পর্বঃ ০৩ ও শেষ
লেখাঃ #Sazzad_KR
আমি তাদের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি। নিজের মতো করে সকালের নাস্তা শেষ করে ভাসির্টি চলে এসেছি
বাসায় ফিরলাম বিকেলের দিকে! আমি সাধারণত দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে আসি কিন্তু আজকে আরাফাতের সাথে ওর জরুরী একটি কাজে গিয়েছিলাম যার জন্য এত দেরী হয়েছে
বাসার ভেতরে কোলাহলে ভরপুর। চেনা-অচেনা অনেক মানুষ উপস্থিত আছে। আগেও রিমার জন্মদিনে এমনভাবে অনুষ্ঠান করা হয়েছে তবে এত মানুষ উপস্থিত হয়নি এবার অনেক মানুষ এসেছে।
ড্রয়িংরুমের এককোণে আম্মু এবং রিমা কয়েকজন মেয়ের সাথে বসে গল্প করছিলো। আমি নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় আম্মু আমাকে ডাকলেন মান সম্মানের জন্য তার কাছে দাঁড়ালাম
--টেবিলের উপর থেকে শরবতের গ্লাসগুলো নিয়ে আয় তো (আম্মু)
বাসা ভর্তি মানুষজন এই সময় আম্মুর কথা না শুনলে তিনি অসম্মান বোধ করতে পারেন যেটা আমি চাই না। তার সম্মানের কথা ভেবে শরবতের গ্লাসগুলো নিয়ে যখনি আম্মুর দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে সব শরবত বাড়িওয়ালার মেয়ের পোশাকের উপর পড়ে গেল।
--দুঃখিত আমি কাজটি ইচ্ছে করে করিনি ভুলবশত হয়ে গিয়েছে আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি (আমি)
--থাক লাগবে না ভুলটি আমার ছিল আমি হঠাৎ করে মাঝপথে চলে এসেছিলাম তার জন্য এমন হলো (বাড়িওয়ালার মেয়ে)
এটি বলে বাড়িওয়ালার মেয়ে চলে গেল। আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে মারবে কিন্তু সেগুলো কিছুই না মেয়েটি নিজেই তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছে।
আম্মু পাশে বসে এইসব ঘটনা দেখছিলেন মেয়েটি আমাকে ক্ষমা করে দিলো এটা ওনার পছন্দ হলো না তাই তিনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বললেন
--বেয়া/দব ভালো ভাবে কাজ করতে পারিস না মেয়েটা নিজের পছন্দের পোশাক পড়ে এখানে এসেছিলো আর তুই সব শরবত মেয়েটার পোশাকে ঢেলে ওর আনন্দ নষ্ট করে দিলি (আম্মু)
--আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি হঠাৎ করে সবকিছু হয়ে গিয়েছে (আমি)
--চুপ একটা কথাও বলবি না তোর মতো ছেলেদের আমার জানা আছে তুই এইসব ইচ্ছে করে করছিস যেন আমার মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে যায় তাই না দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা (আম্মু)
এটা বলে আম্মু আমার গায়ে হাত তুলতে যাবে তখনি কেউ একজন আম্মুর গালে দুইটা থা*প্পড় দিলো। অনুষ্ঠানে আসা সকল মেহমান অনেক অবাক হয়ে গেল তার সাথে আমিও। কারণ আমার সামনে আব্বু দাঁড়িয়ে আছে এবং তিনিই আম্মুর গালে থা*প্পড় দিয়েছেন, আব্বুর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি অনেক রেগে আছেন যে কোন-সময় ঝা*মেলা তৈরি করে ফেলবে ওনাকে শান্ত করাতে হবে
--আব্বু তুমি কখন এলে?চলো আমার সঙ্গে রুমে চলো এইসব বিষয়ে পড়ে কথা বলব (আমি)
আব্বু আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন
--আমার বাসায় না থাকলে এভাবে ছেলেটার উপর নির্যা/তন করো। ছেলেটা কখনো মুখ ফুটে এইসব বলে না কারণ সে জানে আমি অসুস্থ মানুষ এইসব চিন্তা করে যদি আরো অসুস্থ হয়ে যায় সেই ভয়ে এবং সেটার সুযোগ নিয়ে তোমরা ছেলের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করছো এটা কেমন ব্যবহার বলো আমাকে?এতদিন সব আমার অজানা ছিল কিন্তু আজকে নিজের চোখে সবকিছু দেখলাম তাই এখুনি ঠিক করলাম আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব এখানে থাকলে আমার ছেলের অনেক ক্ষতি হবে যেটা আমি চাই না আমার অফিস থেকে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছে আজকেই সেখানে ওঠে পড়ব আর তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে এখানেই থাকো আজকে থেকে তোমাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ। সাজ্জাদ তোর রুমে যত জামা-কাপড় আছে সব গুছিয়ে নিয়ে চল আমাদের নতুন বাসায় এখানে থাকার কোন মানে হয় না আমিও এখানে থাকতে চাই না প্রতিদিন এদের নাটক দেখে আমি শেষ হয়ে গিয়েছি (আব্বু)
--তুমি মাথা ঠাণ্ডা করে সবকিছু ভেবে দেখো এভাবে চলে গেলে হয় না (আমি)
--এত কথা বলবি না আমি যে কথা বলছি তুই সেটা কর আমার উপরে কথা বলার চেষ্টা করবি না যা তোর জামা-কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আয় (আব্বু)
আমি আব্বুর কথা মতো নিজের জামা-কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আব্বুর কাছে এলাম তখন আব্বু আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললো
--এখন একা একা এখানে থেকো আজকের পর থেকে আমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করবে না নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালো থেকো বিদায় (আব্বু)
আব্বুর অফিস থেকে দেওয়া ফ্ল্যাট অনেক বড় একজন মানুষ তার পুরো পরিবার নিয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু আমরা মাত্র দুজন থাকব তাই বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা থাকবে।
আমি আমার নিজের একটি রুম পছন্দ করে নিলাম আব্বুও নিজের একটি রুম পছন্দ করে নিলেন থাকতে লাগতাম দুজনে। এখানে নেই কোন ঝা/মেলা চারিদিকে শান্তি আর শান্তি,,,আব্বুকে নিয়ে যখন ওই বাসা থেকে ফিরছিলাম তখন আম্মু,রিমা অথবা তামিম কেউ আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি জানি না কেন এমন করেছে।
-------------
আব্বু বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছে..আজকে রান্না করার মতো তেমন সময় ছিল না এখানে আসার পর থেকে শুধু বাসা সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে ছিলাম।
--সাজ্জাদ খাবার খেতে অসুবিধা হচ্ছে না তো (আব্বু)
--আরে না ভালোই লাগছে (আমি)
--চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম সেখানে একটি জরুরী প্রোজেক্টের কাজে। সেটি সফল হওয়ার কারণে কোম্পানির অনেক বড় লাভ হয় যার জন্য এত বড় একটি ফ্ল্যাট আমাকে উপহার হিসেবে দেয় ভেবেছিলাম এখানে তোর আম্মু,রিমা,তামিমকে এবং তোকে নিয়ে এখানে আসব কিন্তু..... (আব্বু)
--কিন্তু কি? (আমি আগ্রহ নিয়ে)
--ওরা তোর সাথে যেমন ব্যবহার করতো সেটি উচিত না। তোর সাথে এমন ব্যবহার করা দেখে আমার অনেক খারাপ লেগেছিল যার জন্য তাদের এই বাসায় নিয়ে আসি নি নিয়ে এলে ওরা তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতো যেটা আমি চাই না তোর মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো তোকে যেন সুখে রাখি কিন্তু আমি পারলাম না আমাকে ক্ষমা করে দিস। এখানে থেকে তুই তোর পড়াশোনা শেষ কর তারপর ভালো কোন চাকরি নিয়ে নতুন জীবন শুরু কর (আব্বু)
আব্বুর খাওয়া শেষ তাই তিনি ওঠে নিজের রুমে চলে গেলেন। আমিও খাবার শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে আব্বুর বলা কথাগুলো ভাবলাম আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে ভালো কোন চাকরি নিয়ে পরিবারের হাল ধরতে হবে আব্বুর বয়স দিন দিন বাড়ছে
৪ বছর পর.......?
রাতের বেলা আমি এবং আমার স্ত্রী ফারিহা মিলে ডিনার করছিলাম এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে ওঠলো
-- বাবা এসে গেছে আপনি খাবার খান আমি দরজা খুলে আসছি (ফারিহা)
ফারিহা চলে গেল দরজা খুলতে। ফারিহার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আজ ১ বছরের মতো। মেয়েটা আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের পরিবারকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলেছে।
দরজা খোলার পর আব্বু জামা-কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেন। আমি খুব অবাক হলাম কারণ ওনার পেছন পেছন আম্মুও এসেছেন কিন্তু হঠাৎ আমার বাসায়
--একি আপনি এখানে কেন? (আমি আম্মুকে উদ্দেশ্য করে)
-- আমি বলছি তামিম বিয়ে করার পর থেকে তামিমের বউ ওর উপর খুব অত্যা/চার অবহেলা করতো ঠিকমতো খেতে দিতো না তাই ওনাকে এখানে নিয়ে এলাম আমি আশা করছি তোর কোন সমস্যা হবে না (আব্বু)
-- ওনার এখানে ভালো লাগলে থাকুক সমস্যা কি (আমি)
আমার খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে এলাম। কিছুক্ষণ পর ফারিহা এসে বলতে লাগলো
--আব্বুর সাথে ওই মহিলাটি কে?(ফারিহা)
--আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার একজন সৎ মা ছিলেন সবসময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো ওনিই সেই (আমি)
--দেখলে আমি বলেছিলাম তার কর্মের ফল একদিন পাবে আজকে পেয়ে গেল (ফারিহা)
--আমরা মনে মনে কারো খারাপ আসা না করলেও তা হয়ে যায় (আমি)
তখনি দরজায় কেউ নক করলো ফারিহা গিয়ে দরজা খুলে দেখলো আম্মু দাঁড়িয়ে আছে বোধহয় কিছু বলতে এসেছেন
--সাজ্জাদ রুমের ভেতর আসতে পারি (আম্মু)
--হুম আসেন (আমি)
তিনি রুমে এলেন ফারিহা তাকে চেয়ার এগিয়ে দিলো। তিনি চেয়ারে বসে বললেন
-- তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে অনেক বড় ভুল করেছিলাম সেগুলোর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও (আম্মু)
-- আপনার উপর আমার রাগ নেই ও ক্ষমা অনেক আগে করে দিয়েছি শুধু একটি কথা মনে রাখবেন জীবনে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না কারণ কখন কাকে কাজে লাগে সেটা বলা যায় না (আমি)
তিনি আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে রুম থেকে চলে গেলেন। হয়তো তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারে তাহলে ভালো নাহলে নেই।
সব মানুষের উদ্দেশ্য শুধু একটি কথা বলবো কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার বা অবহেলা করবেন হতেও পারে এমন সময় আসবে যখন তাকে ছাড়া আপনার হবে না।
#সমাপ্ত
[ গল্পটি কাল্পনিক এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই ]