও বলেনি আবিরের সাথে। শুধু চেয়ে চেয়ে আবিরের কাজগুলো দেখেছে। 

মাগরিবের আজান হলে দুজনে এক সাথে নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ শেষে আবির বললো

আবিরঃ নীলা আমার পায়ের ভিতর খুব ব্যাথা করছে একটু টিপে দাও তো,

বিছানায় শুয়ে পরে বললো আবির,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post