বোরকাওয়ালি_পিচ্ছি_বউ আলোক_আহমেদ পার্ট_5_শেষ_পার্ট

 বোরকাওয়ালি_পিচ্ছি_বউ 
আলোক_আহমেদ 
পার্ট_5_শেষ_পার্ট 
|
ফজরের নামাজ পড়ে । বাইরের খোলা বাতাসে একটু হাটাহাটি করছি । 
সকালের এই মনোমুগ্ধকর হাওয়া  মনের মাজে এক অন্যরকম  অনূভুতি তৈরি করে । কিন্ত সেটা কি বুজতে পারি না। 
হঠাৎ মনের মাজে খেয়াল এলো যদি এখন পিচ্চিটা আমার সাথে থাকতো । দুজনে একসাথে হাত ধরে হাটতাম । 
কতই না ভালো লাগতো । ভাবতেই আমার মন টা খুশি তে নেচে উঠলো। 
তখন মনে মনে ঠিক করলাম । নিয়ত করলাম । 
বিয়ের পর প্রতিদিন ভোরে ওকে নিয়ে বাহিরে খোলা বাতাসে হাটা হাটি করবো। 

এসব ভাবতে ভাবতে হাটছি এমন সময়   কে জেনো পেছন থেকে সালাম দিলো বলে মনে হলো 
-- আসসালামলাইকুম (____) 
পেছন মুখ ঘুরে তাকালাম । খুব বেশি অবাক হয়নি । 
কারন এটা ছিলো সূচনা । কালো বোরকা ।পড়ে আছে মেচিং করা মোজা । 
দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে । 
আমি তার সালামের জবাব দিলাম। 
আর জিজ্ঞেস করলাম 
-- আরে সুচনা তুমি এত সকালে কোথায় যাচ্ছো । (আমি) 
-- প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি দুলাভাই ।(সূচনা) 
-- ও আচ্ছা তো স্কুলে কখন যাবে (আমি) 
-- 8:30স্কুলের ক্লাস স্টার্ট হয় । এতক্ষন স্যারের কাছে কোচিং পড়ি । (সূচনা) 
-- ঠিক আছে সাবধানে যাও (আমি) 
-- আচ্ছা যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা সাহায্য করবেন (সূচনা) 
-- মনে করার কি আছে বলো কি সাহায্য করতে পারি (আমি) 
-- আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসবেন স্যার দের বাসা পযন্ত আসলে ওখানে কিছু ছেলেরা রোজ সকালে আমাকে জ্বালাতন করে (সূচনা) 
-- কি এত বড় সাহস?? আচ্ছা চলো তো দেখি কে তোমাকে ডিসটার্ব  করে (আমি) 
তারপর  সূচনা আর কিছু না বলে হাটা শুরু করলো । 
আমি ও‌তার সাথে হাটছিলাম। 
কিছুক্ষন পর আমরা দুজনে একটা জায়গায় এসে দাড়ালাম। পাশে স্যারের বাসা। 
আর রাস্তার ওইপাড়ে কিছু পোলাপাইন দাড়িয়ে ছিলো । দেখে বোজা যায় 9-10 এর ছাত্র। 

সূচনা আমাকে বলল -- 
-- দুলাভাই  ওই ছেলেগুলোই আমাকে প্রতিদিন কটু কথা বলে (সূচনা)  (হাত দিয়ে দেখিয়ে) 
-- আচ্ছা তুমি ভেতরে যাও মন দিয়ো পড়ো । আমি ওদের দেখছি । আর আজকে তোমাকে আমি স্কুলে পৌছে দিয়ে  আসবো । (আমি) 
-- ঠিক আছে দুলাভাই (সূচনা) 

তারপর সূচনা  ভেতরে চলে গেলো । 
আর আমি ছেলেগুলোর সামনে গেলাম । 
বাচ্চা ছেলে এই বয়সে এমন ফাইজলামি করবে এটাই‌স্বাভাবিক । তাই বেশি কিছু বলি নাই ভালো ভাবে বুজায় বলাতে মেনে গেলো । 


দেখতে দেখতে 8 টা বেজে গেলো । সূচনা বের হলো ।
তারপর  আমাকে জিজ্ঞেস করলো 
-- কি ব্যাপার দুলাভাই  কি বলছে ওরা (সূচনা) 
আমি ভাবলাম‌ সুচনাকে একটু রাগাই ।. 
তাই ইচ্ছে করেই বললাম। 
-- ওরা বললো তুমি নাকি ওদের মধ্যে একজনকে ভালোবাসো (আমি) 😁
-- কিহ্ এত বড় সাহস । আমার নামে মিথ্যা বলা । দাড়ান আজকে ওদের উচিৎ শিক্ষা দিবো?(সূচনা) 😠
এই বলে সূচনা  ওদের দিকে হাটা শুরু করলো । 
আর আমি পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার  আগে  ওর পথ আটকে দাড়াই । 
দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসচ্ছি এটা দেখে সূচনা আমাকে ঝাড়ি মেরে  বলল
-- আপনি  কেমন দুলাভাই হ্যা ওরা আপনার শালিকার নামে  মিথ্যা অপবাদ দিলো আর আপনি হাসচ্ছেন 😠। (সূচনা) 
-- হিহিহি আরে ওরা কিছু বলে নাই  আমি তোমার সাথে  একটু মজা করলাম আরকি 😁(আমি) 
-- কিহ্ 😠 আপনি এমন টা করতে পারলেন দাড়ান আজকে বাসায় গিয়ে সবার আগে আপুর কাছে বিচার দিবো আপনার নামে 😠(সুচনা) 
-- এ্যা - কি বলছো..  আমি তো একটু ফাজলামি করলাম । এখানে তোমার আপুকে টানার  কি দরকার 😧(আমি) 
-- হু ফাজলামি করার আগে মনে ছিলো না 😏(সূচনা) 
-- আচ্ছা সরি এর পর থেকে ফাজলামি করার আগে পারমিশন নিয়ে ফাজলামি করমু নে তবু ও তোমার আপুকে বলার দরকার নেই 😒(আমি) 
-- একটা শর্তে  আপুকে বলবো না (সূচনা) 
-- কি বলো? (আমি) 
-- 1000 হাজার  টাকা দিন তাহলে বলবো না (সূচনা) 😜
-- এত টাকা দিয়ে করবে তুমি 😮😮(আমি) 
-- যা ইচ্ছে তাই করবো আপনাকে  দিতে বলেছি দিবেন নাহলে (😠) (সূচনা) 
-- নাহলে আপকেু আরো বানিয়ে বানিয়ে বলবো আপনার. নামে (😏) (সুচনা) 
-- এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া টা কি ঠিক  হচ্ছে 😦(আমি) 
-- দিবেন কিনা বলুন 😬(সূচনা) 
-- দিচ্ছি তো এত রাগ দেখাও কেন দুই বোন একি রকম 😒(আমি) 
কিছু করার নেই অবশেষে মানিব্যাগ থেকে সকাল সকাল  এক হাজার টাকা  খরচা গেলো । 
টাকা   হাতে দিতেই সূচনা বলল
-- চলুন এবার আমাকে  স্কুল পযন্ত এগিয়ে দিয়ে আসুন (😛সূচনা) 
-- হমমম চলো (আমি) 😒
তারপর দুজনে হাটা শুরু  করলাম । 
কথা বলতে বলতে হাটছিলাম। কখন যে স্কুলের সামনে এসে পৌছেছি খেয়াল নেই। 

সূচনা  আমাকে বলল
-- আচ্ছা দুলাভাই  আপনি সকালে  নাস্তা করেছেন (সূচনা) 
-- না এখনো করিনি তবে বাসায় গিয়ে করে নিবো(আমি) 

তারপর সূচনা আর কিছু না বলে ব্যাগের চেন খুলে একটা বক্স বের করলো 
আর আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-- এই নিন এখানে আপনার সকালের নাস্তা বানিয়ে পাঠিয়েছে আপু খেয়ে নিবেন (সূচনা) 
-- আচ্ছা (আমি) 
তারপর  সূচনা  স্কুলের ভেতর চলে গেলো । 
আর আমি ও বক্স টা হাতে করে নিয়ে খুশি মনে হাসতে হাসতে বাড়িতে চলে এলাম। 

তারপর টেবিলে বসে হবু বউ এর পাঠানো নাস্তা সেরে নিলাম। 
বিছানায় গা হেলান দিয়ে শুয়ে রইলাম। আগামিকাল আমার বিয়ে । কেমন একটা ফিলিংস অনুভব করছি । একটু লজ্জাও লাগছিলল এসব ভাবতে ।

তারপর  আম্মুর সাথে  একটু ফোনে কথা বলে নিলাম।  
আগামিকাল সকাল 10 টার দিকে কাজি অফিসে বিয়ে পড়ানো হবে । 
আর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাটা ওদের বাসায়। কিছু ফকির মিসকিন আর এতিমদের কে খাওয়ানোর কথা বলছে । 

যাক ভালোই হয়েছে । অন্তত গরিব দের খায়িয়ে যদি কিছু নেকি অর্জন করা যায় তাহলে তো খুব ভালো আর সুখের হবে আমাদের সংসার জিবন ।
ইনশা-আল্লাহ । 

মোবাইল এ ফেবু চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে গেলাম কখন বুজতে পারলাম না । 

  হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো । 
বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। 
জীবনে এই প্রথম একটা দুস্বপ্ন দেখলাম। 
আমার মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো । 
তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি পান করলাম। 

হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ায় একটা দুঃস্বপ্ন দেখে চমকে উঠলাম । 

দুঃস্বপ্ন টা সোনিয়াকে নিয়েই । মানে আমার হবুও বউ কে নিয়ে । হঠাৎ ও আমার স্বপ্ন এলো । 
কিন্ত সে একটা বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে । আর জোরে জোরে কান্না করছে । 

আমি কাছে গিয়ে হাত টি ধরায় তার কান্না একেবারে থেমে গেলো । 
সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। 
আর আমি চিৎকার দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। 

কেনো জানিনা হঠাৎ এমন স্বপ্ন দেখে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো । 
চোখের কোনে নোনা জল জমতে শুরু করছে । 
কেন. এত ভয় হচ্ছে আমার । 
তবে কি সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে । 
সত্যি  কি তাকে আমি সারাজীবন এর জন্য আপন করে পাবোনা । 

এসব ভাবতে ভাবতে বুকের মাজে ঠিক বাম দিকটায় হৃদপিন্ডে একটা ব্যথা অনুভব করলাম। 
এখন আমার ওকে নিয়ে ভাবতে ভয় করছে । যদি স্বপ্ন টা সত্যি হয় । তাহলে আমি কি করবো । 
ওকে যে এই দুই দিনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি । 

এখন যদি ওকে না পাই‌ দিশে হারা হয়ে যাবো । 
আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছিলো। 

আম্মুকে ফোন দিয়ে একটু কথা বলে নিলাম। ওর ব্যাপারে খোজ খবর নিলাম। 
সব ঠিক  আছে শুধু  শুধু  চিন্তা করার কোনো দরকার নেই । 
আম্মুকে বললাম  স্বপ্নের কথাটা । আম্মু হেসে বলেছিলো । 
স্বপ্ন কখনো সত্যি হয়না.! 
কিন্ত আমার মনের ভেতর কেমন যেনো ভয় হচ্ছিল । আম্মুর সাথে কথা বলার পর ভয়টা দূর হয়ে গেলো ।  

দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে গেলো । দুজন দুই দিকে । অথচ খেয়ালি পনায় মিশে একাকার হয়ে রয়েছে । তবে কি এটাই ভালোবাসার লক্ষন । 
শুনেছিলাম..  প্রেমে পড়লে নাকি সব কিছু রঙিং লাগে ।  রাতের আকাশে তারার মেলা দেখে মনে হচ্ছে হয়তো ওই প্রান্তে বসে সে আমার চিন্তায় ডুবে রয়েছে ।. 
 ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো । আমি তো ছেলে মানুষ আমার আর তেমন একটা বর সাজতে হলো না । অফিসে যেভাবে যাই ঠিক সেভাবেই গেলাম কাজি অফিসে । 
সবাই উপস্থিত । 
শুধু কাজি সাহেবের কাজ শেষ হওয়া বাকি । 
এখন আমার পাশে বসে রয়েছে  আমার পিচ্চি বউ টা । 

জানিনা কেমন লাগছে ওর । মুখ বঙ্গী দেখে বুজার উপায় নেই. যে লজ্জা পাচ্ছে কিনা । 
কারন সে পুরোপুরি পর্দায় নিজেকে আড়াল করে রেখেছে । 

পেছন থেকে আমার শালি  চিমটি মেরে বলল
-- দুলাভাই যদি আমার আপুকে কষ্ট রাখেন তো আপনার খবর আছে বলে দিলাম 😁(সূচনা) 

আসলে শালিটা একটু বেশি পাকনা । সব সময় মজা করে । কিন্ত মন টা খুব ভালো । দুই বোনের মাজে একিই রকম স্বভাব আচরন. বিদ্যমান । 
শুধু সূচনা একটু  দুষ্টু স্বভাবের মেয়ে । 

আমি সূচনার কথা শুনে হাসি আটকে রাখতে পারলাম না । 
তাই আমি হাসতে হাসতে জবাব দিলাম। 
-- এত টা সুখে রাখবো যে পাড়া প্রতিবেশিরা ঝলে পুড়ে মরবে (আমি) 😁

তারপর  আর কোনো  কথা বললাম না । কয়েকবার ওর দিকে  আড়চোখে তাকিয়েছিলা‌ম। 
কিন্ত  আমার মনে হয়না ও একবার ও আমার দিকে তাকিয়েছে ।  চুপ করে মূর্তির মতো বসে রয়েছে । 

অবশেষে কাজি সাহেব বিয়েটা পড়িয়ে দিলো 😊
শুরু হলো নতুন এক জীবন । আমার একার জিবনে এখন একটা নতুন জীবন যোগদান হয়েছে। 
আম্মুর কাছে গিয়ে সালাম করলাম দুজনেরই । 
তারপর শশুড় শাশুড়ি মাকে সালাম করলাম ।
পাশে দাড়িয়ে ছিলো সূচনা.. 😁
দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসচ্ছিলো  দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম  কি হলো তুমি  হাসচ্ছো কেন 

সূচনা হাসতে হাসতে বলল
-- আজ যদি বড় হতাম  তাহলে তোমরাও এভাবে আমার পায়ে ধরে সালাম করতা 😁(সূচনা) 
 সূচনার কথা শোনা মাত্রই সবাই হেসে  উঠলো । 

কিন্ত পিচ্চিটা সূচনার দিকে  কেমন. যেনো আড়চোখে দেখলো । এমন মনে হলো যেনো ওর বিন্দুমাত্র হাসি পায়নাই । 

সূচনা কে ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলাম । 
-- এই তোমার আপুর মুড ওফ কেন (আমি) 😥
-- আপনার উপর রাগ করেছে হয়তো (সূচনা) 
-- হায় আল্লাহ..!  কি বলছো কেন রাগ করছে  (আমি) 
-- সেটাতো জানিনা সেটা আপনিই জিজ্ঞেস করেন । (সূচনা) 
-- আচ্ছা  - কিন্ত ওর রাগ ভাঙাবো কিভাবে (আমি) 😰
-- বেশি কিছু লাগবে না এক গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিবেন. ব্যাস আর কিছু করতে হবে না.!আপুর কৃষ্ণচূড়া ফুল সব থেকে বেশি পছন্দ করে । (সূচনা) 
-- সত্যি এতেই হয়ে যাবে (আমি) 😍
-- হমমম (সূচনা) 

তারপর  সবাই মিলে বাড়িতে চলে এলাম।
সেখানে কিছু গরিবদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর কিছু রিলেটিব রাও রয়েছে । 

আমি নিজে কিছু গরিবদের খাবার. সার্ফ করে দিলাম । 
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় বিকাল হয়ে গেলো । 

আমরা বিদায় নিলাম। সোনুদের বাড়ি থেকে । 
সূচনা আসার সময় অনেক কান্নাকাটি করছিলো । পিচ্চি টাও অনেক কেদেছে । 
মোটেও ভালো দেখায় না কাদলে তাকে ।
এখন গাড়িতে বসে আছি । 
আমি আর পিচ্চিটা পিছনে বসেছি আর আম্মু সামনে । 
পিচ্চি টা এখনো অঝরে কেদেই চলেছে । 
কাদতে কাদতে মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে । 
 তাই আমি ওকে সান্তনা দেওয়ার  জন্য বললাম 
-- এইযে এত কাদতে হবে না তোমার যখন বাড়িতে আসতে মন চাইবে তুমি তখন আমাকে বলবে আমি নিয়ে আসবো । এখন কান্না থামাও । (আমি) 😰
তারপর  আমি নিজেই ওর চোখের পানি মুছে দিলাম । তবুও  কেদেই চলেছে । 
চোখের পানি যেনো শেষ ই হয়না । 
আম্মু ও ওর কান্না করে দেখে বলল
-- আরে মা এত কাদছিস কেনো । তুই তো আমার বউমা হয়ে ওই বাড়িতে যাচ্ছিস না তুই আমার বোনের মেয়ে তাই তুই আমার ও মেয়ে আর তুই নিজের বাড়িতেই তো যাচ্ছিস । তোর যখন খুশি বাবা মাকে দেখতে আসতে পারবি । আলোক তোকে নিয়ে আসবে...! কিরে আলোক আনবি না..? (আম্মু) 

(আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো আম্মু) 😕
-- হ্যা আম্মু অবশ্যই আনবো  । (আমি). 
তারপর  আর কি অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে কান্না থামালাম । 
তবুও এতদিন পর মা বাবা কে ছেড়ে আসচ্ছে কষ্ট তো হবেই । 
তাই আর কিছু বলিনি আমি । কিন্ত ও যে নিরবে কাদছে তা আমি বুজতে পারছি। 

আমি কোনো কিছু না করে হাত বাড়িয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। 
চোখ টা কেমন লালচে হয়ে গেছে । 
ওর চোখের পানি মুছে দেওয়ায় । ও আমার দিকে এক মায়াবী নজরে তাকালো। 
ওর চোখ চোখ রাখতেই ওর চোখের নেশায় পড়ে গেলাম ।

আমি ও তাকিয়ে আছি এক নজরে । 
সে আর কোনো কথা না বলে আমার ডান হাত টা  জরিয়ে ধরে  কাধে মাথা রেখে বসলো । 

আমি একটু অবাক হলাম ।  হঠাৎ করে হাত জরিয়ে ধরলো তো তাই । 
আর এমনিতেও ওর একটু রেস্ট দরকার । 
তাই আমি ও কিছু বললাম না । 
ও চোখ বুজে আমার হাত ধরে কাধে মাথা রেখে বসে আছে । 
ঘুমিয়ে তো যায়নি ।হয়তো চোখ বুজে কিছু  একটা  ভাবছে । 

কি ভাবছে যদি বুজতে পারতাম । হয়তো তাহলে ওর মনের কষ্ট টা বুজতে পারতাম ।

রাতের প্রায় 9 টা বেজে গেলো আর আমরাও দেখতে দেখতে বাসায় পৌছে গেলাম।  
বাসাটা আগেই সাজিয়ে রাখা ছিলো । 

  গাড়ি থেকে নামলাম আমি আগে । তারপর আম্মুর হাত ধরে আগে আম্মু কে নামালাম।

আম্মু নামতেই আমাকে বলল
-যা বাবা বউমা কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যা(আম্মু) 
আম্মুর কথা শুনেই আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম আর বললাম ।
- কোলে নিতে হবে কেন..? (আমি) 😱
- এটা আমাদের বাড়ির নিয়ম । নতুন বউকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যেতে হয় । তাই যা বলছি তাই কর । (আম্মু) 

কি আর করার আম্মুর আদেশ পালন করতেই হবে । 
তাই আমি ঘুরে গিয়ে ওপাশের ডোর খুলে বললাম।
- নামুন (আমি) 😳
সোনিয়া কোনো কথা না বলে চুপচাপ নেমে ধারালো। 
আর আমি সাথে  সাথে  কোলে তুলে নিলাম। 
- এতে সে খানিকটা লজ্জা বোধ করলো । 
আর চোখ বন্ধ করে রইলো । 
তারপর  আমি ওকে ঘরে ভেতর নিয়ে গিয়ে আমার রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে আসলাম বাইরে ।

গাড়ি থেকে কিছু জিনিসপত্র ড্রাইভার দিয়ে গেলো । যা আমি ওর জন্য গিফট হিসেবে এনেছিলাম। 

তারপর আমি বসে ছিলাম সোফাতে । এমন সময় আম্মু এসে বলল. 
-কিরে এখানে বসে আছিস যে ঘরে যা বউমা তো একা বসে আছে । (আম্মু) 
- আচ্ছা আম্মু! (আমি) 
- তারপর আম্মু আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে চলে গেলেন । ওনার রুমে । 
আর আমি ও কিছুক্ষন ওভাবেই বসে রইলাম। আর ভাবছি । 
হালা ড্রাইভার আসে না কেন । ফুল আনতে গিয়ে কি হাওয়া হয়ে গেলো নাকি  ।
কি জানি পায় নাকি  ।যদি না পায় তাহলে তো শেষ আমি। 
এমনিতেও. রাত প্রায় 11 টা ছুই ছুই । ঢাকা শহরে এমন সময় দোকান পাট তো খোলাই থাকে ।
তাহলে এত দেরি হচ্ছে কেনো বুজিনা । 

কিছুক্ষন পরই  ড্রাইভার তাড়াতাড়ি করে ভেতরে এসে বলল
-- স্যার এই নেন ফুল । অনেক খোজার পর পেয়েছি । 

আমি ও ফুল গুলো দেখে খুশি হয়ে হাতে নিলাম। 
তারপর পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে ড্রাইভারকে 1500টাকা বকশিশ দিলাম। 

ড্রাইভার খুশি মনে চলে গেলো । 

তারপর আমি আর দেরি না করে । 
ফুল আর গিফটের বক্স টা হাতে নিয়ে রুমের দিকে এগুতে লাগলাম।
 বুকের ভেতর ধুকফুক করতে লাগলো । 
রুমের দরজার সামনে থমকে দাড়িয়ে গেলাম। 
দির্ঘশ্বাস  ছেড়ে আস্তে করে রুমের মধ্যে ডুকলাম।
রুমের মধ্যে ডুকতেই । সোনিয়া আমাকে দেখে বিছানা থেকে  উঠে আমার সামনে আসলো । 
তারপর দেখলাম আমার পা ছুয়ে সালাম করতে লাগলো 😳

আমি খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বললাম 
-- আরে আরে কি করছেন আপনি (আমি) 
-- কেনো সালাম করলাম । এটা  সব স্ত্রীর কর্তব্য।
তার স্বামীকে সালাম করা । (সোনিয়া) 
--  ওও আচ্ছা ঠিক আছে কিন্ত আপনার স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকে । (আমি) 😊
-- তাই..!  আচ্ছা কিন্ত আপনি এক হাত. পেছনে রেখেছেন কেনো । 
আর এই হাতে এই বক্সটা কিসের । (সোনিয়া) 😕
--এই নেন এটা ধরেন (আমি) 😁
বলেই ওর হাতে  বক্স টা তুলে দিলাম। 
ও কিছুটা ব্রুকুচকে জবাব দিলো 
-- কি এটাতে (সোনিয়া) 😕
-- দেখে নিন (আমি) 😁

তারপর সোনিয়া বক্সটা খুলতে লাগলো । 
বক্স খুলে দেখতেই সে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । 
কারন বক্সের মধ্যে রাখা ছিলো । 
দুই সেট বোরকা আমার পছন্দের কালারের আর
একটা কুরআন শরিফ । তজবি ।আরো প্রয়োজনী দ্রব্য সামগ্রী। আর কিছু অর্থ ছিলো । 

আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম। 
--পছন্দ হয়েছে..?  (আমি) 😕
সে কোনো কথা বলছে না । চুপ করে বক্সে রাখা জিনিস গুলো হাতিয়ে হাতিয়ে দেখছে । 
তাই আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম 
-- কি হলো কিছু বলছেন না যে পছন্দ হয়নি আপনার । (আমি) 😕
সে আমার দিকে নজর তুলে তাকাতেই  আমার বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো । 
সে আবারো কাদছে । তার চোখে জল স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি। 
আমি একটু ঘাবরে গেলাম। 
আর কিছুটা ব্রুকুচকে ওর আর একটু কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম । 
-- আরে আরে কাদছেন কেনো । কি হয়েছে পছন্দ হয়নি ওগুলো । (আমি) 😧
সে কান্না ভেজা কন্ঠে জবাব দিলো । 
-- আপনি কি বোকা এগুলো কি  না পছন্দ হওয়ার জিনিস নাকি । আমার খুব ভালো লেগেছে । এবং এগুলো আমার কাছে সব থেকে বেশি মূল্যবান উপহারের মধ্যে একটা । (সোনিয়া) 😣
(কাদতে কাদতে) 
-- তাহলে কাদছেন কেনো..? (আমি) 😕
-- আপনি একটা বুদ্ধু আপনি বুজেন না এটা খুশির কান্না। (সোনিয়া) 😑
 বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো । 
- হু আমি মোটেও বুদ্ধু না (আমি) 😳
- জি না আপনি বুদ্ধু না আপনি একটা হাদারাম ।(সোনিয়া) 😒
- কি..?  আমি হাদারাম..! তো আপনি কি 😏(আমি) 

সোনিয়া আমার মুখে আঙুল দিয়ে বলল
-- চুপ..? আপনি নয় তুমি করে বলবেন । (সোনিয়া) 😳
-- আমি তো একা বলবো না তুমিও আমাকে তুমি করে বলবে (আমি) 😊
-- আচ্ছা...!  কিন্ত আপনি এখনো আপনার হাতটা পেছনে রেখেছেন কেনো । কি এনেছেন দেখি..! (সোনিয়া) 😑

আমি পেছন থেকে ফুলের তোড়া টা  সামনে এনে বললাম । 
-- এই যে এটা তোমার জন্য এনেছি (আমি) 😊
-- একি তুমি?  কিভাবে জানলে আমার এই কৃষ্ণচূড়া ফুল পছন্দ। (সোনিয়া) 😊
--তোমার বোন বলেছে । (আমি) 😁
--ও আচ্ছা দাও এগুলো আমি রেখে দিচ্ছি । আর তুমি গিয়ে অযু করে আসো যাও (সোনিয়া) 😍
-- ঠিক আছে যাচ্ছি (আমি) 
-- তারপর আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে  অযু সেরে নিলাম। বাইরে আসলাম । দেখলাম। সোনিয়া  জায় নামাজ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । 
আমি তার সামনে এসে দাড়ালাম তারপর সে আমাকে জায়নামাজ দিয়ে বলল । 
-- আমাদের সংসার জিবন যাতে সুখের হয় সেই‌জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর কাছে আজকে আমরা দুহাত তুলে ফরিয়াদ করবো । 
তিনি আমাদের নিশ্চয়ই খালি হাতে ফেরাবেন না ।  (সোনিয়া) 😊❤
-- আচ্ছা (আমি) 

তারপর  দুজনে  একসাথে নামাজ পরে নিলাম। 
নামাজ পরা শেষে সে আমাকে বলল । 
-- এই শোনো আমি তোমার উপর অনেক রাগ করেছি তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা একটু ও হু (সোনিয়া) 😏
--  ওমা আবার রাগ করছো কিন্ত কেনো..? 😨
-- এমনি..! আমার অনেক রাগ হচ্ছে (সোনিয়া) 😠
-- ফুল তো এনে দিলাম । আর কি দিতে হবে শুনি (আমি) 😕
-- এই তুমি কি আমাকে লোভী ভাবো । যে কোনো জিনিস দিয়ে  আমার রাগ ভাঙাবে । (সোনিয়া) 😠
-- হ্যা তাই তো (আমি) 😁
-- কি বললে.. (সোনিয়া) 😠😠😠
-- কই কিছু না তো. (আমি) 😰
-- চুপ যাও তোমার সাথে কথা নাই আমার (সোনিয়া) 😒
--  কেনো. ‌! 😞 কি করতে হবে বলো (আমি) 
-- তখন আমাকে ওভাবে কোলে তুলে আনলে আমার অনুমুতি নিয়েছিলে । (সোনিয়া) 😒
-- না কিন্ত আম্মু বলেছে কোলে করে নিয়ে আসতে তাই । (আমি) 😚
-- হু বুজেছি 😒
-- আচ্ছা বলো এখন তোমার জন্য কি করতে হবে শুনি  (আমি) 😚
-- যা বলবো তাই করবেন..!   (সোনিয়া) 😊
-- হ্যা করবো তো বলো (আমি) 😊 

-- আমার ছোট বেলা থেকেই তোমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে এসেছি । আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরন হয়েছে । কিন্ত আমার আরো একটা স্বপ্ন আছে । যেটা তুমি পূরন করবে  (সোনিয়া)😊 
-- কি সেটা শুনি (আমি) 😕
-- পূরন করবে তো (সোনিয়া) 
-- হ্যা কেনো করবো না আমার বউ আমার কাছে একটা আবদার করবে আর সেটা যদি আমি পূরন করতে না পারি । তো আমি কেমন স্বামী হলাম। 
তুমি বলো যেই ইচ্ছে থাক ইনশাআল্লাহ আমি পূরন করবো (আমি). 
-- না মানে কথাটা বলতে লজ্জা লাগছে (সোনিয়া) 
-- ওমা পিচ্চিটার আবার লজ্জাও পায় বুজি (আমি) 😊
-- কিহ্ আমি পিচ্চি.. 😠
-- কই না তো তুমি তো কত বড় । এমনকি তুমি আমার থেকেও বড় (আমি) 😁
- হু (সোনিয়া) 😏
- কি হু ...!  বলো তোমার ইচ্ছেটা কি শুনি (আমি) 😚
-- কাছে আসো কানে কানে বলবো (সোনিয়া) 😳
-- কি এমন কথা যে কানে কানে বলতে হবে (আমি) 😕
-- তোমাকে কাছে আসতে বলেছি না (সোনিয়া) 😠
-- আচ্ছা আসচ্ছি (আমি) 😊
তারপর  আমি ওর কাছে যেতেই‌ ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো । 
আমার বুকে মুখ লুকিয়ে রয়েছে ।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। 
-- এই‌ পাগলি এভাবে কেউ হুট করে জড়িয়ে ধরে (আমি) 😊
-- আমি তো ধরি..  কারন তুমি আমার স্বামি তাই যা ইচ্ছে করতে পারি (সোনিয়া) 😉
-- হুমমম তা তো পারবেই  কিন্ত তোমার ইচ্ছে টা কি বললে না তো (আমি) 😊
--না মানে..... আসলে (সোনিয়া). 😳
-- কি বলো (আমি) 
-- আমার না... (সোনিয়া) 😳
-- কি বলো (আমি) 
-- আমার না একটা  বাবু চাই তোমার কাছে (সোনিয়া) 

বলেই আমার বুকে  মুখ লুকিয়ে ফেলল । 
মনে হলো যেনো বুকের ভেতর ডুকে যেতে চাচ্ছে । 
ওর কথা শুনেই আমি হাসতে হাসতে ওকে বুকে জড়িয়ে  ধরে বললাম 
-- ইশ আমার বউ টা আমার কাছে বাবু চায় । আর আমি কি না দিয়ে থাকতে পারি 
কিন্ত এর জন্য যে তোমাকে  কষ্ট করতে হবে (আমি) 😁

-- কি কষ্ট..! (সোনিয়া) 😳
-- বেশি কিছুনা আমাকে শুধু ভালোবাসতে হবে ।(আমি) 😘
-- এই আমাকে আবার কোলে নাও না পিল্জ (সোনিয়া) 😳
-- কেনো (আমি) 
-- আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই তাই  (সোনিয়া) 

-- তাই বুজি... 😍
তারপর ওকে কুলে তুলে নিলাম। আর ও আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে রয়েছে । 

   বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম । ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
--  এই আমাকে একটা ইয়ে দিবে (সোনিয়া) 😳
-- ইয়ে কি গো (আমি) 😁
-- জানো না বুজি (সোনিয়া) 😥
-- কই না তো  (আমি) 😕
-- ওও আচ্ছা তাহলে থাক (সোনিয়া) 😥
এটা বলে সে আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে  শুয়ে রইলো । 
আর আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে  বললাম 
-- এই যা পিচ্চি বউটা কি রাগ করলো নাকি (আমি) 😮
-- হু (সোনিয়া) 😐
-- কি হু (আমি) 😕
--  কিছুনা ঘুমাও তো (সোনিয়া) 😥
-- ঘুমাইলে বাবু আসবে কিভাবে (আমি) 😁
-- জানি না হু (সোনিয়া) 😧
-- আচ্ছা  লাইট ওফ করে দেই । না হলে  লোকে মন্দ বলবে? (আমি) 
-- আমার ভয় করে 😰(সোনিয়া) 
-- আমি আছি তো (আমি) 😘

তারপর  আর কি লাইট নিভিয়ে দিলাম। আর দুজনে  স্বপ্ন পূরনের উদ্দেশ্যে  পারি দিলাম ভালোবাসার সাগরে 😊😊😊

-----------------------সমাপ্ত 

-----পুরো গল্পটা যারা ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ।পুরো গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে কমেন্টে জানিয়ে যাবেন💜 আর পরবর্তী গল্প ফাজিল ছেলে ও দুষ্টু মেয়ের পবিত্র ভালোবাসা গল্পের জন্য পেইজের সাথেই থাকবেন।
__________ধন্যবাদ সবাই কে চেষ্টা করবো সব সময় ভালো গল্প  দিয়ে পাশে থাকার জন্য 
❤----------------পেত্নীর_জামাই---------------❤
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post