গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ১০ | Senior Boss Part 10

গল্পঃ সিনিয়র বস পার্ট ১০ | Senior Boss Part 10

 #নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ১০
#লেখক: Osman

__আমি বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম একটা লাসের খাঁটিয়া। রাহাত গিয়ে  লাসের মুখ দেখালো। আমি দেখেই আমার পায়ের তলা থেকেই মাটি সরে গেলো। 
আমি এক চিৎকার দিয়ে মার লাসের উপর লুটিয়ে পড়লাম। আর শিশুর মতো কাঁদতে লাগলাম । মার লাসের উপর পড়ে।  চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়তে লাগলো। রাহাত এসে আমাকে ধরলো আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমার মার কি দোষ ছিলো । আল্লাহ তুমি কেনো? আমার মাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলা। রাহাত আমাকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো। আমি রাহাতের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম। নিজের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিলো জুড়ে জুড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকা। গতরাতেই তো মার সাথে কথা বললাম। মারতো কোনো অসুখ ছিলো না। আল্লাহ তুমি কেনো মাকে নিয়ে গেলা। রাহাত আমাকে বুঝাতে লাগলো। আমার সেসব কথায় কোনো ফায়দা হচ্ছে না। আমার মাথায় ঘুরপাক করছে। মার সাথে আর কোনো দিন কথা বলতে পারবো না। মাকে আর দেখতে পারবোনা। মার‌ প্রত্যাকটা কথা মনে হচ্ছে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সব আমার দোষ কেনো যে মাকে ছেড়ে চলে গেলাম। আজ যদি মার পাশে থাকতে‌ পারতাম হয়তো এমন হতো না। মৃত্যুর‌ সময় মার পাশে থাকতে পারতাম। মার শেষ কথা গুলো শুনতে পারতাম। হে আল্লাহ ! হে আল্লাহ কেনো তুমি আমার মাকে তুলে নিয়ে গেলা। কেনো তুমি আমাকে এতিম বানায় দিলা। কতক্ষন কাঁদলাম জানি না। মাকে গোসল দিলো। রাতে জানাজার টাইম দিলো। ছোট বেলায় মাদ্রাসায় পড়ার কারনে আরবি পড়তে পারতাম। নিজে মার জানাজা পড়ালাম। নিজের হাতে মার কবর দিলাম। আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তেই আছে। আর শুনতে পারবো না মার মিষ্টি মধুর বকা গুলো। আমি রাতে ঘুমাতে পারলাম না। শেষ রাতে ঘুমিয়ে গেলাম। রাহাত এসে ডেকে উঠালো। এখন কেনো জানি মার মধুর ডাক গুলো শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেই ভেবেই আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। রাহাত আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো। 

রাহাত: দেখ মানুষের মৃত্যু হবেই । আজ না হোক কাল। তর মার হায়াত নেই সেজন্য আল্লাহ নিয়ে গেছে। 

__রাহাত আমাকে খাবার এনে দিলো। আমি অল্প খাবার খেলাম। 

রাহাত: মনি আপু আসছে। 

আমি: ভিতরে আসতে বল। 

__দেখি মনি আপু আসছে । সাথে সারাও । মনি আপু এসে‌ বসলো। আমার চোখ দিয়ে তখনো পানি পড়তাছে। মনি আপু বললো

মনি আপু: দেখ মানুষের মরতেই হবে। এমন আছে আল্লাহ আমাকেও আজকে তুলে নিয়ে যাবে। তর মার হায়াত নেই। আর মার জন্য না কেঁদে দোয়া কর আল্লাহ যেনো তর মাকে জান্নাত বাসি করে‌। 

আমি: হুম। 

মনি আপু: কাঁদিস না । কেঁদে যদি তর‌ মাকে ফিরিয়ে আনা যেতো। তাহলে তর মাকে কেঁদে ফিরিয়ে আনতাম। 

আমি: হুম। 

মনি আপু: আমি আর সারা কিছুদিন এখানে থাকবো।‌ তর মাকে যারা গোসল করিয়েছে কবর করছে । তাদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াইয়া দিয়ে তারপর আমরা যাবো । 

রাহাত: না আপু আপনার কষ্ট করতে হবে না। আমরাই ব্যাবস্থা করবো। 

সারা: রাফিদের অবস্থা ভালো না। আপনারা পারবেন না। আর এমন কেও নাই আপনাদের ব্যাবস্থা করে দিবে। তাই আমরাই‌ করে দিবো। 

আমি: না আপু আপনি‌ শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেনো? আমরাই ব্যাবস্থা করবো‌। 

মনি আপু : নাহ তরা পারবি না। কে তাদের রান্না করে দিবে। কবে তাদের বলবি। 

__সেটা‌ অবশ্য মনি আপু ঠিকই বলছে। কারণ আমার আব্বা ছিলো আমার দাদার একমাত্র ছেলে। যার কারণে আমার চাচা-চাচী ফুফু কিছুই নেই। আমাদের বংশের আমিই লাষ্ট। আমি বললাম

আমি: দুইদিন পর।‌

মনি আপু: আচ্ছা আমরা দুই দিন বাড়িতে থাকবো। 

আমি: শুধু শুধু কষ্ট করবেন আপনারা।

মনি আপু: তোমার নাম যেনো কি? বললো রাহাতকে লক্ষ্য করে। 

রাহাত: জী আমার নাম রাহাত। 

মনি আপু: রাহাত তুমি রাফিদ কে‌ একটু সঙ্গ দেও। 

রাহাত: জী আপু। 

মনি আপু: তাহলে এখন আমরা যাই। দুপুরে আর রাতে আমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবি। 

আমি: জী না আপু। 

মনি আপু: চুপ কর যেটা বলছি সেটাই। 

__এই বলে মনি আপু চলে গেলো।‌ রাহাত বললো

রাহাত: ভালই হলো ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলো। 

আমি: হুম। 

রাহাত: তুই বস আমি আসছি। 

আমি: ওকে। 

__রাহাত চলে গেলো। আমি মার আলমারি থেকে মার বেগটা বের করলাম। মার বেগে থেকে একটা কাগজ পেলাম। কাগজে লেখা ছিলো..

(রাফিদ বাবা আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আর বেশিদিন বাঁচবো না। তকে বলিনি কারণ তুই শুধু  শুধু টেনশন করবি । কখন মারা যাবো বলতে পারিনা হয়তো তুই পাশে থাকতে পারস নাও থাকতে পারস । সেজন্য বলতাছি। আমার পছন্দ করা মেয়েকে তর পছন্দ হলে বিয়ে করিস। আর সবসময় নামাজ পড়বি তর বাবার জন্য দোয়া করিস মারা গেলে আমার জন্য দোয়া করিস। আর বংশের মর্যাদা ধরে রাখিস। আমার একাউন্টে কিছু টাকা আছে ঐগুলো খরচ করিস। আর তর আব্বার কবরের পাশে আমাকে কবর দিস। তকে অনেক বকাঝকা করছি‌ মাফ করে দিস। যদি এই চিঠিটা পড়ে থাকস তাহলে আমি অলরেডি মারা গেছি। কেনো জানি মনে হচ্ছে বেশি দিন বাঁচবো না।)

__আমি চোখ দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে। আমাকে কেনো বললো না মার মনের কথা। আব্বার কবরের পাশেই মার কবর দেয়েছি। মার পছন্দ করা মেয়েকে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয় কারণ এখন আমাকে চলে যেতে হবে ঢাকায় । আর বিয়ে করে তাকে ঢাকায়  নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মা থাকতো তাহলে মার সাথে বাড়িতে থাকতে পারতো। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। এই বাড়ি এখন খালি পড়ে থাকবে। ভাবতেই বুক ফেটে চিৎকার আসছে। মাকে ছাড়া কি করে থাকবো । এই পৃথিবীতে আমার এখন আপন বলতে কেউ নেই। দুপুরে মনি আপু আসলো খাবার নিয়ে। মনি আপু আমাকে দেখে বললো

মনি: তর কষ্ট আমি বুঝি। এভাবে কাঁদলে কি তর মা ফিরে আসবে। এই নে খাবার খেয়ে নে দেখবি ভালো লাগবে। 

আমি: হুম। 

মনি আপু: এখন আমার সামনে খাঁ। 

আমি: ওকে। 

__আমি অল্প খাবার খেলাম। মনি আপু বললো 

মনি: বুঝতে পারছি তর মনটা অনেক খারাপ। তাহলে বিকালে চল নদির পাড়ে হাঁটতে যাবো। 

আমি: হুম। 

__বিকালে আমি আর মনি আপু সারা রাহাত গেলাম নদির পাড়ে । শুনলাম সবুজ বিদেশ চলে গেছে। 
মনি আপু গিয়ে নদীর পাড়ে বসলো । সারা নদী দেখে খুশিতে শেষ। পানিতে নামতে চলে গেলো। মনি আপু ইশারা দিয়ে বললো তার পাশে বসতে। আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। মনি আপু বলল

মনি: তর মনে আছে এই নদীতে কতো গোসল করছিলাম। 

আমি: হুম। 

মনি আপু: মনে আছে একবার তুই যে আমাকে টান দিয়ে । পানির অনেক গভীরে নিয়ে গিয়েছিলি । আমি যে কি ভয় পেয়েছিলাম । ভয়ের কারণে আমার তিনদিন একটানা জড় ছিলো। 

আমি: হুম। 

__দেখি সারা পিচ্ছিল খেয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে অর্ধেক শরীর ভিজিয়ে ফেলেছে। মনি আপু বললো

মনি আপু: রাহাত ওঠাওতো সারাকে। 

__রাহাত গিয়ে হাত বাড়ালো । কিন্তু সারা নিজের চেষ্টায় উঠতে গিয়ে আবার পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গেলো। মনি আপু হাসতে লাগলো। পড়ে বাধ্য হয়েই সারা রাহাতের হাত ধরলো । রাহাত টান দিয়ে সারাকে উঠালো। রাহাত নিজের শরীরের শার্ট খুলে সারাকে দিলো পড়ার জন্য। সারা নিতে নারাজ। মনি আপু হাসতে হাসতে বললো

মনি আপু: সারা নে নে তর শরীর ভিজে গেছে। 

__সারা বাধ্য হয়ে রাহাতের শার্ট নিলো । নিয়ে নিজের গায়ে দিলো। আমি বললাম

আমি: চলেন উঠি। আজান দিয়ে দিবে। 

মনি আপু: আমার জন্য দোয়া করিস। কবে জানি আমিও মারা যাই‌ । 

আমি: আপনার বয়ফ্রেন্ড কে গিয়ে বলেন। আমাকে বলেন কেনো? আমি মানুষ হিসেবে সবার জন্যই দোয়া করি। 

মনি আপু: আমার জন্য একটু স্পেশাল ভাবে দোয়া করিস। 

আমি: হুম। 

__আমি মসজিদে এসে নামাজ পড়ে । বাসায় আসলাম। দুইদিন চলে গেলো। মনি আপু আর সারা রান্না করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো। যারা যারা গোসল করিয়েছে কবর করছিলো । তাদের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো । নানির বাড়ি থেকে মানুষ আসলো। নানা নানী আরো আগেই মারা গিয়েছে। আশেপাশের আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হলো। সবাইকে খাওয়ানো হলে । মসজিদের ইমামকে এনে দোয়া পড়ালাম। বিকালের দিকে মনি আপুরা আসছে বিদায় নিতে। মনি আপু বললো।

মনি আপু: রাফিদ তাহলে আমরা যাই। তুই কবে জয়েন দিবি।

__মনি আপু খুব উপকার করলো আমার। আসলে এতো মানুষের খাবার রান্না করাটা সহজ বিষয় না। 
মনি আপুকে বললাম

আমি: ধন্যবাদ আপু এতোবড় একটা উপকার করার জন্য। 

মনি আপু: ধন্যবাদের কি আছে ? এটাতো প্রতিবেশীর হক। 

আমি: তারপরেও ধন্যবাদ। 

__সারা বললো

সারা: রাহাত আপনার শার্টটা ধোয়ার পর না ডিসকালার হয়ে গেছে। আপনাকে একটা নতুন শার্ট কিনে দিবো। 

রাহাত: না কিনে দেওয়া লাগবেনা । ডিসকালার শার্টটাই দেন ঐটায় আমি চালিয়ে নিবো। 

সারা: নাহ আপনি আমার উপকার করছেন। 
আপনাকে আমি ঠকাতে পারি না। আমি নতুন শার্ট কিনে আপনাকে দিয়ে দিবো। 

আমি: সারা যেহেতু‌ চাচ্ছে না করিস কেনো?

মনি আপু: সেটাই। এখন বল কবে জয়েন দিবি। 

আমি: কিছু ঝামেলা আছে ঐগুলো শেষ করে । তিন দিনের ভিতর জয়েন দিচ্ছি। 

মনি আপু: আচ্ছা। সারা চল। 

__মনি আপু আর সারা চলে গেলো। রাহাত বললো

রাহাত: আমি খুব ভোরে চলে যাবো। গিয়ে অফিস ধরতে হবে। 
আমি: ওকে। 

চলবে....

পাঠক-পাঠিকারা আমরা তোমাদের জন্য গল্প লেখি।
গল্পের এক পার্ট লেখতে আমাদের ২-৩ ঘন্টা চলে যায় । আর তোমাদের একটা রিয়েক্ট দিতে এক সেকেন্ড লাগবে। তাই কেউ রিয়েক্ট না দিয়ে যাবেন না। আর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post