বাসর রাতের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Basor Rater Romantic Valobasar Golpo

বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প : বাসর রাতে আরিয়ান ফারিবার এক হাতে ডিভোর্স  পেপার আর অন্য হাতে বিয়ের রেজেস্ট্রি পেপার ধরিয়ে দিল।কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে হয়েছে তাদের।তার হাতে পেপার দিয়ে  দুইটাতেই সাইন করে দিতে বলল আরিয়ান।ফারিবা কখনো ভাবতে পারেনি বাসর রাতের দিন আরিয়ান ফারিবাকে ডিভোর্স পেপার দিবে।কারণ ভালবেসে বিয়ে করেছে দুজন।

বাসর রাতের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Basor Rater Romantic Valobasar Golpo
বাসর রাতের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Basor Rater Romantic Valobasar Golpo


-বাসর রাতের দিন এটা কোন ধরনের মজা
 আরিয়ান?
-আমি কোনো মজা করছি না ফারু।সাইন করে  দাও তুমি।
-আমি ডিভোর্স পেপারে কেন সাইন করবো আরিয়ান?ভালবাসি আমি তোমাকে,ভালবেসে তোমায় বিয়ে করেছি তোমায়,ডিভোর্স দেওয়ার জন্য নয়।
-কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি না।আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চাই।
-কেন আরিয়ান?কি করেছি আমি?
-কারণ আমি তোমাকে এখন বলতে পারবো না।তুমি প্লিজ সাইনটা করে দাও।
আরিয়ানের কথা শুনে কান্না করতে থাকে ফারিবা।
আরিয়ানকে সে প্রচন্ড ভালবাসে।

-বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার কেন দিয়েছো আমাকে?এটা কার বিয়ের পেপার?আর আমাকে তুমি সাইন কর‍তে কেন বলছ?
-তোমার বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার।

আরিয়ানের কথা শুনে ফারিবা অনেক অবাক হলো।

-আমার বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার মানে কি?কতবার বিয়ে করবো আমি?(চিল্লিয়ে বলে উঠলো) 
-সেটা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।যা বললাম তাই কর।
-আমাকে কি তোমার খেলনা মনে হয়?যেভাবে তুমি আমাকে নাচাবে আমি সেভাবেই নাচবো?ভালই যখন বাসো না তখন বিয়ে করেছিলে কেন?(আরিয়ানের কলার ধরে কান্না করতে করতে বলে)
-সেই কৈফয়েত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।
বলে আরিয়ান চলে যায়। আর ফারিবা বসে কান্না করতে থাকে।

আরিয়ানের সাথে ফারিবার পরিচয় হয় দুই বছর আগে।ফারিবা তখন কলেজে পড়ত।প্রথম দিন কলেজে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই অনেক বৃষ্টি শুরু হয়।আর সে সাথে করে ছাতাও আনেনি।দৌঁড়ে যাওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে একজোড়া হাত তার কোমড় জাপটে ধরে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল এক দৃষ্টিতে। বৃষ্টির ফোঁটায় দুজনেই ভিজে যাচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে দুজনের ঘোর কাটে।ফারিবাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলেটার হাত থেকে ছাতা পড়ে যায়। দুজনেই কাক ভেজা হয়ে গেছে।যার সাথে ফারিবার ধাক্কা লাগে সে হলো আরিয়ান।সেদিনই ওদের প্রথম দেখা হয়।আরিয়ানের অফিসের পাশেই ছিল ফারিবার কলেজ।প্রতিদিন দেখা হতো তাদের।
প্রতিদিন দেখা হওয়া, কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া, এসব করতে করতে করতে ফারিবার মায়ায়,তার প্রেমে পড়ে যায় আরিয়ান।ভালবেসে ফেলে তাকে।একদিন সাহস করে ফারিবাকে নিজের মনের কথাও বলে দেয় আরিয়ান।সেও আরিয়ানকে মনে মনে অনেক পছন্দ করতো কিন্তু কখনো বুঝতে দেয়নি।আরিয়ানের প্রস্তাবে ফারিবা রাজি হয়ে যায়। একসময় সেও আরিয়ানকে ভালবেসে ফেলে।দুইবছর চুটিয়ে প্রেম করার পর আজ তারা বিয়ে করে।তাদের পরিবারের মতেই বিয়ে হয়।বাসর ঘরে একরাশ সপ্ন নিয়ে বসে ছিল ফারিবা।কিন্তু আরিয়ান যে এমন একটা কাজ করবে তা ফারিবার ধারণার বাহিরে ছিল।

কিছুক্ষণ আগে__

আরিয়ান তার বন্ধুদের সাথে বসে ছিল।তার বন্ধুরা কিছুতেই তাকে বাসর ঘরে যেতে দিচ্ছিলো না।অনেক করে বলার পর তার বন্ধুরা তাকে ছাড়ে।ঘরে যাওয়ার সময় আরিয়ানের ফোনে একটা কল আসে।কলটা তাকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড সাগর দিয়েছে।সাগর একটা মেয়েকে অনেক ভালবাসে।সেই মেয়ের আজকে বিয়ে ছিল।সেটা আটকাতে যায় সে।কিন্তু সে যাওয়ার আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। আরিয়ানকে ফোন করে বলে সে আর বাঁচতে চায় না।এটা শুনে আরিয়ান অবাক হয়ে যায়। সাগর আরিয়ানের কাছে বন্ধুর থেকে বেশি।সে তার জন্য নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে।আরিয়ান তাড়াতাড়ি করে সাগরের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে দেখে সাগর হাতে একটা ব্লেড নিয়ে বসে আছে।আরিয়ান দৌঁড়ে গিয়ে সাগরের হাত থেকে ব্লেডটা ফেলে দেয়।

-সাগর কি হয়েছে তোর?কি করতে যাচ্ছিলি তুই?
-ওর বিয়ে হয়ে গেছে রে আরিয়ান।ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।আমার ওকে চাই।
-তুই চিন্তা করিস না দোস্ত। আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি ওই মেয়েকে তোর কাছে এনে দিব।ওই মেয়ের ছবি আছে তোর কাছে?
-হুম।
-ছবিটা দেখার পর আরিয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। ছবিটি হলো ফারিবার।এখন আরিয়ান কি করবে?সে তো ফারিবাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসে।
-দোস্ত তুই আমাকে কথা দিয়েছিস যে ওকে আমায় এনে দিবি।
-হুম দিব।(কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে)

আর এ কারণেই ফারিবার হাতে ডিভোর্স পেপার দেয় আরিয়ান।সাগর এই কয়বছর বিদেশে ছিল।আরিয়ানের ব্যাপারে সব জানত আর আরিয়ানও জানত যে সাগর একটা মেয়েকে ভালবাসে।সাগর জানতে চেয়েছিল কাকে ভালবাসে কিন্তু আরিয়ান বলেনি বলেনি,সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল,তাই সাগরও বলেনি।

বর্তমান___
আরিয়ান দুপুরের দিকে বাসায় আসে আর ফারিবাকে বলে রেডি হয়ে থাকতে তাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে।আরিয়ানের কথামতো ফারিবা রেডি হয়ে নেয় আর আরিয়ান ফারিবাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। 

-তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আরিয়ান?
-গেলেই দেখতে পারবে।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব।এখন চুপ থাকো।

আরিয়ান একটা বাসায় আসে।বেল বাজানোর পর একটা ছেলে বেরিয়ে আসে।ফারিবাকে দেখে ছেলেটি মনে হয় যে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।সে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।ফারিবা কিছুই বুঝছে না।
-তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেব এখন।ও হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাগর।ও তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসে।কালকে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে শোনার পর ও আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দাও আর এই রেজিস্ট্রি পেপারেও সাইন করে দাও।ডিভোর্স পেপারে সাইন করলে তোমার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে আর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করলে তোমার সাথে সাগরের বিয়ে হয়ে যাবে।
আরিয়ানের কথা শোনার পর ফারিবা আরিয়ানের গালে থাপ্পড় মারে।
-আমাকে কি পেয়েছ তুমি?ভালবাসি বলে তুমি যা বলবে আমাকে কি তাই করতে হবে?এই তোমার ভালবাসা?
-আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য... 
-সাট আপ।তোমার কি মনে হয় উনাকে বিয়ে করলে আমি সুখী হবো?উনাকে বিয়ে করলে তিনটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।না আমি সুখে থাকবো,না তুমি আর না উনি।
সাগরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-জীবনটা এতো সহজ না যে যাকে ভালবাসলেন তাকে না পেলে নিজেকে শেষ করে দিবেন।আত্মহত্যা করা কোনো কিছুর সমাধান নয়।আপনি যদি আমাকে সত্যি ভালবাসতেন তাহলে কখনো আমার বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতেন না।আমাকে সুখী দেখতে চাইতেন।আমি আপনাকে ভালবাসি না আর কখনো বাসবোও না।
-আরিয়ান আপনি এই কাজটা একদম ঠিক করেননি।আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছিলেন তাই না।আজকে থেকে আমি আর আপনার সামনে আসবো না।ভাল থাকবেন।

ফারিবা কান্না করতে করতে চলে যায়। পিছন থেকে আরিয়ান অনেকবার ডেকেছে কিন্তু ফারিবা সারা দেয়নি।সাগর এতক্ষন নিরিব দর্শকের মতো সব দেখছিল।ফারিবাতো ঠিকই বলেছে।ভালবাসা মানে যে তাকে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।ভালবাসার মানুষ সুখী থাকলেই যথেষ্ট। 
সাগর জানত না যে আরিয়ান এমন একটা কাজ করবে।জানলে কখনোই এই কাজটা করতে দিত না।আর আরিয়ানও নিজের ভুলটা বুঝতে পারে।
_____
ফারিবার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান।অনেকবার তাকে ডেকেছে কিন্তু সে আসেনি।বালিশে মুখ গুজে কান্না করছে ফারিবা।আরিয়ান তাকে একটুও ভালবাসে না।কিভাবে সে নিজের ভালবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইল?

শীতের রাত।আরিয়ান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।ফারিবা বারান্দা থেকে দেখেছে।ফারিবাকে দেখে আরিয়ান কানে ধরে সরি বলে, কিন্তু ফারিবা কিছুই বলে না।রাত বাড়ার সাথে সাথে  ঠাণ্ডাও বাড়ছে।আরিয়ানের ঠান্ডায় এলার্জি আছে।আরিয়ান তাও দাঁড়িয়ে আছে।ফারিবাকে না নিয়ে সে যাবে না।আরিয়ান ফারিবাকে অনেক মেসেজ আর কল দিয়েছে।আরিয়ানকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিবার খারাপ লাগছে।তার মনটা গলতে শুরু করে।সে জানে আরিয়ান তাকে নিয়েই যাবে।তাই আর দেরি না করে একটা শাল গায়ে দিয়ে নিচে নেমে আসে।ফারিবাকে দেখে আরিয়ানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে বুঝতে পেরেছে ফারিবার রাগ অভিমান গলতে শুরু করেছে।নিচে আসার পর সাথে সাথে আরিয়ান ফারিবাকে কোলে তুলে নেয়।ফারিবা ছটফট করতে করতে একসময় চুপ হয়ে যায়।   
-সরি জান,আর কখনোই এমন ভুল করবো না।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।ক্ষমা করে দাও জান।

 ফারিবা কিছু বলে না।চোখ মুখ পুরো ফুলে গেছে।আরিয়ান ফারিবাকে কোলে নিয়েই হাঁটা শুরু করে।ফারিবা নিজের শাল দিয়ে আরিয়ানকেও মুড়ে দেয়।দুজনেই এক শালের ভিতরে হেঁটে চলেছে।ফারিবার অভিমানের পাহাড়টাও আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছে। 

              (সমাপ্ত)

অণুগল্প 
অন্যরকম_ভালবাসা
Fariba_Ahmed
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post