----------ভয়ানক সেই রাত----------
--------writer:-muhin--------
--------episode:- 3&last--------------
.
.
.
.
.
আমি উনার কথা মতো নৌকাই উঠে বসলাম।আমি এপাশে আর উনি ওপাশে।একটা সময় নৌকা চলা শুরু করল।মাঝিও চলা গান গাইতে নৌকা বাইতে লাগল।চারিপাশ থেকে শো শো করে বাতাস এসে মনটা ভরিয়ে তুলেছে।অনেক ভালো লাগছে এখন।চাঁদের আলো নদীর পানি চকচক করছে।আর আমিও নীরবে একমনে নদীর সেই সুন্দর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছি।তারমধ্যে মাঝির সুরেলা কণ্ঠে গান বুকটা জুড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ আমার কেন জানিনা মনে হলো নৌকাটা নিজের ইচ্ছাই ক্রম ছাড়াই চলছে।মাঝির গানও বন্ধ হয়ে গেলো??নৌকাটা এদিক ওদিক দোল খেতে লাগল।আমি তাকিয়ে দেখি মাঝি চুপচাপ তার দুই হাটুর মাঝে মুখ দিয়ে বসে আছে।
-কী হলো আপনি এভাবে বসে আছেন কেন?? নৌকা তো নিজের ইচ্ছাতেই চলছে।
উনি আমার কথাই কোনো উত্তর দিলো না।বিষয়টাকে আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলো।তাই আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।আমি উঠে দাড়াতেই মাঝি আমার দিকে ফিরে তাকালো।এ কী,,এ তো সেই লোক।উনার জিভটা এখনো বের হয়ে আছে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি নদীতে লাফ দিয়ে পড়ল।আর নদীর পানির ঢেউয়ে নৌকাটা এদিক ওদিক দোল খেতে লাগল।আমি আবার আগের মতো কাঁপতে লাগলাম।এখন আমি কী করব??নৌকা নিজের মতো করেই সরে যেতে লাগল।এখানে তো কোনো দাড়ও নেই যেটা দিয়ে আমি ডাঙাই যাবো।নদীতে তো লাফও দিতে পারব না।কারণ ওই আত্মাটা তো নদীতেই লাফ দিলো।ডাঙাই সবার সাথে লড়া গেলেও পানিতে একটা মানুষ হয়ে আত্মার সাথে লড়া অসম্ভব।পানির সাথে কখনো লড়া যাই না।এবার নৌকাটা কেমন জেনো দোল খেতে লাগল।যেন এখনি পানিতে ঢুবে যাবে।আমি একটু খেয়াল করতেই দেখি পানির নিচ থেকে দুইটা হাত নৌকার উপরে দিয়ে কেউ উঠার চেষ্টা করছে।তারপর দেখি ওই আত্মাটাই হামাগুড়ি দিয়ে নৌকাই উঠার চেষ্টা করছে।আমিও আস্তে আস্তে পেছনে সরে যাচ্ছি।আমি কখন জানিনা নৌকার একেবারে কিণারাই চলে এসেছি।যখন বুঝতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেলো।তার আগেই পানির নিচ থেকে কেউ আমার পা ধরে টেনে নদীতে নিয়ে ফেলল।আর নৌকাটাও কোথাই যেনো গায়েব হয়ে গেলো।আমি এখন মাঝ নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছি।আমি কিনারাই যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।কেউ যেন নিচ থেকে আমার পা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি হাত পা ছুড়ছি কিন্তু কিসে যেন বেধে যাচ্ছে।আমি তাকিয়ে দেখি আমার পাশে অসংখ্য মাথা পানি থেকে ভেসে উঠছে।চারিপাশে নদীতে শুধু মাথা আর মাথা।সব মাথাগুলো চোখ খুলে আছে।আস্তে আস্তে মাথাগুলোর পুরো বডি ভেসে উঠতে লাগল।হ্যাঁ,এখানে সব মরা লাশ।সবগুলো ভাসতে ভাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।তারপর কী হলো আমি আর কিছুই জানি না।জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।তবে জ্ঞান হারানোর আগে এইটুকুই বলতে পারি কেউ আমার পা ধরে পানির নিচে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি শুধু পানির নিচে আমার সামনে ওই মহিলা আত্মা আর তার স্বামীর বিভংস চেহারা দেখেছিলাম।
.
.
যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমি আমার রুমে বিছানাই শুয়ে আছি।আর আমার এক পাশে একটা চেয়ারে স্যার বসে আছে।আর আব্বু মাথার কাছে আর আম্মু পায়ের কাছে বসে আছে।আমি চোখ মেলতেই আগে তাকালাম ঘড়ির দিকে।কারণ আজ আমার পরীক্ষা।কিন্তু দেখি এখন সকাল এগারোটা বাজে।কাল রাতের কথা আবার মনে পড়ে গেলো আমার।আমি আবার কাঁপতে লাগকিছু
-তৃষা সরি।আমাকে ক্ষমা করে দিও।কাল তোমার সাথে এটা করা উচিত হয়নি আমার।
-না স্যার।আপনার তো কোনো দোষ ছিল না।এখন বলেন তাহমিদ কেমন আছে??
-তাহমিদ মানে??ওর তো কিছু হয়নি।
-আরে কাল রাতে ও তো সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলো।আর ওর পায়ে মোচড় লেগেছিলো।
-তৃষা আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।তাহমিদ কখন কাল মোচড় পেলো??আমরা তো সবাই হাসপাতালে ছিলাম।বাসাই তো কেউ ছিল না।
-কী বলছেন আপনি?? কাল রাতে তো আপু আর তাহমিদ বাসাই ছিল।আর আপনি তো পরে আসছিলেন।
-না কাল কেউ বাসাই ছিল না।আমি ভেবেছিলাম তোমার সাজেশন্সটা বাসাই দিয়ে যাই।তাহলে তোমার আর কষ্ট করা লাগবে ।কিন্তু ওটা নিয়েই নদী পাড় হতেই আমার কাছে ফোন আসে আমার মেজে ভাই এ্যাক্সেডেন্ট করেছে।তাই আমি ওখানে চলে যাই।আর বাসার সবাইকে যেতে বলি।আর বাসাই তারাতারি হাসপাতালে চলে যাই।আর আমি তো আজ ভোরে বাসাই ফিরলাম।
-তাহলে আমাকে সাজেশন্স দিয়েছিলো কে??
-কই সাজেশন্স তো আমার কাছে।এই দেখো,,,,
বলেই স্যার সাজেশন্সটা বের করে দিলো।
-তাহলে আমার কাছে ওইটা কী??
আমি ব্যাগটা খুলে সাজেশন্সটা বের করি।তবে এ কী এটা তো সাজেশন্স নয় সাদা একটা কাগজ।তবে আমি কাল স্পষ্ট দেখেছি এটা সাজেশন্স ছিলো।আমি বোকা হয়ে গেলাম।
-তোমার কাল কী হয়েছিলো সেটা বলো তো??
আমি সবাইকে কাল রাতের ঘটনা খুলে বললাম।আম্মুকেও বকা দিলাম তারা কেন আমাই নিয়ে আসতে গেলো না??কিন্তু আম্মু জানাই কাল নাকি একটা নাম্বারে আমি কথা বলি,,যে আমি নাকি স্যারের বাসাই থাকব।তাই তারা আমার খোঁজ করতে যাই নি।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই নাম্বারটা এখন আর নেই।আমার কাছে এই ঘটণা শুনে স্যার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।আব্বু আমার সাথে এমন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্যার জানাই,,,,
এখান থেকে প্রায় বিশ বছর আগে স্যারদের গ্রামে একটা পরিবার থাকত।তাদের সাথে কেউ মিশত না।কারণ তারা অনেক খারাপ ছিলো।পরিবার বলতে তারা স্বামী স্ত্রী দুজন থাকত।লোকটা মাঝি ছিল।তারা মানুষের অনেক ক্ষতি করত।প্রতি রাতে এভাবে কাঁদত।কোনো মানুষ গেলে তাদের ক্ষতি করত।কারো ছেলে কারো মেয়েকে প্রতি পূর্ণিমা রাতে মেরে শয়তানের উপাসনা করত।তাই তাদের কোনো সমস্যাইও কেউ যেত না।তেমনই একদিন রাতে ওই মহিলাটি কাদতে থাকে প্রতিদিনের মতো।সেদিন কাঁদার সুরটা অন্যরকম ছিল।আর ওই মহিলা বারবার বলছিলো আজ কোনো প্রাণ না দিতে পারাই আমার স্বামীকে মেরে ফেলল।সেদিনও কেউ যাইনি।সকালে উঠে সবাই দেখে ওদের সে ঘর আর নেই।এমনকি তাদেরও কোনো খোঁজ ছিল না।তিনদিন পরে ওদের লাশ পাওয়া যাই যেখানে যেখানে ওদের ঘর ছিল।তবে কেউ তাদেরকে কবরও দেওনি।কুকুর শেয়ালে ছিড়ে খেয়েছিলো ওদের লাশ।তারপর থেকে প্রতি পূর্ণিমা রাতে এমন ভাবে মানুষের জীবন নেই ওরা।যার জন্য এখন ওই গ্রামে মানুষ কম।বিশেষ করে এপাশে কোনো মানুষই নয়।আর কাল রাতে আমি নাকি ওদেরই পাল্লাই পড়েছিলাম।
-তার মানে কাল রাতে আমি আপনাদের বাসাই যাদের সাথে ছিলাম তারা কেউ মানুষ নয়??
-না তৃষা।তবে একটা কথা আমি যখন ভোরে বাসাই যাই তখন দেখি আমাদের সদর দরজা খোলা।আমি ভেবেছিলাম তারাহুরাই মনে হয় সব দরজা খুলে রেখে গেছে।
-কিন্তু আমাকে কে নিয়ে আসল।
-আমি তৃষা।আমি ভোরে বাসাই ফিরে ভাবলাম তোমাকে সাজেশন্সটা দিয়ে আসি।তাই আসতে গিয়ে নদীর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখি তোমাই।তারপর আমি তোমাকে নিয়ে আসি।
-কিন্তু আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না স্যার??
-তাই কী সমস্যা নেই।ফাস্ট গার্ল তুমি হবে এটা সবাই জানে।এই পরীক্ষাটা তুমি সুস্থ হলে দিয়ে দিও।
-অনেক ধন্যবাদ স্যার আপনাকে।
-তৃষা আমি এখন আসি তাহলে।
-জি স্যার।আব্বুও স্যারের সাথে গেলো।
.
আমি বুঝতে পারলাম কাল রাতে এইজন্যই আপু এমন করেছিলো।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।আমি তো ভাবছিলাম স্যারের বাসাই থাকলে ভালো হত।কিন্তু এখন স্যারের বাসাই থাকলে হয়ত বা আর বেচেই ফিরতাম না।আমি আজও ভুলিনি সেই রাতের ঘটনা।যাই হোক বেচে তো ফিরেছি তাই ভালো।যাই হোক নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলাম এইটাই সবথেকে বড় আমার কাছে।তারপর থেকে আমি আর কখনো স্যারের বাসাই পড়তে যাইনি।স্যার নিজেই আমাকে পড়িয়ে দিয়ে যেত।
.
,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,
.
.
ধন্যবাদ🥰🥀