গল্পঃ অবহেলার জীবন আমার পর্বঃ ০২

 

অবহেলার_জীবন_আমার
পর্বঃ ০২
লেখাঃ #Sazzad_KR
.
.
যখনি নিজের রুমের দিকে যাব তখনি আম্মু (সৎ মা) আমাকে দাঁড়াতে বলল, আমি তার কথামতো দাঁড়িয়ে গেলাম তখন তিনি তার মেয়ে দিকে তাকিয়ে চোখে কিছু ইশারা করে বলতে লাগলেন

--ভালো করে শুনে রাখ..আগামী সোমবার রিমার বার্থডে,বাসায় ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করব সেই অনুষ্ঠানের সকল ব্যবস্থা তোর একা করতে হবে (আম্মু)

--আমি করতে পারব কি না? এখনো সঠিকভাবে বলতে পারছি না সেদিন যদি আমার জরুরী কোন কাজ থাকে তাহলে তামিমকে কাজ করতে বলে দিব (আমি)

--তামিম পারবে না সেদিন ওর জরুরী ক্লাস আছে বাসায় আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হতে পারে (আম্মু)

-- সেদিন ওর কাজ আছে কি নেই সে বিষয়ে আমি জানি না।আমার কাজ থাকলে আমি এইসব করতে পারব না পারব না (আমি)

--তাহলে আজকে থেকে তোর খাওয়া-দাওয়া বন্ধ..আমার কথা শুনবে না অথচ তাকে রান্না করে খাওয়াবো এটা কেমন কথা (আম্মু রাগী গলায়)

ওনার কথায় কিছু বলতে পারলাম না। মুখ বন্ধ করে নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। তারপর শরীর থেকে নিজের পাঞ্জাবি খুলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আম্মু যেহেতু বলেছে আমার খাওয়া বন্ধ মানে সেটা কয়েকদিন বন্ধ থাকবে। আব্বু আজকাল বাসায় নেই তিনি থাকলে তাদের এমন নাটক আমার দেখতে হতো না।

আব্বু তার ব্যবসার কাজে চট্রগ্রাম গিয়েছেন সেখান ৩-৪ দিন এর মতো থাকবেন তারপর বাসায় ফিরে আসবেন।

বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি..বাইরে বসন্তের বাতাস বইছে। সেই বাতাস জানালা দিয়ে রুমে প্রবেশ করছে তাতে খুব ভালো লাগছে। 

ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই লাঞ্চ করছে এবং হাসাহাসি করছে।সবাই নিজের মতো করে খাবার খাচ্ছে অথচ আমি যে না খেয়ে আছি সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। আসল কথা হলো তারা আমাকে মানুষ বলে মনে করে না। আমি সবার অবহেলার পাত্র তাই অবহেলার জীবন আমার। এখন যদি রুম থেকে বের হয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায় তাহলে বলবে ' নির্ল*জ্জের মতো আমাদের খাওয়া দেখতে চলে এসেছে এই মানুষের জন্য খাবার খেতে বসেও শান্তি নেই।

বিকেল ৫ টার দিকে আরাফাত ফোন করলো। তার কল রিসিভ করে কথা বললাম আমাকে একটি ঠিকানা দিয়ে বলল সেখানে চলে আসতে। আমিও বেশি দেরী না করে রেডি হয়ে চলে গেলাম আরাফাতের দেওয়া ঠিকানায়। আশেপাশে দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি তবে বিয়েটা কার তা আমার অজানা। চারপাশে আরাফাতকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ পর আরাফাত নিজে আমার সামনে এসে বললো

--সরি দোস্ত! ভেতরে একটি কাজ আটকে গিয়েছিলাম তাই এত দেরী হলো চল আমার সাথে (আরাফাত)

--আজকে কার বিয়ে? (আমি)

--তোকে বলা হয়নি,,আজকে আমার কাজিনের বিয়ে তোকে কালকে বলব কিন্তু মনে ছিল না আজকে সারাক্ষণ তুই আমার সঙ্গে থাকবি তোর বাবা ফোন দিয়ে বলে গিয়েছে তোকে আমার সঙ্গে রাখতে (আরাফাত)

আমার কথা বলার আর কোন সুযোগ থাকলো না। আরাফাত আমাকে টেনে বিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো। চারপাশে অনেক মানুষজন বিয়ের স্টেজের কাছে যেতেই আরাফাত কানে কানে বলল

--আমার সঙ্গে সঙ্গে থাক..অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই (আরাফাত)

--আমি এখন ছোট বাচ্চা নেই যে হারিয়ে যাব বুঝতে পেরেছিস!আমাকে আমার মতো থাকতে দে তুই তোর কাজ কর (আমি)

--খবরদার বিয়ে বাড়ির বাইরে যাবি না ওকে ভেতরেই থাক একটু পর খাওয়ার ব্যবস্থা করছি (আরাফাত)

আরাফাত চলে গেল তার কাজে..আমি স্টেজের পাশে ফাঁকা চেয়ারে বসে মোবাইল চালাতে লাগলাম,আমার চারপাশে মানুষে ভর্তি হয়ে আছে। তার ভেতর গরম মানুষের শরীরের ঘামের গন্ধ নাক পযন্ত চলে আসছে,বিয়ে বাড়ির এই সমস্যা।

বেশিক্ষণ গন্ধের ভেতর থাকতে পারলাম না। ওঠে বাড়ির শেষে ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আরাফাত এলো হাতে কয়েকটি লেবু

--চল আমার চল উপরে আমার এবং তোর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে চল খেয়ে নিবি। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করিস নি তোর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে (আরাফাত)

--আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করছিস কেন?আমাকে নিয়ে চিন্তা করে তোর কি লাভ (আমি)

--সেইসব প্রশ্নের উওর দিতে পারব না চল আমার সাথে (আরাফাত)

আরাফাতের সাথে উপরের ঘরে এলাম। রুমের ভেতর একজন মহিলা বসে আছে হয়তো আরাফাতের আম্মু। মুখ এখনো দেখতে পারিনি বলে নিশ্চিত বলতে পারছি না।

--আম্মু!খাবার নিয়ে এসো সাজ্জাদ এসেছে (আরাফাত)

মহিলাটি পেছনে ঘুরে তাকালো। এবার তার চেহারা দেখতে পেলাম সে আরাফাতের আম্মু আমাকে খুব ভালোভাবে চিনে আমিও তাকে খুব ভালোভাবে চিনি ওদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি। তাই চিনতে অসুবিধা হয়নি। আমি আন্টিকে সালাম দিলাম তিনি হাসি মুখে সালামের উওর দিয়ে বললেন

--কেমন আছো বাবা?তোমার বাসার সবাই কেমন আছে? (আন্টি)

--জ্বী আন্টি বাসার সবাই অনেক ভালো আছে। আপনি কেমন আছেন (আমি)

--আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তোমরা দুজনে খাটের উপর বসো আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি (আন্টি)

তিনি আমাদের আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হলেন। আমি এবং আরাফাত দুজনে একসঙ্গে খাবারগুলো খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে বিয়ে বাড়ির আনন্দে মেতে ওঠলাম। সেদিন আরাফাত এবং ওর আম্মু আমাকে বাসায় আসতে দেয়নি। সেদিনের রাত বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে কাটিয়ে দিয়ে পরেরদিন সকালে বাসায় এসেছি।

বাসার দরজার সামনে এসে কলিংবেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন। পুরো একদিন পরে আমাকে দেখে বললেন

--কালকে সারারাত কোথায় ছিলি? বাসায় আসার কথা মনে থাকে না তুই বাসায় নেই এটা শুনে তোর বাবা আমাদের উপর সে কি রাগ তোর কি একবারও বাসার কথা মনে পড়ে না জানিস না এখানে তোর কত কাজ? (আম্মু)

--আমি বাসায় না থাকলেই তো তোমাদের শান্তি!তাই কিছু মুহূর্তের জন্য নিজেকে তোমাদের থেকে আলাদা রেখে ছিলাম (আমি)

--চলে গেলে জীবনের মনে চলে যাবি৷ কিছু সময়ের জন্য গিয়ে নাটক করার দরকার নেই যা এখন রুমে যা (আম্মু)

--এভাবে বলার প্রয়োজন নেই এই বাসায় রুমটি ছাড়া আমার অন্য কিছু নেই (আমি)

আম্মুর উওরের আশা না করে রুমে চলে এলাম এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো দুপুরের দিকে তাই বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করলাম তারপর কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে বিকেলের দিকে হাঁটতে বের হলাম।

আজকে আরাফাতকে কল করে বিরক্ত করলাম না সে বিয়ে বাড়ির নানা কাজে ব্যস্ত!আমাকে ওর সঙ্গে থাকতে বলেছিলো কিন্তু আমি কাজের বাহানা দিয়ে চলে এসেছি

বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যার পর। ড্রয়িংরুম দিয়ে নিজের রুমে যেতেই আম্মু ডাকলো। আমি তার কাছে যেতেই তিনি আমার হাতে লম্বা একটি লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন

--কালকে রিমার জন্মদিন এখন গিয়ে জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আয় কালকে সময় পাবি না বাসায় অনেক কাজ আছে (আম্মু)

--তামিমকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তামিম সবকিছু কিনে নিয়ে আসবে (আমি)

--তামিম বাসায় নেই সে জরুরী কাজে বাইরে গেছে কালকে বিকেলে ফিরবে। তুই গিয়ে বাজার গুলো করে নিয়ে আয় সবকিছু কিনে আনবি কোনকিছুই যেন বাদ না থাকে (আম্মু)

--টাকা দেও (আমি)

আম্মু আমার হাতে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে বললো ' সবকিছু হিসেব করে নিয়ে আসবি কোনকিছুই যেন বাদ না থাকে আমি সব কিছুর হিসেব নিব এক টাকাও এদিক সেদিক হলে তোর খবর আছে '

আমি মিথ্যা হাসি দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে বের হলাম।মানুষ কত খারাপ হলে অন্য একজন মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে।

বাজার করা শেষ হলে সেগুলো নিয়ে বাসায় ফিরলাম৷ তারপর বাজারের লিস্ট নিয়ে আম্মুর হাতে দিলাম যে টাকাগুলো বেঁচে গিয়েছিলো সেগুলো ওনাকে ফেরত দিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম৷

তারপর কিছুক্ষণ মোবাইল চালিয়ে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ পরেরদিন সকাল থেকে শুরু হলো রুম সাজানো তার সাথে রিমার কাজিন, মামাতো-খালাতো বোনেরা সবাই আসতে লাগলো।

আমি তাদের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি। নিজের মতো করে সকালের নাস্তা শেষ করে ভাসির্টি চলে এসেছি

#চলবে

আরো পড়ুন: 
  • গল্পঃ অবহেলার জীবন আমার ০৩ ও শেষ পর্বের লিংক
ভুল-ক্রুটি ক্ষমা করবেন। দুই অথবা তিন পর্বের ভেতর গল্পটি শেষ হতে চলেছে
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post