লেখক-আকাশ খান
পার্ট : ১৫
**আমি এ কথা বলার পর রাত্রি যা বলল,,,,
রাত্রি : দেখেন স্যার, আমি গুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ করি না।যা বলার সরাসরি বলতে পছন্দ করি।আর আমার কথার জবাবটাও সরাসরি শুনতে পছন্দ করি। কেউ গুরিয়ে ফিরিয়ে জবাব দিলে আমার রাগ হয় অনেক। তাই আমি যা বলব তার সুজা সাপ্টা জবাব দিবেন,,,(আমার চোখে চোখ রেখে কথাটা বলল রাত্রি)
**রাত্রির কথা শুনে একটু একটু ভয় লাগছে যে রাত্রি কী না কী বলে এটা ভেবে।আবার একটু শান্তিও লাগছে এই ভেবে যে আমার ওপর এতদিনের অত্যাচারের কারণটা জানতে পারব,।তখন আমি বললাম,,,
আমি : ঠিক আছে, তুমি যা বলবা আমি তুমাকে সরাসরি উত্তর দিব। এখন তুমি এসবের আসল কারণটা বল।
রাত্রি : স্যার আপনাকে আমি প্রথম যেদিন কলেজে দেখি,, সেদিনই আমার ভাল লেগে যায় বলতে পারেন আপনাকে পছন্দ করে ফেলি।তারপর যখন আপনার সাথে আমি ইচ্ছে করে রাগারাগি করতাম আর আপনি আমার টিচার হয়েও ছোট্ট বাচ্চাদের মত আমার অত্যাচার গুলো সয্য করতেন,তখন আমার অনেক ভাল লাগত।আর সেই ভাল লাগাটা এখন ভালবাসায় রুপ নিয়েছে।স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি,,অনেক ভালবাসি।
I love you abir,,,
**রাত্রির কথা শুনে এখন আমার কী বলা উচিত এটাই ভাবছি।টিচার হয়ে ছাত্রীর সাথে প্রেম। এটা কখনো সম্ভব, যদি কেউ জানে তাহলে সমাজে মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে যাবে।আমার সহ আমার পরিবারেরও সম্মানটা যাবে,,,।আমি যখন এক ধ্যানে এসব ভাবছিলাম,, তখন রাত্রি একটা মুসকি হাসি দিয়ে বলল,,,
রাত্রি : স্যার আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু পাইনি আমি। প্লিজ আমার কথার জবাব দেন,,,,,
**রাত্রির কথা শুনে একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে আমি বললাম,,,,,
আমি : দেখ রাত্রি তুমি যেটা বলছ সেটা তুমার আবেগ,ভালবাসা না। একটা সময় পরে তুমার সেই আবেগটা কেটে যাবে।আর তার থেকে বড় কথা আমার পক্ষে তুমাকে ভালবাসা কখনো সম্ভব না।এটা তুমি যত তারাতারি বুঝতে পারবে তুমার জন্য তত ভাল।এখন এসব বাদ দিয়ে পড়ায় মনযোগী হও( কথাটা খুব শান্ত আর নরম সুরে বললাম)
**আমার কথাটা মনে হয় রাত্রির পছন্দ হয়নি।তখন রাত্রি বলল,,,
রাত্রি : স্যার, আমাকে আপনার কী দুধের বাচ্চা মনে হয়? নাকি এটা মনে হয় যে আমি ক্লাস 7 এ পড়ি যে আমি এখন আবেগ দিয়ে দুনিয়াটা দেখি।আমার এখন এটা বুঝার যথেষ্ট বয়স হইছে যে কোনটা আবেগ আর কোনটা ভালবাসা।তাই আপনি আমাকে আবেগ না বুঝিয়ে এটা বলেন কেন আমাকে ভালবাসতে পারবেন না?(কথা গুলো রাত্রি দাঁতে দাঁত চেপে বলল)
আমি : দেখ রাত্রি, ভাল সবাইকে বাসা যায় না।হ্যা আমি জানি তুমার এখন নিজের সিধান্ত নেওয়ার বয়স হইছে।কিন্তু তাই বলে তুমি ভুল সিধান্ত নিতে পার না।আর একজন শিক্ষক আর ছাত্রীর মাঝে কখনো ভালবাসার সম্পর্ক হতে পারে না।এটা তুমাকে বুঝতে হবে।আর তাই আমি তোমাকে কখনো ভালবাসতে পারব না,,,(এবারও খুব শান্ত ভাবে বললাম রাত্রিকে বুঝানোর জন্য)
রাত্রি : পৃথিবীর কোন আইনে আছে যে একজন ছাত্রী তার শিক্ষককে ভালবাসতে পারবে না। অনেক সময়ইতো শুনা যায় শিক্ষক আর ছাত্রী প্রেম করে বিয়ে করছে আবার পালিয়েও যাচ্ছে। কোথায় তখনতো কেউ কিছু বলছে না।তাহলে আমার বেলায় এত নিয়ম আর আইন আসছে কোথায় থেকে হ্যা,,(অনেকটা রেগেই বলল)
আমি : পৃথিবীর কোন আইনে লেখা না থাকলেও, সমাজের আইনে ঠিকি লেখা আছে।কারণ আমাদের সমাজে ভালবাসা শব্দটাকে মানুষ আড় চোখে দেখে।আর সেখানে যদি ছাত্রী, শিক্ষকের প্রেম হয় তখন মানুষ এই শিক্ষক পেশাটাকে খারাপ চোখে দেখতে শুরু করবে।হ্যা সমাজে এমন অনেক ঘটনা আছে যে ছাত্রী শিক্ষক প্রেম করে বিয়ে করছে বা পালিয়ে গেছে। কিন্তু পরে তাদের এই সমাজের মানুষের কাছেই নানান কথা শুনতে হয়। যেটা আমার পক্ষে শুনা কখনো সম্ভব না।তাই আমি তুমাকে বলছি আমাকে নিয়ে শুধু শুধু মিথ্যা স্বপ্ন দেখে লাভ নাই।এসব ভালবাসার কথা ভুলে গিয়ে পড়ায় মন দাও,,( খুব সুন্দর করে বুঝানোর চেষ্টা)
রাত্রি : স্যার ভালবাসাটা হল সম্পূর্ণ মনে বেপার যেখানে নিজের কোন হাত থাকে না।আমার মন যেহেতু একবার আপনাকে দিয়ে দিয়েছি,, তাহলে আপনার মনটাও ঠিক নিয়ে নিব। এখন তার জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি তাই করব।একটা কথা মনে রাখেন স্যার,, সমাজের মানুষের কথা ভেবে নিজের ভালবাসাকে কোরবানি দেওয়ার মত এতটাও ভাল মানুষ এই রাত্রি না।তাই একবার যেহেতু ভালবেসেছি আপনার লক্ষী বউ না হয়ে আর থামছি না।(দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল)
আমি : দেখ রাত্রি তুমি যদি এরকম কর তাহলে আমি আর তুমাকে পড়াতে আসব না।(দমক দিয়ে বললাম)
রাত্রি : আপনি পড়াতে আসবেন, সাথে আপনার ঘাড়ও পড়াতে আসবে।আর না আসলে আমি কী করব তা আপনি ভাল করেই জানেন।আর শুনেন আমার ফ্রেন্ড আনিসা আপনাকে নাকি ভালবাসে।তাই কাল থেকে আনিসার কাছ থেকে দুরে থাকবেন। পারলে ওকে আর এক্সট্রা পড়ানোর দরকার নাই।আর আপনাকে যদি আর কোনদিন ঐ অন্তরা ডায়নির সাথে দেখছি তাহলে আপনার খবর আছে।ও যখন আপনার হাত ধরে আমার শরীরটা একদম জ্বলে যায়।তাই ওর কাছ থেকে দুরে থাকবেন বলে দিলাম (চোখ গুলো বড় বড় করে বলল আমাকে)
**রাত্রির কথা শুনে আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে আসি।তারপর রাতে ডিনার শেষ করে নিজের গিয়ে সুয়ে পড়ি আর রাত্রির কথা গুলো ভাবতে থাকি।আসলে আমিও কোন দিন প্রেম বা ভালবাসার সম্পর্কে জড়ায় নি।কারণ পড়াশুনা নিয়ে নিজেই নিজেকে এত পরিমাণ ব্যস্ত রাখতাম যে প্রেমতো দুরে থাক আমার তেমন কোন ভাল বন্ধু পর্যন্ত নাই।আর এখন যেহেতু লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে জয়েন করছি তাই আর সম্পর্কে জড়ানোর কোন ইচ্ছা নাই।আব্বু আম্মু যাকে পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে করব বলে মনে মনে ঠিক করে রাখছি।কিন্তু রাত্রিকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।এই মেয়ে কখন কী করে বসে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই।
**পরের দিন ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে চলে যাই কলেজে।আমি যখন কলেজের গেইট দিয়ে ডুকতে যাব সামনে তাকিয়ে দেখি রাত্রিও গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে।আর আমাকে দেখে মুসকি মুসকি হাসতেছে।আমি রাত্রিকে দেখে মাথাটা নিচু করে যেই কলেজে ডুকতে যাব তখনি রাত্রি আমার সামনে এসে দাড়ায়।আর একটা হাসি দিয়ে বলে,,,
রাত্রি : এই যে আমার হিরো,,,তুমার হিরোইন যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাকে না দেখেই চলে যাচ্ছো,,,
আমি : রাত্রি কথা ঠিক ভাবে বল।তুমি কাকে হিরো বলছ আর আমাকে তুমি করে কেন বলছ।ভুলে যেওনা আমি তুমার টিচার হই(দমক দিয়ে বললাম)
রাত্রি : শুনেন আমার স্যার,আমি হিরো আপানেই বলছি আর তুমি করেও আপনাকেই বলছি।আর এখন থেকে সব সময় ঠিক এভাবেই বলব।আপনি শুধু ক্লাসে আমার টিচার আর আমি আপনার ছাত্রী।আর ক্লাসের বাহিরে আপনি আমার প্রেমিক আর আমি আপনার রোমান্টিক পাত্রী মানে প্রেমিকা,,,,(কথা খুব রোমান্টিক ভাব নিয়ে বলল)
আমি : এসব পাগলামি বাদ দিয়ে পড়ায় মনোযোগ দাও।নাহলে পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করবে বলে দিলাম,,,(দমক দিয়ে বললাম)
**রাত্রিকে কথাটা বলেই আমি সুজা অফিসে চলে আসি।কারণ আমার বুঝা হয়ে গেছে রাত্রিকে বুঝিয়ে কিছু লাভ হবে না। তাই যতদিন রাত্রি আছে আমাকে এগুলা সয্য করতেই হবে।এখন নিজের জন্য এটাই ভাল রাত্রির কাছ থেকে দুরে থাকাটাই নিজের মঙ্গল।
**তারপর আমার ক্লাসের সময় হলে আমি চলে যাই রাত্রিদের ক্লাসে ক্লাস করাতে।তারপর আমি কোন ভাবে ক্লাসটা করিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।আর পুরা ক্লাসে রাত্রি আমার সাথে যা করছে সেটা না হয় আপনারা অনুমান করে নিন।আর যদি না পারেন তাহলে বসে মুড়ি খান। আমি ক্লাস শেষ করে অফিস রুমে চলে আসি।
অন্যদিকে,,
**আবির ক্লাস শেষ করে যেতেই রাত্রির ফ্রেন্ড আনিসা এসে রাত্রিকে বলল,,,,,
★★চলবে★★