#ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ১৮)
#অনিক_হাসান
·
·
·
রিমির চোখ লাল হয়ে আছে।একটু আগে কান্না করে এমন বানাইছে।
রিমি আমাকে কয়েকটা বিজনেস ম্যাথ করতে দিলো।আমি সেগুলো মনোযোগ সহকারে করতে লাগলাম।
ম্যাথ করা শেষে ওগুলো রিমির দিকে এগিয়ে দিলাম।তাকিয়ে দেখি রিমি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি একটু কাশি দিলাম।রিমি বাস্তবে এলো।
রিমিকে বললাম,"নেন।অংক করা শেষ।"
---আজকে দেখবো না।
---কেন?
---মন মেজাজ কোনোটাই ভালো নাই।
---আচ্ছা তাহলে আমি বাসায় গেলাম।
---যা।
আমি উঠে বাসায় চলে এলাম।
রাতে খাবার পর রুমে শুয়ে ভাবতে লাগলাম এখন আমি কি করবো?কোনদিকে যাবো?একঘন্টা ভেবে কোনো উপায় পেলাম না।সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম।ভাগ্যে যার সাথে বিয়ে হবে তাকেই করবো।কিন্তু বিয়ে তো একজন কে করবো।বাকি দুজনের কি হবে?
যা হবার হবে।আর এতো চাপ নিতে পারছি না।এখন ঘুমাই।
ঘুম ভাঙলো সিমার ডাকে।চোখ খুলে দেখি রিমি একেবারে গিন্নি রুপে দাঁড়িয়ে আছে।
---ওই বেলা দেখেছো কত হয়েছে?এতো দেরী করে ঘুম থেকে উঠো কেন?বিয়ের পর কিন্তু এসব চলবে না বলে দিলাম।
(সিমা একনাগাড়ে কথাগুলো বলল)
ওর কথা শুনে আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না। সিমা আবার বলল,"এভাবে তাকিয়ে না থেকে ওঠো বলছি।"
আমি কোনো কথা না বলেি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি সিমা রুম থেকে চলে গেছে।যাক আল্লাহ বাঁচা গেল।
নাস্তা করে ভার্সিটি এলাম।আজকে শান্তি মতো ক্লাস করলাম।কারণ রিমি আজকে আসে নাই।আর মায়া তো বেডে আছে।ক্লাস শেষে বের হতেই মায়া কল দিলো।ভাবলাম কল রিসিভ করবো না।কিন্তু না ধরলে আবার পরে ঝাড়ি দিবে।তাই ধরলাম,
---হ্যালো।
---হুম বলেন।
---আমাকে তো ভুলে গেছো।
---আরে না।
---তাহলে একবার ও দেখতে এলে না।আবার কল ও দাও না।
---আসলে বিজি আছি।
---তোমার আর আমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।
---কি?
---রিমিকে তো আজকে দেখতে আসছিল।ছেলের তো মেয়ে পছন্দ হইছে।তারমানে রিমির বিয়ে আর কেউ আটকাতে পারবে না।আর আমার পথের কাটা দূর হয়ে গেল।
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,"তাই?"
---হুমমম।আজকে একটু আসো না।তোমাকে দেখতে মন চাচ্ছে।
---আজকে তো আসা সম্ভব না।কাল যাবো।
---কালকের টা কাল দেখা যাবে।আজকে তুমি না আসলে আমি কিন্তু কিছু একটা করে বসবো।
---যা ইচ্ছে করেন।আমি আজকে যেতে পারবো না।বলে কল কেটে দিলাম।
একটু পর ফোনে টুং শব্দ হলো।ফোন বের করে দেখি মায়া এমএসএস দিছে।ওপেন করে দেখি শয়তান মাইয়া হাত কেটে ফটো তুলে আমাকে দিছে।আর লিখেছে বিকেলে না এলে আরও হাত কাটবো।
আল্লাহ এ কি বিপদে পড়লাম!এখন কি করি?
আগে বাসায় যাই।তারপর যা করার করা যাবে।
বাসায় এসে একটা ঘুম দিলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি তিনটা বাজে।বিছানা থেকে উঠে গোসল করে খেলাম।
সিমাকে দেখছি না।হয়তো রিয়ার সাথে গল্প করছে।এই সুযোগে কেটে পড়া ভালো।রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে মায়াদের বাসায় চলে এলাম।আমাকে দেখে আন্টি বলল,"যাক বাবা তুমি এসেছো।আমার পাগলি মেয়েকে আমি সামলাতে পারছি না।দেখো গিয়ে হাত কেটে কি করেছে!তুমি একটু ওকে বোঝাও।"
---আচ্ছা আন্টি দেখি আমি কি করতে পারি।বাট উনি কোথায় আছে?
---ওর রুমে।
---আচ্ছা।
আমি মায়ার রুমে ঢুকে দেখি সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে।মানে মায়া এগুলো করছে।
আমাকে দেখে মায়া বলল,"তুই তো আসবি না।তাহলে এলি কেন?"
---আসলেও দোষ, না আসলেও দোষ।থাকেন আপনি।আমি গেলাম।
---ওই যেয়ে দেখ কি করি?
---কি করবেন?
---আরও হাত কাটবো।
---থাপ্পড় চিনেন?
---হুমম।
---না খেতে চাইলে চুপ করে থাকেন।আরেকবার যদি শুনছি হাত কাটছেন তাহলে একেকটা দাগের জন দুটা করে থাপ্পড় খাবেন।
---মায়া আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছে।অবাক হয়ে আমাকে বলল,"আমাকে নিয়ে তুমি ভাবো।তারমানে তুমি আমাকেই ভালোবাসো।বলে বিছানা থেকে উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
---বাসার ভেতর এসব কি করছেন?ছাড়েন।আপনার আম্মু দেখলে কি ভাববে?
---যা ভাবার ভাববে।আম্মু কে আমি ভয় পাই না।
আমি আর কোনো কথা না বলে জোর করে মায়ার থেকে নিজেকে ছড়িয়ে নিলাম।মায়া দাঁড়িয়ে আছে।
---এমন করলে কেন?আমাকে কি তোমার ভালো লাগে না?
---কথাটা সেটা না।এখন এসব না করলে হয় না?
---না।তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করে না।তুমি বলো আমি কি করবো?
---আমি জানি না।
---কি জানো?
---আমাকে যেতে হবে।
---এলে দশমিনিট ও হলো না।এতো তারাতাড়ি কেন?
---আপনি এমন করলে আর থাকবো না।
---আচ্ছা আর অমন করবো না।তাও আরও কিছুক্ষণ থাকো।
---আচ্ছা।
মায়া রুমে পায়চারি করছে।আমি বললাম,"ভালো হলেন কখন?
---গতকাল.
---ওহ!আচ্ছা। ভালো তো।
---চলো বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।
---আপনি এখনও অসুস্থ। আর কিছুদিন পর যাবো।
---না।আজই যাবো।
----এমন জোরাজুরি করে লাভ হবে না।আজকে যাবো না।
---আজকে না গেলে কাল কে নিয়ে যেতেই হবে।
---আচ্ছা কাল নিয়ে যাবো।এখন আপনি শুয়ে রেষ্ট নেন।
---আচ্ছা রেষ্ট নিতোছি।কিন্তু তুমি আমাকে আপনি করে বলো কেন?তুমি করে বলবে এখন থেকে।তাছাড়া আমাদের বিয়ের পর তুমি আমাকে আপনি বললে লোকে শুনলে কি ভববে?
---মায়ার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেল।মাইয়া দেখছি একবছর আগের ফিউচার ভেবে রাখছে।এমন আমার কপাল হলে দঃখের শেষ থাকবে না।একটু ভেবে মায়াকে বললাম,"আপনি আমার বড় তাই এখন আপনি বলি।আর ফিউচারের টা ফিউচারে দেখা যাবে।"
---এখন থেকে বলো।
আমি টপিক চেঞ্জ করার জন্য বললাম,"আচ্ছা আপনার হাত দেখি।কতটুকু কেটেছেন? "
---মায়া ওর ডান হাতটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।হাতে ব্যান্ডেজ করা।এজন্য কতটুকু কেটেছে দেখতে পেলাম না।একটু পর মায়াকে বললাম,"আচ্ছা শোনেন এরপরে থেকে এমন পাগলামি করবেন না।"
---তুমি আমার কথা না শুনলে একশো বার এমন করবো।
---আমি কখন আপনার কথা শুনলাম না?
---শুনো কিন্তু দেরীতে।
---আর এমন হবে না।
মায়ার সাথে বিকেল পাঁচ টা পর্যন্ত গল্প করে বাসায় আসলাম।আসার আগে মায়া তো আবার জড়িয়ে ধরতে লাগছিল।কিন্তু আন্টি আসাতে তা করতে পারেনি।
বাকি টাইম ছাঁদে কাটালাম।এরপর রিমির কাছে পড়তে গেলাম।কলিং বেল বাজাতেই রিনা দরজা খুলে দিলো।রিনাকে আজকে অনেক উৎফুল্ল লাগছে।তাই ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,"আজকে তোমাকে খুশি খুশি লাগছে।ব্যাপার টা কি জানতে পারি?"
রিনা একটু আমার কাছে এগিয়ে এলো।এরপর আস্তে আস্তে বলল,"ব্যাপারটা সিক্রেট। তবে আপনাকে বলা যাবে।"
---তাহলে বলো।
---আপুর বিয়ে।
---রিমির বিয়ের কথা শুনে বুকের বা পাশে কেমন যেন করে উঠলো।তাহলে কি আমি নিজের অজান্তে রিমিকে ভালোবেসে ফেলেছি।না এ হতে পারে না।আমি এখন কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।কিন্তু বেহায়া মন তো আমার কথা শুনবে না।
এদিকে আমি ভাবছি।আর অপরদিকে রিনা আমাকে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,"চমকে গেলেন মনে হয়?"
---হুমমম।বাট বিয়ে তো আনন্দের বিষয়। এটা সিক্রেট এর কি হলো?
---আমি যে তোমাকে বলছি এটা আপু জানলে আমাকে বকবে, সিক্রেট এজন্য বলছি।
---ওহ!আচ্ছা তোমার আপু কি আমাকে পড়াবে নাকি আমি যাবো?
---সেটা আপু ভালো জানে।ওকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
আমি আর কথা না বলে রিমির রুমের সামনে এলাম।দরজায় চাপ দিয়ে দেখি ভেতর থেকে আটকানো। আমি দরজায় কয়। কেকটা টোকা দিলাম।একটু পর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো দেখ রিনা মুড ভালো নাই।আমাকে ডিস্টার্ব করবি না।
---ম্যাডাম আমি রিনা না, অনিক আমি।
একটু পর রিমি দরজা খুলে দিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
---ম্যাডাম ছাড়ুন, কেউ দেখে ফেলবে।
রিমি আমাকে না ছেড়ে দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এভাবে রুমের বাহিরে আমাকে জড়িয়ে ধরা দেখলে তো মান সম্মান সব যাবে।কিছু একটা করতে হবে।আমি জোর করেই রিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
রিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পর রিমির কান্না থেমে গেল।রিমি আমার দিকে করুন ভাবে তাকালো।
---এমনভাবে তাকাচ্ছেন কেন?
---তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো।
---আজব তো! আমি কখন চেঞ্জ হলাম?
---তাহলে ছাড়িয়ে নিলে কেন?
---কেউ দেখে ফেলবে তাই।
রিমি কান্না করতে করতে বলল,"জানো তোমকে জড়িয়ে ধরলে আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।মনে হয় এভাবে সারাজীবন তোমার কাছে থাকি।প্লিজ অনিক আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
·
·
·
চলবে........................