গল্পঃ ডেঞ্জারাস সিনিয়র মেয়ে (পর্ব ১৫)

 #ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ১৫) 
#অনিক_হাসান 
·
·
·
রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এলাম।ফোনটা হাতে নিতেই মায়ার কল।এতো রাতে মায়া আমাকে কল দিবে কেন?সেটা তো কল রিসিভ করলেই জানতে পারবো।

---হ্যালো..(আমি)
---কোথায় তুই?(রেগে বলল)
---আমি আমার রুমে।
---তুই মিথ্যা বলছিস।
---আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস না হলে ভিডিও কল দিয়ে দেখতে পারেন। 
---আচ্ছা বিশ্বাস করলাম।কিন্তু তুই রিমির সাথে কেন ঘুরতে গেছিলি?
---রিমি আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে।আমার কোনো দোষ নাই।
---শয়তান লুচ্চা পোলা আমার সাথেও লাইন মারা আবার আমার কাজিনের সাথেও লাইন মারা।দেরী কর আরেকটু ভালো হই।তারপর তোর সব লুচুমি বের করবো।

এই যা সব দেখছি জেনে ফেলছে।এখন আমি কি করবো?এই মাইয়া যেই লেভেলের জল্লাদ আমাকে পেলে আস্ত রাখবে না।কিন্তু যে করে হোক এর হাত থেকে বাঁচতে হবে।তাই মায়াকে বললাম,"আপনারা দুই বোন যদি আমাকে নিয়ে টানাটানি করেন তাহলে আমি কোনদিকে যাবো বলেন?"
---আমি তোকে আগে প্রপোজ করছি।এজন্য তুই খালি আমার।এরপর থেকে রিমির আশেপাশে যেন তোকে না দেখি।আর কালই আমি আব্বুর কাছে তোর কথা বলবো।

---কিহ!আমার কথা কেন?
---তোকে এভাবে ছেড়ে দিলে নাজানি কোন মাইয়াকে বিয়ে করে ফেলবি।এজন্য আগেই তোকে বিয়ে করবো।
---এহ!বললেই বিয়ে হয়ে গেল নাকি?
---তুই বিয়ে করবি।১০০ বার বিয়ে করবি।না করলে তোর নামে রেপ কেস দিয়ে দিবো।
---আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? 
---হুমকি না।আমার কথা না শুনলে যা হবে তাই বলছি।
---আমি এসব হুমকিতে ভয় পাই না।
---সে দেখা যাবে।এখন তুই ঘুমা।কাল আমার বাসায় আসবি।
---এতোকিছুর পর ও কি করে ভাবলেন আপনার বাসায় যাবো?
---না আসলে তোর আব্বু-আম্মু কে কল করে বলবো আমি তোকে ভালোবাসি।এখন বল আমার সাথে দেখা করবি নাকি?

শয়তান মাইয়ার কথা না শুনলে সত্যি সত্যি ফোন করে বলতে পারে।এরচেয়ে ওর সাথে দেখা করা উত্তম হবে।এজন্য মায়া কে বললাম,"আচ্ছা দেখা করবো।"
---এইতো গুড বয়।এখন একটা পাপ্পি দাও।
---আমি এসব পারি না।
---দিবি নাকি?
---ফোনে এসব কি করে দেয়?
---আাছে আয় শিখিয়ে দিবো।
---আমার এখন শেখার শখ নাই।আমার ঘুম পাচ্ছে।গুড নাইট, রাখলাম বলে কল কেটে দিলাম।

যাক বাবা বাঁচা গেল।আর দেরী না করে শুয়ে পড়লাম।কিন্তু রিমি তো আমাকে কল করতে বলছিল।ধুর কল করে আর কি হবে।এখন ঘুমাই।

সকালে ঘুম ভাঙলো আব্বুর ডাকে।আব্বু তো আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে না।আর যদিন ডাকবে সেদিন আমার কপালে দুঃখ আছে।আজও মনে হয় এর ব্যাতিক্রম হবে না।
রুমের দরজা খুলতেই একগাদা ঝাড়ি দিলো।আমাকে  এই অবস্থায় দেখে সিমা হাসতেছে।শয়তান মহিলা আমার বিপদ দেখে মজা নিচ্ছো।সময় মতো এর হিসাব ও নিবো।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম।এরপর রিয়াকে নিয়ে ওর কলেজে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটি তে এলাম।ক্লাসরুমে বসে আছি।এমন সময় পিয়ন এসে আমাকে বলল,"তোমাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে।আমার সাথে আসো।" বলে চলে গেল।

আমি উঠে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে চলতে লাগলাম।মনে হাজার প্রশ্ন কিলবিল করছে।আমি তো কিছু করিনি।তাহলে স্যার কেন ডাকছে?নাকি রিমি ওর আব্বুকে সব বলে দিছে?যদি বলে দেয় তাহলে তো আজকে আমার বারোটা বাজবে।দুরুদুরু বুকে স্যারের রুমের দরজায় টোকা দিলাম।ভেতর থেকে স্যার বলল,"বাবা ভেতরে আসো।"

আমি দরজা ঠেলে ভেতরে এলাম।এর আগে কখনও স্যারের রুমে আসিনি।তাই একটু ভয় লাগছে।আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্যার বলল,"দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো।"
আমি চেয়ারে বসলাম।এরপর স্যারকে বললাম,"আমাকে ডেকেছেন?"

---হুমম,একটা কাজে ডাকছি।
কি এমন কাজ যার জন্য আমাকে ডাকতে হবে?জানার জন্য বললাম,"কি কাজ স্যার?"
---আমার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,"এটা তোমার আব্বু কে দিবে।"

আমি আর জিজ্ঞাসা করলাম না এর ভেতর কি আছে।প্যাকেট টা রঙিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বললাম," স্যার আমি তাহলে আসি।"
---আচ্ছা যাও।

আমি প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে সোজা ক্লাসরুমে চলে এলাম।

ক্লাস শেষে রিয়া কে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
দুপুরে রুমে শুয়ে আছি।এমন সময় সিমা আমার রুমে এলো।আমি সিমাকে এভাবে আমার রুমে আসা দেখে ভাবলাম এটাই শাস্তি দেওয়ার সুযোগ। আমাকে দেখে হাসার মজা এবার বের করবো।
একটা ধমক দিয়ে বললাম,"ওই বেয়াদব মেয়ে না বলে আমার রুমে আসলি ক্যান?"
---আমাকে তুই করে বললে?
---তুই আমার ছোট।তো তোকে তুই বলে ডাকবো।
---কিন্তু আমি তো তোমার বেশি ছোট না।তুমি করে তো বলতে পারো।(আবদারের সুরে বলল)
---তুই একটা পিচ্চি।তোকে কখনও আমি তুমি বলবো না।
---কিহ!আমি পিচ্চি! 
---হয় পিচ্চি তো।
---আমার চেয়ে এক ক্লাস উপরে পড়ে ভাব নেওয়া হচ্ছে। চাইলে আমি এখনই তোমার সব ভাব শেষ করে দিতে পারি।
---ওই ফাজিল মাইয়া।আমি তোর বড়।আমাকে আপনি বলে ডাকবি।তুমি বলবি না।
---তোমাকে আমি তুমি বলেই ডাকবো।পারলে ঠেকাও।
---দেখ তোর সাথে আমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না।এখন আমার রুম থেকে যা।
---বেশি কথা বললে কিন্তু তোমার বিছানার ভাগ বসাবো।
---শখ কত!
---রাজি থাকলে বলো।খালামনিকে বললেই কাজ হবে। 
---তোর আজগুবি কথা শোনার কোনো ইচ্ছে নাই।এখন আমাকে একটু একা থাকতে দে।
---এতো সহজে তোমাকে ছাড়বো না।(বিরবির করে বলল)
---কি বিরবির করে বলছিস?
---কিছু না।তুমি থাকো।আমি পরে আসবো।
বলে সিমা উঠে গেল।আমি আবার শুয়ে পড়লাম।

সিমাকে রুমে আসতে দেখে রিয়া বলল,"এতোক্ষণ কই ছিলি?"
---তোর ভাইয়ার রুমে?
---ভাইয়ার রুমে তুই কি করতে গিয়েছিলি?
---এমনি দেখতে গেছিলাম।(একটু লাজুক হয়ে বলল)
---আগে তো কখনও দেখতে গেলি না।আজকে হঠাৎ দেখতে যাওয়ার কারণ কি?নাকি আমার ভাইয়াকে লাইন মারার চেষ্টা করছিস?
---এহ!এমনি আমার পিছে কত ছেলে ঘুরে।আর তোর ভাই য়ের পিছে ঘুরতে আমার বয়েই গেছে।
---আমার ভাই অন্য ছেলেদের মতো না বুঝলি।আর এতো লজ্জা পেতে হবে না।তুই চাইলে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।এজন্য অবশ্য পরে আমাকে খাওয়াতে হবে।
---তোর মুখে দেখি কিছুই বাধে না।
---আমি এমনই।আমার শর্তে রাজি হলে বল।আমি কাজ শুরু করবো।
---আগে আমি কিছুদিন ট্রাই করি।নাহলে তোকে বলবো।
----আচ্ছা। 


ঘুম থেকে উঠে দেখি চারটা বাজে।আজকে তো মায়াদের বাসায় যেতে হবে। নাহলে ওই ফাজিল মাইয়া নাজানি কি করে বসে।এজন্য তারাতাড়ি রেডি হয়ে মায়াদের বাসার সামনে এলাম।কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর মায়ার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।

আমাকে দেখেই আন্টি বলল,"আসো বাবা ভেতরে আসো।"
---আন্টি কেমন আছেন? 
---এইতো আলহামদুলিল্লাহ, তুমি? 
---আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।মায়া আপু কেমন আছে?
---মোটামুটি ভালোই আছে।আসো আমি তোমাকে ওর রুমে নিয়ে যাই।
---আন্টি আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আপনি শুধু বলেন কোন রুমে থাকে?
---দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠে হাতের ডানের রুম টা মায়ার।
---আচ্ছা আন্টি।

সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে মায়ার রুমের সামনে দাঁড়ালাম। দরজা হাল্কা খোলা আছে।আমি দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম।সুন্দর গোছানো একটা রুম।আমাকে দেখে মায়ার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল।আমার দিকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,"জানতাম তুমি আসবে। "
---ওভাবে ব্ল্যাকমেইল করলে যে কেউ আসবে। 
---স্যরি বাবু।ওভাবে বলার জন্য মাফ চাচ্ছি।আসলে ওভাবে না বললে তুমি আসতে না।
---ইট’স ওকে।
---দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো।
মায়ার রুমে দুটা চেয়ার। আমি একটা টেনে নিয়ে ওটায় বসলাম।একটু পর আন্টি রুমে এলো।হাতে একটা ট্রে।ট্রে র উপর মিষ্টি, বিস্কুট, আপেল,কমলা শরবত আছে।আন্টি ট্রে টা খাটের উপর রেখে বলল,"নাও বাবা হালকা নাস্তা করো।"
---আন্টি এসব কেন আনতে গেছেন? "
---তুমি প্রথম আমাদের বাসায় এলে।খালি মুখে ফিরবে এটা কি মানায়?আচ্ছা তুমি খাও।আমি যাই।
আন্টি চলে গেল।

মায়া শোয়া থেকে খাটে হেলান দিয়ে বসলো।এরপর বলল,"নাও বাবু খাও।"
---এইযে ম্যাডাম আমি বাবু না।
---আমি জানি তুমি বাবু না।বাবু তো ভালোবেসে ডাকছি।এটাও বুঝো না।
---আমি পিচ্চি মানুষ। এসব কম বুঝি।
--- পিচ্চি রা তো কিস করতে পারে না।

আমি মায়ার কথার উওর না দিয়ে কমলার টুকরো খেতে লাগলাম।মায়া বলল, "আমিও খাবো।"
---নিয়ে খান।
---তুমি খাইয়ে দাও।তাহলে খাবো।আমি মায়ার মুখে একপিস কমলার টুকরো দিছি অমনি রুমে কে যেন প্রবেশ করলো।তাকিয়ে দেখি রিমি দাঁড়িয়ে আছে।

রিমি আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে ওর লাল চোখ দিয়েই আমাকে জ্বালিয়ে দিবে।
আমি মায়ার দিকে তাকালাম। দেখি ও শান্ত মনে কমলা খাচ্ছে। মায়া একপিস আমার মুখের সামনে ধরে বলল,"নাও বাবু এবার তুমি খাও।"
দুপাশে দুটা বাঘিনী। আর মাঝখানে আমি একটা অসহায় মানুষ। এখন আমার কি হবে?
·
·
·
চলবে..................
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post