গল্পঃ #সিনিয়র_আপু_যখন বউ। লেখক: #আবির_মাহমুদ শান্ত। পর্ব - ০৫ -️ ️[Love♥️Story]

 


গল্পঃ #সিনিয়র_আপু_যখন বউ।

লেখক: #আবির_মাহমুদ শান্ত।

পর্ব - ০৫ -️ ️[Love♥️Story]


ফোন বের করার সাথে সাথে রিমঝিম আপুর ফোন দিলো৷


--হ্যালো (আমি)


--কই তুই ? (রিমঝিম আপু)


--ব্রিজের উপর বসে আছি ৷ কেন ? (আমি)


--দরকার আছে ওখানেই থাক আমি আসছি ৷ 

(বলেই রিমঝিম আপু ফোনটা কেটে দিলো )


তারপর দিশা কে নাম্বার দিয়ে ওর সাথে কথা বলছিলাম ৷ 

কথা বলার ইচ্ছে করছিলো না ৷ কিন্তু মুখের উপর কেমন করে চলে যেতে বলি ৷ নিজে থেকে কথা বলতে এসেছে চলে যেতে বললে ওর সম্মানে লাগবে ৷ কিন্তু কথা বলতে খুব বিরক্ত লাগছিলো ৷

হটাৎ রিমঝিম আপুর গাড়ি এসে দারালো ৷রিমঝিম আপু বাইরে বেরিয়ে আসলো ৷ আমাকে দিশার সাথে দেখে মুখের ভাব বদলে গেলো আমার কাছে আসল ৷৷


--চল আমার সাথে দরকার আছে ৷ (রিমঝিম আপু)


--দারাও একটু ৷ (আমি)


আমি দিশার সাথে আরেকটা কথা বলার আগেই 

রিমঝিম আপু আমাকে টেনে গাড়ির ভিতর বসালো আর গাড়ি চালাতে লাগলো ৷


--তৌকে না বলছি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবি না ৷ (রিমঝিম আপু)


--আমি বলি নি আর ও নিজে থেকেই কথা বলতে এসেছিলো ৷ (আমি)


--তারপরেও তুই কথা বলবি না ৷ (রিমঝিম আপু)


রিমঝিম আপুর কাছেই আসলে কেমন যেন দূর্বলতা কাজ করে আমার।


--কোথায় যাচ্ছি আমরা ? (আমি)


--মার্কেটে যাবো ৷ (রিমঝিম আপু)


--কেন ? (আমি)


--কাল আমার জন্মদিন তাই ড্রেস কিনবো আর তুই সেটা পছন্দ করে দিবি ৷ (রিমঝিম আপু)


--আমি পছন্দ করে দিব কেন ? তোমার হবু বর পছন্দ করে দিবে ৷ (শুকনো হাসি দিয়ে আমি)


--খোচা মারা কথা গেলো না তোর ৷ (রিমঝিম আপু)


--খোচা মারার কথা আবার কখন বললাম যেটা সত্যি সেটাই বললাম ৷ (আমি)


রিমঝিম আপু আর কোনো কথা বললো না ৷ মার্কেটে গিয়ে রিমঝিম আপু ড্রেস দেখতে লাগলো ৷একটা নীল কালারের ড্রেস দেখে খুব পছন্দ হলো।

রিমঝিম আপু হয়তো সেটা লক্ষ্য করলো ৷

তাই ড্রেস টা কিনলো ৷


রিমঝিম আপু বিল দিতে দিতে আমি একজোড়া পায়েল আরেক জোরা ঝুমকো কিনলাম ৷ 

তারপর সেগুলো চুপ করে রিমঝিম আপুর ব্যাগে রেখে দিলাম ৷

রিমঝিম আপু আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলো ৷ আমি বাসার ভিতর ঢুকতে যাব তখুনি আবার ডাক দিলো ৷

আমি রিমঝিম আপুর কাছে গেলাম ৷৷


--শোন কাল আমি কলেজে যাব না । কিন্তু সন্ধ্যায় তোকে নিতে রনি আসবে ৷ তখন ওর সাথে আমার বাসায় চলে আসবি আর তুই না আসলে কাল সত্যি তোর কপালে মাইর পরবে ৷৷ (রিমঝিম)


কথাটা বলার পরেই রিমঝিম আপু চলে গেলো ৷

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেলাম না ৷

গিফট তো রিমঝিম আপুকে দিয়েই রেখেছি তাই যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না ৷ আর আমি ওর কাছে গিয়ে মায়া বারাতে চাই না ৷যতটা সম্ভাব দূরে থাকতে হবে ৷


আমি জানি রিমঝিম আপু গাড়ি পাঠাবে আমাকে নিতে কিন্তু আমি যাব না ৷ 

তাই সন্ধ্যা লাগতে বাইরের থেকে গেট লাগিয়ে দিয়ে পিছনের একটা ছোট দরজা আছে ওটা দিয়ে বাসায় ঢুকলাম ৷ যাতে যে কেউ আসলে বুঝতে না পারে আমি বাসায় আছি ৷


সকাল ১০ টার দিকে বাড়ির সামনে গাড়ির আওয়াজ পেলাম ৷


(আমার ঘরের লাইট সব সময় বন্ধই থাকে ৷ অন্ধকার কেন জানি খুব ভালো লাগে ৷ তার কারন আজও জানি না ৷ অন্ধকারে আলাদা একটা অনূভুতি আছে )


জানালা দিয়ে দেখলাম রনি গারি থেকে নামলো ৷

তারপর বাসার দিকে তাকালো ৷

তালা ঝুলানো দেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো ৷

ফোনটাও অফ করে রেখেছি যাতে কেউ ফোন দিতে না পারে ৷ বিছানায় গিয়ে কানে হেড ফোন লাগিয়ে দিয়ে গান শুনতে লাগলাম ৷


রিমঝিম আপু মনে হয় রনির সাথে জন্মদিনে খুব মজা করছে ৷ করবেই না কেন কয়েক মাস পর তাদের বিয়ে ৷ কেনো যে আমি রিমঝিম আপুকে ভালোবাসতে গেলাম ৷ খুব ঘুম পাচ্ছিলো

তখুনি আবার গাড়ির আওয়াজ পেলাম ৷

জানলার কাছে গিয়ে দেখি রিমঝিম আপু গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো৷


রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোতে রিমঝিম আপুকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ৷৷

নীল ড্রেস এ একদম পরীর মতো লাগছিলো ৷ কিন্তু এই পরীতো ধরা ছোয়ার বাইরে ৷

রিমঝিম আপু ফোন হাতে নিয়ে ফোন দিতে লাগলো হয়তো বা আমাকে ফোন দিচ্ছিলো ৷

কিচ্ছুক্ষন পর ফোনটা রাস্তায় জোরে ছুরে মারলো ৷ তারপর গাড়ি করে চলে গেলো ৷

আমি গিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ পরেরদিন কলেজে গেলাম ৷ কেন জানি আজ কলেজে যাওয়ার খুব ইচ্ছে করলো ৷


কলেজে ঢুকতেই দিশার সাথে দেখা.....!!


--কেমন আছো ?(দিশা)


--ভালো তুমি? (আমি)


--ভালো ৷ কাল কলেজে আসতে বললাম আর আজ আসছো ! (দিশা)


--আসলে কাল একটু কাজ ছিলো তাই আসতে পারি নি ৷ (আমি)


--ও তা ফোনটা অফ কেনো? (দিশা)


--চার্জ ছিলো না আর চার্জে দেওয়ার কথা মনে ছিলো না ৷ (আমি)


দিশার সাথে কথা বলতে বলতে রিমঝিম আপুর গাড়ি চলে আসলো ৷ আমি দিশার সাথে কথা বলে মাঠের এক কোনায় গিয়ে ফোন টিপতে লাগলাম ৷ 

হটাৎ কারো ছায়া আমার উপর পরলো ৷ তাকিয়ে দেখলাম রিমঝিম আপু ৷ আমি উঠে দারালাম ৷৷


--আপু তুমি কখন আসলে ? (আমি)


--কাল কই ছিলি ? (রিমঝিম আপু)


-ল্যপটপ টা সার্ভিসিং করতে গিয়েছিলাম আসতে আসতে দেরি হয়ে যায় ৷ (আমি)


ঠাসস......!! ঠাসস......!!


--মিথ্যা কথা বলবি না ৷ তুই কি মনে করিস আমি তোকে জানালার কাছে দেখি নি ৷ (রিমঝিম আপু)


* চুপ (আমি)


--তুই আমার সাথে এমন টা করলি । কতো আশা নিয়ে বসে ছিলাম আমি তোর জন্য ৷ আজ থেকে তুই আমার সাথে কথা বলবি না ৷ (রিমঝিম

আপু)


--সেটায় হয়তো ঠিক হবে । আপনার সাথে কথা বললে হয়তো আপনার হবু বর খারাপ মনে করতে পারে আর আপনাদের সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা আসতে পারে । তাই আমার মতো একটা বখাটে খারাপ ছেলের সাথে না মেশায় ভালো ৷ (আমি)


রিমঝিম আপু কিছু বলছে না ৷ রিমঝিম আপুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৷ চোখ দিয়ে পানি বয়ে পরছে ৷


কারনটা এখনো অজানা ৷ রিমঝিম আপু আর কিছুনা বলে চলে গেলো ৷ আমি আর ওখানে না থেকে বাসায় চলে আসলাম ৷

আবার আগের মতো হয়ে গেলাম ৷

সেই কলেজে গিয়ে আগের মতো সিগারেট খাওয়া কারো পরোয়া না করা ৷ একা চলা কোনো মায়ায় না জড়ানো ৷


তিনদিন পর মাঠের কোনায় বসে নোট করছিলাম সাথে একটা সিগারেট খাচ্ছিলাম ৷৷

তখম দেখলাম,,,


একা চলা কোনো মায়ায় না জড়ানো ৷ তিনদিন পর 

মাঠের কোনায় বসে নোট করছিলাম ৷

সাথে একটা সিগারেট খাচ্ছিলাম ৷

তখম দেখলাম ৷ রিমঝিম আপুর গাড়ি এসে মাঠের মাঝখানে দারালো ৷


রিমঝিম আপু গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো ৷

হয়তো আমাকে দেখতে পায় নি ৷

আমি নিজের মতো নোট করতে লাগলাম ৷

কিছুক্ষন পর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি রিমঝিম আপু আমার দিকে তাকিয়ে আছে ৷

চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালো দাগ ৷ রিমঝিম আপুকে দেখে একবার সিগারেটটা ফেলে দিতে চাইলাম ৷


কিন্তু কি যে মনে হলো ফেলে না দিয়ে মাথাটা নিচু করে নোট করতে লাগলাম ৷রিমঝিম আপু সেখান থেকে চলে গেলো ৷


আমি একটু পর বাসায় চলে আসলাম ৷

এরপর প্রতিদিন কলেজে গেলাম রিমঝিম আপুকে একটু আড়াল থেকে দেখার জন্য ৷

প্রতিদিন নিজের মনকে বলি কাল আর যাব না ৷ কিন্তু পরেরদিন ঠিকি কলেজে চলে যাই ৷

রিমঝিম আপু কলেজে আসে ৷ চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে থাকে ৷


রনিকে দেখি তার সাথে বসে থাকতে ৷ প্রতিদিন কলেজে গেলে দিশা মেয়েটা কথা বলতে আসবে ৷ রিমঝিম আপু মাঝে মাঝে আমার সাথে ওকে কথা বলতে দেখে তাকিয়ে থাকে ৷

হয়তো মেয়েটাকে আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করতে চায় আমি খারাপ হয়তো সেই জন্য ৷ আমিও যতটা সম্ভব দিশার থেকে দূরে থাকি ৷

এভাবে ২০ দিন কেটে গেলো ৷ আজ পাচ দিন হলো আর কলেজে যাই না ৷


আজ কলেজে যেতে কেনো জানি খুব মন চাইলো ৷ ব্যাগটা নিয়ে কলেজে গেলাম ৷ 

কলেজে গিয়ে চোখ দুটো কাকে জানি খুজছিলো ৷ কিন্তু তাকে খুজে পাচ্ছিলো না ৷

কলেজের চত্ত্বরে বসে ছিলাম ৷


একটু পর একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাড়ালো ৷

গাড়ি থেকে একজন পুলিশ অফিসার নেমে এসে চারদিকে দেখতে লাগলো ৷ তারপর আমাকে দেখে আমার দিকে আসতে লাগলো ৷


বুকের ভেতরটা কেমন জেনো করছিলো ৷

মনে হচ্ছিলো দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাই ৷

কিন্তু আমি তো কোনো দোষ করি নি তাই চুপচাপ বসে রইলাম ৷


পুলিশ অফিসারটি আমার কাছে আসলো...!!


--তোমার নাম আবির? (পুলিশ অফিসার)


--জি স্যার। (আমি)


--তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে চলো ৷ (পুলিশ অফিসার)


--কিন্তু কেন আর আপনি কে ? (আমি)


--আমি রিমঝিমের ভাইয়া ৷ (পুলিশ অফিসার)


--ওহ কিন্তু কেন যাব ? (আমি)


--গেলেই বুঝতে পারবে ৷ (রিমঝিম আপুর ভাইয়া)


--কিন্তু কোথায় ? (আমি)


--আমাদের বাসায় ৷ (রিমঝিম আপুর ভাই)


--আচ্ছা চলুন ৷ (আমি)


রিমঝিম আপুকে দেখার খুব ইচ্ছে করছিলো আর মনে মনে খুব ভয় হচ্ছিলো রিমঝিম আপু কি এমন করলো যে রিমঝিম আপুর ভাই আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাচ্ছে ৷


কিচ্ছুক্ষন পর রিমঝিম আপুদের বাসায় গিয়ে পৌছালাম।।বাসার ভিতরে গেলাম ৷ রিমঝিম আপুর ভাইয়া আমাকে বসতে বলে কোথায় জেনো গেলেন ৷ 

আমি সোফায় বসে রইলাম।


কিচ্ছুক্ষন পর দুইজন মহিলা আসলেন ৷

একটু পর রিমঝিম আপুর ভাইয়া আর একজন লোক উপর থেকে নেমে আসলেন।

হয়তো মহিলাদের মধ্যে একজন রিমঝিম আপুর মা আর আরেকজন ভাবি আর রিমঝিম আপুর ভাইয়ের সাথে লোকটি হয়তো তার বাবা ৷৷

সবাই আমার সামনে বসলেন ৷ আমি ভয়ে কুঁকড়ে মুকরে যাচ্ছিলাম ৷


--তাহলে তুমি আবির ৷ (রিমঝিম আপুর আব্বু)


--জি কিন্তু আপনারা আমাকে চিনেন কেমন করে ? (আমি)


--রিমঝিম বলেছে এমনকি তোমার ব্যাপারে সব জানি আমরা ৷ তুমি কী জানো যেদিন তুমি রিমঝিমের বার্থেডে তে আসনি সেদিন ও বাসার সব জিনিসপত্র ভেংগে ফেলেছে ৷ (রিমঝিম আপুর আব্বু)


*এত রাগ করেছে আমার উপর আমি না আসায়? (মনে মনে আমি )


--তোমার কথা ও প্রত্যেকদিন আমাদের কাছে এসে বলতো ৷ আমার মেয়েটা জীবনে যা কিছু চেয়েছে তাই এনে দিয়েছি ৷ কিন্তু শেষ মেষ যা চাইলো তা আমার এনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই ৷ ( রিমঝিম আপুর আব্বু)


--কি চেয়েছে আপু ? (আমি)


--শুধু তোমাকে চেয়েছে ৷ (রিমঝিম আপুর আব্বু)


--আমাকে মানে ? (আমি)


--হুম তোমাকে ৷ আমার মেয়েটা যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ও যখন আমাকে এসে বললো যে ও তোমাকে ভালোবাসে তখন ওর চোখে মুখে খুশি দেখে আমি বেশ অবাক হই । কারন আমি এতটা খুশি ওকে কখনোই দেখি নি।তোমার সাথে কিছুদিন আগে ঝগড়া হওয়ায় বাসায় এসে কান্নাকাটি করে ৷ ভালো মতো খাওয়া করে না। শুধু বলে আবির কে এনে দেও ৷ 

দয়া করে আমাদের ফিরিয়ে দিও না ৷ আমার মেয়েটা তোমাকে ছাড়া যে মরে যাবে ৷ (রিমঝিম আপুর আব্বু আমার হাত ধরে বলে)


--আরে কি করছেন আপনি আমার গুরুজন । আপনার মাথা নত করা শোভা পায় না ৷ কিন্তু আমার মতো একটা অনাথ ছেলের কাছে আপনার মেয়ে দিবেন আরেক বার ভেবে দেখুন ৷ (আমি)


--আমার মেয়ের খুশিতেই আমার খুশি ৷ (রিমঝিম আপুর আব্বু)


--আচ্ছা আপনারা যা ভালো বোঝেন ৷ কিন্তু রিমঝিম আপু কোথায় ? (আমি)


--উপরে আছে যাও। প্রথম রুমটাই ওর ৷ (রিমঝিম আপুর ভাবি)


রিমঝিম আপু রুমে গেলাম ৷ দরজা খোলাই আছে কিন্তু জানালা সব বন্ধ ।।

ঘরের ভিতরটা কেমন অন্ধকার হয়ে আছে ৷


#চলবে........!!!!


প্রিয় পাঠক পাঠিকা গণ আজকের এই পর্বটি কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন প্লিজ।


#পরবর্তী_পর্বের_জন্য_অপেক্ষা_করুন

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post