লেখক-আকাশ খান
পার্ট : ১৮
**রাত্রি তার আব্বুর কথা শুনে রাত্রি বলল,,,,
রাত্রি : আব্বু আমি আবির স্যারকে পছন্দ করি,, আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই,,,(একদম নিরধিদায় বলে দিল)
**রাত্রির মুখে আবিরের নাম শুনে রাত্রির আব্বু বেশ অভাক হয়ে যায়। কারণ রাত্রি যে আবিরের নাম বলবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারে নি।তখন রাত্রির আব্বু বলল,,,
আব্বু : রাত্রি তুই কী তোর টিচার আবিরের কথা বলছিস।(অভাক কন্ঠে বলল)
রাত্রি : হ্যা, আব্বু আমি আবির স্যারের কথাই বলছি,,,
**রাত্রির কথা শুনে রাত্রির আব্বু মনে মনে অনেক খুশিই হয়।কারণ তিনি নিজেও মনে মনে ভেবে ছিলেন রাত্রির পরীক্ষা শেষ হলে আবিরের পরিবারের সাথে কথা বলে রাত্রি আর আবিরের বিয়ে দিবে।কারণ আবিরের মত ভাল ছেলেকে সবাই তার মেয়ের জামাই বানাতে চাইবে।তখন রাত্রির আব্বু একটু মজা করার জন্য মুখটা গম্ভির করে বলল,,
আব্বু : কী আবিরের এত বড় সাহস,, আমার কলেজে চাকরি করে আবার আমার মেয়ের সাথেই প্রেম ভালবাসা করা হচ্ছে।দাড়াও তুমি দেখ কালকে কলেজে গিয়ে আমি কী করি।চাকরি থেকে বের করে দিব ওকে।(একটু রাগের অভিনয় করে বলল)
**রাত্রি তার আব্বুর এমন রাগি রুপ দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।কারণ রাত্রি তার আব্বুকে আগে কখনো এমন রাগতে দেখে নি।তাই রাত্রি কাঁদো কাঁদো হয়ে তার আব্বুকে বলল,,,
রাত্রি : আব্বু,,,আবির স্যারের কোন দোষ নাই।সব দোষ আমার, যা ভুল করার আমি করছি।কারণ আমিই স্যারকে ভালবাসি।স্যার আমাকে ভালবাসে না।আমি যত বার তাকে ভালবাসার কথা বলছি,, ওনি ততবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।আবির স্যার তুমার বিশ্বাসের অমর্যাদা হবে বলে বার বার আমার ভালবাসা প্রত্যাক্ষাণ করছে।কখনো তিনি আমার ভালবাসায় একটুও সাড়া দেন নি।তাই যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমি করছি,, আবির স্যার কিছু করে নি।আর যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দেও তবুও স্যারকে কিছু বল না,,,প্লিজ আব্বু প্লিজ(বলেই রাত্রি কান্না করতে থাকে)
**রাত্রির আব্বু রাত্রির চোখে পানি দেখে অভাক হয়ে যায়।কারণ তার মেয়ে যে আবিরকে এতটা ভালবাসে তা তিনি ভাবতেও পারে নি।তখন তিনি রাত্রিকে কাছে গিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।আর একটা হাসি দিয়ে বলল,,
আব্বু : পাগলি মেয়ে এটার জন্য কী কান্না করা লাগবে।আমিতো তোর সাথে মজা করছিলাম,,।দেখছিলাম তুই আবিরকে কতটা পছন্দ করিস বা ভালবাসিস।আর একটা কথা আমি কিন্তু আগে থেকেই আবিরের সাথে তোর বিয়ের বিষয়টা ভেবে রাখছিলাম।কিন্তু তুই রাগ করবি বলে তোকে কিছু বলি নি। এখন যেহেতু তুই নিজেই আবিরকে পছন্দ করিস তাহলে আমি আবিরের বাবার সাথে কথা বলে তোর পরীক্ষার পরে নাহয় বিয়ের ব্যবস্থা করব।আসা করি তারা আমার প্রস্তাব ফেলবে না(একটা হাসি দিয়ে বলল)
**রাত্রি তার আব্বুর কথা শুনার সাথে সাথে কান্না মাখা মুখের মাঝে মুহূর্তেই হাসির রেশ ফুটে ওঠে।রাত্রির এখন খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে।কারণ সে তার প্রিয় মানুষটিকে এত সহজে পাবে ভাবতেও পারি নি।কিন্তু হঠাৎ রাত্রির আনিসার কথা মনে পরে যায়।আর তখন রাত্রি তার আব্বুকে বলে,,,,
রাত্রি : আব্বু আমি বিয়েটা পরীক্ষার আগে করতে চাই তুমি যত তারাতারি পারো বিয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো। আর হ্যা এখন শুধু বিয়ে করব,,, কোন অনুষ্ঠান করার দরকার নাই। পরীক্ষার পরে তুমরা যা করার করো,,,,আর যদি পরীক্ষার আগে বিয়ে না হয় তাহলে আমি পরীক্ষা দিব না,,।
আব্বু : আচ্ছা রাত্রি তুই কেমন মেয়েরে মা একটু বলবি।নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজের বাবার সামনে এমন করে বলে। তোর কী একটু লজ্জা করছে না।(হাসতে হাসতে বলল)
রাত্রি : লজ্জা কেন করবে। আমি আমার আব্বু কাছে যদি নিজের মতামত প্রকাশ করতে না পারি তাহলে কার কাছে করব।এখন এটা বল তুমি পরীক্ষার আগে বিয়ে দিবে কি না,,,
আব্বু : আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই তোর রুমে যা আমি দেখছি বেপারটা কী করা যায়।(হেসে বলল)
**রাত্রি তার আব্বু কথা শুনে নিজের রুমে এসে খুশিতে নাগিন ড্যাশ দিতে থাকে।আর রাত্রি মনে মনে বলতে থাকে একবার বিয়েটা হতে দাও আবির,, রোমান্টিক অত্যাচার কাকে বলে তুমাকে বুঝিয়ে দিব,,,
**আজ তিন দিন পর আমি আবার কলেজে যাচ্ছি। আর দুই দিন আমি রাত্রিকে পড়ানোর জন্য ওদের বাসায় যাই।কিন্তু একটা বিষয় আমাকে খুব অভাক করছে যে এই দুই দিন রাত্রি আমার সাথে কোন দুষ্টুমি করে নি।এমন কী আমাকে ভালবাসার কথাও বলে নি।আমি এতে একবার খুশি হলেও পরে নিজের কাছে কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছিল।মন শুধু চাইছিল রাত্রি আবার কেন আমার সাথে দুষ্টুমি করে না।কেন বার বার বলে না যে স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি।এই বিষয় গুলা এ দুদিন আমি খুব মিস করছি।কিন্তু রাত্রিকে মুখ ফুটে এটা বলার সাহস হয় নি যে রাত্রি তুমি এত বদলে গেলে কেন,,,,,তবুও নিজের মনকে সাত পাঁচ বুঝিয়ে কলেজে চলে আসি।
**আজকে কলেজে এসে দেখি প্রিন্সিপাল স্যার আজকে কলেজে আসে নি।হয়তো কোন ব্যক্তিগত কারণে কলেজে আসেনি,, আমিও এতকিছু না ভেবে চলে যাই রাত্রিদের ক্লাসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।কারণ আজকে রাত্রিও কলেজে আসে নি।এখন কেন জানি রাত্রির জন্য মনটা একটু বেশিই খারাপ লাগছে।মন বলছে আমি রাত্রিকে মনে হয় ভালবেসে ফেলছি।তবুও নিজের মনের বিরুদ্ধিতা করে সারা দিন শেষ করে বাসায় চলে আসি।
**কলেজ শেষ করে আমি বাসায় এসেই দেখি মা -আমার ছোট বোন সবার মুখে কেমন যেন একটা হাসির ভাব লেগে আছে।কিন্তু বিষয়টা আমার এখনো অজানা।একটু পরে আমার বোন রিধি আমার জন্য এক পিস মিষ্টি এনে বলল,,
রিধি :ভাইয়া নাও মিষ্টি খাও,,(একটা হাসি দিয়ে বলল)
**আমি রিধির হাত থেকে মিষ্টিটা নিয়ে খেতে খেতে বললাম,,,,
আমি : কিরে রিধি এটা কিসের মিষ্টি খাওয়ালি।আর বাসায় এসেই দেখি তোর আর আম্মু মুখে কোন এক অজানা রহস্যের হাসি লেগে আছে।কারণটা কী একটু বলবি।(হাসি দিয়ে বললাম)
রিধি : রহস্য তো একটা অবশ্যই আছে।কিন্তু সেটা আমি বলব না। সেটা আব্বু তুমাকে নিজে বলবে,,,(হেসে বলল)
কথাটা বলেই রিধি আবার হাসতে হাসতে চলে যায়।আমিও আর এতটা আগ্রহ নিয়ে কাউকে কিছু জিঙ্গাসা করি নি।কারণ পরে আব্বু নিজেই বলবে।আর আজ অব্দি আব্বু আমার মতামত না নিয়ে কোন কিছু করে নি। রাতে যখন খাবার খাওয়ার সময় আব্বু আমাকে বলল,,,
আব্বু : আবির তুমার বেপারে আমি একটা সিন্ধান্ত নিছি। এখন তুমার মতামত জানতে চাই,,,,
আমি : আব্বু কী সিন্ধান্ত নিছেন,,,,
আব্বু : আমরা তুমার বিয়ে ঠিক করছি।মেয়ে আমাদের পছন্দ হইয়ে, সেই সাথে মেয়ের পরিবারও অনেক ভাল। এখন তুমি যদি আমাদের সিন্ধান্তে দ্বিমত প্রকাশ না কর তাহলে এই মেয়েকেই আমরা ঘরের বউ করে আনতে চাই।,,,,
**আব্বু কথাটা শুনার সাথে সাথে ভিতরটা কেমন যেন একটা মুচর দিয়ে ওঠে।কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি মনে হয় কোন কিছু চিরতরে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। বার বার শুধু রাত্রির কথাই মনে পড়ছে।কিন্তু এ মুহূর্তে আমি অসহায় কারণ আমি চাইলেও রাত্রির কথা কাউকে বলতে পারব না।আর হ্যা আমার রাত্রির প্রতি যে অল্প অল্প ভাল লাগা মনের ভিতর জন্ম নিছে সেটার জন্য আমার বাবা -মাকে কষ্ট দিতে পারব না।আর এখন যদি আমি আব্বুর সিধান্তে রাজি হই তাহলে হয়ত রাত্রি একটু কষ্ট পাবে,, তবে এটা রাত্রির জন্যই ভাল,,। তাই এসব চিন্তা ভাবনা করে আব্বুকে বললাম,,,,
আমি : আব্বু আপনাদের সিধান্তই আমার সিধান্ত,,, তাই আপনারা যা ভাল মনে করেন তাই করেন,, (খুব সাভাবিক ভাবেই বললাম)
**আমার কথা শুনেই আব্বু আম্মু আমার বোন সবার মুখে একটা হাসির জোয়ার ফুটে ওঠে।তখন আব্বু বলল,,,
আব্বু : আমি জানতাম তুমি কখনো আমাদের সিধান্তের অমত হবে না।আর এ্যা কালকে আমরা মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছি,, তুমার যদি মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে কালকেই পারিবারিক ভাবে বিয়েটা করিয়ে রাখব,,। সামনে মেয়ের পরীক্ষা আছে।পরীক্ষা শেষ হলে অনুষ্ঠান করে বউ ওঠিয়ে আনব(হাসি মুখে বলল)
আমি : মেয়ের যদি সামনে পরীক্ষা থাকে তাহলে এখন বিয়ের দরকার কী? বিয়েটা নাহয় পরীক্ষার পরেই হোক.. (খুব নরম সুরে বললাম)
আব্বু : না এখন আমি যেই সিধান্ত নিছি তাই হবে।আমি মেয়ের পরিবারে কথা দিয়ে ফেলছি।তাই আসা করব তুমি আমার সিধান্তকে সম্মান করবে।(একটু কঠিন করে বলল)
**আব্বু এমন কথা শুনে আমার আর কীবা বলার থাকে। তাই আমি বললাম,,,,
আমি : ঠিক আছে,, আপনারা যা ভাল মনে করেন তাই করেন।আমার কোন আপত্তি নাই,,
**বলেই আমি সেখান থেকে রুমে চলে আসি।কেন জানি সব কিছু এখন নিজের কাছে বিরক্তি বিরক্তি লাগছিল।কোন কিছুতে মন বসাতে পারছিলাম না,,
**অন্যদিকে রাত্রির আব্বু আজকে আমাদের বাড়িতে এসে আমার আর রাত্রির বিয়ে প্রস্তাব দেয়।আর আমার পরিবারও সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।তাই রাত্রির আব্বু বাসায় গিয়ে পরিবারের সবার কাছে জানায় যে রাত্রি আর আমার বিয়ে কালকে।আর এ কথা শুনে রাত্রি খুশিতে পাগল হওয়ার অবস্থা। নিজের রুমে গিয়ে রাত্রি আবিরের ছবি মোবাইলে দেখতে থাকে। আর নিজে নিজে আবিরের ছবির সাথে নানান কথা বলতে থাকে।
**সন্ধ্যার দিকে আমি আবার রাত্রিকে পড়ানোর জন্য রাত্রির বাসায় যাই।আর মনে মনে চিন্তা করি আজ রাত্রিকে সব বলে দিব যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।যদিও একটু কষ্ট পাবে কিন্তু পরে ঠিকি সব ভুলে যাবে।আর এতে রাত্রিরই ভালো হবে।যে ভালবাসার কোন মিল হবে না সেটা না বাসাই ভাল।তাই আজ আমার বিয়ের কথা রাত্রিকে বলতেই মুলত রাত্রির বাসায় আসা।না হলে আজকে আর আসতাম না।আমি এসব ভাবতে ভাবতে রাত্রিদের বাসা চলে আসি।বাসার গেইটে এসে কলিং বেল বাজাতেই রাত্রির বোন আলো এসে দরজা খুলে দেয়।
**আলো আমাকে দেখেই একটা হাসি দিয়ে আমাকে বিতরে আসতে বলে।আর বিতরে গিয়েই আমি দেখলাম,,,,,
★★চলবে★★