গল্প:::: সিনিয়র বড় আপু
*
*
* লেখক/:::::: রাসেল চৌধুরী 🌷🌷🌷🌷
*
*
* পর্ব:::::::::::(৯) নয় শেষ
*
*
*
*
* দরজা খুলে যাকে দেখলাম, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। হুম এ আর কেউ নয় রিয়া।
*
* আমি/: কিরে কেমন আছিস। মামা মামী কেমন আছে।
*
* রিয়া/: হুম সবাই ভালো আছে। তুই কেমন আছিস।
*
* আমি/: আমিও ভালো আছি, এর আগে আছিস নাই কেন, ।
*
* রিয়া/: আসলে আমি আমার এক বান্ধবীর বিয়েতে ছিলাম, তাই আসতে পারি নাই। বিয়ে শেষ করে সোজা তোদের বাড়িতে চলে আসলাম।
*
* আমি/: ওহ, তা তোর আর সাদিনের সম্পর্ক কেমন চলছে।
*
* রিয়া/: হুম ভালো।
*
* তার পর ভিতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে আসলাম।
রিয়া এসে খাবারের জন্য ঠেকে গেল। খাবার টেবিলের সামনে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
*
* আমি/: আম্মু আমি একটা কথা বলতে চাই।
*
* আম্মু/: কি কথা বল।
*
* আমি/: আমি সাদিয়াকে বিয়ে করতে চাই, তোমরা আনকেল আন্টির সাথে কথা বলো।
*
* আম্মু): তা তো হবে না।
*
* আমি/: কেন।
*
* আম্মু/: তুই তো মেয়েটাকে সয্য করতে পারিস না, আর বড় কথা হলো , সাদিয়ার কালকে বিয়ে, আজকে তার গায়ে হলুদ, আমাদের দাওয়াত দিয়ে গেল,।
*
* আমি): না এটা হতে পারে না, সাদিয়া আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। আমি এ বিয়ে কিছুতেই হতে দিব না।
*
* আম্মু/: এখন এ কথা বলছিস কেন, তুই তো ওকে বাসা থেকে চলে যেতে বললি, ।
*
* আমি/; আমি এতো দিন সত্যটা না জেনে তাকে ভুল বুঝে ছিলাম, কিন্তু আজকে আমি সত্যটা জানতে পেরেছি,। এখানে সাদিয়ার কোনো দোষ নেই।
*
* আম্মু/: আমি তো আগে বলেছি, তুই মেয়েটাকে ভুল বুঝছিস। তুই তো আমার কথা শুনলি না, ।
*
* আমি/: তোমরা যে করে হোক, বিয়েটা আটকাও , আমি সাদিয়া কে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
*
* আম্মু/: তুই সাদিয়াকে ভুলে যা, আমরা তোর জন্য অন্য জায়গায় বিয়া ঠিক করছি।
*
* আমি/: আমি সাদিয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
*
* আম্মু/: কিন্তু আমরা তো তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি।
*
* আমি/: তোমাদের কথা ফিরিয়ে নাও।
*
* আম্মু/: আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না, আমরা যে জায়গায় তোর বিয়ে ঠিক করেছি, তোকে ওখানে বিয়ে করতে হবে, আর যদি না করিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি। ( বলে আম্মু রুমে চলে গেল)
*
* আমাকে একটা কথাও বলতে দেয় নাই। আমি সাদিয়ার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে পারি নাই, তার আগে তারা আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।
*
* আমার পাশে তাকিয়ে দেখি তিথি আর রিয়া মুচকি মুচকি হাসছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাত না খেয়ে রুমে চলে আসলাম।
*
* এখন আমি কি করবো, বিয়ে না করলে আমমুর মরা দেখতে হবে, আর সাদিয়াকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। না না ভালোবাসার জন্য আম্মুকে হারাতে পারবো না, কিন্তু আমি সাদিয়াকে মরার আগ পর্যন্ত ভুলতে পারবো না।
*
*এসব কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারি নাই। সকালে তিথি এসে ডাক দিতে লাগলো।
*
* আমি): কি হয়েছে ডাকছিস কেন।
*
* তিথি/: কয়টা বাজে খেয়াল আছে তোর।
*
* আমি/কয়টা বাজে।
*
* তিথি/: বারোটা বাজে। আর আব্বু এগুলো পড়ে নিচে যেতে বলছে।
*
* আমি/: এগুলো তো বিয়ের সেরোয়ানি। আমি এগুলো পড়বো কেন।
*
* তিথি/; ওমা তুই জানিস না, আজকে তোর বিয়ে।
*
* আমি): আমার বিয়ে মানে।
*
* তিথি): রেডি হয়ে নিচে গেলে বুঝতে পারবি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়, দেরি হলে আব্বু রাগারাগী করবে। ( বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল)
*
* আমি চিন্তা করলাম, আমি কি পালিয়ে যাবো, না আমি পালিয়ে গেলে বাবা মা কে অপমান করবে, আমি মা বাবার অপমান সয্য করতে পারবো না।
*
* বসে না থেকে ওয়াস রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এসে সেরোয়ানি পরে নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে আমি তো আরো অবাক হয়ে গেলাম, দেখি সাদিন রনি মিম সব গুলো রেডি হয়ে বসে আছে সোফায়।
*
* আমি/: কিরে তোরা কোন সময় আসলি, আর তোদের তো আমি বলি নাই আমার বিয়ের কথা, , তোদের কি বলবো আমি তো নিজেই জানিনা আমার কথা।
*
* সাদিন/: তোর কিছু জানতে হবে না, আর আমাদের আন্টি আনকেল আসতে বললো।
*
* আমি/: তোরা জানিস , আমার বিয়ে কার সাথে।
*
* রনি/: হুম আমরা সবাই জানি। কিন্তু তোকে বলা যাবে না, তুই শুধু সারপ্রাইজ দিতে পারিস, আমরা দিতে পারি না।
*
* আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে বাসার বাহিরে নিয়ে এসে গাড়িতে তুললো। বাবা মা তিথি আর রিয়া একটা গাড়িতে আর আমি সাদিন রনি একটা গাড়িতে, গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর গাড়ি একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো, সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম।
*
* হঠাৎ সামনে কয়জন কে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দেখি আন্টি , আনকেল, আর জীবন ভাইয়া । ( ও আপনাদের তো বলতে ভুলে গেছি, বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে, আমি এখনো মেয়েকে দেখি নাই,
*
* আমার চোখের সামনে সাদিয়ার চেহারা ভাসতে আছে। যাকে এতো ভালোবাসলাম, কিন্তু তাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলাম না। কিন্তু আমার একটা জিনিস মাথায় আসছে না, সাদিয়ার তো আজকে বিয়ে, আঙ্কেল আন্টি এখানে কেন,
*
* হঠাৎ আন্টি বলে উঠলেন।
*
* আন্টি/: রাসেল কে নিয়ে ভিতরে আসো।
*
* আমি/: আন্টি আজকে না সাদিয়া আপুর বিয়ে, আপনারা এখানে কেন।
*
*আঙ্কেল/: ভিতরে গেলে বুঝতে পারবে।
*
* তার পর সবার সাথে ভিতরে গেলাম। আমাকে স্টেজে নিয়ে বসালো। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি, কিছুক্ষণ পর মেয়েকে এনে আমার পাশে বসালো। আমি তার চেহারা পর্যন্ত দেখলাম না। কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
*
* অবাক করার বিষয় হলো মেয়ে দ্রুত কবুল বলে ফেললো। কাজি আমাকে বলছে কবুল বলার জন্য, কিন্তু আমি বলতে পারছি না, বুকটা ফেটে যাচ্ছে, ভালোবাসলাম একজন কে, বিয়ে করতে হবে আরেক জনকে, সবার জোরাজুরিতে লাষ্ট পর্যন্ত কবুল বলে ফেললাম।
*
* বিয়ে পড়ানো শেষ হলে , সবাই খাওয়া দাওয়া করলো। তার পর মেয়েকে বিদায় দেওয়ার সময় মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করছে। বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে উঠে বাসায় চলে আসলাম।
*
* বাসায় এসে আমি ছাদে চলে গেলাম। না জানি সাদিয়া এখন কোথায়, আমাকে কি সে ক্ষমা করবে কখনো। হঠাৎ সাদিন এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো।
*
* সাদিন/: কিরে তুই এখানে, আর আমি তোকে পুরো বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছি।
*
* আমি/: আচ্ছা সাদিয়ার বাবা মা আজকে বিয়ে বাড়িতে ছিলো কেন, আর আজকে না সাদিয়ার বিয়ে, ।
*
* সাদিন/: আমি যতোটুকু জানি, সাদিয়ার বিয়ে আরো কিছুদিন পরে হবে, ।
*
* আমি/: কিন্তু আব্বু আম্মু তো বললো, আজকে সাদিয়ার বিয়ে, ।
*
* সাদিন/: হয়তোবা সমস্যার কারণে পিছিয়ে দিছে। আর সাদিয়ার আব্বু আম্মু কে তোর আব্বু আম্মু দাওয়াত করছে , তাই আসছে।
*
* আমি/: ওহ,
*
* সাদিন/: চল তোর বউ বাসর ঘরে তোর জন্য অপেক্ষা করতে আছে।
*
* আমি/: আমি ওকে কখনো স্বামীর অধিকার দিব না। আমি সাদিয়াকে ভালোবাসি, এ মনে সাদিয়া ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না।
*
* সাদিন/: তুই তো আজকে বিয়ে বাড়িতে মেয়েটার চেহারা পর্যন্ত দেখিস নাই, ঠিক আছে বাসর ঘরে চল, তার পর দেখি তুই বউকে স্বামীর অধিকার না দিয়ে কোথায় যাস।
*
* আমি): তোর কথার কিছুই বুঝলাম না।
*
* সাদিন/: এতো কিছু বুঝে লাভ নেই। যা বুঝার বাসর ঘরে বুঝে নিস।
*
* বলে আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো, জোর করে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিল। রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে, খাটের উপর দেখি মেয়েটা বসে আছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো মেয়েটা আমাকে সালাম করতে আসেনি, না আসলে আমার কি , আমি তো ওকে বউ হিসাবে মানি না।
*
* আমি/: আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
*
* মেয়েটা/: কি কথা বলুন।
*
* আমি): আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি, আপনাকে আমি কখনো স্বামীর অধিকার দিতে পারবো না।
*
* মেয়েটা/: তো মেয়েটার নাম টা কি জানতে পারি।
*
* আমি/: ওর নাম সাদিয়া, আমার এক বছরের বড়, সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, তাকে ভুল বুঝে দুই টা বছর দূরে ছিলাম। কিন্তু গতকাল রাতে সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেছে , ওখানে আমার দোষ ছিলো, বাবা মা কে তার কথা বলার পর বললো, তার না বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আজকে তার বিয়ে হবার কথা ছিল, কিন্তু পরে শুনি আরো কিছুদিন পর তার বিয়ে হবে, তার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে পারি নাই, ।
*
* মেয়েটা/: তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেন।
*
* আমি/: আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি, কিন্তু আম্মু অনেক বড় একটা কথা বললো, তার পর আমার ভালোবাসা কুরবানী করে দিছি, আমি আমার মাকে হারাতে চাই না, তাই বিয়ে করে নিলাম।
*
* মেয়েটা/: যদি সাদিয়া আপনাকে ক্ষমা না করে , তাহলে আপনি কি করবেন।
*
* আমি): দরকার হয় তার পা জড়িয়ে ধরবো।
*
* মেয়েটা/: তাহলে এখন আমার কি হবে।
*
* আমি/: আমি কিছু দিন পর আপনাকে ডিভোস দিয়ে দিবো।
*
* মেয়েটা/: কুত্তা হারামি তুই আমাকে ডিভোস দিবি।
*
* আমি মেয়েটাকে দেখার পর মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, এ আর কেউ নয়, সাদিয়া আমার কলার ধরে বললো।
*
* আমি): তুমি এখানে।
*
* সাদিয়া/: আমি থাকবো না, তো কে থাকবে। তোর জন্য দুই টা বছর অপেক্ষা করলাম, আর তুই ভাবলি কি করে, তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবো।
*
* আমি কোনো কথা না বলে সাদিয়ার পা জড়িয়ে ধরলাম,
*
* আমি/: তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি না বুঝে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, গতকাল রাতে জীবন ভাইয়া আমাকে সব খুলে বলেছে, আমি যদি তোমার কথা গুলো ঠিক ভাবে শুনতাম, তাহলে এই দুই টা বছর দূরে থাকতে হতো না, প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
*
* সাদিয়া আমাকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে লাগলো।
*
* সাদিয়া/: তোমার কোনো দোষ নেই, আমি যদি তোমাকে বলে আসতাম, এবং মোবাইল সাথে করে নিয়ে আসতাম, তাহলে এতো কিছু হতো না, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
*
* আমি): ঠিক আছে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম, এবার তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
*
* সাদিয়া/: ঠিক আছে, আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
*
* আমি/: আচ্ছা সবাই আমাকে বললো না কেন, তোমার সাথে আমার বিয়ে, তাহলে তো আমি আর এতো কষ্ট পেতাম না।
*
* সাদিয়া?/ তুই আমার বাবা মা কে দেখেও বুঝতে পারিস নাই, তোর সাথে কার বিয়ে।
*
* আমি/: আমি তো তোমাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, আর ওই বাড়িটা তো তোমাদের না।
*
* সাদিয়া/: ওটা আমার মামার বাড়ি, আর আমি বলছি তোকে যেনো না বলে আমার সাথে বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু তুই আমার পাশে বসে একটা বার আমাকে দেখলি না,
*
* আমি): আচ্ছা ওসব কথা বাত দাও, কথা বলে রাত পুরো পার করে দিবে না কি, বাসর করবো না।
*
* সাদিয়া/: তোমাকে কেউ ধরে রাখছে।
*
* আমি আর দেরি করলাম না, মিসন শুরু করে দিলাম। সব গল্পে মিসনের কথা বলছি , এটায় না জানলেও চলবে। বাকিটা পাতিহাস থুক্কু ইতিহাস। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
*
*
*দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেছে। এই এক বছরে সাদিন আর রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, আর রনি আর মিমের। সাদিন এখন তার বাবার ব্যবসা সামলায়। আর রনি একটা অফিসে চাকরি করে,
*
* আর আমি বাবার অফিস দেখা শুনা করি, ও আপনাদের তো বলতে ভুলে গেছি, কানাডা থেকে আন্টি আঙ্কেল এসেছে, আর ইমন, তারা কিছু দিন থেকে আবার চলে গেছে। এভাবে চলতে আমাদের সংসার, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে পাশেই।
*
*
*পৃথিবীর সব সুখ তখনি নিজের মনে হয়, যখন ভালোবাসার মানুষটি ভালোবেসে পাশে থাকে.. আর তখনি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় যখন ভালোবাসার মানুষটি বিশ্বাস দিয়ে বিশ্বাস রাখে...
*
*
*
*
*############### সমাপ্ত########৳৳৳৳
*
*
* সবাই কে হ্যাপি নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
*
*
* তো গল্প টা কেমন হলো জানাবেন। পুরো গল্পে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই লাইক এবং কমেন্ট দিয়ে জানাবেন কেমন হয়েছে।