কাজিনকে বিয়ে করার রোমান্টিক গল্প : আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে রনক ভাইয়া।
বিয়ে ঠিক হয়েছো তো ভালো কথা বিয়েটা করে নে।
"এসব তুমি কী বলছো ভাইয়া,আমাদের এত দিনের ভালোবাসাটা কি তোমার কাছে মিথ্যা ছিল"।
কিসের ভালোবাসা! আমি তো তোকে কখনো ভালোই বাসিনি।বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তোর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি।তাই বিয়েটা করে নে রাইশা।
রনক ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বললাম,তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না ভাইয়া।সাথে সাথে ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে তার বুক থেকে সরিয়ে দিলেন।ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে আমি নিচে পড়ে খাটের কোনার সাথে বারি খেলাম।বারি খেয়ে আমার কপালের সাইড দিয়ে কিছুটা কেটে গেলো।তারপর আমি কান্না করতে করতে ফ্লোর থেকে উঠে ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলি...
--কেন করলে তুমি আমার সাথে এরকম?
--তুই কলেজের কাউকে পাত্তা দিতি না তাই বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তোর সাথে আমি প্রেমের নাটক করেছি।
--বাহ বাহ ভাইয়া,আমার ভালোবাসার সাথে তুমি নাটক করলে। নাটক করে তুমি কী পেলে।আমার বাবা -মা নেই বলে তুমি আমার সাথে এরকম করলে।আমি তো তোমাকে বলিনি তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমি জীবনে কাউকে ভালোবাসিনি।তুমি সেদিন কলেজে সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করেছিলে বলেই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।আমার মনে প্রানে শুধুই তুমি ছিলে।কিন্তু আজকে সব কিছু জানার পর আমি শুধু তোমাকে ঘৃনা করি।আর হ্যা আমি বিয়েটা করে তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। একদিন আমার দহন তোমাকে পোড়াবে।এটা বলে আমি কান্না করতে করতে ভাইয়ার রুম থেকে চলে আসলাম।
--রাইসার বলা প্রত্যেকটি কথা যেন রনকের বুকে তীরের মতো লাগল।কিন্তু তবুও সে এসব পাত্তা না দিয়ে নিজের ল্যাপটব নিয়ে বসে পড়ল।
রুমে এসে রাইসা বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল।
(সকালে ঘুম থেকে উঠে রাইসা তার রুমে বসে ছিলো।তখনি তার ফুপি এসে বলল তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর রাইসা তার ফুপির সাথে থাকে।তার ফুপি তাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।রনক তার একমাএ ফুপাতো ভাই।ফুপির কোন কথা সে অমান্য করে না।রাইসার ফুপি বলেছে যদি তার মত থাকে তবেই সে তাকে বিয়ে দেবে।এটা শুনার পর সে রনকের কাছে গিয়েছিলো এর পরের টা তো আপনারা জানেনই।)
আজকে রাইসার বিয়ে। এ কয়দিন সে রনকের সাথে কোন কথা বলেনি।রাইসাকে লাল টকটকে বেনারসিতে সাজানো হয়েছে। তাকে দেখতে কোন অপ্সরী থেকে কম লাগছে না।কিন্তু রাইসার চোখের পানি যেন থামছেই না।বেহায়া মনটা খালি রনকে খুঁজছে।সে কোন কিছু না ভেবেই রনকের রুমে চলে এলো।রনকের রুমে এসে সে বলল..
--ভাইয়া
--কারো ডাক শুনে রনক পেছন ফিরে তাকালো।পেছন ফিরে তাকিয়ে যেন সে সেকানেই আটকে গেলো কারন লাল বেনারসিতে রাইসাকে পরীর চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না।
--ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি এখনো সময় আছে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
--কতবার বলবো তোকে আমি ভালোবাসি না।তুই চলে যা এখান থেকে।তারপর সে রাইসার হাত ধরে রুমের বাইরে এনে তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
রাইসা অসহায়ের মতো সেখান থেকে চলে গেলো।রনক রুমে এসে ধপাশ করে খাটে বসে পড়ল।তার মনে হচ্ছে সে তার জীবন থেকে কোন মূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলছে।তার বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে।মনের সাথে লড়াই করে রনক বুজলো যে সে রাইসাকে ভালোবেসে ফেলেছে।তাই সে দেরি না করে দ্রুত চলল রাইসার কাছে তাকে রনকের জীবনে ফেরানোর জন্য।কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।সে গিয়ে দেখলো রাইসার বিয়ে হয়ে গেছে।তাকে শশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।রনক এখন আগের মতো কারো সাথে কথা বলে নে।তার চুল দাড়ি বর বড় হয়ে গেছে।তার ড্রেসিং লোক আর নেই।সে বেলকনিতে বসে হাতে গিটার নিয়ে গাইতেছে..
"একা দিন ফাঁকা রাত নিভেছে আলোয়
তুই নেই কেউ নেই লাগছে না ভালো
তোর নাম না জানা অভিমানে
কত দূরে ভাসা যায়..
আমি চাইছি তবু পারছি না তো
থামাতে আমায়......"
তখনি কাঁধে কারো ছোঁয়া পেয়ে রনক পেছন ফিরে তাকালো।পেছনে সে রাইসাকে দেখে সে তারাতারি গিটার ফেলে রাইসাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে বলল..
--আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি রাইসা।আমাকে তুই মাফ করে দে।আমি তোকে ভালো বেসে ফেলেছি রাইসা।তুই যাওয়ার পর প্রত্যেকদিন আমি তোর দহনে পুরেছি।তুই ফিরে আয় রাইসা। আমি তোকে নিয়ে আবার সব কিছু শুরু করব।দরকার হলে তোকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাবো তবুও তুই ফিরে আয়।
রনক ভাইয়াকে শুনে আমার আমার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠল।আমি ভাইয়াকে বললাম..
--তা আর হয়না ভাইয়া।
--কেন হয়না।
কারন আমি তোমার কাছে বারবার বেহায়ার মতো এসেছি।কিন্তু তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো।তাছাড়া আমি এখনো বিবাহিতা।আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে।আসলে ভাইয়া তুমি কখনো আমাকে ভালোয় বাসোনি। বাসলে আমাকে কখনোই ফিরিয়ে দিতে পারতে না আসলে কখনো "তুমি আমার ছিলে না"
এটা বলে আমি চলে আসলাম।কারন তার সামনে থাকলে আমি আমার কান্না আটকাতে পারতাম না।
রাইসার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রনক ডুকরে কেঁদে উঠল।
।
।
।
#তুমি আমার ছিলে না
#সমাপ্ত
#লেখনীতে -নবনীতা নবনী