লেখক-আকাশ খান
পার্ট : ৬
**এ দিকে আমি ঘুম থেকে ওঠে দেখি প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তাই আর না সুয়ে থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে আসলাম।তারপর নিজের রুমে বসে থেকে বসে বসে কিছুক্ষণ গল্পের বই পড়তে লাগলাম।গল্প পড়তে পড়তে কখন যে রাত হয়ে গেছে বলতেই পারব না।তখন আমার বোন রিধি এসে বলল,,
রিধি : ভাইয়া কী করছ,,,
আমি : না তেমন কিছু করছি না, কিছু বলবি,,?
রিধি : আম্মু খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে।আস তারাতারি সবাই তুমার অপেক্ষা করছে,,,
আমি : হুম,তোই যা আমি এখনি আসছি,,,
**তারপর রিধি চলে গেল। আর আমি বইগুলো গুছিয়ে টেবিলে রেখে চলে গেলাম খাবার খাওয়ার জন্য।আর গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে,তাই আমি আর কিছু না বলে বসে পড়লাম খাবার খেতে।আম্মু খাবার বেড়ে দিল আমি চুপচাপ খাবার খাচ্ছি।তখন খেয়াল করে দেখি আম্মু আব্বুকে চোখ দিয়ে ইসারায় কী যেন বলতে বলে।আর আব্বু আম্মুকে বলতে বলছে। তাদের এই অবস্থা দেখে আমি বললাম,,,,
আমি : আচ্ছা,তুমরা কী আমাকে কিছু বলতে চাও নাকি,,,(খুব সাভাবিক ভাবেই বললাম)
আম্মু : আসলে বাবা আমরা তোকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম,,,আর কী,,,
আমি : কী কথা বলবে বল,,তার জন্য এত সংকচ বোধ করছ কেন।বল কী বলবে আমি শুনছি (খেতে খেতে বললাম)
আম্মু : এই কী হল বলনা কেন তুমি বল,,,এখন (আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বলল আম্মু)
**এবার আম্মুর কথা শুনে আব্বু বলল,,,,
আব্বু : আসলে আবির, আমরা বলছিলাম কী, তুমার এখন পড়াশুনা শেষ হয়েছে,আর একটা ভাল চাকরিও পেয়ে গেছ
**আমি আব্বু কথা শেষ করতে না দিয়েই বললাম,,
আমি : হুম, লেখা পড়া শেষ হয়েছে, আর চাকরি পাইছি তো কী হইছে এখন,,,(হাসি দিয়ে বললাম)
আব্বু : দেখ আবির আমরা এখন বুড়ো হয়ে গেছি।আর বয়সতো আর দিন দিন কমছে না বরং বাড়ছে।অন্যদিকে তুমার মায়ের শরীরটাও ইদানিং খুব একটা ভাল যাচ্ছে না।তাই বলছিলাম আমরা তুমাকে বিয়ে করিয়ে ঘরে একটা লক্ষী বউ মা আনতে চাই,,,(কথা খুব নরম সুরে বলল)
**আব্বুর কথা শুনে আমার খাওয়া বন্দ হয়ে গেল।কারণ লেখা পড়া শেষ করে মাত্র চাকরিতে জয়েন করলাম আর এখনি বলছে বিয়ের কথা। এটা এখন কিছুতেই করা যাবে না,,,তাই আমি বললাম,,,,
আমি : দেখেন আব্বু আমি মাত্র লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরিতে জয়েন করলাম।এখনো ঠিক ঠাক মত নিজের পায়ে দাড়াতে পারি নি।আর আপনারা এখনি বলছেন বিয়ের কথা।আমি এখন পুরাপুরি আমার কাজে মনোনিবেশ করতে চাই।আমাকে কয়েকটা দিন সময় দেন পরে নাহয় অন্য চিন্তা করা যাবে।(আব্বু দিকে চেয়ে মুখটা মলিন করে বললাম)
আব্বু : ঠিক আছে ওটা পরে দেখা যাবে, আগে বল তুমার কী কোন পছন্দের মেয়ে আছে নাকি।থাকলে বল আমরা মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলে রাখি । পরে তুমার সময় মত বউ করে ওঠিয়ে নিয়ে আসব,,,,
আমি : না আব্বু আমার কোন পছন্দের কেউ নাই।তুমরা যাকে পছন্দ করবে তাকেই আমি বিয়ে করব।কিন্তু এখন না আগে আমাকে একটু সময় দাও পরে সব দেখা যাবে,,,
**আমার কথা শুনে বাবা মায়ের দুজনের মুখেই হাসি ফুটে ওঠে। তখন আব্বু বলল,,,,
আব্বু : আচ্ছা ঠিক দিলাম সময়। পরে কিন্তু কোন না শুনব না।(একটা হাসি দিয়ে বলল)
**আমি কিছু না বলে চুপ করে খেয়ে নিজের রুমে চলে আসি।তারপর কিছু সময় মোবাইল টিপাটিপি করে দিলাম ঘুম। এক ঘুমে রাত পার হয়ে সকাল হয়ে গেল। আর আমি ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে সবার সাথে নাস্তা করলাম।পরে আমার বোন রিধিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্য।তারপর আমার বোন রিধি ওর স্কুলের সামনে নামিয়ে চলে আসি কলেজে।
**কলেজে এসে আজকেও দেখি রাত্রি আর ওর ফ্রেন্ডরা একসাথে মাঠের এক পাশে দাড়িয়ে আছে।আমি তাদের দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে আসি।তবে আসার সময় খেয়াল করলাম রাত্রি কেমন ভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আবার মুসকি মুসকি হাসছে। এখানে আসার পর থেকে মেয়েটার সাথে আমার যত বার দেখা হয়ে কেমন যেন রাগি ভাব ওর মাঝে লক্ষ করছি।আজ প্রথম রাত্রিকে হাসতে দেখলাম,আর সত্যি বলতে মেয়েটাকে হাসলে দারুন সুন্দর লাগে। কারণ হাসলে রাত্রির গালে টোল পড়ে,এতে যেন হাসির সৌন্দর্য্যের মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে তুলে।
**তারপর আমি অফিস রুমে চলে আসি। এসে সব স্যারদের সাথে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করে চলে যাই ক্লাস রুমে।আজকে খুব ভাল ভাবেই ক্লাস করছি, কারণ সবাই খুব মনোযোগ গিয়ে ক্লাস করছে। আজকে রাত্রি একদম সামনের টেবিলে বসছে,আর যখন আমি রাত্রির দিকে তাকাই তখনি দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমার চোখে চোখ পরলেই একটা মুসকি হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।কিন্তু আমার কাছে বেপারটা তেমন হজম হচ্ছে না কারন যে মেয়ে আমাকে দেখলেই চোখ দিয়ে আগুন বের করে সে আজ আমাকে দেখলেই মিষ্টি হাসি দেয়, কেমন জানি একটা খটকা লাগছে নিজের কাছে।আমি আর এত কিছু না ভেবে ক্লাস করিয়ে চলে আসি অফিস রুমে।তবে শান্তি লাগছে এই ভেবে যে আজকে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।
**এভাবেই চলে যায় বেশ কয়েকটি দিন। এই কয়েক দিনে রাত্রি আমার সাথে কোন বাজে ব্যবহার করে নি। মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে বিভিন্ন পড়ার বিষয় নিয়ে কথা বলছে।আর যখনি আমার সামনে আসে তখনি যেন ওর মুখে হাসি লেগেই থাকে। কিন্তু আমার সাথে কোন মেয়ে কথা বললেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। আর ওর এভাবে তাকানোটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই।
**কিছুদিন পর আমি রাত্রিদের ক্লাস শেষ করে অফিস রুমের দিকে যাচ্ছি, আর এমন সময় রাত্রির বান্ধুবী তন্নি,তয়া,আনিসা,লামিয়া সহ আরো কয়েক জন আমার কাছে আসল। তখন তন্নি বলল,,
তন্নি : স্যার আপনার সাথে আমাদের কিছু কথা ছিল,,,
আমি : হুম, বল কী কথা বলবে তোমরা,,,,,,
তন্নি : স্যার আপনি যদি আমাদের কয়েক জনকে প্রাইভেট পড়াতেন তাহলে খুব ভাল হত।আমরা ইংরেজিতে খুব একটা ভাল না। প্লিজ স্যার না করবেন..(খুব অনুরোধ করে বলল)
আমি : কেন তুমরা ক্লাসে কী পড়া বুঝতে পার না। তাহলে প্রাইভেট কেন পড়তে হবে,, (একটু রাগি ভাবে বলল)
তয়া : স্যার বুজি। কিন্তু আমরা আগে থেকেই ইংলিশে কাচা, আর সামনে আমাদের এক্সজাম তাই আপনার কাছে আমরা এক্সর্টা ক্লাস করতে চাচ্ছি প্লিজ স্যার না করবেন না,,,,(মুখটা কালে করে বলল তয়া)
আমি : কিন্তু আমিতো প্রাইভেট পড়াই না, তুমরা বরং অন্য কোথায় পড়। আমার সময় হবে না,,,
**আমার কথা শুনে সবাই একসাথে এমন ভাবে দরছে যে আমি আর না করতে পারি নি।তখন আমি বললাম,,,
আমি : আচ্ছা তোমরা কয়জন প্রাইভেট পড়বে,,,
লামিয়া : স্যার আমরা এখানে যারা আছি তারাই পড়ব। মোট ৭জন আমরা,,,
আমি : আচ্ছা ঠিক আছে।কালকে থেকে কলেজ ছুটির পরে তুমরা থাকবে, আমি তখন পড়াব, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
আমার কথা শুনে তন্নি বলল,,,
তন্নি : কী শর্ত স্যার (ভয়ে ভয়ে বলল)
আমি : আমি শুধু তুমাদের পড়াব। কিন্তু যদি তুমাদের সাথে রাত্রি আসে তাহলে কিন্তু আমি তোমাদের পড়াব না,,,,(রাগ দেখিয়ে বললাম)
তন্নি : না স্যার রাত্রি আসবে না।ওতো এমনেতেই আমার ক্লাসের ফাস্ট গার্ল। ওর কোন প্রাইভেট লাগে না স্যার,,,
আমি : আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে।তুমরা তাহলে এখন ক্লাসে যাও আর আমি কালকে থেকে তুমাদের এক্সর্টা ক্লাস নিব,,,(এ কথা বলেই আমি ওখান থেকে চলে আসি)
অন্যদিকে,তন্নি, তয়া, লামিয়ারা ক্লাসে গিয়ে একজন আরেক জনের সাথে কথা বলছিল। এমন সময় রাত্রি এসে বলল,,,
রাত্রি : কিরে তোরা নাকি আবির স্যারের কাছে প্রাইভেট পরবি,,,(হেসে বলল)
তখন লামিয়া বলল,,
লামিয়া : হুম পড়ব, কাল থেকে। কেন তুই পড়বি নাকি? (হেসে বলল)
রাত্রি : তোদের স্যার কী আর আমাকে পড়াবে,,, (আবারো হেসে বলল)
তখন তন্নি বলল,,
তন্নি : রাত্রি তোই ঠিক বলছিস স্যার তোকে পড়াবে না। স্যার বলছে তুই যদি আমাদের সাথে যাস তাহলে নাকি তিনি আমাদেরও প্রাইভেট পড়াবেন না,,,
**এ কথা শুনার সাথে সাথে রাত্রির হাসি মাখা মুখটা মুহূর্তেই রাতের আধারের নেয় কালো হয়ে যায়।রাগে চোখ লাল হয়ে যায়।আর তখনি রাত্রি বলল,,,,
চলবে