গল্পঃ পাশের বাড়ির বড় আপু পার্ট: ৩ | Pasher Barir Boro Apu Part 03

নাম: পাশের বাড়ির বড় আপু
#লেখক: Osman
#পার্ট: ৩


__আমি বাসায় এসে । রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাইতাছি। অনেক কষ্টে সুবর্ণার আইডি বের করি। তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। এভাবে কিছুদিন চলে যায়।

গল্পঃ পাশের বাড়ির বড় আপু পার্ট: ৩ | Pasher Barir Boro Apu Part 03

একদিন রাতে সিগারেট খাওয়ার জন্য আমাদের বাসার ছাদে গিয়েছিলাম। গিয়ে যা দেখলাম তা বিশ্বাস করার মতো না। দেখি সুবর্ণা আপু আর নিলয় ভাই অন্তরজ্ঞ হয়ে বসে আছে।
আর কি যেনো কথা বলছে? আমি মোবাইল বের করে একটা ছবি তুললাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম সুবর্ণা আপু রেগে গেলো । আর কাঁদতে লাগলো। আমি তেমন কিছুই বুঝলাম না। মনে হলো সুবর্ণা আপু চলে যাবে । তাই আমিও চলে আসলাম।
ভাবলাম সুবর্ণাকে এই ছবি পাঠিয়ে কিছু টাকা কামানো করা যাবে।  আমি বাসায় এসে রাত ১টা সময় দেখি সুবর্ণা আপু এক্টিভ। আমি নক দিলাম এই প্রথম।

আমি:  হ্যালো আপু আমি সাকিব।

সুবর্ণা:..........

__কিছুক্ষণ পর মেসেজ আসলো

সুবর্ণা: কি বল?

__আমি তাদের অন্তরজ্ঞ ছবিটা পাঠিয়ে দিলাম। 

সুবর্ণা: কি চাস বল?

__আমি একটা নাম্বার দিয়ে বললাম। 

আমি: এই নাম্বারে ৫০০০ টাকা পাঠিয়ে দিন।

সুবর্ণা: মনটা ভালো না। জালাস না।

আমি: এখন আমি কি করবো? টাকা দেন নাহলে ছবি ভাইরাল।

__কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি বিকাশ একাউন্টে ৫০০০ টাকা চলে আসলো। আমি বুঝতেই পারছি না কি হচ্ছে টাকা চেক করে দেখি সত্যিই সত্যিই টাকা দিয়ে দিছে। আমি বিছানা থেকে ওঠে নাচা শুরু করলাম। 
ভাবলাম সুবর্ণা আপু হয়তো ভালো হয়ে গিয়েছে। এমন সময় আমার মোবাইলে কল আসছে দেখি সুবর্ণা আপুর নাম্বার ফোন ধরলাম। 

আমি: হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম কে!

সুবর্ণা: ওয়ালাইকুমুস আসসালাম। আমি সুবর্ণা।

আমি: আপু আপনি এতো রাতে। 

সুবর্ণা: হুম আমি। 

আমি: কিছু বলবেন । 

সুবর্ণা: তুই যে ছবিটা তুলেছিলি। ওই ছবিটা এখন কাট। 

আমি: টাকা যেহেতু দিয়েছেন। ছবি অব্যশই কাটবো।

সুবর্ণা: তুই আমার থেকে‌ টাকা নিছত না এর থেকে ডাবল আমি তর থেকে নিবো।

আমি: দেখবো দেখবো।

সুবর্ণা: আজ খালি আমার মনটা ভালো না দেইখা বেঁচে গেছত।

আমি: 😁😁 হা হা। 

__এই বলে ফোন কেটে দিলাম। বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম। যাক অবশেষে সুবর্ণা আপুকে একটা শাস্তি দিতে পারলাম। যাক মনটা অনেক শান্তি লাগতাছে। পর দিন সকালে কলেজে গেলাম। কলেজ থেকে  রিকশা দিয়ে আসতাছি দেখি সুবর্ণা এক যায়গায় বসে আছে। আমি রিকশা থেকে নেমে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে কাছে গেলাম বললাম।

আমি: আপু ধরেন।

আপু আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো ।আর হাত থেকে একটা আইসক্রিম নিলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাওয়া ধরলাম। আপু আমাকে ইশারায় বসতে বলল। আমি পাশে বসলাম কিন্তু অনেক খানি দুরে আমি বললাম।

আমি: আপু একটা কথা বলতে পারি। 

সুবর্ণা:........

আমি: বলবো ।

সুবর্ণা: না চুপচাপ বসে থাক।

আমি: ওকে। 

__অনেক পার হয়ে গেলো । ততক্ষণে আমার আইসক্রিম খাওয়া শেষ । আমি বসে মোবাইল টিপতাছি। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম।

আমি: আপু সিগারেটে আনবো?

সুবর্ণা: না ছেড়ে দিয়েছি।

__এই বলে আপু দাড়িয়ে। আমাকে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় দিলো। আমার হাসিমুখটা উবে গেলো। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম আপুর মুখের দিকে আপু বলল।

সুবর্ণা: তর সাহস হয় কি করে? আমাদের অন্তরজ্ঞ ছবি তুলতে। তুই কয়দিন হয়েছে এই বাসায় আসছত। ঐ দিন সিগারেট খাইছি ওইটার ছবি তুলছত কিছু বলি নাই। আবার আমার কাছে টাকাও চায় কতো বড় সাহস।

 এই বলে আমাকে আরো দুইটা চড় দিলো। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। আমি কিছুই বলছিনা নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি মানিব্যাগ থেকে ৫০০০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে দিয়ে দিলাম। 

সুবর্ণা: দে আমার টাকা দে। গতকাল মনটা ভালো ছিলোনা বলে তকে কিছুই করিনি। নাহলে রাতেই তকে একটা শিক্ষা দিয়ে ছাড়তাম। 

আমি: সরি আপু। 

সুবর্ণা: রাখ তর সরি। আর যদি জীবনে তকে আমার আশেপাশে দেখি । তাহলে তর খবর আছে। আর তকে এই সপ্তাহের ভিতরে বাসা ছাড়তে হবে। 

আমি: প্লিজ আপু । বাড়িতে কিছু‌ বইলেন না। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। প্লিজ আপু।

সুবর্ণা: তর কিছুই করা লাগবে না। তুই শুধু আমার সামনে পড়িস না। 

আমি: আপু আর জীবনেও আপনার সামনে আসবো না। 

সুবর্ণা: যত্রসব ছেচরা মানুষ । কোথা থেকে যে এগুলো আছে। আর শুন তকে যেনো আর বেলকনিতে না দেখি।

আমি: আচ্ছা। 

সুবর্ণার মোবাইলেকে জানি কল দিলো। কথা বলতে বলতে চলে গেলো। আমি বোকার মতো বইসা রইলাম। কোথা থেকে কি হয়ে গেলো? মোবাইলটা বের করে দেখি চড়ের দাগ হয়ে গেছে। এমন দজ্জাল মেয়ে আমি জীবনে ও দেখি নাই। মনটা সত্যি অনেক খারাপ হয়ে গেলো। একটা সিগারেট ধরাইলাম। অনেকক্ষন বসে রইলাম। বাড়িতে গিয়ে কি করবো। মা যদি চড়ের দাগ দেখে তাহলে আমার খবর আছে। না চড়ের দাগ এখনো যায় নাই। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। সন্ধ্যা প্রায় কাছাকাছি। দেখি সুবর্ণা আপু আবার আসতেছে এসে আমাকে বলল।

সুবর্ণা: তুই বেহায়ার মতো এখনো এখানে বসে আছত। তর লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই।

আমি: আপনার প্রোবলেম কি? আমাকে মারছেন এর পরেও মনে ঝাল মিটে নাই। 

সুবর্ণা: না তরে আমার সারাদিন মারলেও মনের ঝাল মিটবে না। তুই মা এখান থেকে। নাহলে কিন্তু আরেকটা দিবো। 

আমি: না আমি যাবো না‌। আপনার মন চাইলে আপনি যান।

সুবর্ণা: যাবি না দেখাচ্ছি মজা।

__এই বলে সুবর্ণা আমাকে সুবর্ণা মারতে আসলো। আমি হাত ধরে কাছে টেনে এনে বললাম । 

আমি: আমি যাবো না। কারণ একটু পর আমার গার্লফ্রেন্ড আসবে আমার সাথে দেখা করতে। বুঝছেন।

__এই বলে সুবর্ণার হাত ছেড়ে দিলাম। 

সুবর্ণা: তকে দেখে নিবো আমি। তকে দেখে নিবো

__ বলতে বলতে এক রিকশায় ওঠে চলে গেলো। 
আমি কিছুক্ষণ বসে রইলাম। দেখি সামি আসতাছে। সামি আমার ক্লাসমেট। সে এই এলাকায় থাকে। এসে বলল।

সামি: কিরে দোস্ত কি খবর?

আমি: ভালো না।

সামি: কি হয়েছে?

আমি: তেমন কিছু না।

সামি: তর সাথে যে দেখলাম একটু আগে একটা মেয়ে কথা বলছে তাকে চিনস।

আমি: হুম চিনি। আমাদের পাশের বাড়ির বড় আপু।

সামি: তুই ঐ বাসায় কি জন্য গেছত? তুই শেষ।

আমি: কি শেষ বুঝিয়ে বল।

সামি: এই মেয়ের নাম সুবর্না না।

আমি: হুম। আচ্ছা সুবর্ণা আপুর সম্পর্কে যা জানিস সব বল।

সামি: তুই যে বাসায় থাকস । ওই বাসার মালিকের ছেলে কিন্তু নিলয় ভাই। তো নিলয় ভাই সুবর্ণা আপুর ভালো সম্পর্ক ছিলো। নিলয় ভাই মনে হয় বলছিলো সুবর্ণাকে বিয়ে করবে ৪-৫ বছর আগে। কিন্তু তখন নিলয় ভাই এর চাকরি ছিলো না। বলছিলো সুবর্ণা ওয়েট করবে নিলয় এর জন্য। কিন্তু এই কিছুদিন আগে নিলয় ভাই এর একটা ভালো চাকরি হয়েছে। এখন বলে নিলয় আর বিয়ে করবেনা সুবর্ণাকে । কারণ সুবর্ণার বলে বয়স বেশি হয়েগেছে। 

আমি: তাহলে এই ব্যাপার। কিন্তু তুই কি করে জানলি এতো কথা।  (আমি মনে মনে এই কারণে সুবর্ণা আপু এরকম খিটখিটে খারাপ মেজাজ দেখায়।)

সামি: আমার মা আর‌ নিলয় ভাই এর মা বান্ধবী যার কারণে মা মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় যায়।

আমি: ওও।

সামি: দোস্ত সুবর্ণার চেহারা কিন্তু অনেক সুন্দরী। তুই দেখ চান্স নিতে পারস কিনা। 

আমি:  আমি এ জীবনে অসম্ভব।

আমি তাকে আমার গাল দেখিয়ে বললাম 
আমি: দেখছত কি করছে  আমাকে ।

সামি: আরে ভাই রাগ করস কেনো তর বড়না তর উপর একটু অধিকার খাটাতে আসবেই।

আমি: আরে জ্ঞানী । বসতো লাস্টের বেঞ্চে ফেল করস প্রতি ইয়ারে। এখন আইছত আমারে জ্ঞান দিতি।

সামি: কথাটা কিন্তু খারাপ বলছিনা। সিগারেট খাবি খাবি ।

আমি: দে। 

__আমি আর‌ সামি সিগারেট খেয়ে । আমি বাড়িতে চলে আসলাম। কোনো রকম শুধু নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। মাকে বলে দিলাম খাবো না। রাতে কিছুক্ষন পরে ঘুমিয়ে গেলাম।

__মনে করেন আপনি একটা ছেলের জন্য ৪-৫ বছর ধরে ওয়েট করতেছেন সে আপনাকে বিয়ে করবে বলে কারণ আপনি তাকে ভালোবাসেন। এখন ৫ বছর পর বলে সে আপনাকে বলে সে আপনাকে বিয়ে করবেনা কারন আপনার বয়স বেশি হয়ে গেছে। সুবর্ণার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। নিলয়ের জন্য সে তার অর্ধেক জীবন দিয়ে দিছে। সুবর্ণার বয়স ২৫‌বছর । এতো দিনে তাকে কতো মানুষ দেখতে আসছে নিলয়ের জন্য সে তাদের না করে দিয়েছে । 
আর ফ্যামিলির কতো বকা কতো কথা শুনতে হয়েছে সুবর্ণার। কিন্তু ঐদিন রাতে নিলয়ের কথা শুনে সুবর্ণা অবাক হয়ে যায়। নিলয় বলে তাকে বিয়ে করতে পারবে না। এই কথা শুনে সুবর্ণা অনেক কাঁদে। নিলয় যে তার সাথে এমন একটা চিট করবে এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। নিলয় তার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে কিন্তু সুবর্ণা এখনো আশা ছাড়েনি একজন না একজন সুবর্ণার জন্য আসবেই। কয়েকদিন ধরে সুবর্ণাকে পাশের বাড়ির এক ভাড়াটিয়া অনেক জ্বালায়তাছে। গতকাল রাতে সাকিব নক দিয়ে একটা ছবি পাঠিয়ে বলে পাঁচ হাজার টাকা দিতে। কিছুক্ষণ আগে নিলয়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করে আসে । যার কারণে মনটা খুব খারাপ ছিলো। তাই কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই টাকা দিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আজকা সুবর্ণা তাকে ইচ্ছা মতো ধুলায় দিয়েছে ‌। পিচ্চি ছেলে কথা বলে 
বেশি । আরেকদিন সামনে আসুক  আচ্ছা মতো আরো কিছুক্ষন ধুলায় দিবে । এমন সময় সুবর্ণার মা ঘরে প্রবেশ করলো সুবর্ণা খেয়াল করলো তার মার চোখে মুখে রাগের আগুন জ্বলছে। 

চলবে....

পাঠক-পাঠিকারা আমরা তোমাদের জন্য গল্প লেখি।
গল্পের এক পার্ট লেখতে আমাদের ২-৩ ঘন্টা চলে যায় । আর তোমাদের একটা রিয়েক্ট দিতে এক সেকেন্ড লাগবে। তাই কেউ রিয়েক্ট না দিয়ে যাবেন না। আর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post