লেখকঃ#Mahbub_Rohman_Shuvo
পর্বঃ ০৬
জামিনুরঃ আগে বল তুই আমাকে মাফ করে দিস কিনা ??এরপর তোকে সব বলছি।
আমিঃ আচ্ছা তোকে মাফ করলাম। এখন কি হয়েছে তা আমাকে বল।
এরপর জামিনুর উঠে আমাকে যা বললো তা শুনে আমার মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল । মনে হচ্ছিল ওখানেই মেরে ফেলি কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করলাম কারণ যাই হোক ও আমার বন্ধু।
🌷জামিনুরঃ আমি তোকে মারতে এসেছিলাম।
আমিঃ কি তুই আমাকে মারতে এসেছস মানে??
জামিনুর এমন কিছু বলল ,, যা শুনে আমি বুঝতে পারলাম যে জমিনুর আমাকে কেন মারতে এসেছিল।
জামিনুর কি বলেছে তাকে আপনার শুনতে চান?? আচ্ছা শুনুন তাহলে। জামিনুর বলল,,,,
🌷 জামিনুরঃ দোস্ত কালকে যখন আমরা বাসায় ফিরলাম তখন বাসায় গিয়ে দেখলাম,, ,, কয়েকজন লোক আমাদের বাড়িতে এসেছে।। সুট বুট পড়া।। তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল তারা কোন গ্যাং এর লোক। তাদের সবার হাতে পিস্তল ছিল। এমনকি তারা আমার আব্বু আম্মুকে বেঁধে রেখেছিল।। তাদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছিল। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"" এই যে আপনারা কারা আর এখানে কি করছেন???? আমার বাবা-মাকে আপনার ভিতরে রাখছেন কেন??"
তখন তাদের গ্যাং লিডার বলল,
"" আমরা যে খুশি সেই হয় না কেন তোরে সেটা দেখার বিষয় না । তোর একটা কাজ করতে হবে । তাহলে তোর বাবা মাকে আমরা ছেড়ে দেবো তুই যদি কাজটা না করতে পারিস তাহলে তোর বাবা মাকে খালাস করে দেব।""
লোক গুলোর কথা শুনে তো আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারন আমি আমার বাবা মাকে খুব ভালোবাসি। তাই আমি তাদেরকে বললাম,
"" কি কাজ আমাকে বলুন আমি আপনাদের সব কাজ করে দিব। তবুও আপনার আমার বাবা-মাকে কিছু করিয়েন না। "
তা শুনে সেই গ্যাং এর লিডার বলল,,
"কাজটা কিন্তু এত সহজ না বলছিস তো??"
তখন আমি উত্তরে বলেছিলাম,
"" আমি আমার বাবা মার জন্য সকল কঠিন কাজও করতে পারব। তোমরা আমার বাবা মাকে কিছু করো না। আমি তোমাদের সব কাজ করে দেবো।"
তখন ওই গ্যাং এর লিডার বলল, "তোকে তোর বন্ধু রায়হান কে খুন করতে হবে।"
লিডারের এই কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ নিশ্চিত ছিলাম তখন লিডার আবারো বললো,
" কি হলো পারবি না তো?? আমি জানতাম তুই পারবি না। কি আর করার তোর বন্ধুর জন্য আজ তোর বাবা-মা মারা যাবে। বন্ধুত্ব হয়েছে আজ তিনদিন। আর বাবা-মা ছিল সারা জীবন। এখন তুই বল কি করবি। "
এটা বলে ঠিক আছে ট্রিগারে মধ্যে চাপ দিবে দিবে এমন ভাব। আমি ভয় বলে ফেললাম ,,
"আমি পারবো । আমি রায়হান কে মারতে পারবো। আমি মেরে ফেলবো রায়হানকে। তবুও আপনারা আমার বাবা-মাকে কিছু করিয়েন না। "
তখন সেই লোকটি আমার হাতে একটি পিস্তল দিয়ে বলল কালকের মধ্যেই আমি যেন তোকে মেরে ফেলি। প্রথমে তো ভেবেছিলাম আমি আত্মহত্যা করব। কিন্তু তারা সেখানে আমাকে শান্তি দিল না । তাই বাধ্য হয়ে এখন আমি তোকে মারতে এসেছি । কিন্তু দোস্ত পারলাম না, , আমি তোকে মারতে। আর পারলাম না আমার বাবা মাকে বাঁচাতে । আমি কি করবো এটা তুই বলে দে। (( এটা বলেই হো হো করে কান্না করে দিল)
আমার প্রথমে প্রচন্ড রাগ উঠেছিল এইটা শুনে যে ও আমাকে মারতে এসেছে কিন্তু ওর কথাগুলো শুনে আমার মাথা ঠান্ডা হয়ে গেল। আসলেই তো সে তার বাবা মাকে বাঁচাতে চেয়েছে। এখানে তো তার কোন দোষ নেই।
তখনই জোরে একটা গুলির শব্দ পেলাম,, আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি জামিনুর বুক থেকে গড় গড় করে রক্ত পড়ছে।
আমি জামিনুর কাছে থাকা বন্দুকটা হাতে নিয়ে । আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কে গুলি চালিয়েছে। কিন্তু আমি আশেপাশে কাউকে দেখলাম না। হঠাৎ করে সোনালিকার চিৎকার আমার কানে ভেসে আসলো।
🔰সোনালিকাঃ খুওওওওওওন।
সোনালিকা চিৎকার শুনে ভার্সিটির পিছনের দিকটা পুরো ছাত্র-ছাত্রীতে ভরে গেল। কোথা থেকে এত লোক চলে আসলো আমি বুঝতে পারলাম না।
সবাই এসে দেখলো জামিনুর মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং তার সামনে আমি গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
হঠাৎ করে পুলিশের গাড়ি আসার শব্দ পেলাম। এত অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশের গাড়ি আবার কে খবর দিলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। তখন সোনালিকা আমার সামনে এসে আমার দুই গালে ঠাস ঠাস ঠাস করে তিনটি থাপ্পর দিল । আর বলতে লাগলো,,
🔰 সোনালিকাঃ ছিঃ রায়হান ছিঃতুই এতটা খারাপ আমি তা আগে ভাবতে পারিনি। যে নিজের ভাইয়ের মত বন্ধুর বুকে গুলি করতে পারে তার মত খারাপ ছেলে হয়তো পৃথিবীতে আর নেই।
আমিঃ আমি জামিনুর কে গুলি করি নি।
আমার কথা শোনার পর সোনালিকা আমাকে আরো দুইটা ঠাশ ঠাশ করে থাপ্পর দিয়ে বলল,,,,
🔰 সোনালিকাঃ চুপ কর মিথ্যাবাদী। আমি নিজের চোখে দেখেছি।
মিথ্যাবাদী কথাটা শোনার পর আমার মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। তাই আমি ঠাস করে একটা থাপ্পর সোনালিকার গালে বসিয়ে দিলাম । যার ফলে সোনালিকা মাটিতে পড়ে গেল।।
আমি লক্ষ্য করে দেখলাম সোনালিকার ঠোঁট কেটে গিয়েছে।
এরপর আমি আমার ফোন বের করে মেঘেকে কল করলাম,,
আমিঃ হ্যালো মেঘ তুই তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এম্বুলেন্স নিয়ে আয় তো । 10 মিনিটের বেশি যাতে এক সেকেন্ডও না হয়।
এটা বলে আমি কলটা কেটে দিলাম। আমার কথা শুনে সোনালিকা মাটি থেকে উঠে গেল আর বলতে লাগলো,,,
🔰 সোনালিকাঃ তুই তো দেখি খুব চালাক নিজের বন্ধুকে মেরে এখন তুই তাকে বাঁচানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসছিস। ছিঃ , আমার এখন ভাবতে খুব ঘৃনা লাগছে যে তোর মত একটা ছেলে প্রপোজ একসেপ্ট করেছি।
কেন জানি সোনালিকার কথাগুলো আমার ভাল লাগছিল না। তাই তাকে আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারলাম। এই থাপ্পরটা খেয়ে সে আবারও নিচে পড়ে গেল।তখন আমি চিৎকার করে বললাম,,,
আমিঃ এই তোকে আমি বলেছি আমি খুন করিনি তাও আমার উপর মিথ্যা উপর দিচ্ছিস কেন তুই। ( চিৎকার করে)
🔰 সোনালিকা কে থাপ্পর মারা দেখে সামনে থাকে একজন পুলিশ অফিসার এসে আমার কলার চেপে ধরল।। আমি বলতে লাগলো ,,,
💀 পুলিশ অফিসারঃ এই কুত্তার বাচ্চা। তোর তো দেখি অনেক সাহস ।তুই আমার সামনে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলস। তোর হাত আজ আমি ভেঙে ফেলব ভেঙ্গে ফেলবো।
আমিঃ দেখুন অফিসার এখন আমার মাথা প্রচন্ড গরম আছে। আমি এখন যে কোন সময় যে কাউকে বলে চালিয়ে দিতে পারবো। তাই আপনি একটু দূরে থাকুন।
💀 পুলিশ অফিসারঃ আমি দূরে থাকবো মানে কি?? তুই আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি তা দেখবো??
এটা বলে পাশে থাকা একটা লাঠি নিয়ে এসে আমাকে মারতে যাবে তখনই মেঘ এসে উপস্থিত হলো।
মেঘ এম্বুলেন্স নিয়ে এসেছে।। সে এসে বলতে লাগলো,,
✔️মেঘঃ ভাই আপনার কি হয়েছে ভাই। আপনি এত ইমিডিয়েটলি আমার অনন্ত বলেন কেন ভাই।
আমিঃ মেঘ তুই তাড়াতাড়ি জামিনুরকে নিয়ে হসপিটালে যা । ওকে যেন কে গুলি করেছে । তুই ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। ওর যেন কিছু না হয়।
✔️মেঘঃ আচ্ছা ভাই আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এরপর মেঘ আমার কিছু লোকজন নিয়ে জামিনুর কি হসপিটালে পাঠিয়ে দিল। মেঘকে দেখে পুলিশ অফিসার বলতে লাগলো,,,
💀 পুলিশ অফিসারঃ আরে মেঘ ভাই আপনি এখানে কি করছেন??
আমিঃ মেঘ একটা কাজ কর তাড়াতাড়ি পুরো ভার্সিটিটা বন্ধ করে দে । যেন কেউ একজন ভার্সিটির বাইরে যেতে না পারে। আমিও দেখবো যে আমার কলিজার টুকরা বন্ধু কে গুলি করেছে।
এটা শোনার সাথে সাথে পুরো ভার্সিটির সকল দরজা বন্ধ করে দিল।
💀 পুলিশ অফিসারঃ মেঘ ভাই আপনারা কি করছেন। আপনি ভার্সিটির দরজাগুলো বন্ধ করছেন কেন। আর আপনি কি জানেন না জামিনুর কে এই কুত্তার বাচ্চাই গুলি করেছে।
✔️মেঘঃ ওই তুই কাকে কুত্তার বাচ্চা বলছোস
💀 পুলিশ অফিসারঃ যে জামিনুরকে গুলি করেছে এবং আমার নিস্পাপ মেয়েটাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। ওকে বলেছি।
ও পুলিশ অফিসারের মুখে গালি শোনার পর ,,আমার মাথাটা প্রচুর গরম হয়ে গেল । তাই আমি আমার হাতে বন্দুক টা দিয়ে পুলিশ অফিসারের পায়ে দুইটা ধরি করলাম। আরে বলতে লাগলাম।
আমিঃ মেঘ এই মা*** **দ তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দে। শালারপুত বেশি কথা বলতেছে এখানে।
💀 পুলিশ অফিসারঃ ও মাগো আমাকে গুলি করেছে গো।
আমিঃ এই চুপ ।একদম চুপ ।চিৎকার করবি না। মেঘ তুই উনাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দে তো। আমার ওকে সহ্য হচ্ছে না।(রাগান্বিত কন্ঠে)
✔️ মেঘঃ ওকে ভাই । আর ভাই আমি মাথাটা ঠান্ডা করেন ভাই।
আমিঃ মাথা কি করে ঠান্ডা করব। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তুই তাড়াতাড়ি বের কে গুলি করেছে??
✔️ মেঘঃ ওকে ভাই দেখতেছি।
এরপর মেঘ ভার্সিটির সবাইকে একসাথে করে।
তখন আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
মেসেজ লেখা ছিল ,"" কি ভাবছিস কি তুই।। তুই আমার ভাইকে মেরে ফেলবি আর আমি তোকে ছেড়ে দেবো । না তা কখনো হয় না।আমি এখন এক ডিলে ২ পাখি মারলাম। ১ তোর ভালোবাসাকে তোর থেকে আলাদা করলাম আর ২ তোর বন্ধুকে খালাস করলাম।""
এটা পরতে পরতে আরেকটা মেছেজ আসলে সেখানে লেখা আছে৷
"হোয়াইট গ্যাংস্টারের মাথায় যে একটু ও বুদ্ধি নেই তা আমার জানা ছিলো না। আরে বোকা আমি কি এখনো এখানে দাড়িয়ে আছি নাকি?? বোকাটা"'
আমিঃ তার মানে ও আমার সম্পর্কে সব তথ্য রাখে। কিন্তু রাখবে কি করে আমি তো সব সৃয় ছদ্ম বেশ নিয়ে চলা ফেরা করছি। আচ্চা এখন এতো মাথা ঘামানো যাবে না। আগে ওদের ছেড়প দেই এর পর বাসায় গিয়ে রিলাক্সে চিন্তা করা যাবে। ( মনে মনে)
✔️মেঘঃ ভাই সবাই কে এক সাথে করছি এখন কি করমু??
আমিঃ ওদের কে ছেরে দে।
✔️মেঘঃ কিন্তু কেনো??
আমিঃ আমি বলছি ছেড়ে দিতে তুই ছেড়ে দে৷ আমার মুখে মুখে তর্ক করতে কি তোর খুব ভালো লাগে। ( রাগান্বিত কন্ঠ)
✔️মেঘঃ স স সরি ভাই।
এর পর মেঘ গিয়ে সবাই কে বাসায় চলে যেতে বলে৷
পুরা ভার্সিটিতে এখন শুদু আমি মেঘ আর আমার দলের কয়েক জন আছে।
আমিঃ মেঘ কল লাগা হাসপাতালে ওখানে দেখ জামিনুর আর ওসির কি খবর।
এরপর মেঘ সাইডে গিয়ে কথা বলে এসে আমাকে বললো,,,,,
✔️মেঘঃ জামিনুর এখন সুস্থ আছে। ওসি সাহেবের পায়ে যে দুই টা গুলি করেছেন সেখানে ১ টা তার পায়ের হাড়ে গেঁথে যায়। যার ফলে হাড়ে ফাটল ধরে।যার কারনে ওসি কে ৪ মাস বেড রেষ্টে থাকতে হবে।
চলবে..............