অনুগল্প :
কালো মেয়ে
লেখিকা : শান্তা ইসলাম
আজ মেঘলাকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে, মেঘলাকে ওর ছোট বোন সুমি নিয়ে এলো পাত্র পক্ষের সামনে। পাত্র আর পাত্রের দুলাভাই এসেছে।মেঘলাকে নিয়ে আসতে দেখে ওদের বাবা মাহবুব হোসেন সোফায় বসতে বললেন। পাত্র পাত্রের দুলাভাই এর নজর সুমির দিকে। পাত্রের দুলাভাই সুমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি? কিসে পড়াশোনা করছো? সুমি উত্তর দিলো আমার নাম সুস্মিতা সুমি এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছি।আরো কিছু প্রশ্ন করলো তারা সুমিকে। মেঘলাকে প্রশ্ন করাতো দূর তার দিকে ভালো করে তাকিয়ে ও দেখলো না।
কিছুক্ষণ পাত্র আর পাত্রের দুলাভাই একান্তে কথা বললো। পাত্রের দুলাভাই মাহবুব হোসেন এর উদ্দেশ্যে বললেন আমারাতো শুনেছিলাম মেয়ে মাস্টার্স শেষ করেছে কিন্তু এখনতো দেখছি মেয়ে খুব ছোট। মাহবুব হোসেন বুঝতে পারলেন পাত্র পক্ষ মেঘলাকে নয় সুমিকে পাত্রী ভেবেছে। মাহবুব হোসেন একটু নরেচরে বসে বললেন আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে সুমি আমার ছোট মেয়ে ওকে এখন বিয়ে দিবো না। আপনারা আমার বড় মেয়ে মেঘলাকে দেখতে এসেছেন।কথাটা শুনে পাত্র আর তার দুলাভাই মেঘলার দিকে তাকালো সাথে সাথে তাদের কপাল কুঁচকে গেলো। তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা গেলো।আসলে মেঘলা সুমির মতো ওতোটা সুন্দর না। সুমির গায়ের রং ধবধবে ফর্সা যথেষ্ট স্মার্ট কিন্তু মেঘলা তার উল্টো মেঘলার গায়ের রং কালো স্মার্টও না অতিসাধারণ একটি মেয়ে। পাত্রের দুলাভাই এবার বলে উঠলো আমাদের আপনার ছোট মেয়েকে খুব পছন্দ হয়েছে যদি আপনারা রাজি থাকেন তো আমারা কথা বার্তা এগোতে পারি কি বলেন। মেঘলা এতোক্ষণ চুপ চাপ বসে ছিলো কিন্তু এখন আর বসে থাকতে পারলো না মুখ চেপে কান্না আটকে দৌড়ে ঘরে চলে এলো। মাহবুব হোসেন বুঝতে পারলেন মেঘলা খুব কষ্ট পেয়েছে,তিনি একটা হতাশাময় শ্বাস নিয়ে পাত্র পক্ষের উদ্দেশে বললেন এখন আমি আমার ছোট মেয়েকে বিয়ে দেবো না আপনারা আসতে পারেন।
রুমে এসে মেঘলা বালিসে ঘুম চেপে কান্না করতে লাগলো।তার সাথে এমনটা যে প্রথম বার হলো তা নয় এরকম অনেক হয়েছে ওকে দেখতে এসে পাত্র পক্ষ ছোট বোন সুমিকে পছন্দ করে। গায়ের রং কালো বলে তাকে সবাই রিজেক্ট করে। ছোট বেলা থেকেই মেঘলা এই সব সহ্য করে আসছে। প্রতিবেশী বন্ধু বান্ধব সবাই ওর গায়ের রং নিয়ে ঠাট্টা করতো নানান কথা বলতো।তাই সে সবসময় নিজেকে সবার থেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করতো। নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে মেঘলার কেন আমি এতো কালো হলাম কেন একটু সুন্দর হলাম না। একটু সুন্দর হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো।সবাই বলে রূপ নয় গুনই সব কিন্তু যারা এই কথা বলে দিন শেষে তাড়াই রূপটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
কিছুক্ষণ পর মেঘলার বোন সুমি মেঘলার রুমে আসলো।রুমে কারো উপস্থিত টের পেয়ে মেঘলা মুখ মুছে নিলো নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে উঠে দাড়ালো।
মেঘলা: সুমি তুই কিছু বলবি?
সুমি: কি আর বলবো তোকে বার বার তোকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসে রিজেক্ট করে চলে যায়। একটু স্মার্ট হতে পারিসনা ।আর এভাবে বসে কান্না কাটা না করে বাইরে বের হো দেখ কোনো ছেলেকে ফাঁসাতে পারিস কিনা। অবশ্য তোর যা চেহারা কালো কুচকুচে ছেলেরা দেখেই পালিয়ে যাবে হাহাহা। ছোট বোনের মুখে এসব কথা শুনে মেঘলার ইচ্ছে করছে ঠাস করে একটা চড় মারতে কিন্তু কিছু বললো না।সব মুখ বুজে সহ্য করলো।
একদিন পাশের বাসার এক আন্টি বাসায় এসে মেঘলার মাকে অনেক কথা শুনায়।আপা আপনার বড় মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেন বুরি হয়ে যাচ্ছে তো এমনিতেই কালো তারওপর যদি বয়স বেড়ে যায় তখন তো আর কেউ পছন্দ করবে না। সারাজীবন বোঝা হয়ে ঘারের উপর থাকবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেন।
মেঘলার মা তার বাবাকে বলে মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া দরকার কালো জন্যেতো কেউ পছন্দ করে না তার ওপর বয়সতো আর বসে নাই। বেশি দেরি করলে তখন পাত্র দেখে ভাববে এ পাত্রী নয় পাত্রীর মা।দেখো কোনো ডিভোর্সি ছেলে পাও কি না দরকার পড়লে দুই তিন লাখ টাকা দেবো তবুও তো আপদ ঘার থেকে নামবে।এসব কথা মেঘলা রুমের বাইরে থেকে শুনছিলো মায়ের মুখে আপদ কথাটা শুনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সেখানে দৌড়ে রুমে এসে কান্না করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর মাহবুব হোসেন মেঘলার রুমে আসলেন।মেঘলা বাবাকে দেখে কান্না করা বন্ধ করে বসে পড়লো বেড মাহবুব হোসেন মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন কান্না করোনা মা লোকে যা বলে বলুক কেউ পছন্দ করুক আর না করুক বিয়ে হোক বা না হোক তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না তুমি সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে পারবে না থাকতে? মেঘলা বাবার কথায় জরে জরে কান্না করতে লাগলো বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো পারবো বাবা আমি সারাজীবন তোমার কাছেই থাকতে চাই। মাহবুব হোসেন মেয়েকে শান্ত করে বললেন তুমি তো চাকরি করতে চেয়েছিলে আমিই রাজি হয়নি। এখন আমি তোমাকে বলছি তুমি চাকরি করো নিজের পায়ে দাঁড়াও সাবলম্বী হও।আমি তোমার পাশে আছি।
বাবার কথায় মেঘলা এক নতুন জীবন পেলো নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেলো। তারপর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে শুরু করলো আর চাকরি পেতে খুব একটা সময় লাগলো না তার।মেঘলা অনেক মেধাবী ছাত্রী। খুব তাড়াতাড়ি একটা ভালো চাকরি পেয়ে গেলো।আর মন দিয়ে কাজ করতে লাগলো জীবনটাকে ঘরবন্দি থেকে মুক্ত করে খোলা আকাশের নিচে এক সুন্দর পৃথিবীতে নতুন রূপে আবিষ্কার করলো।
কিছু দিন চাকরি করার পর অফিসে সবার সাথে খুব ভাব হয়ে গেলো তার কাজ দেখে সবাই মুগ্ধ। তার কলিগদের মধ্যে একজন ছেলে নাম মাহিম সে একটু বেশিই খেয়াল রাখতো মেঘলার খোঁজ খবর নিতো কাজ বুঝিয়ে দিতো আর আস্তে আস্তে ওদের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।আর মাহিম ছেলে হিসেবে খুব ভালো তা এতো দিনে বুঝতে পেরেছে মেঘলা। হঠাৎ একদিন মেঘলা অফিস থেকে বাসায় ফিরে চমকে যায় বসার ঘরে তার বাবার সাথে বসে আছে মাহিম, মাহিম এখানে কেন তার বাবার সাথেই বা কি কথা তার এসব ভাবনার মাঝেই মাহিম বলে উঠলো অফিসে তো সব কথা বলা যায় না তাই তোমার পারমিশন ছাড়াই তোমার বাসায় চলে আসছি।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি মেঘলা, তোমাকে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি কিন্তু আর না বলে পারলাম না।বিয়ে করতে চাই তোমায় তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে মেঘলা? মেঘলা কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় এতো সুদর্শন একজন পুরুষ কিনা তার মতো একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। তারপর কিছু দিন পরেই মাহিম আর মেঘলার বিয়ে হয়ে যায়।
বাসর ঘরে ঘেঘলা বসে আছে বেশ কিছুক্ষণ হলো কিন্তু তার স্বামী মাহিমের কোনো খবর নেই। ওদের বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। একটু আগেই মাহিমের এক কাজিন মেঘলাকে বাসর ঘরে বসিয়ে রেখে চলে গেছে। একটু পর মাহিম ভেতরে ঢুকলো। মেঘলা মাথা নিচু করে বসে ছিলো মাহিম আসায় উঠে দাঁড়িয়ে সালাম করতে গেলে মাহিম আটকায়। সালাম করতে হবে না এখন যাও ভারি লেহেঙ্গা খুলে একটা শাড়ি পড়ে নাও আর অযু করে আসো একসাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবো।মেঘলা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মাহিমের দিকে।মাহিম সেটা লক্ষ্য করে বলে উঠলো আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে এখন যাও অযু করে আসো। কথাটা শুনে মেঘলা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মাহিম ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। একটু পর মেঘলা বের হয়ে আসলো দুজনে মিলে নামাজ আদায় করলো।
মেঘলা মাহিম কে বললো আমি তো কালো একটা মেয়ে রূপবতী নই আর আপনি এতো সুন্দর একজন পুরুষ আপনি চাইলে আমার থেকে হাজার গুণ সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে পারতেন।মাহিম কিছু সময় চুপ থেকে বললো রূপ ক্ষণস্থায়ী রূপ আছে কাল নেই। কিন্তু মানুষের মন যদি সুন্দর হয় তাহলে সে সুন্দর আর মন যদি কুৎসিত হয় তাহলে গায়ের রং যতোই ফর্সা হোক তবুও সে অসুন্দর।আর আমি তোমার রূপকে নয় মনকে ভালবেসেছি তাই তুমি কালো কি ফর্সা যাই হওনা কেন আমার কিছু যায় আসেনা।বলেই মাহিম মেঘলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বললো ভালোবাসি প্রিয়তমা মেঘলা মুচকি হেসে বলল ভালোবাসি আমিও।
সমাপ্ত।
( আসসালামুয়ালাইকুম কেমন লাগলো জানাবেন। কল্পনা থেকে লেখা তাই বাস্তবতার সাথে মেলাতে যাবেন না। ছোট একটা মন্তব্য আশা করছি)