#ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ০৬)
#অনিক_হাসান
·
·
·
---এতো কি ভাবছিস?চল আমার সাথে।বলে রিমি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
---ছাড়েন বলছি।
---চুপ করে থাকতে বলছি না।এতো কথা বলিস ক্যান?
আমি রিমির কথা শুনে চুপ করে রইলাম।দেখি আমাকে কোথায় নিয়ে যায় আর কি বলে?রিমি আমার হাত ধরে টানতে টানতে ভার্সিটির পেছনে চলে এলো।ভার্সিটির পেছনের দিকটা নির্জন। এদিকে ছেলেমেয়ে কম আসে।দুজনে একটা ফাঁকা ব্রেঞ্চে বসলাম।নিরবতা কাটিয়ে আমি বললাম,"এখন বলেন আমাকে নিয়ে এলেন কেন?কিস করার প্রতিশোধ নিবেন নাকি?"
---তুই আসলে বেশি কথা বলিস।
---কই বেশি কথা বললাম?
---একটু চপ থাক।
---আচ্ছা আমি চুপ হলাম।
রিমি নিজেকে গুছিয়ে নিলো।এরপর বলল,"তুই আমাকে কিস করার পর থেকে তোকে ভুলতে পারছি না।বল আমাকে কি যাদু করছিস?"
রিমির কথা শুনে থ হয়ে গেলাম।কিস করার জন্য এমন হতে পারে আগে ভাবি নি তো।তাহলে তো আমার কপালে দুঃখ আছে।
রিমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,"চুপ কেন কথা বল?"
---আমি আর কি বলবো?
---কি বলবো মানে?তুই সবকিছু করছিস?
---আমি কিছু জানি না।ওটা এক্সিডেন্ট ভেবে ভুলে যান।
---ভুলবার অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু পারি নি।
---মানুষ চেষ্টা করলে সবকিছু পারে।
--- সবাই সবকাজ পারে না।
---তাহলে আমি এখন কি করবো?
---জানি না।আমার খালি কেমন কেমন করে।
---কেমন কেমন?
---বলে বোঝাতে পারবো না।
---তাহলে লিখে দেন।
রিমি বলল,"চোখ বন্ধ কর।তোকে একটু কেমন কেমন করা বোঝাই।"
---কেমন কেমন বুঝতে বুঝি চোখ বন্ধ করতে হয়?
রিমি চোখ রাঙিয়ে বলল,"যা বলছি তা কর।নাহলে আমি চললাম।"
---আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করছি।কেমন কেমন করলে কেমন লাগে আমিও একটু জানি।
আমি চোখ বন্ধ করলাম।একমিনিট পার হয়ে গেল।কোনো কেমন কেমন বুঝলাম না।এজন্য রিমিকে বললাম, "আপনার কেমন কেমন কই গেল?দেখান তারাতাড়ি।"
রিমি কোনো কথা বলল না।আমার মাথার পেছনের অংশে রিমির হাতের স্পর্শ পেলাম।মেয়েদের হাতে যাদু আছে।ওর হাতের ছোঁয়ায় সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।রিমি কি করছে দেখার জন্য চোখ খুললাম।একি দেখছি।রিমির মুখ আমার মুখের কাছাকাছি। ওর গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে।কোনো এক আবেশে ঘোরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।একটু পর রিমির ঠোঁটের ছোঁয়া আমার ঠোঁটে পেলাম।সে কি এক অনূভুতি!
প্রায় দুই মিনিট পর মায়া আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলো।রাক্ষস মেয়েটা আমার ঠোঁটে কামড় দিয়েছে।উহু!
আমি রিমির দিকে তাকালাম।বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে আছে।একটু আগে আমাকে কিস করলো।আর এখন ওর অবস্থা দেখে তা মোটেই মনে হচ্ছে না।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড়ে পালালো।
কি ভাবছিলাম আর কি পেলাম। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
একটু পর ওখান থেকে ক্যান্টিনে চলে এলাম।তখনও ইমন সিয়াম আর ফয়সাল বসে আছে।
আমাকে দেখে সিয়াম বলল,"গুরু লিপস্টিক খেতে কেমম লাগে?"
---এই যা শালারা দেখে ফেলেছে নাকি?একটু চেক করার জন্য বললাম,"আমি কি করে জানবো?"
---ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার মুখটা একবার দেখে আয়।তাহলে বুঝবি।
আমি কোনো কথা না বলে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।আয়নার দেখি রিমি গালে কপালেও কিস করছে।আর সেখানে ওর লিপস্টিক এর দাগ লেগে আছে।এসব দেখে ভিষণ লজ্জা পেলাম।তাই তো আসার সময় কয়েকটা মেয়ে আমাকে দেখে হাসছিল।এখন ওদের হাসির কারণটা বুঝলাম।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ওদের কাছে গেলাম।
আবার সিয়াম বলল,"গুরু আমাদের ও একটু টিপস দে।আমাদের ও কিস খাওয়ার শখ জাগে।"
---আরে ভাই আমি কিছুই করিনি।ডেকে নিয়ে গিয়ে..... ইশ্ লজ্জা লাগছে। আর বলতে পারবো না।
ইমনঃআজ গরিব বলে কেউ ডেকে নিয়ে যায় না।
ইমনের কথায় সিয়াম আর ফয়সাল সায় দিলো।
---তোরা আর ভালো হবি না।
---আমরা ভালোই।তোর মতো লুচু না।আচ্ছা এসব বাদ দে।আর এখন পার্টি দে।
---একটু আগে কফি খেলি।এখন আবার কিসের পার্টি?
---তোর কিস খাওয়া উপলক্ষে পার্টি দিবি।
---কিস তো আমি খাইনি।যে খাইছে তার থেকে পার্টি চা।আমাকে বলিস কেন?
---তুই আমাদের বন্ধু তাই তুই ই পার্টি দিবি।
বুঝলাম হারামিরা না খেয়ে ছাড়বে না।তাই শেষমেষ খাওয়ানো লাগলো।
খাওয়া শেষে রিয়াকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
রিমি রুমে পায়চারি করছে আর দুপুরের কথা ভাবছে।কি করে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলো না।আসলে অনিককে দেখলে ও কেমন যেন হয়ে যায়।নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।একটা পিচ্চি ছেলেকে দেখে এমন হওয়ার কারণ বুঝে উঠতে পারছে না।এজন্য মায়াকে আসতে বলেছে।মায়ার থেকে পরামর্শ নিবে এখন কি করা যায়।কিছুক্ষণ পর মায়া এলো।
মায়া এসেই বলল,"এতো কি জরুরি কথা বলার জন্য তারাতাড়ি আসতে বললি?"
মায়া একটু চুপ করে থেকে বলল,"বিকেল হয়ে গেছে।ছাঁদে চল।ওখানে দোলনায় বসে কথা হবে।"
দু'জন সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠে এলো।
আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে।মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।মায়া বলল।
---হুমম ঠিক বলছিস।
দুজন দোলনায় বসলো।এরপর মায়া বলল,"এখন বল কি বলবি?"
---আসলে কথাগুলো শেয়ার করার জন্য তোকে ছাড়া কাউকে পেলাম না।এজন্য তোকে আসতে বলছি।" আচ্ছা অনিককে তোর কেমন লাগে?"
---হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
---যা বলছি তার উওর দে।
---ওর সবকিছু ভালো।কিন্তু নাম্বার ওয়ান লুচু।
---কিন্তু ওই লুচুটাকে দেখলে আমার ভেতর কেমন কেমন শুরু করে।ইচ্ছে করে ওরে জড়িয়ে ধরি।
রিমির কথা শুনে মায়া চমকে যায়।কারণ অনিক ওর ইজ্জত বাঁচানোর পর থেকে অনিককে নিয়েই ভাবছে।
রিমি মায়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে কি ভাবছিস?
---কিছুনা।তারপর বল।
---তারপর কি আর কিছুই না।
রিমি মায়ার কাছে অনিককে কিস করার কথাটা গোপন রাখলো।
মায়া রিমিকে বলল,"আচ্ছা শোন অনিক ছেলেটা মোটেও সুবিধার নয়।জানিনা কত মেয়ের সাথে কি কি করছে।ওর থেকে দূরে দূরে থাকবি কেমন।"
---কিন্তু মন তো মানে না।
---ভালোর জন্য বলছি।বাকিটা তোর ইচ্ছে। আচ্ছা থাক আমার বাসায় যেতে হবে।আম্মু নানা কে দেখতে গেছে।আব্বুর জন্য রান্না করতে হবে।
---চাচা কে নিয়ে আমাদের এখানে চলে আয়।
---আব্বু অফিসে।কখন আসে ঠিক নাই।কি করে আনবো?
---আচ্ছা তাহলে যা।
মায়া উঠে দাঁড়ালো।এরপর আস্তে আস্তে হেঁটে বাসায় চলে এলো।
রাতে শুয়ে গেম খেলছি তখন আব্বু এলো।আব্বুকে দেখে তারাতাড়ি ফোন লুকালাম।কিন্তু তার আগেই দেখে ফেললো।
---পড়া বাদ দিয়ে এসব করা কিন্তু মোটেও পছন্দ করি না।
---স্যরি আব্বু।
---রেজাল্ট খারাপ হলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে অফিসে বসিয়ে দিবো।তখন বুঝবি সারাদিন অফিস করা কেমন লাগে।
---আমার মতো একটা বাচ্চা ছেলের সাথে এমন না ইনসাফি মানবো না।
---না মানলে বাসা ছেড়ে চলে যাবি।পারবি না যেতে?
---এটা কেমন কথা?
---এটা ঠিক কথা।আচ্ছা শোন,আমি তিনদিনের জন্য অফিসের কাজে সিঙ্গাপুর যেতে হবে।এজন্য এদিকের অফিসের সব কাজ তোকে দেখতে হবে।
---কিন্তু আব্বু আমি তো অফিসের কোনো কাজ ই বুঝি না।
---তুই তো আর ছোট নেই।দেখেই বুঝবি।
---আচ্ছা আব্বু।
---এইতো আমার গুড বয়।কাল তাহলে তোকে অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
---আচ্ছা।
আব্বু চলে গেল।নতুন এক মুসিবতে পড়লাম।ধুর ভাল্লাগে না।
পরেরদিন আব্বু আমাকে অফিসে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।এরপর উনি চলে গেল।এখন আমার তিনদিন প্যারা সামলাতে হবে।
সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাসায় এলাম।অফিসে কাজ করা এতো ঝামেলা।আব্বু করে কিভাবে?
দেখতে দেখতে আরও দুদিন কেটে গেল।
পরেরদিন ভার্সিটি গেলাম।
দুই ডাইনীর একটাকেও দেখলাম না।আপাতত ক্লাসে গিয়ে বসি।
স্যার লেকচার দিচ্ছে। তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।ও আমাকে ইশারায় ক্লাসের বাহিরে আসতে বললো।
কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।তখন দেখি মায়া দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
স্যার মায়াকে দেখে বলল,"তোমার ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে কি করো?"
---স্যার অনিক কে একটু দরকার। ওকে একটু আসতে দিবেন?
স্যারঃঅনিক মায়া তোমাকে ডাকছে।যাও।
মায়া আমাকে ডাকছে দেখে ক্লাসের আর ছেলে রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের মনে হয় হিংসা হচ্ছে যে একটা সুন্দরী মেয়ে ওদের কে না ডেকে আমাকে ডাকছে।
আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে এলাম।
---ম্যাডাম কি জন্য ডাকলেন?
---আসো আমার সাথে।কথা আছে।
---এখানেই বলুন।আমাকে ক্লাস করতে হবে।
---গত তিন দিন ভার্সিটি আসলি না তখন কিছু হলো না। আর আজকে একটা ক্লাস গ্যাপ দিলে মনে হয় ফেল করবি?
---আমি তিনদিন ভার্সিটি আসি নি কিভাবে জানলেন? (অবাক হয়ে বললাম)
---এখনে দাঁড়িয়ে সব কথা বলা যাবে না।ক্যান্টিনে চল।
মায়ার সাথে ক্যান্টিনে এলাম।মায়া দুটা ব্ল্যাক কফির অর্ডার দিলো।
একটু পর কফি এলো।আমি কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললাম,"এখন বলেন কি বলবেন? "
---তোকে অনেক ধন্যবাদ সেদিন আমাকে বাঁচানোর জন্য।
---আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।ওটা আমার কর্তব্য ছিল।আর সেদিন রাগের মাথায় আপনাকে কিস করার জন্য স্যরি।
---হিহি, কিসটা কিন্তু ভালোই লেগেছিল।
আমি একটু আবাদারের সুরে বললাম,"তাহলে আবার কিস করি?"
---এই না।এসব আর হবে না।
---আচ্ছা।
---আচ্ছা অনিক আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
---আপনি আমার দুই ইয়ার সিনিয়র। তাহলে কিভাবে বন্ধু হই?
---বন্ধু হতে কোনো বয়স লাগে না।মনের মিল থাকলেই বন্ধু হওয়া যায়।
---জানতাম না তো।
---এখন তো জানলি।
---হুমম।
---আচ্ছা তোর ফোন টা দে তো।
---আমার ফোন দিয়ে কি করবেন?
---আগে দে।তারপর বলছি।
ও আমার ফোন কিছুক্ষণ টিপে তারপর দিয়ে দিলো।
---আচ্ছা ম্যাডাম তাহলে আমি এখন ক্লাসে যাই।
---আচ্ছা যা।আর শোন এখন থেকে কিন্তু আমরা বন্ধু। মনে থাকে যেন।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসের দিকে চললাম।
·
·
·
চলবে....................