গল্পঃ ডেঞ্জারাস সিনিয়র মেয়ে (পর্ব ০৩)

 #ডেঞ্জারাস_সিনিয়র_মেয়ে (পর্ব ০৩) 
#অনিক_হাসান 
·
·
·
পেছন থেকে মায়া বলতে লাগল এর প্রতিশোধ আমি নিবোই।তা না হলে আমার নাম মায়া না।

---ওই ফাজিল মাইয়ার সাথে ঝগড়া লাগানোর কি দরকার ছিল?

---আমি ঝগড়া লাগাইছি নাকি ও লাগাইছে?
---ও খারাপ হলে কি তুই ও খারাপ হবি?
---যে যেমন ব্যাবহার করবে তারসাথে তেমন ব্যাবহার করবো সে যেই হোক না কেন।আর দেখলি না মেয়েটা আমাদের দুজনকে নিয়ে কিসব বাজে কথা বলল।এজন্য লাগাইছি কয়েকটা।যাতে সারাজীবন আমাকে মনে রাখে।

---এখন চুপ করে গাড়িতে বস।বাসায় যেতে হবে।
রিয়া আমার কথা শুনে গাড়িতে বসলো।আমি রিয়াকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

রাতে খাবার টেবিলে আব্বু বলল,"কাল থেকে রিয়াকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটি যাবি আর আসার সময় নিয়ে আসবি।"

---কিন্তু আব্বু ওর কলেজ থেকে আমার ভার্সিটি তো অনেক দূরে।রিকসা করে যেতে হলে আমার ক্লাসের অনেক দেরী হয়ে যাবে।

---তাহলে গাড়ি নিয়ে যাবি।তাহলে আর লেট হবে না।

---আব্বু সত্যি বলছো গাড়ি নিয়ে যাবো!আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।
---আরে বাবা সত্যি বলছি।এখন থেকে গাড়ি নিয়ে যাবি।কিন্তু রিয়াকে নিয়ে যেতে হবে আবার আসার সময় আনতে হবে।

---আচ্ছা তাই হবে।
খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম।ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি সিয়াম কয়েকবার কল করছে।
সিয়ামকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ ওর সাথে কথা বলে সুয়ে পড়ি।

সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাংলো।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রেডি হলাম।আমাকে দেখে রিয়া বলল,"ভাইয়া তোকে তো ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগছে।আমার সুন্দরী বান্ধবী রা তোকে এমন দেখলে আমার মান সম্মান থাকবে না।এজন্য একটু স্মার্ট হয়ে আয়।

১০ মিনিটের ভেতর রেডি হয়ে নিচে এলাম।এবার রিয়া বলল,"ভাইয়া এবার তোকে হিরোর মতো লাগছে।"
---থাক আর পাম দিস না।ফেটে যাবো।

---হাহাহা।
---এতো না হেঁসে গাড়িতে বস।তোকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে ভার্সিটি যেতে হবে।


রিয়া আমার পাসে বসলো।আমি গাড়ি চালাতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে রিয়ার কলেজের সামনে চলে এলাম।রিয়াকে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটি তে যেতে লাগলাম।বেশি সময় লাগলো না।প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে পেয়ে গেলাম।গাড়ি পার্কিং করে নামলাম।আশেপাশের পোলাপান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।দেখি রিমি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সিয়ামকে খুঁজতে লাগলাম।দেখি ইমন আর সিয়াম লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। 

আমাকে দেখে ইমন বলল,"তুই কখন এলি?"
---একটু আগে।
---আজকে তোকে তো অনেক চেঞ্জ লাগছে।ব্যাপার কি?
---তেমন কিছু না।আচ্ছা সিগারেট দে।আমিও খাবো।

---তুই সিগারেট ও খাস?
---হুমমম।
ইমনের থেকে সিগারেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

সিয়ামঃতুই তো দেখছি পাক্কা সিগারেট খোর।

---আরে না।এই মাঝেমধ্যে খাই।

সিগারেট খাওয়া শেষে ক্লাসে এলাম।আমাদের জায়গা পেছনের দিকে।পেছনে থাকার একটা মজা আছে।ক্লাসে বসেও গল্প করা যায়।আবার কিছু লিখতে দিলে বই দেখেও লেখা যায়।

ক্লাস করার সময় খেয়াল করি একটা মেয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।প্রথমে আমলে নিলাম না।কিন্তু প্রায় ক্লাস চলাকালীন প্রায় সময় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ইমনঃকিরে মেয়েটা এদিকে তাকিয়ে কেন?
সিয়ামঃআমি কি জানি?
ইমনঃমনে হয় অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।
---আমার দিকে কেন তাকাবে?এখানে কি ছেলের অভাব পড়েছে? 
---তোর মতো ছেলের অভাব ই তো।তাই তোকে দেখছে।(ইমন)
---ধুর।
সিয়ামঃআরে যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু হেব্বি সুন্দরী। তোর সাথে দারুন মানাবে।
---আরে তোরা দেখছি তিলকে তাল বানিয়ে দিচ্ছিস।হতে পারে আমি মেয়েটার ভাইয়ের মতো দেখতে।

আমার কথা শুনে সিয়াম আর ইমন হাসতে লাগল।ওদের দুজনের হাসি শুনে ক্লাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়েছে।মনে হচ্ছে আমরা কোনো এলিয়েন।

স্যারঃকি ব্যাপার তোমরা তিনজন হাসলে কেন?

সিয়াম আর ইমন চুপ আছে।কোনো কথা বলছে না।আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।তাই চুপ রইলাম।
---আরেকবার আমার ক্লাসে হাসলে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিবো বলে দিলাম।আর হ্যাঁ তোমরা তিনজন আমার নেক্সট ক্লাস থেকে সামনের ব্রেঞ্চে বসবে।মনে থাকে যেন।

যাক স্যার আর কিছু বলল না।চুপচাপ ক্লাস শেষ করে বাহিরে এলাম।

আমরা তিন বন্ধু হাঁটছি। সিয়াম বলল অনিক সামনে তাকা।আমি তাকিয়ে দেখি সামনে মায়া আর ওর গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে।ওদের সবার হাতে একটা করে হকিস্টিক।

সিয়ামঃ আমার তো ভয় লাগছে।
ইমনঃআরে বলদ তোর ভয় লাগবে কেন?
সিয়ামঃএতোগুলো মেয়ে এভাবে গুন্ডী স্টাইলে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে ভয় তো পাবোই।
ইমনঃআরে টেনশন নিস না।আমরা ওদের সামনে দিয়ে যাবোই না।চল পেছন দিক দিয়ে ঘুরে যাই।
সিয়াম আর ইমন উল্টোদিকে চলতে শুরু করলো।আমি ওদের সাথে গেলে গাড়ি রেখে যেতে হবে।আর গাড়ি এখানে থাকলে আব্বু ক্যালানি দিবে।এরচেয়ে যা হবার হবে।ওদের সামনে দিয়েই যাবো।

ইমনঃকিরে তুই দাঁড়িয়ে রইলি কেন?চল আমাদের সাথে।

---আরে সামনে আমার গাড়ি আছে।ওটা রেখে যেতে পারবো না।

---আচ্ছা তাহলে চল তিনজন একসাথে যাই।

তিনজন মায়ার গ্যাংয়ের দিকে এগুতে থাকলাম।ওদের কাছাকাছি চলে আসছি।হঠাৎ মায়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। 

---এভাবে রাস্তা আটকালেন কেন?(আমি)
---আমার ইচ্ছে হয়েছে আটকিয়েছি।ক্ষমতা থাকলে এখান থেকে বের হয়ে যা।(মায়া)

---আপনার সাথে ঝামেলা করার কোনো ইচ্ছে নাই।তাই রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান।

---এই তোরা একে ঘিরে দাঁড়া। দেখি ও কিভাবে আমার হাত থেকে রক্ষা পায়?
মায়ার কথায় আর সব মেয়েরা আমাকে আর মায়াকে ঘিরে দাঁড়ালো।এই ফাঁকে সিয়াম আর ইমন কেটে পড়েছে।শালা দুটা বন্ধু নামের কলঙ্ক। এদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে দুটারে আচ্ছা মতো দিবো।

আমি এসব ভাবছি তখন মায়া আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো।
---এসব কি করছেন? ছাড়ুন বলছি।
--- পুরুষ হলে আমার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে দেখা।
মায়ার কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেল।আমাকে কিছু একটা করত হবে।এটাআমার মান সম্মানের প্রশ্ন। মায়া তখনও আমার শার্টের কলার ধরে আছে।মায়ার আর আমার মাঝের দূরত্ব এক ফিটের মতো।আমি মায়ার দিকে তাকালাম। টানা টানা চোখ জোড়ায় জাদু আছে।ইচ্ছে করে তাকিয়ে থাকি।গোলাপি ঠোঁট দেখে মনে হলো একটা কিস করি।যেই ভাবা সেই কাজ।মায়াকে এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে কিস করলাম।মায়া তো আমাকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি জড়িয়ে ধরায় ছাড়াতে পারছে না।একটু পর মায়াকে ছেড়ে দিলাম।বোঁটা ছাড়া ফলের মতো ধপ করে বসে পড়লো।মায়ার মুখে আর কোনো কথা নেই।আমি ওর বান্ধবীদের বললাম আমার দিকে যে আসবে তার মায়ার মতো অবস্থা হবে।এখন বলো কে আসবে?
বলে একটা মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।মেয়েটা পিছু হটে গেল।আমি আর কোনো কথা না বলে টুপ করে গাড়ির কাছে চলে এলাম।এরপর এক টানে সোজা রিয়ার কলেজের সামনে।

ফোন বের করে রিয়াকে কল দিলাম।রিয়া বলল দশ মিনিটের ভেতর আসছি।

আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।একটু পর রিয়া এলো।সাথে ওর চারটা সুন্দরী বান্ধবী। সবগুলো কিউটের ডিব্বা। আমি তাকিয়ে আছি দেখে রিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতে নিষেধ করলো।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।রিয়া আমাকে দেখিয়ে ওর বান্ধবীদের বলল, "এটা হলো আমার ভাইয়া।নাম অনিক।আর ভাইয়া এগুলো আমার বান্ধবী। এটা সিমা,রিমা,মিরা আর নিপা।" সবাইকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল।

---তোর বান্ধবীদের সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।এখন গাড়িতে বস।বাসায় যেতে হবে।(একটু ভাব নিয়ে বললাম।)
 
রিয়া গাড়িতে বসলো।আমি ড্রাইভিং সিটে বসলাম।স্টার্ট দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলাম।

---ভাইয়া তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। কিছু হয়েছে নাকি?
---হুমম।একটু চিন্তায় আছি।
---বল কি হয়েছে?
ভার্সিটির সমস্ত ঘটনা রিয়াকে খুলে বললাম।সব শুনে রিয়া বলল,"সত্যি তুই ওই ফাজিল মাইয়াকে কিস করছিস?
---হুমম।(মাথা নিচু করে বললাম)
---এখন যদি ওই মেয়ে বিচার দেয় তাহলে তুই তো শেষ।
---যা হবার হবে। এখন বাসায় চল।
·
·
·
চলবে...................
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post