#ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ০৯)
#অনিক_হাসান
·
·
·
মায়া ততক্ষণে চোখ খুলেছে।আমাকে দেখে অস্ফুটস্বরে বলল," ভাবছিলাম তোমাকে আর দেখতে পাবো না।কিন্তু আল্লাহ ঠিকই তোমাকে আমার সাথে দেখা করিয়ে দিলো।জানি না আমি বাঁচবো কি না? তোমাকে আমার হয়তো এই শেষ সময়ে একটা কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।অনেক বেশি ভালোবাসি।"
---মায়া এখন এসব কথা বাদ দাও।আগে তোমাকে হসপিটালে নিতে হবে।
আমি মায়ার আর কোনো কথা না শুনে ড্রাইভিং সিটে বসলাম।কাছে সিটি হসপিটাল। যেতে বেশি সময় লাগলো না।গাড়ি থামিয়ে মায়াকে কোলে করে পাশে রাখা স্টেচারে শুইয়ে দিলাম।
নার্স এসে মায়াকে ও.টি. তে নিয়ে গেল।আমি এই সুযোগে রিমি কে কল করে মায়ার এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা বললাম।
কিছুক্ষণের ভেতর মায়া আর রিমির পরিবার হসপিটালে চলে এলো।সবাই কান্না করছে।মায়া ওর বাবা মা র এক মাত্র সন্তান। আর সন্তানের এমন অবস্থায় বাবা মা কান্না করবেই।
মায়াকে কোলে করে আনার সময় ওর রক্ত আমার শার্টে লেগেছে।টেনশনে থাকার জন্য এসব খেয়াল ই করি নি।রক্ত শুকিয়ে আরও লাল হয়ে গেছে।
এক ঘন্টা অপারেশন শেষে ডাক্তার বের হয়ে এলো।
মায়ার আব্বুঃডাক্তার সাহেব আমার মেয়ে বাঁচবে তো?(কান্না করতে করতে বলল)
ডাক্তারঃআল্লাহর রহমতে আপনার মেয়ে বেঁচে গেছে।দেরী করে হসপিটালে আনলে হয়তো বাঁচতো না।কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেটকম কিছু হয় নি।মাথায় আঘাত লাগায় কয়েক যায়গায় ফেটে গেছে।হাতে বেশ কয়েক জায়গায় কেটে গেছে।আমরা সেগুলো সেলাই দিয়েছি।অপারেশনের সুবিধাায় ঘুমের ওষুধ দিয়েছি।কয়েক ঘন্টা পর ওর জ্ঞান ফিরবে।
---ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।
---আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিন।উনি না বাঁচালে আমরা কিছুই করতে পারতাম না।
ডাক্তার চলে গেল।মায়ার আব্বু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,"বাবা তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বলে বোঝাতে পারবো না।
---আঙ্কেল আমি আপনার ছেলের বয়সী। ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করবেন না।
---ঠিক আছে ইয়াংম্যান।কিন্তু তোমাকে এতো তারাতাড়ি ছাড়ছি না।
---আঙ্কেল আমাকে যেতে হবে।দেখতেই পাচ্ছেন আমার শার্টের অবস্থা। তবে সময় করে এসে দেখে যাবো।
বলে হাঁটতে লাগলাম।
রিমি দৌড়ে আমার কাছে এলো।
---অনিক তোমার সাথে আমার কথা আছে।(রিমি)
---এখন সময় নেই।সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে এসে শুনবো কেমন।আমি এখন আসি।
রিমিকেও আর কোনো কথায় সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে এসে বসলাম।যদি কথা বলতে লাগতাম তাহলে সহজে আমাকে আসতে দিতো না।
বাসায় আসতেই আম্মু জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল,"বাবা তোর এই অবস্থা কি করে হলো?কে করলো?"
---আম্মু আমার কিছুই হয়নি।রাস্তায় একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট করে পড়ে ছিল।ওর রক্ত আমার শার্টে লাগছে।
আমার কথা শুনে আম্মুর কান্না তাও থামে না।বলল আতে তোর শার্ট খোল। দেখি তোর কোথাও লেগেছে কি না।আমি বাধ্য হয়ে শার্ট খুলে ফেললাম।আমাকে অক্ষত দেখে তবেই আম্মু শান্ত হলো।
---তা এখন মেয়েটা কেমন আছে?
---অপারেশন করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে বিপদমুক্ত।
---মেয়েটার ফ্যামিলির লোককে খবর দিয়েছিস?
---হুমম।
---কারা তারা?
---শরীফ আঙ্কেলের একটা ভাই আছে।উনারা।
---ওহ!উনাদের তো একটাই মেয়ে।
---হুমম।
---বাবা এখন গিয়ে গোসল করে আয়।আমি তোর জন্য খাবার আনছি।
গোসল করে খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমালাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে ঘুরাঘুরি করলাম। সন্ধ্যায় রিমির কাছে পড়তে গেলাম।
---ম্যাডাম আপনার মন খারাপ নাকি?
---হুমম।
---কি জন্য?
---মায়ার জন্য।
---মায়া এখন কেমন আছে?
---বিকেলে জ্ঞান ফিরেছে।তারপর থেকে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করছে।
---আমার কথা কেন জিজ্ঞেসা করবে?
---আমি তো জানি না।চাচিমা ফোন করে বলল।
---ওহ।
---আচ্ছা এখন পড়ো।
---আজকে পড়তে ইচ্ছে করছে না।
---কেন?
---জানি না।আচ্ছা ম্যাডাম আপনি কখনও কাউকে ভালোবেসেছেন কি?
আমার প্রশ্ন শুনে রিমি চমকে উঠলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,"হুমম ভালোবেসেছি।"
---কে সে?
---এখন বলা যাবে না।পরে তোমাকে বলবো।
---জানেন আজকে মায়া আমাকে কি বলেছে?
---কি?
---ও আমাকে ভালোবাসে।
---কিহ!(চমকে উঠলো)
---হুমমম,ওকে যখন হসপিটালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলি তখন আমাকে বলছে।
---তুমি কি বলছো?(কান্নার মতো করে বলল)
---আমি কিছুই বলিনি।
রিমি কোনো কথা না বলেই ওয়াশরুমে চলে গেল।১০ মিনিট পর বের হলো।আমি রিমির দিকে তাকালাম। ওর চোখ ফোলা ফোলা আর রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে।মনে হলো কান্না করছে।
---ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন তো?
---হুমমম ঠিক আছি।(হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বলল)
আমি তো জানি ঠিক নেই।কারণ আমি বুঝতে পারি রিমি ও আমাকে পছন্দ করে।আর যখন শুনেছে ওর কাজিন আমাকে প্রপোজ করছে তখন কি কি করে ভালো থাকবে?
রিমি আমাকে আরও কিছুক্ষণ পড়ালো।এরপর বললাম আমি এখন আসি।আমি উঠে চলে আসতে লাগলাম।তখন রিমি আমার হাত চেপে ধরলো।
---ম্যাডাম কি করছেন? হাত ছাড়ুন।
রিমি হাত না ছেড়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
---ম্যাডাম কান্না করছেন কেন?
---কেন তুই বুঝিন না?
---আমি কি করে বুঝবো?
---জানো আমার জীবনে সবকিছু আছে।তারপরও কিছু একটা নাই মনে হয়।আর আমার মনে হয় সেটা হলো তুমি।তোকে পেলে আমার জীবন পূর্ণ হয়ে যাবে।আমার মন চায় সারাজীবন তোমার সাথে থাকি।আর তুমি আমার সাথে থাকো,আমার পাশে থাকো।আমি তোমাকে হারাতে চাই না। I love you for ever and ever and ever.
বলে রিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।এটা কি হলো?দুই বোন প্রপোজ করে বসলো।এখন কাকে রেখে কাকে একসেপ্ট করবো?দুজন ই সেই ডেঞ্জারাস। আমি আর ভাবতে পারছি না।মাথা হ্যাং করতেছে।
নিচে নেমে আন্টির সাথে দেখা হলো।
---তা বাবা পড়া শেষ।
---হুমম আন্টি।
---আরেকটু থাকো।ডিনারটা করে যাও।
---না আন্টি।আম্মু ওয়েট করছে মনে হয়।অন্য একদিন খাবো।আজকে আসি।
বলে চলে আসলাম।
বাসায় এসে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটি তে এলাম।ক্লাস করছি তখন ফোনে কল এলো।নাম্বার টা অপরিচিত। ।আমি কল কেটে দিলাম। কিন্তু দেখছি লোকটা নাছোরবান্দা। সে কল দিতেই আছে।শেষমেশ ক্লাস থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করলাম।
---আপনার সমস্যা কি?দেখতেই পাচ্ছেন কল কেটে দিচ্ছি মানে বিজি আছি।তারপরও এতো কল কেন?(আমি)
---স্যরি।(একটা মেয়ে)
---আপনি কে?
---আগে বলো আমার নাম্বার ব্লক করছো কেন?
আপনার সাথে কখনও কথাই বলি নি।কখন ব্লক করলাম?
---হারামি গতকাল ফোন করছিলাম। ওটা আমার নাম্বার ছিল।
---ও তাইলে আপনি গতকালের ফাজিল মেয়েটা।তা আজকে কি মনে ফোন দিছেন?
---তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।প্লিজ একটু আসবে?
---আজব তো। চিনি না জানি না আপনাকে কেন দেখতে যাবো?
---আমাকে দেখার পর আর এই কথা বলতে না।
---আপনি কি বিশ্ব সুন্দরী নাকি?যে দেখার পর আমি অবাক হয়ে যাবো?
---ওই পিচ্চি ফাজলামি না করে হসপিটালে আসো।তোমাকে না দেখে মনে শান্তি পাচ্ছি না।
---আমি মেন্টাল হাসপাতালে যেতে পারবো না।রাখলাম বাই।
---ওই আমি কি বলছি মেন্টাল হাসপাতাল? সিটি হাসপাতালে চলে আয়।এরপর সোজা তিনতলায় ৩২০ নাম্বার কেবিনে।আর হ্যাঁ আসার সময় আমার জন্য চকলেট আনবি।নাহলে সুস্থ হয়ে তোর বারোটা বাজাবো।বলে কল কেটে দিলো।
মাইয়ার কথা শুনে মাথায় বাজ পড়লো।সিটি হাসপাতালে তিন তলায় ৩২০ নাম্বার কেবিনে তো মায়া ভর্তি আছে।তাহলে এতোক্ষণ মায়া কথা বলছিলো।
·
·
·
চলবে....................