---------ভয়ানক সেই রাত----------
---writer:Muhin--------
------episode:- 2nd--------------
.
.
.
.
আমি আর স্যার দুজনেই পেছনে তাকিয়ে পড়ি।দেখি তাহমিদ সিড়ি থেকে পড়ে গেছে।স্যার দৌড়ে তাহমিদের কাছে গেলো।মনে হচ্ছে ওর একটা পায়ে মোচড় লেগেছে।আমিও তাহমিদ কোথাই আঘাত পেয়েছে সেটা দেখতে ব্যস্ত।হঠাৎ আমার চোখ গেলো তাহমিদের চোখের দিকে।ওর চোখ দুটোও আপুর মতো লাল।প্রচন্ড লাল।এবার আমার কেমন জানি খটকা লাগল।আমি ইচ্ছা করেই স্যারের চোখের দিকে তাকালাম।হুমম আমার সন্দেহটাই ঠিক।স্যারের চোখও একই রকম।চাচ্চু এ্যাক্সিডেন্ট করার জন্য না হয় আপু আর স্যারের চোখ লাল হতে পারে।তবে তাহমিদ??ও তো অনেক ছোট।এসবের কিছুই তো বোঝে না।আমি তাহমিদকে ছেড়ে উঠে দাড়ালাম।আর উপরের দিকে তাকিয়েই দেখি আপু সিড়ির এক কোণে দাড়িয়ে আমার দিকে ফিরে খিলখিলিয়ে হাসছে।আমি আর ওখানে না দাড়িয়ে সোজা সদর দরজা খুলে রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।পেছনে আর তাকালাম না।
.
বাহিরে আজ চাঁদের ফকফকে আলো।হুমম স্যার ঠিকই বলেছিলো আজ পূর্ণিমার রাত।চারিপাশের সবকিছু দেখা যাচ্ছে।এখানে চারিপাশে মাঠ।মাঠের ভেতরের সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।স্যারের বাসা থেকে অনেক দুরে চলে এসেছি।আর কিছুটা সামনে গেলে মনে হয় কাশবন পড়বে।কিন্তু আপু আজ এমন কেন করল??সব কিছু কেমন জানি অস্বাভাবিক ছিল।বারবার মনে পড়ছে আপুর সেই রহস্যজনক হাসি আর সেই বইয়ের পাতা উল্টোনোর কথা।তাই এবার আমি এসব ভুলে থাকার জন্য নিজেই শিষ দিতে লাগলাম।বাহ আমি তো ভালো শিষ দিতে পারি।আগে তো জানতাম না।আর জানবোই বা কী করে?? আগে কখনো চেষ্টা করেও তো দেখিনি।আসলেই শিষ দেওয়াটা আমার কাছে জঘন্য লাগে।এটা আমি মোটেও পছন্দ করি না।আমার মনে হয় এটা বংশের বাজে ধারা বহন করে।এদিকে ঘড়ির কাটা রাত দশটা ছাড়িয়ে গেছে।হঠাৎ আমার মনে হলো কেউ যেন জোড়ে জোড়ে কাঁদছে।কিন্তু এখানে তো কেউ নেই কাঁদবেটা কে??আমি এদিক ওদিক তাকিয়েই দেখি আমার থেকে কিছুটা দুরে একটা ছোট ঘর।ঘরটার ভেতরে যেন অন্ধকার লাগছে।তবে কান্নার আওয়াজটা যে ওখান থেকে আসছে সেটা বরাবরই বুঝতে পারছি।তবে এখানে কোনো ঘর আছে কই আগে তো দেখিনি??হুমম হয়ত বা খেয়াল করিনি কখনো।যাই হোক বিপদ না হলে কেউ তো আর কাঁদে না।হয়ত কোনো বিপদে পড়েছে সে।যাই হোক দেখে আসি।যদি কোনো সাহায্য করতে পারি!আমি আস্তে আস্তে ঘরটার দিকে এগিয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে ভেতরে অন্ধকার।কিন্তু কই এখন তো আর কোনো কান্নার আওয়াজ আসছে না??ধেতত আমি ওইসব ফালতু কথা ভাবছি তাই হয়ত এমন হচ্ছে।আমি ফিরে আসব বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই সেই আগের মতোই ঘরের মধ্য থেকে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল।আমি আস্তে করে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।দরজাটা খোলাই আছে।তবে ভেতরে কাউকেই দেখছি না।কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।যাই হোক ভয়কে কখনো পাত্তা দিইনি আমি।ভয়কে জয় করেছি সব সময়।এবারও ভয়কে ফেলে রেখে সরাসরি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।দেখি ঘরের এক কোণে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ।আর লাশটার পাশে বসে একটা মহিলা কাঁদছে।মহিলাটার মাথাইও ঘোমটা দেওয়া।এখানে একটা মোমবাতি জ্বলছে।এইজন্য মনে হচ্ছিলো ঘরটা অন্ধকার।আমি আস্তে আস্তে মহিলাটার পাশে গিয়ে বসলাম।
-আপনি কাঁদছেন কেন??কী হয়েছে??
-আমার স্বামী মারা গেছে।কিন্তু এই রাতে কে আমাকে সাহায্য করবে??এই গ্রামের কেউ আমাকে সাহায্য করতে চাই না।
-কেন আমি তো আছি।আমি করব।বলুন আপনার কী সাহায্য দরকার??
-আমার সাথে সারারাত থাকতে হবে।আমার একা থাকতে ভয় লাগছে।
-কিন্তু আমি সারারাত থাকতে পারব না।আপনি চাইলে আপনি এখনই আপনার স্বামীকে কবর দিতে পারেন।আমি আপনাকে সাহায্য করব।
-হুমম তবে দুইটা কবর খুড়তে হবে।
-দুইটা মানে??দুইটা কবর খুঁড়বো কেন??
-কেন একটা আমার আর একটা আমার স্বামীর।
উঁনার কথা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম।ঘরের মধ্যে বাতাস শুরু হয়ে গেলো।আর সেই বাতাসে উনাদের মুখের কাপড় সরে গেলো।সাথে সাথে আমি লাফ দিয়ে দুরে সরে গেলাম।আমি দেখি মহিলার চোখ দুটো ধবধবে সাদা।মনে হচ্ছে মৃত মানুষের চোখ।মাথাটা সামনে থেকে ফেঁটে যাওয়া।আর সেখান থেকে ঘিলু বের হয়ে পড়ছে।এবার আমি মেঝেতে শুয়ে থাকা লাশটার দিকে তাকালাম।দেখি উনার চোখ দুইটা খোলা,আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর জিভটা প্রায় এক হাত বের হয়ে আছে।লাশটি শুয়ে থাকা থেকে উঠে বসল।আর মহিলাটি হো হো করে হাসতে লাগল।রুমের বাতাসে মহিলার চুলগুলো উড়ে ওই বেড়িয়ে পড়া ঘিলুতে গিয়ে বারি খেতে লাগল।আমিও আর না দাড়িয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।আর সাথে সাথে ঠাস করে দরজাটা লেগে গেলো।আর একটু দেরি হলে এতক্ষণে আমি ওই ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে যেতাম।আমি রাস্তাই এসে কাঁপতে লাগলাম।তারপর পেছনে তাকালাম।কিন্তু না ওখানে আর সেই ঘরটা নেই।আমি ওখানে মাটিতেই বসে পড়লাম।যেন আর চলার ক্ষমতা নেই আমার।বেশ কিছুক্ষণ বসে উঠে দাড়ালাম।আর মনে হলো আমি উপরে কোনো কিছুতে আঘাত পেলাম।আমি উপরের দিলে তাকিয়ে দেখি,গাছের উপরে পা বাধিয়ে মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে কেউ ঝুঁলে আছে।আর আমি উঠতেই ওই মাথার সাথে ঘা খেয়েছি।লাশটার জিহবা বের হয়ে আছে।আমি খেয়াল করে দেখি একটা না ওখানে দুইটা লাশ।একটার মাথা নিচের দিকে আর একটা উপরের দিকে।আমার বুঝতে বাকি রইল না এটা সেই ঘরের ভেতরের মানুষ দুটো।আমি দৌড়াতে শুরু করলাম ওখান থেকে।আমার সাথে সাথে লাশ দুটোও ঝুলতে ঝুলতে আসতে লাগল।আমি প্রাণপণে ছুটে চলেছি।না স্যারের কথা মতো স্যারদের বাসাই থাকলে আর এই পরিস্তিতির মুখে পড়তে হত না।নিজের উপরে নিজেরই রাগ হতে লাগল।না আর পারছি না।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি দাড়িয়ে পড়লাম।আমি দেখি আমি কাশবনের প্রায় অর্ধেক দুরে চলে এসেছি।আমার পেছনে আর কেউ নেই।আমি ওখানে দাড়িয়ে হাপাতে লাগলাম।যাক তাহলে বাচলাম।আর একটু গেলেই নদী পড়বে।নদীটা পার হতে পারলে আর কোনো ভয় নেই।হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কাশ বনের ভেতরে কিছু একটা খুশখুশ করছে।আমি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি কাশবনের ভেতর থেকে সেই মহিলা হামাগুড়ি দিতে দিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।একি ওদের তো পেছনে দেখে আসলাম এখানে আসল কখ করে?? মহিলাটা গোঙাতে গোঙাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমি আবার দৌড়াতে শুরু করলাম।
.
বেশ কিছুক্ষণ পরে আমি নদীর পাশে এসে দাড়ালাম।হুমম এবার যেন একটু হাফ ছাড়লাম।তবে এখনো পেছনে তাকাচ্ছি না।কারণ পেছনেই সেই কাশবন।কিন্তু এখন নদী পার হবো কী করে??এত রাতে তো কোনো মাঝিও পাওয়া যাবে না।এখন কী করব আমি??পেছনেও তো যাওয়া সম্ভব নয়।যাই হোক,,দেখি কোনো মাঝি পাওয়া যাই কি না??আচ্ছা বাসা থেকে কী আমার জন্য একটুও ভাবছে না??যে আমি কেন এত রাত করছি??আব্বু আসলেও তো পারে।আমি নিরুপাই হয়ে ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম।বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখি দুর থেকে নদীর পানিতে ঢেউ আসছে।আর মনে হচ্ছে কেউ গান গাইছে।তাহলে কী কোনো মাঝি আসছে??হুমম একটু পরেই আমার ধারণা ঠিক হলো।আমি দেখি একটা মাঝি গান গাইতে গাইতে এদিকে এগিয়ে আসছে।যে ভাবেই হোক এই মাঝিটাকে রাজি করাতে হবে।নাহলে সারা রাতেও আর মাঝি পাবো না।এখানেই থাকতে হবে।কিন্তু মাঝিটা কী যাবে??যদি না যাই??তবে একটু পরেই আমাকে ভুল প্রমাণিত করে মাঝিটা নিজেই আমার সামনে এসে নৌকা ভিড় করালো।
-কী হলো মা এত রাতে এখানে একা দাড়িয়ে আছো কেন??তুমি কী জানো পূর্ণিমা রাতে এখানে কত ধরণের ভয়ানক কাজ ঘটে।যার সর্বশেষ হয় মৃত্যু??
হুমম উনার কথাগুলো মিথ্যা না।কেননা আমার সাথেও তো তেমনটাই ঘটল।
-আঙ্কেল আজ অনেক বড় বিপদে পড়ে গেছি।নদীটা পাড় হতে হবে।যদি একটু পাড় করে দিতেন তাহলে বড্ড উপকার হয়।
-জি মা অবশ্যই।উপরে উঠে বসো।
চলবে,,,,,,,,
ধন্যবাদ🥰🥀