ভাসির্টির জন্য জরুরী একটি বই কিনতে হবে তার জন্য আব্বুর কাছে টাকা চাইতেই রান্নাঘর থেকে আমার সৎ-মা রাগী কন্ঠে বলল 'সেদিন তো তোর আব্বুর কাছে থেকে টাকা নিলি আজকে কেন? তোর বাবার কি টাকার গাছ আছে যে এত টাকা দিবে '
এইসব শুনে কথা বলার মতো ভাষা পাইনি। চুপচাপ আব্বুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আব্বু পেপার পড়ায় ব্যস্ত ছিলেন আম্মুর(সৎ মা) এমন কথা শুনে তিনি পেপার রেখে পকেট থেকে টাকা বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন
-- আরো লাগলে বলিস। আমার টাকাগুলো রাতের আঁধারে কত জায়গায় চলে যায় সেগুলোতে সমস্যা হয় না। তুই নিজের পড়াশোনার জন্য টাকা চাইলে নানারকমের সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। টাকার দরকার থাকলে আমাকে সরাসরি জানিয়ে দিবি (আব্বু)
আব্বুর কথা শেষ হওয়া মাত্র আম্মু(সৎ মা) রান্নাঘর থেকে খু-ন্তি হাতে বের হয়ে আব্বুর পাশে দাঁড়ালো। অগ্নি দৃষ্টিতে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে
-- এভাবে ছেলেটিকে মাথায় তুলে নিচ্ছো নাও আরো বেশি করে নাও। আমার ছেলে মেয়ের দিকে তো তুমি খেয়াল করো না। সবসময় এই ছেলের দিকে বেশি খেয়াল করো তাই না (আম্মু)
-- আমি টাকা না দিলে ছেলেটাকে কে টাকা দিবে? (আব্বু একটু রাগী গলায়)
-- ওর বয়স কম হয়নি। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ইনকাম করতে বলো কতদিন আমাদের মাথায় বসে বসে খাবে (আম্মু)
-- তুমি এখান থেকে যাও তোমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে নেই (আব্বু)
আব্বু ইশারায় আমাকে চলে যেতে বললেন। আমি বের হলাম ভাসির্টির উদ্দেশ্য, আপনাদের আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি।
আমি সাজ্জাদ কেআর অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জন্মের কয়েকমাস পর আমার আম্মু মা-রা যায়, আমার দেখাশোনা করার জন্য আব্বু আরেকটি বিয়ে করেন প্রথম কয়েকবছর আমার বর্তমান আম্মু মানে সৎ মা। আমাকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেন। যখন তার নিজের সন্তান হয় তখন থেকে আমার প্রতি অবহেলা সহ নানা রকম অত্যা-চার শুরু করে। এতো অবহেলা/খারাপ ব্যবহারের মাঝেও তাকে নিজের আম্মু বলে পরিচয় দেই। তার সঙ্গে আরো অনেককিছু যেগুলো গল্পের মাঝে জানতে পারবেন।
একরাশ মন খারাপ নিয়ে ভাসির্টি চলে এলাম। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে যাব এমন সময় আমার বন্ধু আরাফাত এসে বলল
-- তোকে কালকে রাতে কত কল করলাম রিসিভ করলি না কেন (আরাফাত)
-- বাসায় কিছু কাজ ছিল তাই রিসিভ করতে পারিনি (আমি)
-- ওও আচ্ছা ক্লাসে চল (আরাফাত)
আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম। একদম শেষের বেঞ্চ আমার জন্য বরাদ্দ থাকে সেখানে গিয়ে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর স্যার এসে ক্লাস শুরু করলেন একে একে সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম।
নিজের রুমে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম সৎ মা তার মেয়ে রিমাকে আমার নামে নানারকমের কথা বলছে কথাগুলো ছিলো এরকম 'জানিস সাজ্জাদ আজকে সকালে তোর আব্বুর কাছে থেকে অনেকগুলো টাকা নিয়ে গিয়েছে কি একটি বই কিনবে বলে। আমার মনে হয় সে টাকাগুলো দিয়ে খারাপ কোন কাজ করবে'
আমার অনেক হাসি পেল তবে হাসলাম না। রুমে এসে নিজের ব্যাগ রেখে মেঝেতে বসে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম
কি এমন দোষ আমার..জন্মের পর নিজের আপন মাকে হারিয়েছি। মায়ের অভাব যেন না হয় তার জন্য আব্বু আরেকটি বিয়ে করলেন তার ব্যবহার দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আমি তাকে নিজের মা মনে করলেও সে আমাকে নিজের ছেলে ভাবে না তার দুজন ছেলে-মেয়েকে আমি নিজের আপন ভাই-বোন মনে করলেও তারা আমাকে করে না। তাদের কাছে আমি অবহেলার পাত্র মাত্র তারা আমাকে মানুষ বলে মনে করে না। সবসময় আমার দোষ খোঁজার চেষ্টায় লেগে থাকে। রুমের মেঝেতে বসে ছিলাম এমন সময় ছোট বোন রিমা রুমে প্রবেশ করে আশেপাশে তাকাতে লাগলো বোধহয় কিছু খুঁজছে
-- কিছু বলবি? (আমি)
-- শুনলাম আব্বু তোকে টাকা দিয়েছে..সেগুলো আমাকে দে কালকে আমার ফ্রেন্ডের জন্মদিন তাকে একটি গিফ্ট দিতে হবে (রিমা)
-- তোর ফ্রেন্ডের জন্মদিন আমি টাকা দিব কেন?আমি টাকা দিয়ে বই কিনে এনেছি এখন আমার কাছে টাকা নেই আব্বু এলে তার কাছে থেকে নিয়ে নিস (আমি)
-- আমি আব্বুর কাছে চাইতে পারব না গতকাল অনেক টাকা নিয়েছি আজকে টাকা চাইলে নিশ্চিত বক-বে (রিমা)
-- আমাকে এইসব বলে লাভ হবে না আমার কাছে যে টাকা ছিল সেগুলো সব শেষ (আমি)
-- তাহলে টাকা দিবি না..চিন্তা করিস না টাকাগুলো কীভাবে তুলতে হয় তা আমার ভালো করে জানা আছে খুব শ্রীঘই তোর অবস্থা খারাপ করব শুধু অপেক্ষা কর (রিমা)
রিমা রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি চেয়ে আছি ওর যাওয়ার দিকে। কি করব বুঝতে পারছি না মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে আমার। এদিকে খুব ক্ষুধা পেয়েছে সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।
ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম। আম্মু রান্নাঘরে কাজ করছিলেন আমাকে দেখে অনেক বিরক্ত বোধ করলেন তবে প্রকাশ করলেন না। আমি খাবার চাইতেই তিনি আমাকে খাবার দিয়ে গেলেন। খাবারগুলো খাচ্ছিলাম এমন সময় রান্নাঘর থেকে শুনতে পেলাম আম্মু বলছিলো
-- এভাবে বসে বসে খাওয়ার কোন মানে আছে তোর বাবার অনেক বয়স হয়েছে তিনি একা কীভাবে এত মানুষের দায়িত্ব নিবেন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ইনকাম করা শুরু কর তাতে লাভ হবে (আম্মু)
আমি কিছু বললাম না এইসব প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন খোঁ/চা দিয়ে কথা বলবে এবং মন খারাপ করবে তাছাড়া এদের আর কোন কাজ নেই তবে বাসায় আব্বু থাকলে এইসব করার চান্স খুব কম থাকে তার সামনে সবাই ভালো হয়ে থাকার চেষ্টা করে
ঘড়িতে সময় রাত ১ টা বেজে ০৭ মিনিট, রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি হাতে জলন্ত সিগারেট। যে দিনটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খারাপ বা কষ্টে যায় সেদিন সিগারেট খাই।
আজকেও কষ্ট অনেক বেশি পেয়েছি তাই সিগারেট খাচ্ছি,নিজের ভাই-বোন-মা সবার এত অবহেলা নিতে পারছি না। আমার জায়গায় অন্য ছেলে থাকলে এইসব অত্যা-চার নিতে পারতো না কবে এদের ব্যবস্থা নিতো। আমি সেগুলো নিচ্ছি না বাবার কারণে তিনি হার্টের রোগী আমি কোন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললে যদি তার কিছু হয়ে যায়। আমি এটাও নিশ্চিত আমার জায়গায় অন্য ছেলে থাকলে ওই মহিলাকে মায়ের আসন থেকে অনেক আগে সরিয়ে ফেলতো।
বাসায় থাকা বড় দায় হয়ে পড়েছে..বাসায় থাকলেই আমাকে নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় তার সাথে নানারকমের অপমান যেগুলো শোনার মতো না। তবুও সহ্য করে আসছি এখন বাসা ছেড়ে দিলে থাকার জায়গা পাব না। মাত্র কয়েকটি দিন বাকী আছে তাই আব্বুকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাব। আব্বুকে এদের কাছে রেখে কষ্ট দিতে চাই না।
আগামীকাল শুক্রবার। তাই আজকে অনেক দেরী করে ঘুমাতে গেলাম। পরেরদিন ঘুম থেকে যখন ওঠলাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর ১২ঃ৪৫ বাজে।
এত বেলা হয়ে গিয়েছে অথচ বাসার কেউ আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করলো না। এত বোঝা হয়ে গিয়েছি এই মানুষগুলোর কাছে এত অবহেলা করে আমাকে
নামাজের বেশি সময় নেই তাড়াতাড়ি করে গোসল শেষ করে মসজিদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হবো এমন সময় আম্মু কিছুটা ভাব নিয়ে বলল
-- অবশেষে নবাবের ঘুম ভাঙলো আমি ভেবেছিলাম আজকে ঘুম থেকে ওঠবে না। সারারাত নে/শার করলে কি মানুষের সময়ের খেয়াল থাকে, আমি নিশ্চিত তোর ভাই কালকে রাতে নে/শা করেছে নাহলে এতক্ষণ মানুষ ঘুমিয়ে থাকে রিমা তুই নিজেই বল (আম্মু রিমাকে উদ্দেশ্য করে বললো)
হাতে সময় না থাকার কারণে তাদের কথার কোন উওর দিলাম না৷ বেরিয়ে পড়লাম মসজিদের উদ্দেশ্য। নামাজ পড়লাম। আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছের কথাগুলো বললাম। তারপর বাসায় ফিরে এলাম।
যখনি নিজের রুমের দিকে যাব তখনি আম্মু (সৎ মা)...........
চলবে
আরো পড়ুন:
গল্পঃ অবহেলার জীবন আমার
পর্বঃ ০১
লেখাঃ Sazzad KR
[ আসসালামু আলাইকুম, অনেকদিন পর আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প নিয়ে হাজির হলাম। গল্পটি কেমন হলো কমেন্টে জানাবেন ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন প্রথম পর্বটি বোধহয় একটু অগোছালো হয়েছে তবে চিন্তা করবেন না পরর্বতী পর্ব থেকে সব গুছিয়ে দিব ]