লেখক-আকাশ খান
পার্ট :১২
**আমি রাত্রির রুমে বসে বসে একটা বই পড়ছিলাম, এমন সময় রাত্রি এসেই আমার সামনে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ দুটি লাল হয়ে আছে দেখেই মনে হচ্ছে কারো ওপর খুব রেগে আছে,,,
**তখন আমি রাত্রিকে বললাম,,
আমি : কী হল ভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? বই নিয়ে পড়তে বস,,,হাতে সময় কম সামনে তুমার পরীক্ষা, (একটু যাজালো কন্ঠে বললাম)
**আমার কথা শুনে রাত্রি মনে মনে বলে,,(শয়তান বেটা আমার কাছে আসলেই তোর হাতে সময় থাকে না,আর যখন ঐ পেত্নী অন্তরা মেডামের সাথে বসে কফি খাস তখন খুব সময় থাকে তোর,,ইচ্ছে করছে মাথার চুল গুলো ছিড়ে দেই বেটা ইতর কোথাকার)
**রাত্রির এ ভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকা দেখে আমি আবার বললাম,,
আমি : তুমি কী ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে পড়তে বসবে নাকি আমি চলে যাব,,,? ( রাগি কন্ঠে বললাম)
**আমার কথা শুনে রাত্রি আমার দিকে চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে বই নিয়ে পড়তে বসল,,দেখে মনে হয় চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে,,
**আজ আমি নিজে থেকে রাত্রিকে কয়েকটি পড়া বুঝিয়ে দিলাম আর রাত্রি সেগুলা খাতায় লিখতে লাগল।রাত্রি খাতায় লিখছে আর কিছুক্ষণ পর পর বড় বড় করে নিশ্বাস ফেলছে।মনে হয় রাগটা যেন নিশ্বাসের সাথে বাহির করার চেষ্টা করছে রাত্রি। এমন সময় রাত্রির বোন আলো আমার জন্য চা আর বিসকিট নিয়ে রাত্রির রুমে আসে।আর এসেই আলো বলল,,
আলো : স্যার, এই নিন আপনার জন্য চা আর বিসকিট,,(একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল)
আমি : ধন্যবাদ,এখানে রাখ,,(আমি একটা হাসি দিয়ে টেবিলে রাখতে বললাম)
**তখন আলো আবার বলল,,
আলো : স্যার, একটা কথা বলি? যদি কিছু মনে না করেন,,,(মিষ্টি হেসে বলব)
আমি : হুম বল কী বলবে,,,,(হেসে বললাম)
আলো : স্যার,আপনাকে দেখে কেন জানি স্যার,,,,স্যার মনে হয় না,,,।স্যারতো একটু বয়স্ক বয়স্ক হয় আর আপনি কত ইয়াং আর হেন্ডসাম,,,(বলেই হেসে দিল)
**আলোর কথা শুনে আমি হেসে দিলাম,,কারণ আলো মেয়েটাও খুব মিষ্টি আর রাত্রির মতই সুন্দর। খুব মিশুক টাইপের মেয়ে আলো,,।তখন আমি আলোকে বললাম,,
আমি : তা আলো তুমি এবার কোন ক্লাসে পড়,,,?
আলো : স্যার,,আমি এবার ক্লাস টেনে ওঠছি।আপনাকে আরো একটা কথা বলি প্লিজ রাগ করবেন না স্যার,,,
আমি : হুম বল রাগ করব কেন,,(হেসে বললাম)
আলো : আচ্ছা আমি যদি আপনাকে স্যার না বলে আবির ভাইয়া বলে ডাকি আপনি কী রাগ করবেন,,,(একটু হেসে বলল)
**রাত্রি এতক্ষণ আমাদের কথা শুনছিল আর রাগে ফুস ফুস করছিল।আলোর কথা শুনে যেই আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই রাত্রি বলল,,
রাত্রি : ঐ তুই এখানে দাঁড়া আমি তোর আবির ভাইয়া বলা ছুটাচ্ছি।কেন স্যারকে স্যার বলতে তোর কষ্ট হয়,,তাহলে স্কুলে গিয়ে স্যারদের স্যার বলিস কিভাবে,,হুম (রাগে চোখ দুটো আগুনের মত লাল হয়ে গেল)
আলো : আপু তুমি এভাবে রেগে যাচ্ছ কেন, কই স্যার তো আমাকে কিছু বলে নি,,,
রাত্রি : তুই এখান থেকে যাবি নাকি আমি ওঠে তোর কাছে আসব কোনটা,,,(রাগ যেন বেড়েই চলছে)
আলো : না থাক, তুমার আসার দরকার নাই,, আমিই চলে যাই,,
**এ কথা বলেই আলো রুমে থেকে বেরিয়ে যায়।তখন আমি বললাম,,,
আমি : রাত্রি তুমি শুধু শুধু আলোর সাথে এমন করলে।ও আমাকে ভাইয়া বললে দোষের কী,, তুমি আর আলো দুজনেই তো আমার নিজের বোনের মতই,,
**আমি এ কথা বলে মনে হয় নিজের পিছনে নিজেই বাঁশটা নিলাম,,,কারণ আমার কথা শুনে রাত্রি জাজালো কন্ঠে বলল,,
রাত্রি : হুম দেখলামতো আপনাকে কেমন করে ভাইয়া বলছে।আর আপনিও দেখছি কত সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছেন।কলেজে অন্তরা ম্যামের সাথে আপনার কত ভাব,, এক সাথে বসে কফি খান,, হেসে হেসে হাত ধরে কথা বলেন।আপনার এসব কাহিনী দেখলে আমার গায়ে আগুন জ্বলে যায়।
রাত্রির কথা শুনে আমি অভাক হয়ে যাই।এই মেয়ে কিসের ভিতর কী টেনে আনছে,,,তখন আমি বললাম,,
আমি : রাত্রি তুমি এসব কী বলল,, আমি কার হাত ধরে কথা বলি,,আর তুমি কিসের মাঝে কী নিয়ে আসছ,,
রাত্রি : একদম সাধু সাজবেন না আমার সামনে। আমি সব দেখি আপনি কী করেন না করেন।আর হ্যা এরপর যদি আমি আপনাকে ঐ অন্তরা নাকি ফন্তরার আসে পাশে দেখি তাহলে আপনাকে বুঝাবো এই রাত্রি কী জিনিস।আর তখন কী বললেন,,আমি আর আলো আপনার নিজের বোন।ভুলেও যদি আমাকে এমন কথা আবার বলছেন তাহলে আপনার মাথার চুল ছিড়ে নিব আমি।একটা কথা মনে রাখবেন দুনিয়াতে আমি ছাড়া সবাইকে আপনার নিজের মায়ের পেটের বোন মনে করবেন।এমনি ঐ অন্তরা ম্যামকেও নিজের বোন বানিয়ে নিবেন। কথা গুলা মনে থাকে যেন বলে দিলাম,,,(রাগে ফুসতে ফুসতে বলল)
**রাত্রি কথা গুলা বলে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। ওর কথা শুনে মনে হল সারাদিনের যত রাগ ছিল সব রাগ যেন এই কথাগুলোর সাথে বেরিয়ে আসছে।আর এতক্ষণ ধরে মনে হয় এই কথা গুলার বলার জন্যই ফুস ফুস করছিল।তখন আমি বললাম,,,
আমি : রাত্রি তুমি এগুলা কী বলছ তুমার মাথা ঠিক আছে নাকি পাগল হয়ে গেছ,,,( একটু কঠিন ভাবেই বললাম)
রাত্রি :যদি আপনি মনে করেন আমি পাগল হয়ে গেছি, তাহলে হ্যা আমি পাগল।আর আমাকে আপনি পাগলামি করতে বাধ্য করবেন না।তাহলে কিন্তু আপনার জন্য মোটেও ভাল হবে না বলে দিলাম,,,(উল্টা আমাকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল)
**রাত্রির কথা শুনে আমার শরীর ঘামতে থাকে।কারন এই মেয়ে দিয়ে কোন বিশ্বাস নাই,যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে পারে।তাই আমি আর রাত্রিকে কিছু বলি নি।চুপ চাপ ওকে পড়ানো শেষ করে করে বাসায় চলে আসি।রাতে খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে সুয়ে পড়ি।কিন্তু ঘুম আসছে না।আর আসবেই বা কেমন করে রাত্রির মত ছাত্রী যেই টিচারের ভাগ্যে থাকে তার কী আর রাতে ঘুম আসে।আমি শুধু এখন ভাবি আমার সামনের দিন গুলো জানি কেমন যায়।মনে হচ্ছে সামনে আরো ভয়ংকর কিছু আমার জন্য দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে।কোন দুঃখে যে শিক্ষক হতে গেলাম,তাহলে আর আজকে এই দিন দেখতে হত না।আর এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি না।
**পরের দিন সকালে আমার ছোট বোনের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে।তারপর ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে চলে যাই নাস্তা করতে।আমি নাস্তা করছি এমন সময় আম্মু বলল,,,,,,,**********★★★★
★★চলবে★★