অনুগল্প : নাম:- বিয়ে
লেখনিতে:- সুমী আক্তার
বড় ভাবি পাশের বাড়ির মহিলার আত্মীয় রিমি কে দেখতে আসতে চায়।(ছোট চাচী)
রিমি রক্তচক্ষু চোখে তাকিয়ে আছে।
ফুফাতো বোন :- ওইতো এখনি কেমনে তাকিয়ে আছে দেখো।
বড় ভাই :- না আসতে বারন করো কাল এমন একটা ঘটনা ঘটলো পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক তারপর দেখা যাবে।
রিমি:- কালকে আব্বি আসলে আমি ঢাকা চলে চাবো এখানে থাকবোনা।
রিমির মা বারন করে দেওয়ার পরও সেই প্রতিবেশি মহিলারা আসলো দেখে গেলো ।
মেয়েদের জীবনটা এমন ধরাবাঁধা কেন?তাদের সারা জীবনের মতো আপন মানুষদের ছেড়ে চলে হয়।বর্তমান গ্রাম্য সমাজে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে না হলে আমাদের সমাজ গুনগুন করতে থাকে। আবার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়ের নামে পাত্র পক্ষের বাড়ি বয়ে গিয়ে মিথ্যে বদনাম করা হয়।এ সমাজটা কি কখনো বদলাবে না?গ্রামের মানুষ নাকি সহজ সরল কিন্তু এখনো বেশির ভাগ গ্রামেই লোকজোন গুলো কেমন জানি কার বাড়িতে কি ঘটে,কে আসে সব কিছু সারাক্ষন আলোচনার বিষয়বস্তু তাদের কাছে।
একটা মেয়ে হাসিখুশি থাকে তার মানে এই না সে সবকিছু ভুলে গেছে।সারাদিন সবার সাথে হাসিমুখে কথা বল্লেও কেওজানেনা দিনশেষে তার মনেও যে বিশাল কষ্টের পাহার জমে আছে।
গতকাল__________________
ঘুম থেকে উঠে নমার পড়েই বড় ভাইদের কাছে ফোন দিয়ে কান্না করেচলেছে রিমি।দুঃস্বপ্ন দেখে কান্না করতে করতে ফোন দেয় ভাইদের কাছে।
রিমি:- হ্যালো ভাইয়া বিয়ে ভেঙ্গে দেও গ্রামে এসোনা।
___________________________________________
পানিতে গরম পানি ফেলতে গিয়ে একটা সাপের গায়ে পরে তার একটা বাচ্চাও ছিলো তার গায়েও পরে। বাচ্চার ক্ষতি হওয়ায় মা সাপটা ফুস করে উঠে তা দেখে রিমি চিৎকার করার আগেই ফুফাতো বোন তিথি রিমির পা বাড়িয়ে ধরে রাখে আর মা সাপটা রিমির পা থেকে রক্ত চুশে নেয়।খোরাতে খোরাতে বাড়িতে আসার পর ফুফু কিসের জেনো হলুদ পেস্ট লাগিয়ে দেয়। পরে রিমির খালা এসে দেখে বলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে শুই দিয়ে নিস।এই টুকুট পরই রিমির ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তাই সে ভয়ে ভাইদের ফোন করে বলে বিয়েটা করা ঠিক হবেনা।
রিমির বিয়ে ঠিক হয় আধ ঘন্টার দূরত্বে পাশের এলাকাতেই। ছেলেও দেখতে শুনতে ভালো। রিমির পরিবারও ছেলে দেখে পছন্দ।দু'দিন যাবত এটা নিয়েই কথা চলছে।
কিন্তু রিমি এখনো হ্যা বলে নাই সবাই তাকে বুঝাচ্ছে।
এখনো রিমি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
ছোট ভাই তাকে আলাদা বুঝালো।
ছেলে অনেক ভালো হুজুরের ছেলে। দেখতে শুনতে খারাপ না। ভালো থাকবি তুই।
তবুও যেনো রিমির মন মানছে।
ছেলে তার মা আর নানীর সাথে রিমিকে দেখতে আসলো। আলাদা কথাও বল্ল। কিন্তু তাও রিমির অস্থিরতা বিন্দু মাত্র কমলোনা।
দুপুর হয়ে গেছে সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে রিমির হ্যা বলার জন্য।
চাচী,ফুফু, ফুফাতো বোন সবাই নানান ভাবে বুঝিয়েই চলছে নামাজের পরে রিমি তার সিদ্ধান্ত জানাবে।
রিমি ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে তবুও স্হির হতে পারছে মন সায় দিচ্ছে। অন্যদিকে পরিবারের প্রেশার সব মিলিয়ে পাগল প্রায় অবস্থা।
বোন:- তুই যদি এই বিয়েতে না করে দিস তাহলে আর এই এলাকায় সম্মান থাকবোনা।তোর আব্বুকে অনেক ভালোবাসিস সেও মুখ দেখাতে পারবেনা। রাজি হয়ে যা। ভালে থাকবি তুই।
চাচী:- তুমি রাজি না হলে তোমার ভাইয়েরা ২ টার লঞ্চে ঢাকা চলে যাবে।কি করবে জলদি বলো।
একদিকে পরিবারের হাসি অন্যদিকে নিজের জীবন দুইয়ের মাঝে যায় যায় অবস্থা। বিচিত্রময় প্রানীর মধ্যে মেয়েরা প্রথম তারা নিজের শুখ থেকে পরিবারের মান_সম্মান,খুশিে বেশি প্রায়োরিটি দেয়।
মা:- তুই না বলছিস আমরা যেখানে বিয়ে দিবো সে খানেই যাবি এখন কেন না করিস। কাওকে ভালো লেগে থাকলে বল
রিমি:- কেও নেই। ওই ছেলেকে আমার ভালো লাগেনা।
রিমির মাও যেনো আর পারছেনা এতো ঝামেলা নিতে। এতো এতো ছেলে পক্ষ দেখতে আসে একটাও মন মতো হয়না।তাই তিনিও এই ছেলের কাছেই মেয়ে বিয়ে দিবে বলে মন স্হির করলো
অনেক বুঝানোর পর অবশেষে রিমি হ্যা বলে দেয়। সবাই খুব খুশি।
রিমিও সবার সামনে গিয়ে সবার সাথে বসে আছে আর কথা শুনছে।
এখন কথা শুনা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
বেশ কিছুক্ষণ পর খালাতো ভাই,রিমির বড় ভাই, নয়ন,ছোট ভাই শাওন সবাই দোকান থেকে ঘুরে এসে বল্ল ছেলে বিবাহিত। সে বিয়ে করেছে বউ বিয়ের দুদিন পরে বাবার বাড়ি গিয়ে আর ফিরে আসেনি।
একথা শুনে রিমিতো খুশি তার এই টাকলু কাক্কুকে বিয়ে করতে হবেনা।
শুধু একটাই দুঃখ তার পরিবার কিভাবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করলো।
দুবার দেখা করে কথা বলে কি মানুষ কাওকে চিনতে পারে? কিন্তু রিমির পরিবার ছেলেকে দুবার দেখেই ভালোর সনদ দিয়ে দিয়েছে।
দুদিনে বিয়ে ঠিক করে বিয়ের দিনই বিয়ে ভেঙ্গে গেলো তবুও যেনো তাদের হুস হলোনা।
আমাদের আপন মানুষ গুলো, সমাজের মানুষ গুলো কি অদ্ভুত তাই না,তারা মেয়ের বিয়ের পর কষ্ট বা সুখ হলে বলে এটা তোর ভাগ্যে ছিল।
আবার মেয়ে নিজের পছন্দের ছেলে বিয়ে করলে বলে তোমার দোষের কারনে তোমার কপাল পুরেছে।
এখন সবার মুখে একটাই কথা ভাগ্য ভালো তাই সবটা আগেই জেনে গেছি। আল্লাহ বিপদ থেকে বাচাল।
এতো বড় একটা ঘটনা ঘটলো তবুও তাদের বিন্দুমাত্র শোকের ছায়া নেই তারা পর দিনই অন্য ছেলের সাথে বিয়ের কথা বলতে উঠে পরে লেগেছে।রিমি বারন করার পরেও সবাই তাদের কথাতেই মত্য
এটা বুঝেনা যে তারা একটা বিপদ থেকে রেহাই পেলো মেয়েটার কথা ভেবেও চুপ থাকি। একটু সময় দেই,নিজেকে গুছিয়ে নিতে।বিয়েটা হয়ে গেলেতো সারাটা জীবন সবাই কান্নাই করতো। মেয়েটার জীবনের পাশাপাশি তার পরিবারও জীবিত থেকেও না থাকার মতো অবস্থা হতো। সে কথা চিন্তা করে হলেও পরিবেশটা শান্ত হোক।
কিন্তু না আমাদের পরিবার, সমাজ কেও একথা ভাবেনা। তারা তাদের কথাই একটা মেয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চায় এটাই আমাদের সমাজ।
একটা মেয়ে কষ্ট পেলে তার পরিবারও কষ্ট পায় তবুও তারা কেন বুঝতে চায় না, তাদের মেয়ে কি চায় তার শুখ কোথায়।
_______সমাপ্ত______
অনুগল্প শেষ_থেকে_শুরু Afrin_Tarin
*স্বামীর সংসার ত্যাগ করে,বাবার বাড়িতে এসেছি আজ সবে মাত্র সাত দিন। এর মধ্যে আজ নাকি কোথায় থেকে এক ছেলে পক্ষ এসেছিলো বিয়ে ব্যাপারে কথা বলতে। মাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি আমি আর কোনো বিয়ে- শাদি করবো না।মা বলছিলো তারা নাকি বলছে বিয়ে না করুক, তাদের সাথে যেন একটু দেখা করি। দরজা বন্ধ করে আমি আর আমার তিন বছরের মেয়ে নওরিনকে নিয়ে শুয়ে আছি।মাকে স্পষ্ট করে আবার ও জানিয়ে দিছি,তাদের চলে যেতে বলো আমি বিয়ে করবো না।
–আমি ইরিনা সুলতানা। আজ সাত দিন হলো আমার ডিভোর্স হয়েছে। ডিভোর্স হওয়ার কারন আমার স্বামী,স্বামী বললে ভুল হবে এখন থেকে সে আমার পাক্তন স্বামী, তার নাকি এখন আর আমার প্রতি ভালোবাসা জাগে না, কারন সে একজন কে ভালোবাসে, সে আর কেউ না তার অফিসের কলিগ।আর তার কলিগের প্রেমে পরবেই না কেনো,এতো রূপবতী, আর আমি তার কাছে তুচ্ছ। আচ্ছা আমার কথা বাদ,নওরিন নওরিনের কথা একবার ও ভাবলো না। এতো ছোট্ট একটা মেয়ে,যেই মেয়ে কিনা বাবা ছাড়া কিছু বুঝে না। আজ সাতদিন মেয়ে টা কিছু খায়ও না,শুধু বাবা বাবা বলে কান্না করে। আচ্ছা শিহাবের একটু বুকটা কেঁপে ওঠলো না? এই পরির মতো মেয়েকে রেখে, তার কলিগকে বিয়ে করতে? আজ তিনদিন শিহাব নতুন বউ ঘরে নিয়ে এসেছে। খুব ধুমধামেই বিয়েটা সেরেছে। তাহলে কি শিহাব ডিভোর্সের জন্যই এতোদিন অপেক্ষা করেছিলো? নতুন বউ অনেক আনন্দেই আছে হয়তো। দোয়া করি সে ভালো থাকুক।খুব ভালো থাকুক।
–যে একদিন বলেছিলো ইরিনা তোমাকে খুব ভাগ্য করে পেয়েছি, তুমি আমার নিয়ামত। তোমাকে কখনো হারাতে পারবো না। তাহলে সব কিছুই কি মিথ্যে ছিলো?যাই হয়ে যাক, শিহাব ভালো থাকুক।আমি নওরিনকে নিয়েই বাকি জীবনটা পার করে দিবো।আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য্য শক্তি দেও।নওরিন যেন কোনো দিন বাবার অবাব বুঝতে না পারে। ওর সব আবদার যেন আমি পূরণ করতে পারি। আর দেরি নয়,কালকেই যাবো কোনো একটা চাকরির খুঁজে, প্রথমে যাবো আমাদের পাশের প্রাইমারি স্কুলটাতে, চাকরি জন্য আবেদন করতে।বাবা যতোই না করুক।এক মাস, এক বছর, দুই বছর কতোদিনই বা এভাবে থাকা যাবে,তারপর আবার মেয়ে টার পড়াশোনা করাতে হবে।
–মা আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। আসতে একটু দেরি হতে পারে। তুমি নওরিনের খেয়াল রেখো। নওরিন এখন ওর নানাভাইয়ের সাথে খেলা করছে।
–মা ইরিন বলছিলাম কি,নানুমনি টা সারাক্ষণ শুধু বাবা বাবা বলেই কান্না করে। ছেলেটা অনেক ভালো, নওরিনের কথা ও জানে,সব জেনেই বিয়েটা করতে চায়।কাল তোকে দেখতে পায়নি বলে, আজ আসবে বলেছে।
–মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি? তোমরাই তো বলেছিলে শিহাব খুব ভালো ছেলে তোকে খুব ভালো রাখবে। এই সে অনেক ভালো মানুষ?। কতো কান্না করেছিলাম,তখন কি একটিবার আমার কথা শুনেছিলে? দুই বছর সময় চেয়েছিলাম।নিরব?ওর কথাও তো একবার ও শুনোনি। থাক বাকি সব কথা মা। আমি আসছি। নওরিনের খেয়াল রেখো।
–শুন আমার কথা?আরে নিরবই তো........
–ডেকোও না আমায়।আসছি আমি।
নওরিন ঘুমাচ্ছে।মেয়েটা ঘুমালে আরো বেশি মায়াবী লাগে। বুকটা মুচড় দিয়ে ওঠলো।দু ফোটা নোনা জল পরতেই, মেয়েটা ঘুম থেকে ওঠে গেলো। মেয়েটাকে কিছুক্ষন আদর করে ওর নানাভাইয়ের কাছে দিয়ে আসলাম। ওর জন্য খাবার তৈরি করতে হবে। চুলাতে গিয়ে খিচুড়ি টা বসিয়ে দিয়ে আসি। আজ নওরিনকে খুব স্বাভাবিক লাগছে।অন্য দিন ঘুম থেকে ওঠেই সবার আগে পর বাবাকে খুঁজে। কিন্তু আজ হাসি-খুশি ভাবেই ওর নানাভাইয়ের কাছে চলে গেলো। আমিও একটু সস্তি পেলাম।মেয়েটা হয়তো ওর বাবাকে ভুলতে চাচ্ছে।
–আম্মু জানো,ওই আঙ্কেল টা খুব ভালো। আমাকে খুব আদর করে। তুমি বাইরে চলে গেছো আর আমাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলো। কত্তো মজা হয়ছে।তুমি থাকলে আরো বেশি মজা হতো। অনেক গুলো চকলেট দিছে আমায়।
–কোন আঙ্কেল?
–তুমি বাইরে গেছো,তারপরই ওই আঙ্কেল আসছিলো।আর আমকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলো।
পুরো কথা না শুনেই নওরিনের গালে একটা থাপ্পড় দিলাম।আমি বলছি না,এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই। কেন গেছো?
–তুমি পঁচা। আমি আমার বাবার কাছে চলে যাবো। তুমি আমাকে মারো।আমি বাবার জন্য কান্না করছি,তারপর আঙ্কেল বললো চলো আমরা ঘুরে আসি,খুব মজা করবো। বাবাকে আর মনেই পরবে না।অ্যা অ্যা.....
–নওরিন মামুনি। তুমি ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই,তুই তো আমার সুখ-দুঃখ। তুই কোথাও চলে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো বল? বলেই নওরিনকে বুকে জরিয়ে ধরলাম। মেয়েটার গালটা লাল হয়ে গেছে।মেয়েটাও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে।
–মা তোমাকে বলছিলাম তো নওরিনের খেয়াল রাখতে। তাহলে কেন তুমি অপরিচিত লোকের সাথে ওকে বাহিরে যেতে দিলে?
–নিরব এসেছিলে। নিরব বললো আন্টি পুতুলটা কান্না করছে,আমার কাছে দেন,ওকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।দেখবেন আর পুতুলটা কান্না করবে না। জোর করলো।তাই আর না করতে পারলাম না।
–নিরব নাম শুনেই আমি থমকে গেলাম। আমার বিয়ের পর পরই নাকি নিরব বিদেশ চলে গেছিলো।কবে আসলো নিরব?ছেলেটা আমাকে বিয়ে করার জন্য কতোই না ছোট হয়েছিল। কতোই না পাগলামি করেছিলো। বাবা বলেছিলো নিরব তোমার থেকে দুই বছরের বড়,ও সংসার সম্পর্কে কি জানে। কতো কথা বলেছিলো। শুনেছি এই পাঁচ বছরে নাকি একবারও দেশে আসে নাই, তবে নিরব কবে আসছে।ইদানীং হয়তো আসছে। আমিও ভালোবাসতাম নিরব কে, কিন্তু ভাগ্য সায় দিলো না।তাই হয়তো অন্য একজনের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলো।
–মা ইরিন, কি ভাবছিস? তখন বুঝিনি নিরব ছেলেটা যে এতো ভালো। ছেলেটা খুব ভালো রে।তোর বিয়ের পর বিদেশ পারি জমায়,দেশে একবারও আসে নাই,এখনো বিয়ে করেনি। অন্য কোনো মেয়েকে নাকি সুখ দিতে পারবে না তাই বিয়ে করেনি। তোর ডিভোর্সের কথা শুনে ই চলে আসছে এই বাড়িতে। তোর বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে। তুই ভেবে দেখ এখন কি সিদ্ধান্ত নিবি। আর নওরিন নানুবুও নিরবের সাথে অনেক মিশে গেছে।নিরবের সাথে গিয়ে খুব আনন্দ করে আসছে।বাড়িতে ফিরে এসে আমার সাথে গল্প করার শুরু করে দিয়েছে,সেখানে গিয়ে কি কি মজা করেছে। নিরবকে তো যেতেই দিবে না।
–মা আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আর শুনো আমি নিরবকে বিয়ে করতে পারবো না। আজ আমি ডিভোর্সী বলে নিরবের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য দুবারও ভাবলে না। আর নিরবকেও এই বাসায় আসতে মানা করে দিবা।
মাকে কথাগুলো এক দমে বলে আমার রুমে চলে আসলাম। দরজা বন্ধ করে অজরে কান্না করছি।যাই হয়ে যাক,আমাকে শক্ত হতে হবে। নিরবের সামনে ভেঙ্গে পরলে হবে না। নিরবকে পরিষ্কার জানিয়ে দিবো আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না। কেনই বা বিয়ে করবো ওকে। নিরব যখন পাগলের মতো তাদের কাছে ভিক্ষা চেয়েছিলো, তখন তো একটি বারের জন্য কেউ রাজি হয় নি।বাবা হার্টের রোগী, তাই আমিও আর কিছু বলতে পারিনি। এখন নিরবকে বিয়ে করলে নিরবকে ঠকানো হবে।সবাই ভাববে আজ আমি নিরবের টাকা পয়সা হয়েছে বলে বিয়ে করেছি। না তা কখনো ই না।আমার মেয়ের জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমাকে এভাবে ভেঙ্গে পরলে হবে না।
–নিরব,তার মা-বাবাকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছে। নওরিন নিরবের কুলে বসে আছে।তাহলে নওরিনের কালকের কথা মনে নেই। ওকে যে মারলাম।
–ইরিনা কেমন আছো? কাল নওরিনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি বলে তুমি ওকে মেরেছো কেন?
–আমার কোনো কথা নেই। শুধু তাকিয়ে আছি মানুষটার ওপর। আগের মতোই আছে। এই মানুষ টা জানতো আমার প্রিয় রং কি,কোন খাবার বেশি পছন্দ করি। কার সাথে বেশি মিশি। কোন সাবজেক্ট পড়তে বেশি ভালোবাসি।
–আমার নিরবতা ভেঙে নিরবের আম্মু বললো।মা ইরিনা। আমি বুঝতে পারছি,তোমার ওপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে। তবুও বলি,নিরব তোমাকে অনেক ভালোবাসে। যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে নওরিনকে আমার নাতনি,আর তোমাকে নিরবের বউ করে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
–মাফ করবের আন্টি ,নিরবের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আর আমি চাইনা,নতুন করে আবার কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ হতে।আমি পারবো না এই বিয়ে টা করতে।
–আন্টি আমি একটু আলাদা করে ইরিনার সাথে কথা বলতে চাই।
–আমার রুমের আমি আর নিরব,চুপ হয়ে আছি আমি।আমার নিরবতা ভেঙ্গে, নিরব..
–তোমাকে অনেক দিন পর দেখলাম, প্রায় পাঁচ বছর পর।তোমার বিয়ের পর তোমাকে দেখতে পাবোনা বলে বাড়িতে আশার কথা ভাবিনি কখনো। অন্য কোনো মেয়ে কে সুখী করতে পারবোনা বলে বিয়ে ও করেনি।কারন তুমি ছাড়া আমি কাউকেই ভাবতে পারিনি আমার বউ হিসেবে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে তোমার,আমি চাই আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আবার আগে মতো করে নিবো। সেই আমার আগের ইরুর মতো। তুমি কি ভাবছো,নওরিনের কথা!নওরিনকেও নিয়ে যাবো তোমার সাথে। ওকে আমার মেয়ের মতো করেই রাখবো। বিশ্বাস করো ইরু।তোমাকে আজ এভাবে পেয়ে যাবো কখনো ভাবিনি।তোমার বান্ধবী কাছ থেকে তোমার ডিভোর্সের কথা শুনার পরই আর এই সুযোগ টা ছাড়তে চাইলাম না।ইরু তোমার অতীত নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। শুধু বললো আমার তোমাকে লাগবে ইরু,শুধু তোমাকেই লাগবে।
কান্না মাখা কন্ঠে কথা গুলো বলে গেলো নিরব।
–আমি একজন ডিভোর্সী,তারপর আবার আমার একটা মেয়ে আছে। আর আমাদের সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন আমার মেয়েকে নিয়ে চাইনা তোমাদের বাসায় যাই। আর মানুষ জনই বা কি বলবে। বলবে আজ তোমার টাকা পয়সা হয়েছে,তার লোভে একটা মেয়ে নিয়ে.......
–ব্যাস অনেক বলেছো। আর না। প্লিজ ইরু আমাকে ফিরিয়ে দিও না। চলো আমরা শেষ থেকে শুরু করি।প্লিজ ইরু। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমায় ইরু।
–আমি আর পারলাম না,শক্ত হয়ে থাকতে।
শেষ থেকে শুরু আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন।
কিছুক্ষণ আগে আমার আর নিরবে বিয়েটা শেষ হলো।নওরিন তো খুব খুশি। বাবাই বাবাই বলে নিরবের মাথা খাচ্ছে।
ছয় বছর পর।
–আজ আমাদের দুটো সন্তান, নওরিন আর ইফাত।নওরিনের নয় বছর ক্লাস ফ্রোরে ওঠেছে। আর ইফাতের চার বছর। নওরিন ইফাতকে অ,আ পড়াচ্ছে।আর দুষ্টামি করছে।
–হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে ওঠলো। আননোন নাম্বার। কল রিসিভ করাতেই ওপাশ থেকে,ইরিন আমি শিহাব বলছি। কেমন আছো তুমি। আমার মেয়ে কেমন আছে??
–শিহাব সাহেব,আমি খুব ভালো আছি।আর আপনার মেয়ে আপনার মেয়ে বলে কার কথা বলছেন?
–নওরিন আমার মেয়ে। বলো ও কেমন আছে। আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে চাই ইরিন। সাথে তোমাকেও।
–লজ্জা করে না আপনার। তখন তো বলেছিলেন আমি যাতে আপনার সামনে কখনো না আসি,আর নওরিনের জন্য কোনো কিছু দাবি না করি? আজ কেন এতো বছর পর শিহাব সাহেব? আপনার সুন্দরী বধূ কে কি এখন আর ভালো লাগে না? খবরদার আপনে আর কখনো আমাকে ফোন দিবেন না। আর হ্যা,নওরিন এখন একা না,ওর একটা ভাইও আছে। ওর ভাইকে নিয়ে খেলা করছে।।
–ইরিন।রুবনার কখনো মা হতে পারবে না। এতো বছর হয়ে গেলো,ওর কুলে এখনো সন্তান আসলো না।তুমি চলে আসো ইরিন,আমি রুবনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
–লজ্জা থাকা উচিত আপনার। আমি আমার স্বামী, সন্তান নিয়ে খুব ভালো আছি। কখনো আর আমার সাথে যোগাযোগ করবেন না।
বলেই কল টা কেটে নাম্বারটা ব্লক করে দিলাম।আজ আমি খুশি।খুব খুশি। এটাকে হয়তো বলে নেচার ওফ রিভেঞ্জ।
–ইরু,আমি যেন তোমাকে আমার সন্তানদের এভাবে সারাজীবন সুখী রাখতে পারি।ভালোবাসি ইরু।
–আপু,নওরিন আপু জানো বাবাই আম্মুকে বলছে ভালোবাসি হি হি হি।
(সমাপ্ত)
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আশা করি গল্পটা ভালো লাগবে। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।