----- ভয়ানক_সেই_রাত-----
-----Writer:Muhin-----
------episode: one -------
.
-প্লীজ তৃষা,বাবু আমার জোড় করিস না,আজ তুই একা যা।
-না পারব না।তুইও জাবি আমার সাথে।আমি একা যেতে পারব না।আমি কী একা গেছি কখনো??তাও আবার এমন সন্ধ্যাই??
-আমার শরীরটা ভালো লাগছে না রে।তাই আজ তোকে একা যেতে বলছি।আচ্ছা তুই শুধু সাজেশন্সটা নিয়ে চলে আয় স্যারের কাছ থেকে।
-তোকে ছাড়া যেতে কেমন জানি লাগছে।নদীটা পাড় হওয়ার জন্যই সমস্যা।একা বিরক্ত লাগে।ধেতত আমিও যাবো না।
-তুই একটা কাজ কর আজ পড়তে হবে না শুধু ওইটা নিয়েই চলে আয়।জানিস তো কাল এক্সামিনেশন,সাজেশন্সটা তো লাগবেই।
-যা যা তোর যেতে হবে না।আমি একাই পারব।
-আচ্ছা বাবু ঠিক আছে,তোর একা যেতে হবে না।আমিও যাচ্ছি,চল।
-না রে মীম তুই তো অসুস্থ।এটা তো আমার বাইনা বুঝিস না??তুই থাক আমি জাবো আর স্যারের কাছ থেকে সাজেশন্সটা নিয়েই চলে আসব।
-আমি জানতাম তুই এটাই বলবি।কিন্তু আমাকেও দিয়ে যাস বুঝেছিস বোনু??
-পারব না দিয়ে যেতে।পারলে নিয়ে আসবি আমার বাসা থেকে।
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা।তাই নিয়ে আসব।
-বাই,বাই গেলাম।থাক তুই।
মীমকে এই কথা বলেই বের হয়ে গেলাম ওর বাসা থেকে।মীমের পরিচয়টা আশা করি দিতে হবে না।সবাই জানেন মীম আমার সবথেকে কাছের ফ্রেন্ড।প্রতিদিন মীম আর আমি স্যারের বাসাই পড়তে যাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে।আর আটটার দিকে চলে আসি।কিন্তু আজ মীমের শরীরটা অনেক খারাপ।যার জন্য ও যেতে চাইছে না।আর গেলেও আমি চাই না ও যাক।কারণ আমার কষ্টে মীমের যেমন কষ্ট হয় তেমনই ওর কষ্টে আমারও তেমনটাই কষ্ট হয়।প্রথমে ভেবেছিলাম আজ পড়তে যাবো না।তবে কালই আমাদের এক্সামিনেশন।যার জন্য যেতেই হবে।তাছাড়া স্যার নিজেই বলেছে স্যারের বাসা থেকে সাজেশন্সটা নিয়ে আসতে।কারণ স্যার ভুলে ওইটা বাসাই ফেলে রেখে এসেছিলো।তাই পড়তে গিয়ে নিয়ে আসতে বলল।যাই হোক,মীমদের বাসা থেকে বাসাই এসে কলেজ ব্যাগটা নিয়ে স্যারের বাসার দিকে রওনা হলাম।বাসাই বললাম না যে মীম আজ যাবে না।কারণ এই কথা বললেই বাসা থেকে সাথে কেউ যেতে চাইবে।কিন্তু এটা আমার একদমই পছন্দ না যে আমার সাথে বাসার কেউ যাক।বাসা থেকে বের হলাম সময়টা হয়ত ৬.২৫ হবে।আজ একটু লেট হয়ে গেলো বাসা থেকে বের হতে।আগেই বলেছি স্যারের যে যেতে হলে আমাদের বাসা থেকে কিছুদুর গেলে একটা নদী পাড় হতে হয়।তারপর অনেক বড় একটা কাশ ফুলের বাগান পড়ে।রাস্তার দুই পাশ দিয়ে শুধু কাশ ফুলের বাগান আর মাঝখান দিয়ে ছোট শুরু রাস্তা।এই কাশ ফুলের বাগানটা পার হতে পারলে একটা বড় রাস্তা পড়ে।তবে স্যারদের বাসা একটু গ্রামের ভেতরে হওয়াই রাস্তাটা কাঁচা।আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই।রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুটা সামনে গেলেই স্যারের বাসা।যেহেতু আমি ছয়টা পঁচিশের দিকে বের হয়েছি সেহেতু চারিদিকে হালকা হালকা অন্ধকার হয়ে গেছে।নদীটা পাড় হতে না হতেই মাগরিবের আযান দিলো।আমি খুব দ্রুত পা চালিয়ে কাশবনটা পাড় করলাম।এখানে আশাপাশে কোনো বাড়িঘর নেই।একেবারেই ফাঁকা রাস্তা।যাই হোক কোনো রকমে তারাতারি হেঁটে কিছুক্ষণ পরে স্যারের বাসার সামনে পৌঁছে গেলাম।স্যারের বাসার আশেপাশেও কোনো বাসা নেই।আজ কেন জানিনা মনের মধ্যে ভয় ভয় করছে।হয়তো একা এসেছি তাই।আমি এদিক ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে কলিংবেল চাপতে লাগলাম।কিন্তু প্রায় দশ মিনিট কলিংবেল চাপার পরেও কেউ দরজা খুলল না।
এ কী কেউ দরজা খুলছে না কেন??তাহলে ভেতরে কী কেউ নেই??আমি চুপচাপ কিছুক্ষণ ওভাবেই দাড়িয়ে রইলাম।মনের ভেতরে অনেক প্রশ্ন বয়ে যাচ্ছে।এমন তো হওয়ার কথা নয়।স্যার তো আমাকে আসতে বলল।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাসাই কেউ নেই।বাসার সবাই কই গেলো??না এখানে আর দাড়িয়ে না থেকে বাসার দিকে পা বাড়াই।না হলে অনেক রাত হয়ে যাবে।আমি এটা ভেবে যখনই পেছনে ফিরব তখন ভেতর থেকে কেউ যেন কথা বলে উঠে।
-বাহিরে কে??
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম এটা তৃপ্তি আপু।তৃপ্তি আপু হলো স্যারের মেয়ে।আপু আমার থেকে দুই-তিন বছরের বড় হবে।স্যারের দুইটা ছেলেমেয়ে।তৃপ্তি আপু এবার অনার্সে পড়ে।আর তাহমিদ(স্যারের ছেলে) সে অনেক ছোট।সবেমাত্র দুই বছরে পা দিয়েছে।যাই হোক আমি আপুর কথাই সাড়া দিলাম।
-আপি দরজা খুলুন।
আমার কথাই আপু দরজা খুলে দিলো।
-আরে তৃষা তুমি??আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আজ পড়তে আসবে না।
-আরে আপু বলেন না স্যার তো সাজেশন্সটা নিয়ে যাইনি কলেজে।তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।
-আসো ভেতরে আসো।
বলেই আপু হনহন করে ভেতরে ঢুকে গেলো।সদর দরজাটাও লাগালো না।তাই দরজাটা আমিই লাগিয়ে দিলাম।আপু নিচে না বসে সরাসরি দুই তালাই উঠে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে বাসাই আপু ছাড়া আর কেউ নেই।
-আপু বাসাই কাউকে যে দেখছি না??আপনি ছাড়া কী আর কেউ নেই ??
আপু আমার কথাই কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত তার রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল।তারপর খুব দ্রুত মনে হচ্ছে রাগে রাগে একটা বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগল।যেন এখুনি বইটা ছিড়ে ফেলবে।আপুর চোখদুটোও প্রচন্ড লাল দেখাচ্ছে আজ।মনে হচ্ছে চোখে রক্ত জমে আছে।আমার কেন জানিনা আজ অন্যরকম ভয় করছে।আমি আবারও সাহস নিয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,
-আপু স্যার কোথাই??অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।আমার তো বাসাই ফিরতে হবে।
আমার কথা শুনে আপু আমার দিকে তাকিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে পড়ল।মনে হলো আপুর চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠেছে।
-তৃষা আর বলো না।আসলে আব্বু বাসাই নেই।
-বাসাই নেই মানে??কোথাই গেছে??
-আজ সন্ধ্যবেলা চাচ্চু এ্যাক্সিডেন্ট করেছে তাই বাসার সবাই মিলে সেখানেই গেছে।
বাসাই শুধু আমি আর তাহমিদ(স্যারের ছেলে) আছি।
-তাহমিদ?? কী বলেন আপু??সে কোথাই??তাকে তো দেখছি না??
-ও আম্মুর রুমে ঘুমিয়ে আছে।
আপুর মুখে এসব শুনে মূহুর্তের মধ্যেই আমার মনের সব ভয় দুর হয়ে গেলো।এই জন্যই আপু এমন করছে।চাচ্চুর এ্যাক্সিডেন্ট হওয়াতে কাঁদার জন্য মনে হয় আপুর চোখ লাল হয়ে আছে।তবে অবাক করার বিষয় না??বাসাই কেউ নেই আর আপু ছোট ভাইটাকে ফেলে এখানে এসে কী করে বসে থাকতে পারে??
-আপু তাহমিদকে একা রেখে এখানে বসে আছেন কেন?? চলুন ওর রুমে যাই।ও ভয় পাবে তো।
-তোমাকে এত মাথা ঘামাতে বলেছি নাকি??চুপ করে বসে আছো বসেই থাকো।বেশি কথা বললে কিন্তু......(আপু ধমকের সুরে কথাটা বলল)
আপুর ধমকে আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলাম।ভাবতেই অবাক লাগছে আপু আমার সাথে এভাবে কথা বলছে।আপু আমার বড় হলেও আমরা বান্ধবীর মতো।আজ পর্যন্ত কোনোদিন আপুর এমন ব্যবহার দেখিনি।আসলে অনেক নম্র ভদ্র মেয়ে আপু।কিন্তু আজ এমন করছে কেন??এই পুরো বাড়ীর ভেতরে কোনো মানুষের সাড়াশব্দ নেই।শুধুমাত্র শোনা যাচ্ছে আপুর বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর শব্দ।
.
হঠাৎ আমি খেয়াল করি আপু যে বইটার পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে সেটাই কোনো কালো বর্ণ নেই।যত পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে সব যেন রক্তে মাখামাখি।আমি থ মেরে ওদিকে তাকিয়ে আছি।এবার দেখি আপু তার এক আঙ্গুল দিয়ে ওই রক্ত কিছুটা নিয়ে মুখে দিলো।না এসব কী দেখছি আমি?? মাথাটার মধ্যে কেমন জানি ঝিমঝিম করছে।না সব ভুল দেখছি আমি।মনে হয় শরীরটা ভালো লাগছে না।এখনই বাসাই যেতে হবে।আমি আপুর দিকে না তাকিয়েই বললাম,,,,,
-আপু আমি চলে যাচ্ছি।স্যার তো এখনো আসল না।
-না যে কাজ করতে এসেছিলে সেটা করেই যাবে।
-কিন্তু আপু আমি একা বাসাই ফিরব কী করে??
-আচ্ছা তুমি বসো আমি দেখি সাজেশন্সটা কোথাও পাই কি না??
বলেই আপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আমি চুপচাপ বসে রইলাম।আর মাঝে মাঝে টেবিলের সেই বইটার দিকে তাকাচ্ছিলাম।এখন বইটা ঠিকই আছে।
-না তৃষা, কোথাও পেলাম না সাজেশন্সটা।আর আব্বুর ড্রয়ারটাও লগ করা।
-ওকে আপু।তাহলে আমি চলে যাই।
এই কথা বলার সাথে সাথে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ কথা বলে ওঠে।আমি তাকিয়ে দেখি স্যার দাড়িয়ে আছে।
-এই তো তৃষা আমি চলে এসেছি।
-ওহ স্যার আপনি এসেছেন??
-হুমম আমি তো জানতাম তুমি আসবে।তাছাড়া আজ পূর্ণিমা রাত আসতে তো হতোই।
-মানে স্যার??আপনার কথা বুঝতে পারলাম না।
-না কিছু না।আমি সাজেশন্সটা নিয়ে আসছি।
.
আমি পাশ ফিরতেই দেখি আপু নেই।হুমম মনে হয় চলে গেছে।একটু পরেই স্যার ফিরে এসে সাজেশন্সটা আমাকে দিলো।আমি ওটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত সাড়ে নয়টা।
-স্যার আমি এখন আসি।
-আসি মানে??পাগল হলে নাকি??এত রাতে একা যাবে কীভাবে??তার থেকে আজ এখানেই থেকে যাও।
-না স্যার বাসাই টেনশন করবে।তাছাড়া বাসাই গিয়ে পড়তেও হবে।
-ঠিক আছে।চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
আমিও স্যারের কথাই না করলাম না।কারণ একা যেতে আমারও ভয় করবে।সন্ধ্যাই দেখলাম রাস্তাই কেউ নেই।তাহলে এত রাতে মানুষ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।স্যার আর আমি দুই তলা থেকে মেনে যখনই সদর দরজার সামনে এসে দাড়ালাম তখনই পেছনে জোড়ে একটা চিৎকার হলো।
চলবে,,,,,,
ধন্যবাদ🥰🥀