#Jahedur_Rhaman_Saikat
#৯ম_পর্ব
প্রিয় বন্ধুটার এমন অবস্থা দেখে রাফি পাগলের মত আচরণ শুরু করে দেয়.! আকাশের কিছু হলে এই পৃথিবীতে তো আর কেউ থাকবে না তার? দশবছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে আকাশকেই সবসময় পাশে পেয়েছে? অথচ আজ যখন আকাশের এই অবস্থা কিছুই করতে পারছে না রাফি? এই কষ্ট কি আর মেনে নেওয়া যায়?
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে যায়,,অতঃপর নিজেকে সংযত রেখে তাকিয়ে দেখে আকাশ এখনও শুয়ে আছে। আর তাসনিয়া তার সারাশরীর চেকআপ করতেছে।
তাসনিয়াঃ এই ধরেন এই ঔষধ গুলো নিয়ে আসেন ,,, পেসেন্ট এর অবস্থা খুব খারাপ আপনারা যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।
এই বলে তাসনিয়া চলে যায়। তারকিছুক্ষণ পরই আব্দুর রহমান ও নীলাদ্রির পরিবার চলে আসে। আব্দুর রহমান এসে আকাশের পাশে বসে আছেন।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে নীলাদ্রি রাফির গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নীলাদ্রির এমন আচরণে সবাই অবাক এর শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায়। এখানে রাফির কি অন্যায় সেটাই তো বুজতে পারছে না রাফি?
নীলাদ্রিঃ কু****র বা***চ্চা তুই আমার আকাশকে দেখে রাখতে পারিস নাই? তোর জন্যই সব হয়েছে? আমার আকাশের কিছু হলে আমি তকে ছেড়ে দিব না বলে দিলাম? যা এখনই আমার সামনে থেকে চলে যা। (অনেকটা রাগ + চিল্লায়ইয়া কথাটা বলে নীলাদ্রি? যার জন্য ডাক্তার ও দৌড়ে ক্যাবিনে চলে আসে)
ডাক্তারঃ কি হয়েছে এখানে? রোগীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল আপনারা এখানে চিল্লাচিল্লি করতেছেন কেন? যান বেরিয়ে যান এখান থেকে। (এইগুলোও কি পেসেন্ট এর পরিবার হতে পারে? যতসব? এমনিতেই রোগীর অবস্থা ভাল না আর এরা এমন আচরণ করতে শুরু করে দিয়েছে?)
নীলাদ্রিঃ দুঃখীত ডাক্তার, আমরা আর চিল্লাচিল্লি করবো না।
ডাক্তারঃ আপনারা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে পেসেন্ট এর ক্ষতি হয়।
এই বলে ডাক্তার চলে যায়,,
রাফি ও ডাক্তার এর সাথে বেরিয়ে যায়,,এমনিতেই বন্ধুর এমন অবস্থায় তার ভিতরটা একদম ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে আবার এই মেয়ের কথায় রাফির শরীর রাগে জ্বলে উঠে, কিন্তু হাসপাতাল বলে সে কিছু না বলে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ গুলো আনতে ফার্মেসীতে চলে যায়।
ওষুধ গুলো নিয়ে আবার ক্যাবিনে চলে যায়,, তারপর তাসনিয়াকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসে,,
তাসনিয়াঃ আপনারা সবাই বাহিরে যান আমি রোগীর চেকআপ করবো আর হ্যা একসঙ্গে এতজন এখানে আসবেন না প্লিজ।
সবাই বেরিয়ে যায়, অতঃপর তাসনিয়া কিছু চেকআপ করে,, মাথায় অনেক রক্ত জমাট হয়ে আছে,,দ্রুত আবার অপারেশন করতে হবে নাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। আকাশকে ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে পাটিয়ে দেয়,,অতঃপর আকাশের পরিবারের সাথে কথা বলতে বাহিরে চলে যায়,,
তাসনিয়াঃ দেখুন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ,, মাথায় অনেক রক্ত জমাট হয়ে আছে, দ্রুত একটা অপারেশন করতে হবে নাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে,, কেউ একজন এসে সব ফর্মালিটি পূরণ করেন,, আর যত তারাতাড়ি পারেন হাসপাতালের বিল প্লে করে দিবেন,,
এই কথা বলে একমিনিট ও না দাঁড়িয়ে তাসনিয়া চলে যায়, কিন্তু কারো সাহস হয় না বর্ড পেপার এ সাইন করতে,, তাই রাফি গিয়ে বর্ন্ড পেপার আর হাসপাতালের সমস্ত বিল প্লে করে আসে। যদিও এগুলো করতে তাকে অনেক বাধা প্রদান করে নীলাদ্রি তার একটাই কথা আকাশের এই অবস্থার জন্য রাফি দায়ি?
কিন্তু রাফি একটা কথার ও উওর দিচ্ছে না,, তার কাছে এগুলোর চেয়ে তার বন্ধুর জীবনঅনেক দামি? কথাগুলোর উওর নাহয় পরে দেওয়া যাবে? কিন্তু যদি আকাশের কিছু হয়ে যায় তাহলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না রাফি।
আব্দুর রহমান একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছেন.. একমাত্র নাতির এমন অবস্থায় কি করে নিজেকে শান্ত রাখবেন তিনি? তিনি তো এটাও জানেন না আকাশের এই অবস্থা কি করে হয়েছে? কিন্তু তার এইটুকু বিশ্বাস আছে যে আর যাই হোক রাফি কখনো এই জীবন থাকতে আকাশের কোন ক্ষতি হবে না, রাফি যা করবে সেটা আকাশের ভালর জন্যই করবে? কিন্তু নীলাদ্রি সে কেন এই বর্ন্ড পেপার এ সাইন করতে দিচ্ছিল না তাহলে কি সে চায় আকাশের কিছু হয়ে যাক?
হ্যা তাই হবে মনে হয় নাহলে কখনোই মানা করতো না?
কিছুক্ষণ পর তাসনিয়া বেরিয়ে আসে,,
তাসনিয়াঃ A+ রক্ত লাগবে, আমাদের এখানে নেই আপনারা তারাতাড়ি রক্তের ব্যাবস্থা করেন।
রাফিঃ আমার রক্ত A+, আপনাদের যত রক্ত লাগে নিয়ে নিন, তবুও আমার বন্ধুটাকে বাঁচিয়ে দিন প্লিজ ! (রাফি এবার কান্না'ই করে দিল,এতক্ষণ ধরে বুকের ভিতরে কষ্ট গুলো লুকিয়ে রেখেছিল আর পারতেছে না সে " আর কত সহ্য করবে সে? এই পৃথিবীতে তো আকাশ ছাড়া কেউ নাই তার। আকাশকে হারানোর ভয়টা ক্রমস বেড়েই চলেছে। যদি আকাশের কিছু হয়ে যায় তাহলে কি নিয়ে বাঁচবে সে? কার সাথে ঝগড়া করবে? কাকে ভাই বলে ডাকবে? এগুলো ভাবতেই আকাশের অনেক কান্না পাচ্ছে। না নানা না এখন কান্না করলে চলবে না,, আকাশের কিছু হবে না,, মনের ভিতরে হাজারোও কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে যায় রাফি।
নিজের শরীর থেকে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়,, নিজের ক্ষতি হলেও আকাশের যেন কিছু না হয়।
........................................
প্রায় তিনঘণ্টা পর তাসনিয়া অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসে । তাসনিয়াকে দেখে সবাই এগিয়ে যায় আকাশের বর্তমান অবস্থা কেমন জানার জন্য. ।।
তাসনিয়াঃ অপারেশন সাকসেসফুল । তবে মাথায় আঘাতটা প্রচুর তাই বাকিটুকু জ্ঞান ফিরার পর বলতে পারবো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে ওনি কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
রাফি এখন রেস্ট এ আছে কারণ মাএই তো তার শরীর থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নেওয়া হয়েছে,, শরীরটা অনেকটা দূর্বল লাগছে,, কিন্তু আকাশের কিছু হয় নি জেনে তার সমস্ত কষ্ট একমুহূর্তে হারিয়ে যায়। তবে মনের মধ্যে আরোও এক অজানা ভয় করতেছে৷
রাত এখন প্রায় চারটা বাজতে চললো? অথচ আকাশের জ্ঞান ফিরার কোন লক্ষ্মণ ই দেখা যাচ্ছে না। আকাশের পাশে রাফি বসে আছে। রাতটা আজ তার নির্ঘুম.. এই বারবার মনে হচ্ছে আকাশকে বোধহয় সে হারিয়ে ফেলে?
ফজরের দিকে রাফির চোখটা একটু লেগে গেছিলো। কারো স্পর্শ পেয়ে তার ঘুম ভেঙে যায়।
চারপাশে তো কেউ নেই? কারণ রাফি ব্যাতিত কেউ এখন আকাশের পাশে নেই,, হ্যা রাফির ধারণাই ঠিক। আকাশের জ্ঞান ফিরে এসেছে। মিটমিট করে আকাশ চারপাশে তাকাচ্ছে...রাফি আর দেড়ী না করে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে আসে।
তারপর ডাক্তার এসে সবকিছু চেকআপ করে নেন। আর আকাশের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন,, ততক্ষণে রাফি সবাইকে ফোন করে বলে দিয়েছে যে আকাশের জ্ঞান ফিরে এসেছে। সবাই হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
ডাক্তারঃ হ্যাল শুনতে পাচ্ছো আকাশ?
আকাশঃ হ..হ..হ্যা...শু..ন...তে পা..চ্ছি....
ডাক্তারঃ বলো তো তোমার নাম কি?
আকাশ কিছু বলছে না.. তাহলে কি সে সবকিছু ভুলে গেছে? যদি এখন সবকিছু ভুলে যায় তাহলে কি করে আকাশের অসমাপ্ত কাজগুলো পূর্ণতা পাবে? কি করে মুনালিসার খুনিদের খুঁজে বের করবে? হ্যা আল্লাহ কি হচ্ছে এসব?
আকাশঃ আ...কা.....শ....... আ.......মা..…..র....না....ম (অনেক কষ্টে কথাটা বের হয় আকাশের মুখ দিয়ে)
ডাক্তার আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও, তারপর একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাফিকে নিয়ে নিজের ক্যাবিনে যায় ডাক্তার। তারপরেই.....................
।
।
চলবে........................
।
।
আপনাদের অনুরোধ ই রাখলাম। আকাশকে মারি নি,, আর মেমোরি লস ও হয় নাই, এবার সবাই খুশি তো? আর হ্যা এটাই সারপ্রাইজ ছিল। 🖤
গল্পের এডিটিং টা কি আপনাদের ভাল লাগছে না? যদি কোথাও কোন সমস্যা থাকে বলবেন প্লিজ 🙏
🦋কেমন হইসে জানাবেন 🦋 ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🌺