ডিবোর্সি_খালাতো_বোন
#পর্ব_৩
#writer_sinno. ( কপি করা নিষেধ)
বাসর ঘরে বউয়ের ঘুমটা তুলতেই বউ আমার গালে ঠাস!ঠাস! চারটা বসিয়ে দিল। আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
জেরিনঃ তুই এতো বড় সাহস কোথায় পেলি আমার ঘুমটা সরিয়ে নেওয়ার। তুই কখনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না।
আমিঃ তুমি তো আমার বউ।আর তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আমার আছে।
জেরিনঃ রাখ,তোর স্বামীর অধিকার। কখনো আমার ওপর তোর স্বামীত্ব দেখাতে আসবি না।
আমিঃতাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?
জেরিনঃ হারামি,তুই তো একটা লুচ্চা আর আমার দেহের ওপর তোর লোভ ছিল। এ কারণেই তুই আমাকে পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস।নয়তো তোর থেকে ৩ বছর বড় হওয়া সত্ত্বেও বড় খালাতে বোন কে বিয়ে করিস। তোর মাকে দিয়ে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব করিস তখন রাজি ছিলাম না বলে।
আমিঃ তাহলে আম্মুর প্রস্তাবে রাজি হলে কেন?
জেরিনঃ তোর আম্মু আমাকে ছোট বেলা থেকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিত।আর আমাকে তেমনি ভালোবাসে কিন্তু তার কথাটা ফেলতে পারিনি।আর এইজন্য তোকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে। আরে, তোর যদি কন্ট্রোল ক্ষমতা এতোই কম তাহলে পতিতালয়ে যেতে পারতি।সেখানে তোর ইচ্ছে পুরন করতি।কেন আমার জীবনে আসলি।
আগামী ছমাসের মধ্যে আমাকে ডিবোর্স দিবি।দুমাসের মধ্যে পরীক্ষা তারপর রেজাল্ট বের হলে,আমি একটা চাকরি নিয়ে তোদের বাসা থেকে চলে যাব। তুই আর আমাকে বাধা দিতে পারবি না।কথা গুলো যেন মনে থাকে।
এবার
তুই আমার রুম থেকে বের হ।কখনো আমার ওপর নিজের অধিকার ফলাতে আসিস না তাহলে খুব খারাপ হবে।তোরে দিয়ে তো বিশ্বাস নেই।কখন কি করে ফেলিস।
আমার দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে মুখ দিয়ে যে কোন কথাই বের হচ্ছে না।তাই রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।
ভাবছি,আমার জীবনে এটা কি ঘটতে চলছে। আমি কি এতোটাই খারাপ যে কিনা জেরিনের দেহের প্রতি লোভী।আর ও আমাকে প্রতিতালয়ে যাওয়া ছেলেদের সাথে তুলনা করল।এই ছিল আমার জন্য ওর মনে।আমি তো ওকে সরল মনে ভালোবেসে যাচ্ছিলাম।কখনো ও বিবাহিত মেয়ে বলে কিছু মনে করিনি।
মাথাটা যে মনে হচ্ছে ভেঙে যাবে।এতোটা ব্যাথা নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
ভাবতে ভাবতে কখন যে, ফ্লোরের উপরই ঘুমিয়ে গেলাম,তা জানি না।সকালে জেরিন ঘুম থেকে ওঠে আমাকে কোথাও দেখতে পায় না।তারপর বারান্দায় গিয়ে দেখে আমি শুয়ে আছি। টেবিল থেকে একগ্লাস পানি এনে আমার মুখের ওপর মারলো।আমি ধরফর করে ঘুম থেকে ওঠে। বললাম, " এটা কি করলে?"
জেরিনঃ তাহলে এখনো ঘুমিয়ে আছিস কেন?
আমিঃ তাই বলে আমার সাথে এটা করবে?
জেরিনঃ এখন তো শুরু এভাবে তোকে এই ৬মাসে তোর জীবন নরকে পরিনত করব।
এটা বলে জেরিন চলে গেল।আমি কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। সবাই দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আমি টেবিলের সামনে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
তারপর এক মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছি। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে আছে কারণ আমি কোন কথা বলছি না।এরপর খাবার খেয়ে সোজা ওপরে চলে গেলাম।
একটুপর জেরিনও চলে আসে। দেখলাম জেরিন রেডি হয়ে কোথাও বের হতে লাগলো ,আমি বললাম, " কোথায় যাচ্ছো?"
জেরিনঃ তা কি তোকে কৈফিয়ত করতে হবে নাকি।
আমি চুপ করে রইলাম
আম্মু কে জরুরি কাজ আছে বলে ভার্সিটিতে চলে যায়।আম্মু ও কিছু বলেনি।
আমি রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারিনি তাই অল্পতেই ঘুমিয়ে পরেছি।কিছুক্ষণ পর, ঘুম থেকে ওঠে বাহিরে ঘুরতে গেলাম।
রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম তখন আলির সাথে দেখা।
আমিঃ কিরে,আজ ভার্সিটিতে যাসনি?
আলিঃ একটু কাজ ছিল রে।তাই যাওয়া হয়নি।কিন্তু তুই তো কখনো মিস দেসনি।
আমিঃ কাল জেরিন আপুর সাথে বিয়ে হয়েছে।
আলিঃ দোস তুই এটা কিভাবে পারলি।আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড আমাকে ছাড়া তুই এটা পারলি।
আমিঃ ভাই তুই রাগ করিস না।আমার কথা শোন।
আলিঃ দুর সালা তোর সাথে কোন কথা নেই।
আমিঃ ভাই, আমার জীবন টা শেষ রে।
আলিঃ কি বলছিস? বুঝলাম না।
এরপর আলিকে সব কিছু খুলে বললাম।
আলিঃ কি বলিস,জেরিন আপু তোর সাথে এতো খারাপ কিছু করছে।
আমিঃ হুম।।
আলিঃ তুই চিন্তা করিস না।দেখি তোর জন্য কি করা যায়।
এরপর বাসায় ফিরতে যাব।তখনই দেখি জেরিন নিখিলের সাথে এক সাথে বাসায় ফিরছে।আমি ও দিকে না তাকিয়ে আলিকে নিয়ে উকিলের কাছে গেলাম। সব ঠিকঠাক করে আসলাম।
বাসায় গিয়ে দেখি জেরিন আম্মুর সাথে কাজে সাহায্য করছে।ওকে দেখে মনে হয় না,ও কতোটা রাগী মেয়ে। হয়তো আম্মু ওকে এ জন্যই অনেক ভালোবাসে।
আম্মু আমাকে দেখে বললো," কোথায় গিয়েছিলি নিলয়?
আমিঃ এই তো আম্মু একটু বাহিরে ঘুরে আসলাম।
আম্মুঃ আচ্ছা, ফ্রেশ হয়ে আস। আমি তোর জন্য খাবার বারছি।
তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে চলে গেলাম। বিছানায় শুয়ে আছি, কখন যেন চোখ দুটি বুজে এসেছে তা জানি না।হঠাৎ কে জানো খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।আমি মাগো বলে একটা চিৎকার দিলাম। হুম ধাক্কা টা জেরিন দিয়েছে।কোমরে অনেক ব্যাথা পেয়েছি, আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আর জেরিন হাসছে।হঠাৎ আম্মু রুমে এসে বললো, কিরে চিৎকার করলি কেন এভাবে।
আমিঃ আসলে আম্মু একটা তেলাপোকা বিছানায় ওঠেছিল।তাই ভাবছিলাম কি যেন আমাকে আক্রমন করছে।
আম্মু একটু সরম দিয়ে চলে গেল।আমিও জেরিন কে সরি বলে চলে গেলাম।
এভাবে আমার দিন কাটতে লাগলো।একদিন ভার্সিটিতে দেখি নিখিল আর জেরিন একসাথে বসে আছে।
আমি গিয়ে সোজা জেরিনের হাত ধরে তুলে বললাম। দেখুন আমার স্ত্রী হিসেবে যতদিন থাকবেন ততদিনে পরপুরুষের সাথে কথা বলতে পারবেন না।
এবার নিখিল আমার গালে থাপ্পড় দিলে।আলি দৌড়ে চলে আসে এরপর দুজনে মিলে নিখিলকে মারধর করি।একটু পর ওকে মারা বন্ধ করি,তারপর জেরিন দেখলাম কান্না করে ওর কাছে যাচ্ছে।আমি ওর হাত ধরতে গেলে।জেরিন আমার গালে থাপ্পড় মেরে বললো," গুন্ডা,ডাকাতের দল......
এবার আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ওর গালে গায়ের সব জোর দিয়ে বসিয়ে দিলাম।আর বললাম, "ওই নষ্টা আর একটা কথাও বলবি না।তোর মতো নষ্টাকে আমি কি বলে ভালোবেসে ছিলাম তা আমি জানি না।হয়তো তোর রক্তে ওটা বিদ্যমান।নয়তো স্বামী থাকতে অন্য কারো সাথে ঘুরে বেড়াস।
একটুপর ভার্সিটির সকল স্টুডেন্ট চলে আসলো।
উপাচার্য বাবাকে ডাকলেন । আমি জেরিনের গায়ে হাত তুলেছি বলে,বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করলো।আর উপচার্যকে বললো, " আমার কাজ আমি করেছি, বাকি সিধান্ত আপনাদের। "
এবার বাবা জেরিন কে নিয়ে বাসায় চলে গেল।আসলে বাবা একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাই অপমানে আমাকে তেজ্য পুত্র করেছে।আর উপচার্য আমার অবস্থা দেখে," বললো এবারের মতো তোমায় ক্ষমা করা হলো। আর শোন আলি ওর বাবার জন্য তোমাকে ও কিছু বললাম না।তোমাকে ও এবারের মতো ক্ষমা করলাম। পরের বার ভার্সিটি থেকে টিসি দিয়ে পুলিশে দিব।তোমরা জানো,এখানে ভার্সিটির ঐতিহ্য জড়িত।
আমরা চুপ করে আছি। তারপর স্যার চলে যেতে বলপ।
তারপর বের হয়ে আসলাম স্যারের রুম থেকে। এখন শুধু জেরিনের জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নেই। বাড়ির জন্য কোন চিন্তা নেই।শুধু মাকে দেখতে মন চাচ্ছে হয়তো বাবা আম্মুর কাছেও আমাকে খারাপ বানিয়ে দিবে।
আপনারা হয়তো বলতে পারেন এখন আমি কি করব?
আসলে আমি অনলাইন বিজনেস করি,বাবার কাছে কিছু টা ধারনা নিয়ে। আর ডেবিট কার্ড তো সাথেই থাকে।এ দিয়ে বিনদাস জীবন চলে যাবে।শুধু মানুষ গুলো থাকবে না।
আলি ওদের বাসায় থাকতে বলেছিল। কিন্তু আমি না করে দিয়েছি তাই একটা বাসা খুজছি,বাসার ও যোগান হয়ে গেছে। আসলে টাকা থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। আমরা যতই অপরকে জ্ঞান দেই না কেন যে টাকা দিয়ে সব হয় না কিন্তু দিন শেষে সেই টাকার পিছনেই আমরা ঘুরি।
এরপর নতুন বাসা থেকেই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করছি।জেরিন আর আমি একে অন্যের থেকে দুরে থাকি।কেউ কারো সামনে আসতে চেষ্টা করি না। একদিন ভার্সিটিতে দেখলাম জেরিন একটা গাছের নিচে বসে কান্না করছিল,তখন পাশে ওর এক বান্ধবী ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আমি একটা মেয়েকে দিয়ে ওর বান্ধবীকে ডেকে আনলাম।
আমিঃ আপু,ওনি কান্না করছে কেন?
মেয়েঃ আসলে ও আজকে ফ্রম ফিলাআপের টাকা এনেছিল।কিন্তু কিভাবে যেন চুরি হয়ে গেছে। আর কারো থেকে এখন ধারও নিতে পারছে না।আর পরিবার থেকে কিভাবে আবার টাকা চাইবে তাও ভয় পাচ্ছে। টাকাটা আজকে দিতে না পারলে ও হয়তো পরীক্ষা দিতে পারবে না।
আমিঃ ও আচ্ছা, ঠিকাছে। ধন্যবাদ, আপু। কতো টাকা জানেন কি?
আপুঃ ২৫০০০ টাকা।
আমিঃ ও আচ্ছা, দেখুন ব্যবস্হা করতে পারেন কিনা।
তারপর এটিএম বুথ থেকে ২৫০০০ টাকা তুলে।মুখে মাস্ক দিয়ে অফিসে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে ওর নামে টাকাটা জমা করে দিলাম।
ভাবছেন যাকে আমি ঘৃনা করি তাকে এই বিপদ থেকে কেন আমি উদ্ধার করলাম। আপনি এতোদিন যা শিখে আসছেন তা সম্পুর্নটা ভুল।আসলে শত্রু সবচেয়ে বেশি আঘাত পায় যখন আপনি তাকে বিপদে সাহায্য করেন।আর এই অনুশোচনায় সে সারাজীবন আপনার অপেক্ষায় থাকবে। আর একটাবার ক্ষমা চাইতে পথে তাকিয়ে থাকবে।
হঠাৎ কোন ভাবে জেরিন জানতে পারল। তার ফ্রম ফিলাপের টাকাটা জমা হয়ে গেছে। সে খুশির থেকে বেশি অবাক হচ্ছে। সে ভাবছে,তার ফ্রম ফিলাপের টাকা কে প্রদান করলো।
একটুপর নিখিল জেরিন কে বললো," জেরিন, টেনশনে আছো মনে হয়?"
জেরিনঃ আসলে আমার ফ্রম ফিলাপের টাকা টা কে যেন প্রদান করেছে। কিন্তু কে করলো আমি বুঝতেছি না।
নিলয়ঃ তুমি এতোটা বোকা যে এখনো খুজে পেলে না(।একটা চান্স নিচ্ছে)
জেরিনঃ সত্যি, আমি জানি না।
নিখিল বুঝতে পারলো যেহেতু কেউ বলে টাকাটা দেয়নি তাহলে সে সত্যি টা কখনো ওকে বলবে না।তাই বললো," আরে তুমি আমার বেস্টফ্রন্ড, তোমার জন্য সামন্য টাকা টা কিছুই না।"
জেরিনঃ সত্যি তুমি দিয়েছো।আমি তোমার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।আমি নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি তোমার মতো একটা বন্ধু পেয়ে।
নিখিলঃ আরে বন্ধু হয়ে বন্ধুর বিপদে দাড়ানোটাই হলো প্রকৃত বন্ধু।