গল্পঃ ডেঞ্জারাস সিনিয়র মেয়ে (পর্ব ১২)

 #ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ১২) 
#অনিক_হাসান 
·
·
·
হারামি রিয়া আমাকে আজও বলে নি এতো সুন্দরী একটা খালাতো বোন আছে।অথচ তাকে আমার ছবি দেওয়া হয়ে গেছে।আগে বাসায় যাই তারপর আমার ছবি দেওয়ার ঝাল বের করবো।

রাস্তায় টুকিটাকি কথা বলতে বলতে বাসায় চলে এলাম।আম্মু খালাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।আর সিমা মায়াকে।আমি দাঁড়িয়ে এসব দেখছি।একটু পর বললাম,"এসব পরে করলেও চলবে।আগে খালা আর সিমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।"

আম্মুর সাথে খালা দোতলায় চলে গেল।আর রিয়ার সাথে সিমা গেল।এখন আমি কুলি হয়ে ব্যাগ গুলো নিয়ে আসলাম।

অনেক কাজ করা হইছে। এখন আমার ও একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। কিন্তু আম্মু এসে বিশ্রাম নিতে দিলো না।একটা লম্বা বাজারের লিষ্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল,"লিষ্টে যা আছে ওগুলো বাজার থেকে নিয়ে আয়।"
---আম্মু একটু পর যাই।
---কোনো কথা বলবি না।এখনই যাবি।
বলে আম্মু বাজারের ব্যাগ রেখে চলে গেল।

ধুর!কোনো আত্নীয় এলে যত আমার প্যারা নিতে হয়।ভাল্লাগে না আর এসব।

বাজার করে এসে রুমে শুয়ে পড়লাম।দেখি বালিশের পাশে রাখা আমার ফোনে আলো জ্বলছে।মনে হয় একটু আগে কেউ কল বা মেসেজ করছে।লক খুলে দেখি মায়া ২১ বার কল দিছে।বাজারে যাওয়ার সময় ভুলে ফোন রেখে গেছিলাম।এই একঘন্টার ভেতর ২১ বার কল দেওয়া হয়ে গেছে।ভাগ্যিস ফোন সাইলেন্ট মুডে ছিল।নাহলে আম্মু টের পেয়ে যেত।

ভাবতে লাগলাম কল দিবো কি না?কল দিলে একগাদা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।আবার বায়না ধরবে এখন যেন ওকে দেখতে হসপিটালে যাই।এর চেয়ে ফোন না দেওয়াই বেটার।

আজ আর পড়তে যেতে ইচ্ছে করছে না।তাই রুমে সুয়ে গেম খেললাম।

রাতে খাবার সময় আম্মু ডাক দিলো।
খাবার টেবিলে বসে দেখি আজ খাবারের হরেক রকমের আইটেম তৈরী হয়েছে।কোনটা রেখে কোনটা খাই?
কিন্তু আম্মুর আমার দিকে কোনো নজর নেই।সিমাকে নিয়েই পরে আছে।দেখে মনে হচ্ছে মেলায় হারিয়ে যাওয়া মেয়ে খুঁজে পাইছে।নিজের ইচ্ছে মতো খেয়ে রুমে আসলাম।

পরেরদিন রিয়াকে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটি তে এলাম।গাড়ি থেকে নামতেই দেখি রিমি দাঁড়িয়ে আছে।আমার দিকে ভিলেন লুকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,"এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আমার তো ভয় লাগছে।"
---আজ তোর কপালে দুঃখ আছে।
রিমিকে আরও রাগানোর জন্য বললাম,"কেন আপু?আমার দোষ কি?"
---ওই হারামি আমি তোর কোন দিকে দিয়ে আপু হই?
---আপনি আমার বড়।এজন্য তো আপু ই হন।
---দেখ এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।তুই উল্টাপাল্টা কথা বলে আমার মাথা আর গরম করাবি না।
---ও স্যরি আপু।আর এমন বলবো না।
রিমি আচমকা আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।সবার সমনে এভাবে থাপ্পড় মারায় আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ও আমার সিনিয়র বলে যা খুশি তাই করবে নাকি?রিমি আর কিছু না বলে চলে গেল।আমিও ওখান থেকে ক্লাসে চলে এলাম।আমাকে দেখে সবাই হাসতে লাগলো।একটা ছেলে বলল,"এই দেখ সিনিয়র মেয়েকে প্রপোজ করে মার খেয়ে এসেছে।"
ছেলেটার কথায় সবাই আরও হাহা করে হাসতে লাগলো।এতো অপমান সহ্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে গিয়ে কয়েকটা লাগিয়ে দেই।কিন্তু স্যার ক্লাসে এসে পড়লো।স্যার কে দেখে সবার হাসি থেমে গেল।

কোনোরকমে ক্লাস করে বের হলাম।তখন একটা মেয়ে আমাকে বলল,"এই ছেলে শোন।"
---আমাকে বলছেন? 
---হ্যাঁ তোকে বলছি।এখানে আয়।
---কি হয়েছে বলুন।
---শুনলাম তুই নাকি বেশি বেড়ে গেছিস।সিনিয়র টিনিয়র মানিস না।যাকে পাস তাকেই প্রপোজ করিস।
---এসব আপনাকে কে বলছে?
---আমি যা বলছি তার উওর দে।
---আপনার কথার উওর দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নাই।
---তোর গালে দুটা লাগালে এমনি উওর দিবি।
মেয়েটার কথা শুনে আমি হাসতে লাগলাম।আমার হাসি দেখে বলল,"ওই তুই হাসছিস ক্যান?আমার কথা কি জোক মনে হচ্ছে? "
---আচ্ছা আপনি আমাকে এসব কথা বলছেন,আসলে কে আপনি? কোন ইয়ারে পড়েন? 
---তোকে এসব প্রশ্নের উওর দিতে যাবো কেন?
---তুই তোর সম্পর্কে কোনোকিছু বলবি না।আর আমি আমার কথা ক্যান তোকে বলবো?
---তোর তো সাহস কম না।আমাকে তুই করে বলছিস?তুই জানিস আমি কে?
---ওই ছেমরি তুই তো তোর পরিচয় জানিস না।তাহলে আমি কি করে তোর পরিচয় দিবো।যতসব আবাল পাবলিক কই থেকে যে আসে।
---তোর এই কথা আমার মনে থাকবে। আমি এর প্রতিশোধ নিবো।
---হুদাই আমি তোর মতো গায়ে পড়ে কারো সাথে লাগতে আসি নি।আর আমার সাথে যে লাগায় তার ও বারোটা বাজিয়ে দেই।

এমম সময় রিমি কোথায় থেকে চলে এলো।এসেই মেয়েটাকে দুটা থাপ্পড় মেরে দিলো।

রিমিঃওই তুই অনিককে কি বলছিস?
---মেয়েটা গালে হাত দিয়ে বলল,"কিছু না।"
রিমি মেয়েটার হাত টান দিয়ে আবার একটা থাপ্পড় মেরে বলল,"আবার মিথ্যা বলছিস।সত্যি কথা বল।"
মেয়েটা থাপ্পড় খেয়ে ভয়ে ভয়ে সব বলে দিলো।এবার রিমি মেয়েটাকে বলল,"শোন অনিক আমার বয়ফ্রেন্ড হয়।আমি ইচ্ছে হলে ওকে মারবো আবার আদর করবো।তাতে তোর সমস্যা কোথায়?নেক্সট টাইম অনিকের পিছনে দেখলে তোরে ভার্সিটি ছাড়া করবো।"

রিমির কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছি না।সকালে সবার সামনে মারলো।আবার এখন সবার সামনে ঘোষণা দিলো আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।
রিমির কথা শুনে আশেপাশের সবাই শক্ খেয়েছে।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এই মাইয়া দেখছি আজকে আমকে পুরা ভাইরাল করে দিলো।

রিমি আমার হাত ধরে বলল,"চল আমার সাথে।কথা আছে।"
এতো ভিড়ের ভেতর কথা না শুনলে আবার মারতে পারে।এতো লোকের সামনে আর মার খাইতে চাই না।এরচেয়ে ডাইনী টার সাথে যাওয়া ভালো।
রিমি আমাকে নিয়ে ভার্সিটির বাইরে একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে এলো।

দুপুর টাইমে সবাই লাঞ্চ করার জন্য অনেকে রেস্টুরেন্ট এ আসে।এজন্য রেস্টুরেন্ট এ অনেক ভিড়।রিমি বলল,"এতো ভিড়ে কথা বলা যাবে না।চল অন্য কোথাও যাই।"
---আমার হাতে সময় নাই।দেরী করতে পারবো না।
রিমি বলল বেশি সময় নিবো না।মাত্র দশ মিনিট । 
---আচ্ছা। একটু দেরি করেন।আমি গাড়ি নিয়ে আসি।তাহলে যেতে যেতে কথা হবে। 

আমি ড্রাইভ করছি।রিমি আমার পাশে বসে আছে।কয়েক মিনিট কেটে গেল।রিমি কোনো কথা না বলেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
---ম্যাডাম এভাবে তাকিয়ে থাকলে এক্সিডেন্ট করবো তো।
আমার কথা শুনে রিমি হাসতে লাগলো।হাসলে রিমিকে অনেক কিউট লাগে।কিন্তু রাগলে একেবারে ডাইনীর নানি হয়ে যায়।এখন এসব না ভেবে ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে ভার্সিটির সেই মেয়েটা কে?এজন্য রিমিকে বললাম,"মেয়েটা আমার সাথে ঝগড়া লাগাইছিল কেন?"
---ওর নাম তমা।আমার সাথে পড়ে।আর ও সব বিষয়ে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়।আমি সকালে তোকে মারছি।এটা ও দেখে আবার তোকে ও মারতে চাইছিল।
---এই মাইয়ার মাথার তাঁর কাটা দেখছি।
---হুমম একেবারে। 


কিছুক্ষণ আবার নিরব।এরপর রিমি বলল," স্যরি বাবু।"
---কে বাবু?কার বাবু😒
---মনে হচ্ছে কিছু বোঝো না।
---আমি এসব বুঝি না।আর ভার্সিটিতে সবার সামনে আপনার ও কথা বলা ঠিক হয়নি।এসব আমার আম্মু আব্বু জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।

---ওই গাড়ি থামা।
আমি রিমির কথামতো গাড়ির ব্রেক কষলাম।
---এভাবে গাড়ি থামাতে বললেন কেন?
রিমি আমার হাতের উপর হাত রাখলো।আমি হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম এসব কি করছেন?
---সকালে আমার অনেক রাগ হইছিল। এজন্য তোমাকে মেরেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।কথা দিচ্ছি আর কখনও মারবো না।
---সবার সামনে মারার পর এখন দরদ দেখাচ্ছে। আমার এসব ভাল্লাগে না।

রিমি আমার শার্টের কলার ধরে বলল,"ভালোভাবে বললাম আর মাফ করলি না।এখন মাফ না করলে তোর কপালে দুঃখ আছে।"
---পাগলি কে না খ্যাপানো উওম।তাই বললাম আচ্ছা মাফ করছি।এখন ছাড়ুন।
---ছাড়বো এক শর্তে। 
---কি শর্তে?
---একটা কিস দাও।
---এহ!চাইলো আর কিস দিলাম। হবে ন। যাও।
---না দিলে আমি আদায় করে নিতে জানি।
বলে রিমি জোর করে আমার ঠোঁটে কিস করলো।এক মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিলো।
---এটা কি হলো?
---একটু ভালোবাসা দিলাম।
বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।

আমি আর কোনো কথা না বলে রিয়ার কলেজের সামনে চলে এলাম।
·
·
·
চলবে.....................
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post